Tuesday 27 August 2019

তুত্তুরী ও তার সঙ্গীসাথীরা

তুত্তুরী ও তার সঙ্গীসাথীরা ২- ৩রা ডিসেম্বর,২০১৯

👧🏽-মা জানো তো অনুষ্ঠান(আসল নামটা উহ্যই থাক) না খুব বাজে ছেলে। সব মেয়েদের বিরক্ত করে। নোংরা ছেলে একটা। 
👩🏽-অ্যাঁ! কি করে?
👧🏽-নাক খুঁটে গায়ে লাগাতে চায়। আমি কোনমতে অদ্রিজাকে ঠেলে দিয়ে ওর পিছনে লুকিয়ে পড়ি। 
👩🏽-লুকিয়ে পড়িস😡? ঠ্যাঙাস না কেন? তুই নাকি ক্যারাটেতে কমলা বেল্ট?
-তাহলে তো ও আমাকে ছুঁয়ে দেবে-। ম্যাগোঃ🤢


তুত্তুরী ও তার সঙ্গীসাথীরা- ২৭শে অগস্ট ২০১৯
-মা জানো তো, আজ না স্কুলে দারুণ মজা হয়েছে। 
-কেন?( আনমনে বলে ফেলেই প্রমাদ গুনলাম। আর নিস্তার নেই। ঝাড়া আধঘন্টা এখন কাটাতে হবে তুত্তুরীর স্কুলে)
-জানো মা, অনির্বাণ বলছিল,“মৌমিতা ইজ ডিস্টার্বিং মি”। 
-বাঃ। তাতে মজার কি হল?
-মৌমিতা কে বলো তো? আমাদের ম্যাম। 
-সর্বনাশ। তোরা আবার নালিশ করিসনি তো?
-নাঃ। অনির্বানের নামে নয়, তবে ঋদ্ধিমানের নামে নালিশ করেছে ঋতম। 
-কেন?
-হিঃ। হিঃ। ঋদ্ধিমান বলেছে,“মৌমিতা ম্যাম ইজ অ্যান এলিফ্যান্ট”। 
- য্যাঃ। 
-হ্যাঁ গো। ঠিক হয়েছে। ম্যাম ওকে বকেছে। সেদিন আমার আঁকা ছবিটা দেখেও বলছিল,“ইয়োর এলিফ্যান্ট লুকস্ লাইক ইউ।” 
-মজা করে বলেছে হয়তো। 
জানো মা ম্যাম আজ গৌরবকেও বকেছে। 
-আবার গৌরব কি করল?
-আরে টিফিন টাইমে আরল আর ঋতম বসে গল্প করছিল, গৌরব ওদের পাশ দিয়ে দৌড়ে যেতে যেতে বলল,“ম্যাম ইজ কামিং।ম্যাম ইজ কামিং।এই শালা ডরনেওয়ালা। ”
-হিঃ। হিঃ। বেচারী তোদের ম্যাম। 
- তবে ম্যাম আজ শ্রেয়ণকে যা করেছে, তুমি ভাবতেও পারবে না। 
-ওরে বাবা আবার শ্রেয়ণও?
-হ্যাঁ। আমি, অদ্রিজা, ঈশাণী আর শ্রেষ্ঠা মিলে ম্যামকে কমপ্লেন করেছিলাম। 
-চারজনে মিলে একটার নামে? কেন রে?
-ছুটির আগের পিরিয়ডে শ্রেয়ণ আমাদের খুব বিরক্ত করছিল। খালি খালি জিভ বার করছিল আর দুই আঙুল দিয়ে কাঁচি চালিয়ে বলছিল,“সি আই ক্যান কাট মাই ট্যাং। সি আই ক্যান কাট মাই ট্যাং।” তো ম্যাম বললেন, “রিয়েলি শ্রেয়ণ?ইউ ক্যান? ওয়েট। ” বলে ব্যাগ থেকে একটা বড় কালো কাঁচি বার করে বললেন,“ক্যান ইউ ক্যারি দিস শ্রেয়ণ?” শ্রেয়ণ বলল,“ইয়েস ম্যাম। ” তখন ম্যাম বললেন,“দেন টেক দিস। এন্ড কাট ইয়োর ট্যাং। ” হিঃ হিঃ শ্রেয়ণ যা ভয় পেয়েছিল না। সত্যি যদি ম্যাম কেটে দিতেন,কি হত বলো মা। 
পুনশ্চঃ পড়ার সময় মনে রাখবেন,তুত্তুরীর কল্পনাশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং তুত্তুরীর একটি গরু আছে, যার নাম গৌরি। যিনি সাধারণতঃ গাছেই বিরাজ করেন। 

Friday 16 August 2019

অনির ডাইরি ১৬ই অগস্ট, ২০১৯


আজ নয়। দিন কয়েক আগের কথা। সেদিনও ছিল এমনি বর্ষণ মুখর রাত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে ঝমঝমিয়ে নেমেছে বর্ষা। রাস্তাঘাট শুনশান। পরম আশ্লেষে নিয়ন আলোর গা চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঝরে পড়ছে বর্ষার পানি। আয়নার মত চকচক করছে ভেজা ভিআইপি রোড। সীমানা বরাবর দণ্ডায়মান গাছ গুলো জোলো হাওয়ায় জড়সড়। শাখা প্রশাখা বিস্তার করা, সিক্ত মৃত গাছের ফাঁক দিয়ে খালের ওপাড়ে সল্টলেকের মেঘলা আকাশ। মেঘলা আকাশের রঙটা কেমন যেন উজ্জ্বল শ্যাওলা সবুজ।
ঘড়িতে রাত দশটা। অফিস ফেরৎ চুল কাটতে গিয়েই যত বিপত্তি। এতরাত হবে ভাবিনি।এতরাতেও এত জোর ধারাপাত, তাও ধরিনি হিসেবে। বর্ষার জলে ভিজে চটিটা এত মসৃণ হয়ে পড়েছে, আর পায়ে থাকতেই চাইছে না। কোন মতে চারটে সমান্তরাল রাস্তা পেরোতে পারলেই বাড়ি।
হড়কে বেরিয়ে যেতে চাওয়া চটিকে কোনমতে চেপে, টাল খেতে খেতে দৌড়বার বৃথা চেষ্টায় পেরিয়ে গেলাম সার্ভিস রোডটা। ডিভাইডারে এই মুহূর্তে আমি ছাড়া আর মাত্র দুজন, একজন বিশালদেহী প্রৌঢ়। স্ফিত মধ্যপ্রদেশের ওপর দামী সিল্কের ভেজা ভেজা শার্ট ভেদ করে ভিতরের স্যান্ডো গেঞ্জি দৃশ্যমান। কপালে মেটে সিঁদুরের টপ্পা। পায়ে ছাইছাই রঙা  পুমার ট্রেনার। মাথা ভর্তি সাদা চুল, পরিপাটি করে আঁচড়ানো ছিল। আপাততঃ হাওয়ায় এলোমেলো।
অপর জন ক্ষীণতনু। গায়ে আধময়লা সাদা পাঞ্জাবী। গোড়ালীর ওপর ওঠা পায়জামাটি তুলনায় সাফ বেশী। মাথায় ফেজ টুপির এপাশ ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে নুনমরিচ চুল। থুতনি থেকে নেমেছে পাকা দাড়ির তিরতিরে ঝোরা। পায়ে কালো চামড়ার চটি।
দূরে সিগন্যাল লাল। চকচকে ভিআইপি দিয়ে প্রায় ডিভাইডারের গা ঘেঁষে উড়ে যাচ্ছে গাড়ি, আর মোটরবাইকে সওয়ার, ফূর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ, মার্কা বেপরোয়া খোকাদের দল, যদিও সংখ্যা হাতে গোণা।
টপ্পাধারী বৃদ্ধ থাকতে না পেরে নেমেই পড়লেন রাস্তায়। দেখাদেখি টুপিওয়ালাও নেমে পড়লেন তড়বড় করে।
“খুদখুশি করনা হ্যায়?” খিঁচিয়ে উঠলেন টপ্পাধারী। টুপিওয়ালা থতমত খেয়ে বাধ্য ছাত্রের মত উঠে এলেন ডিভাইডারের ওপর। তারপর আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে, হেঁহে করতে করতে বললেন,“আপনে নামলেন কি না, তাই আর কি-। ” “তো? ম্যায় আগমেঁ কুঁদু(লাফাই), তো আপ ভি-?” টুপিধারী বকুনি খাওয়া ছাত্রর মত মাথা নীচু করে বিড়বিড় করে কি বললেন, তারপর গলা তুলে বললেন,“বলি ও দাদা, আপনেও উঠে আসেন না। খামোকা কেন দাঁড়ায় আছেন রাস্তার উপর। আজকালকার ছেলেছোকরারা কেমন বাইক চালায় দেখেন না। আসেন। আসেন উঠে আসেন। ” “সো তো হ্যায়। রাম বাঁচায় ইনসে ভায়ই- ” বলে বাধ্য বাচ্ছার মত উঠে এলেন টপ্পাধারী।
আর তারপর? তারপর সিগন্যাল নিজের নিয়মেই সবুজ হয়ে গেল। টপ্পাধারী বলে উঠলেন,“লো জি। আপ সব আপনে আপনে ঘর চলো। ” মিলিটারি কর্ণেলের মত আঙুল দেখালেন আমাকে আর টুপিওয়ালাকে রাস্তা পেরোনোর জন্য। পেরিয়ে এলাম তিনজনে। রাজকীয় চালে পেরোলেন টপ্পাধারী। পাশাপাশি তড়বড় করতে করতে দৌড়লেন টুপিওয়ালা আর হড়কাতে হড়কাতে সঙ্গী হলাম আমি। রাস্তার এপাশে তিনজন বেঁকে গেলাম তিনদিকে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা মেখে আবাসনের দরজা গলে ঢুকতে ঢুকতে মনে হল, এটাই তো আমার দেশ!

Monday 12 August 2019

অনির ডাইরি ৯ইআগস্ট ২০১৯


যদিও আগস্ট মাস, তবুও বেশ বোঝা যায় পুজো আসছে। লোকাল ট্রেন জুড়ে ঝুটো গয়নাগাটি, রঙ বেরঙের মাথার ক্লিপ, হেয়ারব্যাণ্ডের ফেরিওয়ালাদের ভিড়। সুর করে হাঁকছে মহিলা হকার,“কুর্তি আছে-ল্যাগিংস আছে-প্লাজও”। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে “সুতির রুমাল- তোয়ালে রুমাল- শান্তিনিকেতনের রুমাল”। সুসজ্জিতা রূপসী দিদিমণিদের মুখে কলেজ স্ট্রীট আর গড়িয়াহাট, “এই দোকানের ঢাকাই ভালো, ঐ দোকানের সিল্ক”। ট্রেনটা যে নড়ছেই না, কারো হুঁশ নেই।
জগদ্দল-কাঁকিনাড়া ছাড়ালে ট্রেনটা একটু ফাঁকা হয়। রোদে হাল্কা সোনা রঙ লাগলেও, দুপাশের নয়ানজুলিতে কাশেরা এখনও মেলেনি ডানা। স্টেশন থেকে লঞ্চঘাট যাবার ৭০০ মিটার পথ জুড়ে শুধু রকমারি দোকানের পসরা। থরে থরে ঝোলে শাড়ি, বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লাউজ,নাইটি, ফ্রক, অনামী ব্যান্ডের জিন্স, শার্ট। এই বাজার আমার মুস্কিল আসান। কালি পুজোর আগে, বাবার জন্য মাটির নক্সা বাড়ি, সরস্বতী পুজোর আগে তুত্তুরীর বাসন্তী রঙা শাড়ি, উটকো বিয়ে বাড়ির রঙমিলান্তি ব্লাউজ, ম্যাচিং টিপ বিকিকিনি চলে বছর জুড়ে। হুদা বিউটির লিপস্টিক- আইশ্যাডোও বিক্রি হয়, দোকানদার নাছোড়বান্দা কিনতেই হবে, “ইমপোটেনট(বিলাইতি) জিনিস”। কত দাম গো? বেশী না, চল্লিশ থেকে একশো কুড়ি টাকা। সত্যি? তবে যে নাইকা হাজার দেড় থেকে সাড়ে তিনের কম দেখায় না? বলিনি অবশ্য। হুদা কাট্টানকেও বলিনি, বললে হয়তো এক আধটা ফ্রি স্যাম্পল জুটে যেত-। এইসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে  লঞ্চে উঠি।
চার কিলোমিটার পথ, সময় মেরেকেটে পাঁচ মিনিট। তাই বসার জায়গা পাওয়াটা গৌণ। গলুইয়ের দিকটায় দাঁড়াতে পারলে নিরবিচ্ছিন্ন গঙ্গা দেখা যায়। দূরে জুবিলি ব্রীজের রূপালী ঔদ্ধত্য। ঘোলাটে গঙ্গায় ভেসে যায় পাঁজা পাঁজা পানা। ভরা বর্ষায় অমন হয়। কে জানে কোন গাঁয়ের পানা, কেমন মানুষ তারা-।  কি তাদের গল্প, কি তাদের কাহিনী।
পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল,“দিদি একটু-”। চোখ ফিরিয়ে দেখি, যিনি বললেন, তিনি তাঁর জায়গাটা ছেড়ে সরে গেছেন, লঞ্চে মাঝ বরাবর। যাবার আগে আমায় সরে যেতে বলে গেলেন, আমার জায়গায় উবু হয়ে বসলেন এক মাসিমা। সাদাসিধে করে পরা লাল সাদা তাঁতের শাড়ি। কাঁচাপাকা চুল ছোট্ট খোঁপায় জড়ানো। গঙ্গার দামাল হাওয়ায় বেশ এলোমেলো। মাসিমার হাতে একটা সিন্থেটিক বাজার ব্যাগ। ব্যাগ থেকে উঁকি মারছে টু ফোল্ড কালো ছাতার বাঁকা মাথা। মাসি বসে ব্যাগ থেকে বার করলেন একটা দলা পাকানো কাগজের মণ্ড, মণ্ডের ভিতর গোটা দুই তিনেক ভাঁজ করা রুটি। তারপর খেতে লাগলেন। ঠিক আমার সামনেই বসে খাচ্ছেন,চোখ চলেই যাচ্ছে, মাসি ভাঁজ খুলছেন আর রুটি খাচ্ছেন, কিন্তু খাচ্ছেন কি দিয়ে? কিছুই তো নেই। রুটির খাঁজের গভীরে কি কিছু আছে? অফিস টাইমে রান্নাবান্না করে, আমাদের খেতে দিয়ে, বাসন তুলে, রান্নাঘর সাফ করে, আমাদের টিফিন গুছিয়ে প্রায়শঃ নিজের টিফিনটা আর বানাত না মা। তড়িঘড়ি কটা রুটি আর চিনি নিয়ে দৌড়ত। সবাই বেরিয়ে গেলে সারা বাড়ির কাজ গুছিয়ে, বেলা বারোটা নাগাদ জলখাবার খেতে বসত ঠাকুমা। কি জলখাবার, একটা বা দুটো হাতে গড়া রুটি আর একহাতা ডাল। কখনও সখনও ডালও খেত না। একচামচ চিনি আর জল দিয়েই হত জলখাবার। বড় সরল ছিল জীবন। মাটির কাছাকাছি।লোডশেডিং আর কালবৈশাখীর।  মাসিমার রুটি খাওয়া শেষ। একদানা চিনিও ছিল না ভেতরে। এক ঢোঁক জল খেয়ে উঠে দাঁড়ালেন, এগিয়ে গেলেন মুখে এক ফোঁটা  মালিন্য নেই, হতাশা নেই। অভিযোগও বোধহয় নেই।

মুখের মধ্যে শুকনো রুটি চিবানোর স্বাদ নিয়ে পৌঁছলাম অফিসে। আজ আমার ইন্সপেক্টরদের মারামারির দিন। আজ ক্লেম ডে। সপ্তাহজুড়ে বাছাধনেরা যা মে বি অ্যাপ্রুভড করেছে, আজ তার পরীক্ষা। সবার আগে লাইন দেয় দর্প আর সঞ্চিতা। এদের ক্লেমের সংখ্যা ভদ্রসভ্য। ধনিয়াখালির চঞ্চলকে সবাই ভয় পায়। চঞ্চল ঢুকলেই ট্রাফিক জ্যাম। জবরদস্ত পাল্লা দিচ্ছে পোলবার নির্মল আর তার দলবল। মগরা এবার ফেল।

বর্মন সাহেব হেব্বি কড়া হেড মাস্টার। কেউ ভয়ে ওপথ  মাড়ায় না। রীতিমত পাকড়াও করে পাঠাতে হয়, যাও আগে শ্রী সুখেন বর্মনের কাছে পাশ করে এসো।

 প্রতিটা শুক্রবারই শুক্তির মত, পরতে পরতে লুকিয়ে রাখে জীবন। প্রতিটা ক্লেমই যেন একএকখানা ছোট গল্প। সাদাকালো বাংলা সিনেমা। মুক্তার মত হস্তাক্ষরে লেখা শংসাপত্রের তলায় সাপ ব্যাঙ করে লেখা স্কুল থেকে অন্য কোন অনুদান পায় না। এটা কে লিখেছে রে ভাই? রিসিভ্ড্ বানান ভুল। ইংরেজি বাক্য গঠনটা না হয় ছেড়েই দিলাম। ঠিক করিয়ে আনতে ফেরৎ পাঠাচ্ছি, ইন্সপেক্টর মৃয়মান সুরে বলল,“মেয়েটাকে চিনি ম্যাডাম। ভালো মেয়ে। মামার বাড়িতে থাকে। বাবা নেই। মা টা লজেন্স তৈরি করে।”
“ম্যাডাম এই কেসটা কি হবে একটু দেখুন না। এই ছেলেটার মা টা রোজই আসে আর কান্নাকাটি করে। জোয়ান ছেলে হঠাৎ করে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। বিছানা থেকে উঠতেই পারে না। বুড়ো মা একা হাতে দেখাশোনা করে।কোন রোজগার পাতি নেই তেমন।” আবেদন পত্রে সাঁটানো রঙীন পাশপোর্ট সাইজের ছবিতে হাসিমুখ এক সদ্য যুবা। দুচোখে টলটলে স্বপ্ন। সঙ্গে আটকানো সরকারী হাসপাতালের শংসা পত্র শোনায় অন্য গল্প। ছেলেটা পঙ্গু, তবে মানসিক ভাবে। বেঁকে বসা মন প্রভাব ফেলছে শরীরে। সব কাগজ ঘেঁটেও বার করা গেল না, কোন অনুচ্ছেদটা প্রযোজ্য।

ডেথ কেসের আবেদন করেছেন স্ত্রী। স্ত্রীকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাবার পথে বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন ভদ্রলোক। মহিলা টুকটাক বাড়ি বসে শায়া-ব্লাউজ বানাতেন। অ্যাক্সিডেন্টে আহত হয়ে সেসবও বন্ধ। চাকরীর পরীক্ষাটাও দিতে পারেননি।বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্ছা।  টাকাটা বড় দরকার।  অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া কেস। প্রাপ্য দুলক্ষ। কিন্তু বইটা তো ভদ্রমহিলার নামে। “আমি মরলে, ও বোধহয় পেত, তাই না স্যার?”
দিনান্তে ভারাক্রান্ত মনে কম্প্যুটর শাটডাউন করতে করতে, প্রতি শুক্রবার বড় গর্ব হয় জানেন, গর্ব হয় মানুষ হিসেবে। প্রতিনিয়ত  প্রতিকূল স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কেমন লড়াই করে যায় মানুষ। আকালেও কেমন স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখতে শেখায় মানুষ। আর সবটুকুই শুধু এ জীবনকে ভালোবেসে।

অনির ডাইরি ১২ই আগস্ট, ২০১৯


“হ্যালো ম্যাডাম”, ভোর ভোর হুসেন সাহেবের গলার আওয়াজে চটকা ভাঙল, বাবার সাময়িক অসুস্থতার জন্য বিগত রজনী প্রায় বিনিদ্র কেটেছে, আমাদের। এই মুহূর্তে অবশ্য শিশুর মতই ঘুমাচ্ছে বাবা, তুত্তুরীকে জড়িয়ে। হুসেনের গলা শুনেই মনে পড়ে গেল,আরেঃ আজ তো ঈদ। কুরবানির ঈদ। চার্চ লেনের দিনগুলোতে হুসেন শোনাত কুরবানির কথা। এবারও ব্যতিক্রম নয়, কোচবিহার যেতেই হবে কোরবানির খাসি খেতে। তারপর হুসেন মিঞা আমাকে আর তুত্তুরীকে ঘুরতে নিয়ে যাবে কোচবিহারের বিখ্যাত রাসের মেলায়। ভিড় হয় খুব, তাতে কি,  হুসেন মিঞা আছে না।  কোথায় ঈদ আর কোথায় রাস- হুসেন ওসব বাহানা শুনতে রাজি নয়। যেতেই হবে, বেবিকে নিয়ে।
মেঘলা আকাশ, টিপটিপে বৃষ্টি। ছুটির দিনের ঘুমঘুম ভোর, জোলো হাওয়ার ফিসফিসানি, খুলে দাও বাতায়ন। কি যেন একটা ওষুধ, সবটা পাওয়া যায়নি। কিনতে যাবার কথা। ভেজা ভেজা পথঘাট, গলির মুখের জাহাজ বাড়ি, উল্টো দিকের সৎসঙ্গে কি এখনও প্রার্থনা সভা বসে? শ্রীনাথ বাবু স্যার ছিলেন ঋত্বিক। প্রতি বুধবারে বসত অধিবেশন। রাস্তায় পাতা হত কাঠের সারি সারি বেঞ্চ। গমগম করত শ্রীনাথ বাবুর গলা। তারপর সমবেত প্রার্থনা। এখন কি হয় কে জানে?
সামনে রাস্তা দুভাগ হয়ে গেছে। বাঁদিকে বুড়ো শিবের মন্দির, মনসাতলা, ক্ষীরের তলা মাঠ, পুরোনো রেশন দোকানের গলি। জনিদার দোকান।পঞ্চাশ টপকেই হঠাৎ করে চলে গেল একদিন জনিদা। পুঁচকে থলথলে অভিজিৎ চাল ওজন করত, মালপত্র গোছাত, কতবার মাসকাবারি দিয়ে গেছে আমাদের বাড়িতে। একবার আমি ভুল করে, পঞ্চাশ খোল আর পাঁচশ শুকনো লঙ্কা লিখেছিলাম। তখনও কলেজে উঠিনি।  সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে অভিজিৎ এল মাসকাবারী নিয়ে। বাসন মাজার খোল আর খুঁজেই পায় না মা। সবে বাবা চটি গলিয়ে বেরোতে যাবে, হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির অভিজিৎ। হাতে ইয়া বড় পাঁচশ শুকনো লঙ্কার ঠোঙা। হাসতে হাসতে বাবা বলেছিল,“দুটোই ভজহরি। ” অভিজিৎ এখনও আছে। বয়স বেড়েছে, মুখে দোকানদার সুলভ গাম্ভীর্য ধরা পড়েছে, উচ্চতা যদিও তেমন বাড়েনি। আজকাল দেখলেও চিনতে পারে না। অথবা পারে, কথা বলার সাহস পায় না। ঘুচু একবার বলেছিল,“আমরা তোমায় ভয় পাই ঝুনুদি। হাসলে বা কথা বললে যদি তুমি মুখ ঘুরিয়ে নাও। ”
আর একটু এগিয়ে গেলেই কাশি মামুর মণিহারি দোকান। মারা গেছেন কাশি মামুও। এখন কাকিমা চালান। ওদের মেয়ে রেশমী আমাদের সাথে পড়ত। স্কুলেই রেশমীর মায়ের সাথে আলাপ, তাই কাকিমা। পরে যখন জানলাম, উনিই কাশি মামুর স্ত্রী, আর সংশোধন করা হয়ে ওঠেনি। বড় রূপসী ছিলেন কাকিমা। লম্বা, ছিপছিপে, শ্যামলা রঙ, ঘাড়ের কাছে এলো ঢলঢলে খোঁপা, লম্বাটে প্রসাধনহীন কাটাকাটা মুখ। সময় এতটুকু চিড় ধরাতে পারেনি ওণার সেই প্রশান্ত রূপে।
গলির মুখ থেকে টোটো ধরেও যাওয়া যায়, কিন্তু আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব। তাও পায়ে হেঁটে। তাই বুড়ো শিবের দিকে বাঁকলাম না। ডানদিকের রাস্তাটা ধরে সোজা হাঁটলে, একটা ভয়ানক সরু গলি পড়ে। নামই “মুতো গলি”। পাশাপাশি দুজন ছাড়ুন, একটু বেশী চওড়া হলে একজনই গলবেন না। তবুও ওটাই শটকাট।
গলির উল্টোদিকেই ছিল কেষ্ট কাকুর গম ভাঙানোর দোকান। এছাড়াও ভোর ভোর দুধ আর কাগজ বিলি করতেন কেষ্টকাকু। সোম থেকে শনি কেষ্টকাকু আর রবিবার মদনদার কাগজ। মদন বয়সে কেষ্টকাকুর থেকে অনেক বড় যদিও, গুমোরও খুব। খাঁটি সর্ষের তেলে ভাজা পেঁয়াজি আর ফুলুরি বিক্রি করতেন। পোড়া তেলটা ফেলে দিতেন। ভিড় হত খুব। সন্ধে নামলেই নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে গৃহাভিমুখী কপোতকপোতীরা ভিড় জমাত মদনদার দোকানে।হলদে বাল্বের আলোয়, মুখ পোড়ানো পেঁয়াজীর ভাপে জমে উঠত প্রেম। শেষ নব্বইয়ে আগুন লাগল পেঁয়াজের দরে, যে পাঁচিলের গায়ে গুমটি করে দোকান চালাত মদনদা, তারাই পার্টিকে ধরে তুলিয়ে দিল মদনদাকে। কেন কে জানে? হয়তো প্রমোটারের থাবা। মদনদা ছিল ঐ দলের একনিষ্ঠ সমর্থক। সব মিছিলে যেতেন মদনদা। লিফলেট, ভোটের স্লিপ বিলি করতেন। অথচ তারাই একদিন ভেঙে দিল দোকানটা। অভিমানে পেঁয়াজী ভাজাই ছেড়ে দিল মদনদা।
সেলুনটা অবশ্য এখনও আছে।সাবেকী  বাঙালী সেলুন। দাড়ি কামানো সাবান আর পাওডারের গন্ধ মাখা, আয়না মোড়া দেওয়াল। সামনে কাঠের ভারি চেয়ার। একগাল সাবান মেখে বসে কাগজ পড়ে বয়স্করা। বাবাও যায়। দাড়িই কাটুক বা চুল,পাঁচ সাত টাকা এক্সট্রা দিলেই ম্যাসেজ করে দেয় ওরা। দমাদ্দুম কাটারি চালায় ঘাড়ে মাথায়। বুড়ো মালিক ইউপি চলে গেছে,চিরতরে। তার ছেলেরা চালায়। ওরা আজকাল ফেসিয়াল করাও শিখেছে । বাবাকে প্রায় গছায়। “মুখটা চকাচক করে দেব কাকু। ” বেশী না পচাশ টাকার ফেসিয়াল,বাবা কুড়িটাকা দিলেও চলবে।
এতটা পথ হেঁটে এলাম, কয়েক বছর আগে হলেও কেউ না কেউ ঠিক দেখতে পেত এবং চিৎকার জুড়ত, “তুই কেন? বাবা কোথায়?” আজ কেউই বলল না। বলার মত লোকগুলো সব চলে গেছে এক এক করে। কেষ্টকাকুও তো চলে গেলেন। সুপুরুষ, ঋজু মানুষটা। জরাও যাকে স্পর্শ করতে ডরাত-

মুতো গলিটা যদিও একই রকম আছে। পাশ দিয়ে এঁকে বেঁকে গেছে খোলা নর্দমা। যতই নির্মল হোক বাংলা,স্বচ্ছ হোক ভারত, এখনও অনেক বাচ্ছা নর্দমাতে ইয়ে ঝুলিয়ে ইয়ে করে এই গলিতে। ইয়ের লোভে জমায়েত হয় সারমেয়কুল। ঐগুলোকে বড় ভয়। এত সকালে যদিও তারাও ঘুমন্ত মনে হল। বড় গলিতে মেশার মুখে একটা বাড়িতে বাসন্তী পুজো হত। পুঁচকে দুর্গা আসত। অসময়ের ধুনোর মনকাড়া গন্ধ আর ঢাকঢোল, কাঁসর ঘন্টার আওয়াজে কেমন বদলে যেত গলিটা। এখন হয় কি না,কে জানে?

আরো এগোলে, রাস্তাটা বেশ চওড়া। একটা বাড়ি পড়ত, দুই ধারে আর্চওয়ালা দুটো বিশাল দরজা, দরজার মাথায় মাধবীলতার মুকুট, ভিতরে প্রশস্ত খোলা উঠোন, উঠোন টপকে গাড়ি বারন্দা, দোতলায় গোল গোল ঝুল বারন্দা। উঠোনের এককোণে দাঁড় করানো থাকত একটা সাবেকী বড় কালো রাগী গাড়ি। সীমানা বরাবর কত যে গাছ ছিল। উঠোনে খেলে বেড়াত কয়েকটা বাচ্ছা। স্কুল জীবনে বইখাতা-পেন্সিল যাই কিনতে যেতাম, হাঁ করে দেখতে দেখতে যেতাম ইঁট বার করা বাড়িটাকে।মনে হত দেশলাই বাক্সের শহরে এক ঝলক টাটকা বাতাস। বাড়িটা বোধহয় স্মৃতির পাতায় হারিয়েই গেছে।  ফ্ল্যাট উঠেছে দেখলাম। দাঁড়িয়ে পড়ে গুনলাম, পাঁচতলা। গোলাপী সাদা ওয়েদার কোট পরা।  স্টিলের গ্রীল দেওয়া ব্যালকনি। ব্যালকনিতে বাহারী ইনডোর প্ল্যান্ট।
 বড় দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে শহরটা। সামনে একটা বাইক আর একটা সাইকেল গল্প করতে করতে যাচ্ছে। দুজনের হ্যান্ডেলে ঝুলছে বাজার ব্যাগ। কি নিয়ে গল্প এত ওদের? কি বাজার করল, তাই শোনাচ্ছে কি একে অপরকে। শোনাচ্ছে কি বাজারে লেগেছে আগুন। ঠিক যেমন বাজার করে ফেরার পথে, বাবা বা ছোটকাকু গল্প জুড়ত, পরিচিত মুখচেনা সকলের সাথে। কুড়ি টাকার বাজার নিয়ে রিক্সা করে ফিরত এককালে বাবা।  কাদের বাড়ি থেকে যেন ভেসে আসছে বাঙলা গান, “আমায় গুণ করেছে, খুন করেছে ও বাঁশি। ” ওপাশের জানলা গলে বেরিয়ে এলেন শাম্মি কাপুর,“বারবার দেখো, হাজার দেখো”। কি হল? আজ কি রবিবার? রঙ্গোলী শুরু হল নাকি? সামনেই বাস রাস্তা। রাস্তার ওপারে থরে থরে বসেছে শাকসব্জী, মেছো বাজারে মাছ। রাস্তায় গেঁড়ি গুগলী নিয়ে বসেছে মাসিরা। রাজকীয় ছাল ছাড়ানো পাঁঠা ঝুলছে সারি সারি। পাশেই  মুরগির দোকান থেকে বদ গন্ধ আর চিৎকার ভেসে আসছে আগের মতই। ফলের বাজারে লেগেছে আগুন। নামী বাজারুদের দরদস্তুর তাদের দৈহিক বিভঙ্গে সুস্পষ্ট।পোড়া পেট্রোল, পচা সব্জি, পাঁঠা-মুরগি-মাছের সাথে চারমিনারের গন্ধ ভাসছে বাতাসে। নব্বইয়ের দশক আবার ফিরে এল নাকি? ইশ ফিরে এলে বেশ হয়! পৃথিবীটা যদি স্বপ্নের দেশ হয়? ঝাঁপ ফেলা ওষুধের দোকান আর মুঠো ফোন ভেদ করা খুড়তুতো ভাইয়ের তেড়ে চিৎকার,“আমি এনে দেবো বললাম, বিশ্বাস হল না? তুই গেছিস কি করতে?” ঝপাং করে ফিরিয়ে আনল বাস্তবের রুখা মাটি। নাঃ দিবাস্বপ্ন মোটেই ভালো না। ফেরার পথে টোটো ধরাই ভালো। তার আগে একবার সিঙারা জিলিপির দোকানে ঢুঁ মেরে নিলে মন্দ হয় না, কি বলেন? 

Tuesday 6 August 2019

অনির ডাইরি ৬ই অগস্ট,২০১৯

সব চরিত্র কাল্পনিক-
দৃশ্য-১
“ম্যাডাম,একজন আপনার সাথে দেখা করবে বলে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে। ”
“দাঁড়িয়ে আছে কেন? আমি তো সকাল থেকেই এখানে। ”
“মিটিং চলছিল তো। তাই আসেনি। একা কথা বলতে চায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন। পাঠাব?”
দৃশ্য-২
-বলুন।
-নমস্কার ম্যাডাম। খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।
-ব্যাপার কি?
-আমি অমুক কোম্পানীতে কাজ করতাম। মানে নৌকরি। হঠাৎ একদিন বলে দিল আর আসতে হবে না।
-কেন? নোটিশ দিয়েছিল?
-না ম্যাডাম। হামি সুপারভাইজার ছিলাম। লেবারদের মধ্যে ঝামেলা সামলাতাম। হামি বাঘ আর গরুকে একসাথে এক মেশিনে কাম করবাতাম। একদিন হল কি,একদল লেবার আমায় যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করল। জাত-ধরম-ভাষা সবকিছু নিয়ে যাতা বলল ম্যাডাম। এতো গালি এ কোম্পানীতে কুনদিন খাইনি ম্যাডাম। শরীল খারাপ হয়ে গেল। প্রায় পচ্চিশ বছরের চাকরী জীবন হামার ম্যাডাম, এ ভাষায় কেউ আমার সাথে কথা বলার হিম্মত পায়নি এতদিন। দুদিন পর যখন জয়েন করলাম অমুক বাবু পুছলেন তুমি তো ছুট্টি নাও না, তাহলে অ্যাবসেন্ট হলে কেনো? আমি উনাকে বলছিলাম ম্যাডাম,মা কসম। সেই সময় প্রোডাকশন ম্যানজার সাহেব আমাদের পিছন দিয়ে যাচ্ছিলেন। হামি জানতামই না,যে উনি সব শুনছেন। উনার কি মনে হল, যে হামি বোধহয় উনাকে গাল দিয়েছি। হামাকে ডেকে বললেন, কাল থেকে তোকে চৌহদ্দির মধ্যে না দেখি। একটা কথাও শুনলেন না ম্যাডাম-

-কি যন্ত্রণা। আপনি কাঁদছেন কেন। আমার যা করার নিশ্চয়ই করব।
-পচাশ বছরের বুড়ো আদমি কুথায় কামধান্ধা পাবে ম্যাডাম। বালবাচ্ছাওয়ালা আদমি ম্যাডাম-
দৃশ্য-৩
-অমুক বাবু, আপনি না ঐ কোম্পানির  এইচ আর ম্যানেজার। আপনি থাকতে এক কথায় কারো চাকরি চলে যায়?
-(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)সত্যি বলছি ম্যাডাম, আমি জানতাম না। আপনার চিঠি পেয়ে খোঁজ নিলাম। ও গালাগাল করেছে শুনলাম। ব্যাপারটা বাবু অবধি গেছে।
-বাবু কে? আপনাদের ব্লকের সভাপতি।
-না। না। ম্যাডাম। বাবু মানে মালিক।
-মালিককে আপনারা বাবু বলেন?
-(দীর্ঘশ্বাস চেপে টাক চুলকে)যস্মিন দেশে যদাচার ম্যাডাম।
-হুঁ। তা গালাগালির গপ্পটা একটু শুনি। কে কাকে গাল দিয়েছে?
-আপনার বাদী,শ্রীমান অমুকচন্দ্র। তার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অমুক তুসুক বলে গালি দিয়েছে। আপনার সামনে সেসব উচ্চারণও করতে পারব না।
-তা বেশ। কিন্তু দিল কেন?
-তা জানি না ম্যাডাম।
-সাক্ষী কে?
-আছে। তমুক বাবু।
-(বাদীর দিকে ফিরে) এই তমুক বাবুই না জানতে চেয়েছিল আপনি আসেননি কেন দুদিন।
-জী ম্যাডাম।
-বাঃ। তিনি তো দেখছি আপনার বিরোধী পক্ষে যোগ দিয়ে, তাঁদের সাক্ষী হচ্ছেন।
-(বাদী) কি করবে ম্যাডাম। সবাই ভয়ে আছে। যদি ওকেও তাড়িয়ে দেয়। (ম্যানেজারের দিকে ফিরে) স্যার আপনি হামাকে এতদিন ধরে চেনেন। হামি কি এটা করতে পারি? কখনও করেছি স্যার?
-(ম্যানেজারের দুই চোখে মায়ার ঘোর কৃষ্ণ মেঘ) তুই একটু বাইরে যাবি ভাই?ম্যাডামের সাথে দু মিনিট কথা বলি।
-(ঘর ফাঁকা হতে) কি আর বলবেন? কেউ কান শুনতে ধান শুনলেও আপনারা তার চাকরী খেয়ে নেন। কত ক্ষমতা মশাই আপনার।
-ম্যাডাম, আপনি আমাকে এত মাস ধরে চেনেন। কতবার কত কেসে এসেছি আপনার ঘরে, আমি হুকুমের চাকর,কিন্তু শ্রমিক অদরদী বলতে পারলেন? আমি কিচ্ছু জানতামই না ম্যাডাম। এইচ আর সেকশন্ জানে না,প্রোডাকশন কাকে তাড়াচ্ছে। এ মৎসন্যায় পূর্বে ছিল না ম্যাডাম। নতুন মালিক সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে নতুন চামচা বাহিনী। পুরাতন চাকর যারা ছিল,তাদেরও অনেকে তৈল মর্দনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে এদের সাথে। ঐ ম্যানেজারটা ম্যাডাম, এখানকার প্রাক্তন অমুক নেতার ভায়রা ভাই। এরা কি মনে করে নিজেদের কে জানে? এক কথায় লোকের চাকরী খেয়ে নেয়। আমি দেখছি ম্যাডাম কি করতে পারি।
দৃশ্য-৪
-বলুন ম্যানেজার সাহেব। কি বলবেন।
-ম্যাডাম ওর চাকরী আর ফেরৎ দেওয়া সম্ভব নয়। মালিক হেব্বি চটে গেছে ওর ওপর। অমুক নেতা বাবুকে ফোন করে বলেছে, ওর কেসটা দেখতে।
-হুঁ। ইগোয় নিয়ে নিয়েছেন?
-হ্যাঁ। ম্যাডাম। অমুক বাবু এটা কি করলেন। আমার ওপর ভরসা নেই। যাঃ বাবা কাঁদছেন কেন?
-ম্যাডাম। পোড়া কপাল আমার। বিকালে চায়ের দোকানে গিয়ে বসেছিলাম। দুচারজন বন্ধু যারা জানে, জানতে চাইল কি হচ্ছে। আমি আপনার গল্প করছিলাম। খেয়াল করিনি যে গাট্টু বাবু কখন এসে বসেছে।
-গাট্টু বাবু?ও হেরে যাওয়া সভাপতি।
-জী ম্যাডাম। উনি আমার কাঁধ চাপড়ে বললেন, নো চিন্তা। আমি ম্যাডামকে বলে দেব। বললেন আমি দেখছি কি করে তোমায় তাড়ায়।
-উফ্ অমুক বাবু, আপনি একটা রত্নধারণ করুন মাইরি। লোকের সাথে খোশ গপ্প করার সময় এবার থেকে চোখটা অনুগ্রহ করে খুলে রাখবেন। একবার এই কারণে আপনার চাকরী গেল। দ্বিতীয় বার সাজানো খেলা বিগড়ে গেল। গাট্টু বাবু,নিজের ছাড়া কোন জম্মে কার কাজে এসেছেন?আমায় ফোন করেছিল। আমি পাত্তা দিইনি। মালিককে খুঁচিয়ে দিয়েছেন। এবার কি হবে?
-(ম্যানেজার)ম্যাডাম, যদি আপনি চাপ দেন,ওকে নেবে হয়তো,কিন্তু দুদিন বাদে আবার-
-সে কি আর জানি না। এত রাগ হচ্ছে আপদ গাট্টুর ওপর। সাজানো বাগান শুকিয়ে দিল শালা। বলুন বাদী বাবু এবার কি করি?
-ম্যাডাম আমি একটা কথা বলি?
-আপনি আর কি বলবেন?বাবুর কথার ওপর আপনি যেতেই পারবেন না।
-ম্যাডাম, আমিও নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে ম্যাডাম। রবি ঠাকুর নজরুল পড়ে বড় হয়েছি। কোন বড় কোম্পানীতে এইচ আর ম্যানেজার হতে পারিনি। এই কোম্পানীতেও কোনদিন এক নম্বর হতে পারব না। কারণ শ্রমিকের মেরে মালিকের অস্থানে তৈলমর্দন করতে আমি অপারগ।
জানেন তো ম্যাডাম একবার চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে গেছি, আমার পরিচিত আর একজনও গেছে। সে ইন্টারভিউ দিয়ে বেরোবার পর জানতে চাইলাম,“কেমন দিলি?” বলল, দারুন। জানতে চাইলাম,“ওরা কি জানতে চাইল?” বলল,“আমার অ্যাচিভমেন্ট। আমি বললাম,এতজন শ্রমিকের এতটাকা গ্রাচুইটি মেরে দিয়েছি। ” আমি হতবাক। এটা অ্যাচিভমেন্ট-
-হ্যাঁ জানি। তারপর আপনি ইন্টারভিউ না দিয়েই কেটে পড়লেন। পঁচিশ বার শুনেছি। এই কেসে কি হবে?কি রিলিফ দিতে পারেন?
-ম্যাডাম ও সব টাকা পয়সা আগে তুলে নিক। না হলে ছুঁতোনাতায় ওর ন্যায্য প্রাপ্য আটকে দেবে।
-সে তো বেশ বুঝতে পারছি। আপনি একটু বাইরে যাবেন প্লিজ। বাদীর সাথে একান্তে একটু কথা বলি? দেখুন বাদীবাবু, আপনি ভেবে বলুন। আপনি কি চান। যদি চাকরী ফেরৎ চান, তাহলে আরও কটা দিন কেস গড়াবে। আমার ক্ষমতায় মিটবে না, হয়তো আমার বড় সাহেবের কাছে যেতে হবে। যা বুঝছি, ওণার সাথে কথা বলেও এটা মিটবে না।ফলে ফেলিওর রিপোর্ট পাঠাতে হবে সদর দপ্তরে। সেখান থেকে কোর্ট। কেস চলবে। মালিকের কোটি টাকা আছে,কেস চালাতে সমস্যা নেই। আপনি কি চান মনঃস্থির করুন। ব্যাপারটা আর আমার হাতে নেই। যদি আপনি লড়তে চান, আমি পাশে আছি। আমার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। আমার রিপোর্ট পুরোপুরিভাবে আপনার পক্ষে থাকবে। বড় সাহেবের ঘরে ডেট ফেলি?
দৃশ্য -৫
-বলুন বাদী বাবু কি সিদ্ধান্ত নিলেন।
-লড়তে পারব না ম্যাডাম। ছেলের দিল্লী মে অ্যাডমিশনের জন্য কিছু টাকা লোন চেয়েছিলাম ওটা জলদি পাইয়ে দিতে পারেন?ছেলেটার বছর বরবাদ হোয়ে যাবে।
-বিবাদী বাবু শুনছেন?ওর চাকরী চাই না। টাকা পয়সা গুলো মিটিয়ে দিন।
-ম্যাডাম বাবু খুব খেপে আছে। বলছে কোর্টে গেছে যখন ওখানেই বুঝে নিক।
-বাঃ। তাহলে তো এবার আমাকে বুঝতে হয়।আপনি ভালো করে বোঝান, ওর প্রাপ্যগুলো যেন আমার সামনে মিটিয়ে দেওয়া হয়।
-(বাদী কাঁদতে কাঁদতে)ম্যাডাম কোয়ার্টার খালি করে দিতে বলছে। আমি বেকার বসে আছি। কিছু টাকা না দিলে বাড়ি কোথায় পাব? আর ছেলের অ্যাডমিশন?
দৃশ্য-৬
-নাও হে,বুঝে নাও। ম্যাডামের সামনে তোমায় ক্যাশ দিলাম ষাট হাজার টাকা। সই করে নাও।
-এই বিবাদী বাবু,এই না আপনি সেদিন বললেন, আপনার বাবু ক্ষেপে আছে। তাহলে টাকা দিলেন কি করে?
-(তোতলাতে তোতলাতে)ম্যাডাম এটা একটু লিবার্টি নিলাম। এটা ওর কোঅপারেটিভের টাকা। আমি সামলাই কোঅপারেটিভ। মালিক জানতে পারলে আর আমার গর্দান থাকবে না। ভুল টিমে খেলি বটে,তবে শিরদাঁড়া বাঁচিয়ে। বেকার মানুষের জ্বালা আমি বুঝি। একদিন অফিসে গেছি, আমার মেন্টর বলল,“তুমি রিজাইন করো। আজই। ”সন্দেহ করত যে আমি ওর পাওয়ারে ভাগ বসাতে চাই, তাই। আমির বউ সরকারী বাড়ির মেয়ে। শ্বশুর,শালারা সবাই সরকারী চাকুরে। ভাবতেই পারত না, সকালে ভাত খেয়ে অফিস বেরোলাম আর বিকালে আমি বেকার। নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে গেল বউয়ের। ছেলেকে সবে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কি করি? (ধরা গলা ঝেড়ে) তো যাই হোক, আপনি ম্যাডাম আসলে আপনাদের প্রজন্ম বড় অধৈর্য । জীবন কি এখানে শেষ নাকি। বড় মানুষদের রাগ এই আছে,দুসপ্তাহ বাদে আর নেই। আমি রইলাম, বাবুর মাথা ঠাণ্ডা হলে জানাব। ও যেন তখন গিয়ে আবার চাকরী চায়।
-এই আমি ওসবে ভুলছি না। ওর প্রাপ্য টাকা-
-দেব ম্যাডাম দেব। আপনার সামনে সব দেব। ও শুধু মালিকের দাবী মত বাড়িটা খালি করে দিক।
দৃশ্য-৭
- আরে ম্যানেজার বাবু? আজ কি কোন কেস আছে নাকি?
-না ম্যাডাম। এমনি এলাম দেখা করতে। কতদিন আপনার বকাঝকা  খাইনি।
-কেন আপনার বাবু বকছে না বুঝি।
-এঃ কার নাম করলেন? ও ভালো কথা সেই বাদী বাবুর কথা মনে আছে?সেই যে কথায় কথায় কাঁদত।
-হুঁ। তার তো সব পাওনাগণ্ডা  আপনারা মিটিয়ে দিয়েছেন। ফাইলও বন্ধ। বছর ঘুরে গেল। আজ হঠাৎ  তাঁর কথা কেন?
- (দরজা খুলে) আয় হতভাগা। আয়। ম্যাডামকে প্রণাম কর।
-এই এসব কি?
-ম্যাডাম হামার ছেলে কম্বাইনড্ ডিফেন্স পেয়েছে।
-বাঃ। অভিনন্দন।
-ম্যাডাম আমিও চাকরী ফিরে পেয়েছি।
-সেকি? কনগ্রাচুলেশনস্। ওখানেই? কি করে?
-(ম্যানেজার বাবু)বলেছিলাম না আপনাদের প্রজন্ম বড় অধৈর্য। ঘা শুকোতে সময় দিতে হয়। আমার গল্পটা বলতে গেলাম, শুনলেন না তো। চাকরী হারিয়ে কি কষ্টে যে কাটিয়েছি। এক জায়গায় ইন্টারভিউ দিলাম, মালিক বলল, “আপনার আগের মালিক আপনার খুব তারিফ করছিল। তবে উনি ক্যাটেগোরিক্যালি বললেন, যে আপনি যে স্যালারি পেতেন বলে জানিয়েছেন, তার থেকে অনেক কম দিতেন আপনাকে। ” লজ্জায় ব্রিফকেস নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমায় মিথ্যাবাদী বলল?তবে বউ বটে একটা আমার। সব স্যালারি স্লিপ গুছিয়ে রেখেছিল। নিয়ে গিয়ে দেখালাম,বললাম,“আমি চাকরী ছাড়তে বাধ্য হয়েছি বটে, তবে আমার মালিককে নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আর হ্যাঁ উনি আমি তো দূরের কথা আমার বসের বস্ কত বেতন পান তাও বলতে পারবেন না। ” শালা -অ্যাল্ মাপ করবেন ম্যাডাম। তো যা বলছিলাম, আমি ধৈর্য ধরেছি, চেষ্টা করে গেছি। তারপর পেলাম এখানে চাকরী। প্রাক্তন মেন্টর, যে আমায় খেদিয়েছিল, একদিন ফোন করে বলল,“অমুক ফরগিভ এন্ড ফরগেট?” বলল, “তোমার কোয়ার্টারে যাব”। বললাম আসুন। উনি এলেন। এখনও আসেন। আমার বউ ওণাকে দেখে ঘেন্নায়  মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি কিন্তু সদাহাস্যময়। আপনি উঁচু চেয়ারে বসে আছেন তো কি, কন্যাসমা। বড় ভালোবাসি আপনাকে। তাই বলি ধৈর্য ধরে খেলুন, জীবন বড় মধুর। দেখবেন প্রতিপক্ষেও কোন না কোন বন্ধু পেয়েই যাবেন।  আর এই ব্যাটা প্রাক্তন বাদী, মিষ্টি কে খাওয়াবে?
©Anindita's blog

Friday 2 August 2019

অনির ডাইরি, ২রা আগস্ট, ২০১৯


ধনিয়াখালির শ্যামল আহেরী ছিলেন পেশায় রঙ মিস্ত্রী।বেশ কিছুদিন আগের কথা, হরিপাল থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন, বসেছিলেন জানলার ধারে। ভাবতেও পারেননি, দিনের শেষে দুটি বাসের রেষারেষি রাতারাতি বদলে দেবে ওণার জীবন। স্বচক্ষে  প্রত্যক্ষ করেছিলেন, কিভাবে ওণার ডান হাতটা কেটে  পড়ে মাটিতে। খবরটা তৎকালীন স্থানীয় সংবাদ পত্রেও ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। বাসওয়ালারা তাই বলে শিক্ষা নিয়েছে, বা রেষারেষি বন্ধ করেছে,এমন ভেবে বসবেন না কিন্তু।

হ্যাঁ, বন্ধ হয়েছে বটে, তবে সেটা হল শ্যামল বাবুর উপার্জন। সেই থেকে বেরোজগার হয়ে বাড়িতে বসে। কি ভাগ্যি আমাদের নির্মানকর্মী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতে বসা এসএলও দিদির মুখে শোনেন, অঙ্গহানি, বিশেষ করে একটা হাত কাটা গেলে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

সেই থেকে আমাদের ধনিয়াখালি শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রে ওণার আনাগোনা। ফর্ম দিয়ে সব বুঝিয়ে দেন ইন্সপেক্টর বাবু। সেই মত জমা ও করে দেন শ্যামল বাবু। ইতি মধ্যে বদলে গেছে বেশ কিছু নিয়মকানুন। সেই মোতাবেক নতুন ওয়েবসাইটে ওণার ডিটেলস্ তোলা হয়, নতুন পোর্টালটি আবার আধার নম্বর ধরে মেলায়, এই আধারনম্বরের মালিকের অন্য কোথাও বই নেই তো। অন্য কোথাও থেকেও অনুরূপ সুবিধা পাচ্ছেন না তো? সারা পশ্চিমবঙ্গের এক দেড় কোটি নথিভুক্ত মানুষের অগুনতি ডেটার সাথে তুল্যমূল্য বিচার করতে লেগে যায় বেশ কিছুদিন। যতদিন না পোর্টাল বলছে ইউনিক কেস, ওণার সামাজিক মুক্তি কার্ড জেনারেট করতে পারে না ইন্সপেক্টর। কার্ড যখন জেনারেট হল,ততোদিনে বেজে উঠেছে নির্বাচনের দামামা। ফলে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয় শ্যামল বাবুকে। ক্রমশই অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকেন উনি। প্রায়ই চলে আসতেন ইন্সপেক্টর সাহেবের কাছে, সাহেব বলতেন,“ধৈর্য ধরুন। ” কতদিন ধৈর্য ধরে থাকা যায়? মাথা গরম করে দু চার কথা শুনিয়ে বসতেন শ্যামল বাবু। বেচারা ইন্সপেক্টর আমার কপাল বৈগুণ্যে ঝাড় খেত।

 যাই হোক, সবুরে মেওয়া ফলেছে। সম্প্রতি সামাজিক সুরক্ষা যোজনায়  অঙ্গহানির জন্য ১লক্ষ টাকা পেয়েছেন শ্যামল বাবু।  আপাততঃ মধুরেন সমাপয়েৎ। ধনিয়াখালি শ্রমিক কল্যাণ সহায়তা কেন্দ্রে এসেছিলেন,ইন্সপেক্টর শ্রী চঞ্চল মণ্ডলকে ধন্যবাদ জানাতে। বার বার বলে গেছেন শ্যামলবাবুর চোখে “ইঞ্চপেক্টর বাবু” সাক্ষাৎ ভগবান।

চঞ্চল ঝাড়টা বেমালুম হজম করে গেলেও এত প্রশংসা বোধহয় হজম হয়নি, পেটরোগা ভালোমানুষ ইন্সপেক্টর আমার। ম্যাডামের বড়ই অনুগত। শ্যামল বাবুকে ধরে এনেছিল আমার কাছে। “অনেকটা দেখ আমি বাড়ছি মামি” সুলভ ভঙ্গীতে। খুব খুশি হলাম শ্যামল বাবুর সাথে প্রত্যক্ষ আলাপে। শ্যামল বাবু কি বললেন জানেন? ওণার জবানীতেই লিখি,“খুব উপকার হল স্যার/ম্যাডাম।বড় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম গো। এখন আবার বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাচ্ছি। ” আমরা এএলসি ইন্সপেক্টর যদিও পইপই করে বললাম, টাকাটা বুঝে খরচ করতে। শ্যামল বাবু জানালেন, উনি একটা দোকান দিতে চান। অনেক শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য শ্যামল বাবু। ভালো থাকুন।
আর হ্যাঁ, দিনের শেষে আমাদের(এএলসি-ইন্সপেক্টর-সিকেসিও-এসএলও) সান্ত্বনা এই যে, আমরা অন্তত একজন বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।