Wednesday 1 March 2023

অনির ডাইরি ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

 

#অনিরডাইরি #কাঁথিরকিস্যা 


কত আশা নিয়ে বাবাকে শোনাতে গিয়েছিল তুত্তুরী,‘ জানো তো বাবা, ভ্যালেন্টাইন্স ডের দিন না কাউ হাগ ডে ঘোষিত হয়েছে।’ গম্ভীর মুখে শৌভিক বলেছিল,‘হুঁ, সেই জন্যই তো মা তোকে ভ্যালেন্টাইন বানাবে ঠিক করেছে।’ শুধু কি তাই, যেদিন বাতিল হল গো-আলিঙ্গন দিবস, রাতে খেতে বসে খবরটা জানালাম আমি, জবাব এল, ‘ যাঃ! ঐদিন তোর ছানাটাকে হাগ করব ভেবেছিলাম যে-’। 


এমন লোককে কি আদৌ ভালোবাসা যায়? এর থেকে বাপু আমার তুত্তুরীই ভালো। মুখ ফসকে সেটা বলে ফেলাই কাল হল। বিগত সপ্তাহ দুই ধরে আমার পিছনেই পড়ে ছিলেন তিনি। পাকেচক্রে আবার তাঁর পরীক্ষাও শেষ হয়েছে গতকাল।


 মধ্যরাত্রে অতর্কিতে চমকে দেবার ইচ্ছা থাকলেও উপায় খুব একটা ছিল না। গোলাপ, বাগানে প্রচুর ফুটে থাকলেও, মনের মত কেক, ভালো চকলেট, সুরভিত মোমবাতি বা উপহার দেবার মত পছন্দসই কিছু খুঁজেই পাচ্ছিলাম না আসে পাশে। মহানগর থেকে দূরত্বটা এতটাই বেশী যে টুক করে একবার ঘুরে আসব তারও কি যো আছে। আর জীবন ইদানিং এতটাই গতিময় যে এরপর আরোও সাত-আট ঘন্টা অতিরিক্ত সময় বার করার কথা ভাবলেও ক্লান্ত লাগে।  


অগত্যা অনলাইনই ভরসা। একটি একটি করে পার্সেল আসে, একটু একটু করে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন শ্রীমতী তুত্তুরী। প্রথমবার মুখ ফসকে বলে ফেললেও, তারপর মুখে চাবি লাগাই আমি। যাই আসুক, তা আমার জন্য আসছে বলে দাবী করতে থাকি। তাও সন্দেহ ঘোঁচে না তাঁর। বাবার সঙ্গে চলে ফিসফিসিয়ে মন্ত্রণা, ‘মায়ের পেট থেকে খবরটা বার করো তো।’ 


নাঃ খবরটা শেষ পর্যন্ত কেউ বার করতে পারেনি। গতরাতেও তুত্তুরী ঘ্যানঘ্যান করছিল,‘তুমি বলেছিলে আমায় ভ্যালেন্টাইন বানাবে। বাবা বলেছিল আমায় হাগ করবে।’ নির্বিকার চিত্তে নেটফ্লিক্স দেখছিলাম আমি। ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দিইনি যে শৌভিকের বাংলো চেম্বারের ফাইল রাখার আলমারিতে লুকানো আছে অরূপকে দিয়ে আনানো, তুত্তুরীর নাম লেখা রেড ভেলভেট কেক। বা বুকশেল্ফের পিছনে লুকানো আছে বাপ-বেটির উপহার। বা আমার হাত ব্যাগে লুকানো আছে আমাদের কোলাঘাটের ইন্সপেক্টর সৌম্যর লিখে দেওয়া ভালোবাসা মাখা শুভেচ্ছা বার্তা। 


সাড়ে এগারোটা নাগাদ একবার উঁকি মারতেও এসেছিল শৌভিক, এতরাতে বাংলো চেম্বারে বসে কি করছি আমি। নেটফ্লিক্সের গাঁকগাঁক আওয়াজ শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেছে। পুনরায়  মনঃনিবেশ করেছে কি যেন ভুটানি সিনেমায়। অস্কারের জন্য মনোনীত প্রথম ভুটানি সিনেমা নাকি, বার কয়েক শুনিয়েও গেছে। মন খারাপ করে শুয়ে পড়েছিল তুত্তুরীও। যদিও উসখুসানির আওয়াজ দিব্যি পাচ্ছিলাম কোণের ঘর থেকে। 


রাত বারোটায় যখন বাপ-বেটিকে ডেকে আনলাম, খুশি উপচে পড়ছিল অভ্যন্তরে, মুখে যদিও এমনি ভাব যে এটাই তো হবার কথা। সবই তো জানত দোঁহে। এটাই ভটচায বাড়ির বৈশিষ্ট্য। শ্বশুরমশাই এবং তাঁর পুত্র, পৌত্রী বর্গ সবকটা এমনিই। শান্ত, পরিশীলিত,সংযত। সাধে রেগে আগুন, তেলে বেগুন হয়ে যান শাশুড়ি মাতা। এই যদি আমরা চাটুজ্জেরা হতাম, দেখতেন উল্লাস কাকে বলে। পাশের হাউজিং এর লোকজনের ঘুম চটকে যদি না দিতাম, আমরা ব্যাঁটরার চাটুজ্জেই নই। 


যাই হোক, অনি,শৌভিক আর তুত্তুরীর পক্ষ থেকে  সকলকে ভালোবাসার দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।  আজ গো আলিঙ্গন দিবস হোক না হোক, পুলওয়ামার শহীদ দিবস তো অবশ্যই। কে জানে আরো কত কি দিবস আজ। সবকিছুই হোক,সবকিছুই চলতে থাকুক। আর সবার মাঝে মাথা উঁচু করে বাঁচুক ভালোবাসা। কারণ ঐ যে তিনি গেয়ে গেছেন না, ‘ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি?’

No comments:

Post a Comment