#অনিরডাইরি #তাম্রলিপ্তকড়চা
মোবাইলের ঘড়ি বলছে সোয়া আটটা বাজতে এখনো বাকি কয়েকটা মিনিট, গাড়িতে উঠে বসলাম। আমি না বেরোলে কেউ যে আসর ছেড়ে নড়বেনা, বেশ বুঝতে পারছি। আজ আমাদের চণ্ডীপুরের ইন্সপেক্টর সাহেবের বৌভাত। শান্তনু, সন্দীপ আর মনীষ আমার তিন নবীন ইন্সপেক্টর। ব্যাটাদের চাকরি জীবনের বছর ঘুরে গেছে,অথচ এখনও ঘোঁছেনি "বেবি ইন্সপেক্টরের" তকমা।
এহেন আমার তিন "বেবি"র মধ্যে শান্তনুরই প্রথম আইবুড়ো নাম ঘুঁচলো। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হওয়া ইস্তক, যেভাবে সকলে শান্তনুর পিছনে লেগেছিল, আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল এমন উৎতপেতে লোকজনকে জীবনের শুভতম দিবসে মোটেই নিমন্ত্রণ জানাবে না শান্তনু। সকল দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে, শেষ পর্যন্ত অবশ্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল শান্তনু এবং তাও চূড়ান্ত সরলতা, এক রাশ উষ্ণতা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে।
নিমন্ত্রিত হলে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হবে এটাই আমার বাবার শিক্ষা। অতিমারি এসে সব চেনা ছক উল্টেপাল্টে দিল তাই, নতুবা কেউ আমার বাবাকে নিমন্ত্রণ করবে আর বাবা যাবে না, এমন ঘটনা আক্ষরিক অর্থেই কোটিকে গুটিক। উপরোধে ঢেঁকি গিলে, এমন কত যে নিমন্ত্রণ বাবা রক্ষা করেছে, যেখানে না গেলেই বোধহয় ভালো হতো। যেখানে কেউ বলেনি,'আসুন', কেউ বলেনি,'খেতে চলুন' বা 'ভালো করে খাবেন।' নীরব অবজ্ঞা উপলব্ধি করে, নীরবেই উপহার প্রদান পূর্বক অভুক্ত অবস্থায় গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে বাবা, কিন্তু গেছে।
শুধু যে নিজে গেছে তাই নয় যেতে বাধ্য করেছে মাকে এবং আমাকে। তাচ্ছিল্যে, অবজ্ঞায়, অভদ্রতায় জ্বলে গেছে গা, ভরে উঠেছে চোখ, তাও হাসির মুখোশ পরে দাঁড়াতে হয়েছে সর্বজন সমক্ষে। বৃদ্ধের আমি এতটাই অনুরাগিনী, যে কখনই বৃদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা বা সাহস হয়নি। আজও হয় না। অবশ্য আমার স্ট্রাইক রেট বাবার মত অত নিখুঁত ও নয়। স্বভাবতঃ কুঁড়ে হওয়ায়, না যেতে পারা নিমন্ত্রণ বাড়ির সংখ্যাও আমার খুব কম কিছু নয়।
আজও কোন বিয়ে বাড়ির ছবি লাগালে, ঠোঁট ফোলায় রমেশ, দুঃখ পায় প্রিয়াঙ্কা। চুঁচুড়া ছেড়ে আসার সময় কথা দিয়ে এসেছিলাম যে, পৃথিবী উল্টে গেলেও ওদের বিয়েতে আমি আসবোই। কথা দিয়েছিলাম তমলুক ব্লকের এসএলও জয়ন্ত বাবুকেও, অবশ্যই হাজির হব ওনার কন্যার শুভবিবাহে। দুখানা কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করেছিলেন জয়ন্ত বাবু, একটা শুধু আমাকে সপরিবারে আর একটা দিয়ে পুরো অফিসকে।
দিনটা সম্ভবত ছিল রবিবার। প্রস্তুত ছিলাম আমি আর তুত্তুরী। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল কেবল আমরা ছাড়া, অন্য সকলেরই সেদিন অন্য কোন না কোন নিমন্ত্রণ বা ব্যস্ততা আছে। সদ্য বদলি হয়ে এসেছি তাম্রলিপ্ত নগরী, এমতবস্থায় একাকী, অচেনা পরিবেশে, নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাবার মতন সৎ সাহস সেদিন জোটাতে পারিনি। বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলাম পরিকল্পনা। সবথেকে খারাপ লেগেছিল, যখন কন্যার বিবাহের শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফোন করেছিলেন জয়ন্ত বাবু, "ম্যাডাম আসছেন তো? ম্যাডাম কত দূরে আছেন?" ঠিক যেমন ফোন করেছিল চুঁচুড়া থেকে রমেশ।
পরের দিন আপিসে এসে খুব বকেছিলাম সবকটাকে। কিসের এত গেঁতোমি তোমাদের বাপু? মানছি দূরের লোকেরা ছুটির দিন পরিবার ফেলে আসতে বিপন্ন বোধ করে, কাছাকাছি যারা থাকো তারা গেলে না কেন? সবাই চুপ, শেষে চঞ্চল বলল,' আসলে ম্যাডাম কুন্তল স্যার সবাইকে গাড়ি করে নিয়ে যেত তো-'। কুন্তল আমার পূর্বসূরী এবং ব্যাচমেট এবং সুহৃদ। আজও এদের নয়নমণি। কুন্তলের সাথে নিমন্ত্রণ বাড়ি না যাবার কি সম্পর্ক বুঝলাম না। চঞ্চল বলল,' তার আগে তো, সাহেব ম্যাডামরা সবাই গাড়ি করে চলে যেতেন। স্টাফেরা যে যার মত বাসে করে যেত। একবারই গাড়ি দিয়েছিলেন অমুক আধিকারিক, সবাই খুব আনন্দ করে গিয়েছিল সেবার খেতে, ওমা হঠাৎ তাঁর মনে হল, যে তিনি হলদিয়া যাবেন। ভয়ের চোটে উত্তম তো না খেয়েই উঠে পড়ল।'
কবেকার কথা, তাও উত্তমকে বললাম, 'খেয়ে উঠবে তো? না খেয়ে হলদিয়া নিয়ে যেতে বলেনি তো কেউ।' উত্তম কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল, ' আপনি জানেননি, উনি পাঁচবার খাবার জায়গায় চলে গেছেন আমায় ডাকতে, শেষে পাতে জল ঢেলে উঠে পড়লুম। যা ভয় পেতুম ম্যাডাম ওনাকে, ওনার ভয়ে বাথরুম পর্যন্ত যেতুমনি, চেপে বসে থাকতুম গাড়িতে। একবার বাথরুম গেছি চাবিটা গাড়িতে লাগানো ছিল, মোবাইলটাও গাড়িতেই রাখা ছিল। দু মিনিট পর ফিরে এসে দেখি, গাড়ি নাই। আমার তো মাথায় হাত, আশেপাশের অন্য সরকারি গাড়ির ড্রাইভাররা বলল, 'তোর বস্, তোর গাড়ি লিয়ে চলে গেছে।' ফোনটাও গাড়িতে রয়ে গেছে, ফোন করতেও পারতেছি নে। পকেটে যা পয়সা ছিল তাই দিয়ে বাসে করে অফিসে এসে দেখি, তিনি তুলকালাম বাঁধিয়েছেন। অমিয় দাকে (গাড়ির মালিক) বলতেছেন, 'হয় উত্তম থাকবে, নয় তোমার গাড়ি থাকবে।' উত্তমকুমারকে অবশ্য, দূর করে দেবার হুমকি, আমিও দিই। প্রতি তিন দিনে একবার তো বটেই। ভাগ্যে গাড়ি চালাতে পারি না-
যাইহোক প্রসঙ্গ থেকে সরে আসছি বুঝতে পেরে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা গেলে না কেন? ইতস্তত করে চঞ্চল বলল,' সেবার যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন এত অটো টোটো ছিল না, ওই রোদে দুপুর বেলা সবাইকে হেঁটে অফিস ফিরতে হয়েছিল।' বুঝতে পারলাম আগেকার তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্যই, ওরা সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাচ্ছে। আশ্বস্ত করে বললাম, কুন্তল স্যার জিন্দাবাদ। আর আমার ফেলে আসা অফিসের লোকজনকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখো, চুঁচুড়ায় কেমন মুড়ি টিনের মত ঠেসে ঠেসে সবাইকে গাড়িতে তোলা হত। এখানেও তাই হবে। আধিকারিক বা অফিস বদলে গেলেও বদলাবে না নিয়ম।
নিমন্ত্রণ এলে তারপর থেকে মোটামুটি হাজিরা দেয় অধিকাংশই। আজই যেমন সব মিলিয়ে আমরা ১৬ জন এসেছি। কোলাঘাটের ইন্সপেক্টর সৌম্যর উপর ভার ছিল, কারা কারা যাবে তাদের নামের লিস্ট বানানো। তালিকা শেষ পর্যন্ত যা লম্বা হলো, বেদজ্যোতি-শুভাশিস-নন্দনের মত গুটিকয়েক যদি নানা কারণে যেতে অপারগ না হতো, তাহলে বোধহয় একটা মিনিবাস ভাড়া করতে হত, চাঁদা তুলে।
ঠিক ছিল, ঠিক চারটের সময় কাঁথি থেকে রওনা দেব আমি। পাঁচটা নাগাদ হক বাবুকে তোলা হবে নন্দকুমার থেকে। নিমতৌড়ি থেকে উঠবে সৌরভ আর CKCO শান্তনু। উপহার সমেত উঠবে শুভদীপ্ত। মেছেদা থেকে উঠবে সুরজিৎ, কোলাঘাট থেকে রঞ্জিৎ, দেউলটি থেকে সৌম্য, বাগনান থেকে রবিবাবু এবং সন্দীপ। সঞ্জয় আর মনীশ আসবে ট্রেনে। উলুবেরিয়া স্টেশন থেকে ওদের তুলে নেব আমরা। কাটায় কাটায় ছটায় পৌছবো আমরা নব দম্পতিকে আশিস এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রথম ব্যাচে খেয়ে ঠিক রাত আটটায় বেরিয়ে পড়ব আমরা।
সেই মতো শনিবার দুপুরে এক ফোঁটাও না ঘুমিয়ে পৌনে চারটের মধ্যে সেজেগুজে তৈরি হয়ে গেলাম আমি। সপরিবারে নিমন্ত্রণ ছিল, শৌভিক আর তুত্তুরী রাজি হলো না এই অবেলায় উলুবেরিয়া যেতে, তাঁরা নাকি যুগলে পাখির ছবি তুলতে যাবেন। সব হলো স্টার্ট নিল না কেবল গাড়িটা। টেনশনে আধ কিলো ঘেমে গেল উত্তম কুমার। বাংলোর সিকিউরিটি ছেলেটি এবং উত্তমে মিলে বিস্তর ঠেলাঠেলিও করল তাও নড়লো না গাড়ি। বিরস বদনে মেসেজ করলাম অফিস গ্রুপে, ভাই সব তোমরা যে যেমন পারো, যেভাবে পারো চলে যাও। মনে হয় না আমি যেতে পারবো।
ভেবেছিলাম এই নিমন্ত্রণ বাড়িটাও বুঝি সংযুক্ত হতে চলেছে অপারগতার তালিকায়। পাঁচটা বেজে গেলে হয়তো সত্যি সত্যি আর যেতামও না। বাঁচিয়ে দিল কাঁথি বাজারের বুড়ো মেকানিক, আসতে একটু দেরি করেছিলেন বটে তবে মাত্র তিন মিনিটে কি যে মৃতসঞ্জীবনী সুধা পান করালেন গাড়িটাকে। গাড়ি একদম রকেট হয়ে দৌড়লো। নির্ধারিত সময়ের মিনিট পঁয়তাল্লিশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমরা।
মেনু কি হতে চলেছে আগেই জেনে নিয়েছিলাম আমরা, যদিও কিছুই আর মনে ছিল না সেদিন। তবে জানতাম এবং মনেও ছিল যে টকটকে লাল লেহেঙ্গা পড়বে নববধূ। লেহেঙ্গার ছবিও দেখিয়েছিল শান্তনু। ছেলেটা এতই ভালোমানুষ গোবলু, যে কে সাজাতে আসবে, কখন সাজাতে আসবে এবং সাজানোর খরচ কত সেসব গল্পও শুনিয়ে ছিল আমাদের। ফলে সুসজ্জিতা নববধূর মঞ্চে অবতীর্ণ হতে, যে বেশ খানিকটা সময় লাগবে, এ ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যেই অবহিত ছিলাম।
নববধূর আসতে বিলম্ব হলেও ফুচকাওয়ালার যে আসতে বিলম্ব হবে না, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। অবিলম্বে লাইন পড়ে গেল ফুচকাওয়ালার সামনে। একদল কটকটে ঝাল ফুচকা চায়, তো একদল ঝাল বিহীন শুকনো ফুচকা। ফুচকার পাশেই ঢেলে রাখা গরম গরম পনির কাঠি কাবাব। তার পাশে জ্বলন্ত চিকেন মোমো। তার পাশেই কফি। ফুচকার টক জলে পেট টইটুম্বুর, এমতবস্থায় কিছুতেই কফি খাব না আমরা, শান্তনুর মামা বাবুও ছাড়বেন না। বড় ভালো বানিয়েও ছিল বটে কফিটা। পেট পুরে স্টার্টার সাঁটিয়ে, নববধূর ফাঁকা সিংহাসনে বসে ছবি তুলে, সেলফি কর্নারে গ্রুপি তুলতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেও আমার চোখ ঠিক ঘড়ির ওপর। এতগুলোকে তাড়িয়ে এনেছি যেমন, সালামত ভাবে বাড়ি পৌঁছানোর দায়িত্বও তেমনি আমারই। লজ্জার মাথা খেয়ে শান্তনুর মামাকে শেষ পর্যন্ত আমিই গিয়ে বললাম, রান্না কি সম্পন্ন? তাহলে আমাদের যদি একটু বসিয়ে দেন।
প্রথম ব্যাচে খেতে বসার সবথেকে বড় সুবিধা হল কোন কিছুই ঠান্ডা পাবেন না আপনি। জিভ জ্বালানো ফিস পাঞ্জাবি, আঙুল পোড়ানো মুগমোহন, কিমা মোটর, পোলাও, ভেটকি মাছের পাতুরি, খাসির মাংস, কষা চিকেন, মাছ, পনির ইত্যাদি যখন আসতে শুরু করল পরপর তখন বড় দুঃখ হচ্ছিল জানেন, কেন যে অতগুলো ফুচকা খেলাম। তেঁতুল জল আর এক্সপ্রেসো কফির আভ্যন্তরীণ বিবাদে, বাদ দিতে হলো অনেক কিছুই। তবে সন্দেশটা আর শেষ পর্যন্ত প্রাণে ধরে ছাড়তে পারলাম না। আমাদের হাওড়া জেলার বাগনান-উলুবেরিয়া অঞ্চল এমনিতেই মিষ্টির জন্য সুপ্রসিদ্ধ। এই অসময়েও সন্দেশটা থেকে ভুরভুর করে নলেন গুড়ের সুবাস ছাড়ছিল। প্রতি কামড়ে জিহবা আর তালুতে মিশছিল খাটি ছানার সোহাগ।
শান্তনুদের বাড়ির আতিথেয়তা অসম্ভব উষ্ণ। কতবার, কতজন, কতরকম ভাবে যে বলে গেল, ভালো করে খাবেন, যা ইচ্ছে খাবেন, যতবার ইচ্ছে চেয়ে খাবেন। আমার ছোট কাকুর ভাষায় নির্লজ্জের মত খাবেন অর্থাৎ লজ্জা করে খাবেন না, ইত্যাদি প্রভৃতি । বর বেশে এক ঘর অভ্যাগত দের সামনে অন্তত গোটা পাঁচেক বার তো আমায় প্রণাম করার চেষ্টাই করে ফেলল শান্তনু। পদাধিকার বলে উপরওয়ালা বটে, তাই বলে গুরু ঠাকুর তো নই, আরেকবার প্রণাম করতে এলেই ঠ্যাঙাবো, এই ভয় দেখিয়ে নিরস্ত করলাম শেষ পর্যন্ত। পাশ থেকে সন্দীপ ফুট কাটল, "ম্যাডাম সাথে সাথে শোকজ টাও করে দিন।" যেন অনাবশ্যক শোকজ করাটাই আমার কাজ। ওটাকেও দু চার ঘা দিলে মন্দ হত না, যা বুঝলাম।
আটটায় বের হব ভেবেছিলাম মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যে গুটিয়ে ফেলতে পেরেছি ব্যাপারটা। তার জন্য তারিফও করলো হক বাবু আর উত্তম। 'এই আপনি তাড়া দিলেন, তাই সব কটা নড়ল।' সেটা দূর থেকেও বুঝতে পারছিলাম বেশ, নতুবা যে হারে নতুন বরকে গোল করে ঘিরে ধরে মন্ত্রণা দিচ্ছিল সব কটা, এত বুদ্ধি আমাদের শান্তনু মাথায় রাখতে পারলে বাঁচি। কিছু রাখবে, কিছু হয়তো মিশে যাবে অপ্রয়োজনীয় স্মৃতির ভিড়ে। সব মিলিয়ে খুব খুব ভালো থাকবে আমাদের শান্তনু আর তার মৌলি, এটাই আপাতত টিম তাম্রলিপ্তর প্রতিটি উপস্থিত এবং অনুপস্থিত সদস্যর একমাত্র কামনা। ভালো থেকো নব দম্পতি। অনেক অনেক ভালোবাসা আর আশীর্বাদ রইল তোমাদের জন্য।
No comments:
Post a Comment