#অনিরডাইরি #কাঁথিরকিস্যা
এখন অনেক রাত। আজ আমার বাড়ি ফাঁকা। পরীক্ষা শেষে দাদু-দিদার কাছে গেছেন শ্রীমতী তুত্তুরী। ঘুম আসছে না, ইন্সটাগ্রামে নিয়মিত ফলো করি এমন একজন যশস্বী আর্মেনিয়ান সুন্দরীর ডায়েট আর ব্যায়ামের ব্যাপারে বিশদে পড়াশোনা করলাম। মাত্র তিন সপ্তাহে সাত কেজি ওজন ঝরিয়ে দুনিয়াকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছে সুন্দরী। দেখলাম কার্বোহাইড্রেট প্রায় খানই না। কেবল বেকন, এগস্ আর গ্রীন জুস্, গ্রীন কফি ইত্যাদি খান এবং পান করেন। ব্যায়ামের চার্টটা তো আরো সাংঘাতিক, কতকিছু করেন, বাপরে! সবই আবার ২০/৩০ খানা রিপিটিশন। সাধে কি ত্বকে পিছলে যায় প্রভাতী সূর্যের সোনালী রশ্মি। উন্মুক্ত কটিদেশের ভাঁজে স্বছন্দে রাখা যায় টলটলে সোমরসের গ্লাস।
পড়তে পড়তে মনে পড়ল, খাবার ঘরের তাকে এক প্যাকেট ঝুরি ভাজা দেখলাম না? রাতের রান্না করে যে ছেলেটি, দিনের বেলা একটা দোকান চালায়। তার দোকানের ঝুরি ভাজা। বড়ই সুস্বাদু। মটর ডালের বেসন দিয়ে, খাঁটি সর্ষের তেলে ভাজা। ভাবতেই টপ্ করে এক ফোঁটা জল পড়ল মুঠি ফোনের স্ক্রিনে। বিদায় সুন্দরী। কাল সকালে আবার দেখা হবে। আপাততঃ অভিসার "ঝুরি ভাজা।"
পা টিপে টিপে পেরিয়ে গেলাম গেস্ট রুমের বন্ধ দরজাটা। ঘরটা অন্ধকার বটে, ভিতর থেকে ভেসে আসছে মৃদু আফ্রিকান সঙ্গীতের সুর। সপ্তাহান্থে গৃহকর্তা আপাততঃ মগ্ন সঙ্গীত সুধা পানে। এমন সময় ডাকাত পড়লেও তাঁর টনক নড়ার কথা নয়। নিশ্চিন্ত হয়ে আরো কয়েক কদম এগিয়ে গেলাম। সামনেই খাবার ঘরের চৌকাঠ। ডিঙোতেই যাব, এমন সময় বন্ধ দরজার ওপার থেকে ভেসে এল জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর,‘ কিচ্ছু খাবি না কিন্তু।’
ধ্যাৎ তেরি। বিদায় ঝুরি ভাজা। আপাততঃ অন্ধকার ঘরে বসে প্যাচেলবেল ক্যানন ডি শুনছি। মাঝে মাঝে বুঝিয়ে দিচ্ছে শৌভিক, ‘চোখ বন্ধ করে শোন। ভদ্রলোক বাখের পূর্বসুরী। এঁর এই একটাই কম্পোজিশন পাওয়া গেছে। আরো কিছু আছে, কিন্তু সেগুলো ওণারই কি না বলা মুস্কিল। কিন্তু এটা মাস্টার পিস্। শুনতে শুনতে নেশা ধরে যায়। এরপর তোকে চ্যারিয়টস্ অফ ফায়ারের থিম সং শোনাব। কম্পোজারের নাম ভ্যাঞ্জেলিস্। কতবার, কত সিনেমায় যে ব্যবহার হয়েছে মিউজিক'টা।’ শুনতে শুনতে চোখের সামনে সত্যিই ভেসে উঠছে খোলামেলা পোশাকে সিক্ত সোনু ওয়ালিয়া আর কবির বেদী। সিনেমার নাম খুন ভরি মাঙ্গ। " ম্যায় তেরি হুঁ জানম, তু মেরি জিয়া"। দূরদর্শন বরাবর কেটে দিত গানটা।
ঘড়ির কাটা রাত একটা ছাড়ালো। জেবিএলের স্পিকারের দখল নিয়েছেন রাহত ইন্দোরী, এ আর রহমান আর সোনু নিগম্। “জিন্দেগি হাত মিলা, সাথ চল্, সাথ মে আ। উম্র ভর সাথ রহি, দো কদম অউর সহি। দো কদম অউর সহি---- ।" রাত গড়াচ্ছে। জানলার বাইরে, কাঠগোলাপ গাছের ফাঁকে ছুটোছুটি করছে জোনাকীর দল। প্রতুল মুখোপাধ্যায় গান ধরেছেন, “গিয়েছিলাম ফুলের হাটে,তোমারই জন্য।” আচ্ছা আজ কি, ভালোবাসার দিন? আজ কি, ভ্যালন্টাইন্স ডে? কে জানে, গুলিয়ে যাচ্ছে সব হিসেব। প্রতুল মুখোপাধ্যায় গেয়েই চলেছেন, ‘---রাত তো থমথম্। আমরা ধান কাটার, গান গাই। আমরা তাঁত চালাই, গান গাই। আমরা প্রাণ বাঁচাই, চেষ্টা করবই। আজকে জোর কদম চলচল। আজকে হাত মিলাই ভাইভাই। ভাঙব এই শেকল গাঁয় গাঁয়।” বলি ওহে আর্মেনিয়ান সুন্দরী, তোমারও কি আছে নাকি এমন রাত? থাকলে ভালো। না থাকলে চলো ভাই, ঝুরি ভাজা খাই, অবশ্য যদি অনুমতি পাই।
No comments:
Post a Comment