Sunday 31 July 2016

মধ্যরাতে মনখারাপে-


নমস্কার কলকাতা। কেমন আছেন সবাই?
 ঘড়ির কাঁটা বলছে এখন মধ্যরাত্রি , আর আমি রুদ্রাণী নিয়ে এসেছি আপনাদের প্রিয় অনুষ্ঠান ,‘মধ্যরাতে মনখারাপে-’।
তিনদিন ধরে আকাশভাঙা বৃষ্টি,  জল থইথই মহানগর।
জনহীন পথঘাট, এমন রাতে নরম বিছানা ছেড়ে আসতে কার ইচ্ছা করে?
কিন্তু আর জে মনখ্যাপার যে মন খেপেছে, তাই বুঝি সে নিরুদ্দেশ-
আর আমি? আমি নিরুপায়- আমি নিবেদিত প্রাণ আমার শ্রোতাবন্ধুদের প্রতি।
তাই তো এসে হাজির হয়েছি,  এবার আপনিও আসুন না-
 খুব জমবে, আপনি, আমি আর?
এমন জনহীন বর্ষণমুখর মধ্যরাতে গা ছমছমে ভূতের গল্প।
আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, ভূত।  জানা আছে কি এমন গল্প?  তাহলে এখুনি ফোন করুন  উদ্দাম এফ এম এ।
আমি বসে আছি আপনার পথ চেয়ে না জানি কোন শতাব্দীর ওপার থেকে।
দেখি, লাইনে কে আছে? হ্যালোঃ
- মিতু।
-ক-কে? ভুল হয়ে গেল দাদা আমি মিতু নই। আমি রু-
-জানি। তুমি আর জে রুদ্রাণী, কিন্তু সে তো তোমার ছদ্মনাম মিতালি ।
- মি-তা- লি?
-হ্যাঁ মিতালী। লাখটাকার লাখটোকিয়া   স্কুলের ফার্স্ট গার্ল মিতালি ধাড়া দেখ তো আমায় চিনতে পার কি না?
- কে তুমি?
-সে কি? আমি না তোমার প্রথম প্রেম?
- কি যাতা বলছেন? আমি ফোন রাখছি।
- দেখ রাখতে পার কি না। আজ আবার ১৬ই অগস্ট। আজ আবার শনিবার।
- উফ লাইনটা কাটছে না কেন?কন্ট্রোল রুমে সবাই ঘুমোচ্ছে না কি?
- ভয় করছে মিতালী? তবে যে বললে এমন জনশূন্য বর্ষণময় মধ্যরাতে শুধু তুমি আমি আর গা ছমছমে ভূতের গল্প?
- দেখুন, ভাল লাগছে না আর-।
- ভাল তখন তো লাগত? তুমি আমি আর ভিজে কৃষ্ণচুড়া। আমার লাগত জান।
মনে হত এভাবেই হেঁটে যাই তোমার পাশাপাশি।
অবিশ্বাসী বস্তুবাদী মন আমার ক্ষণিকের জন্য  বিশ্বাস করে নিত তোমার মধুমাখা কথা গুলো।
জানতাম।  বিশ্বাস কর, জানতাম লাখটোকিয়া স্কুলের মিতালিরা কখনই গুরুচরণ শিক্ষালয়ের রুপমদের প্রেমে পড়ে না। তবুও-
আজ বলবে? কেন খেলেছিলে সেদিন?
-ফোন রাখুন।  প্লিজ কেউ কি নেই আজ এই স্টেশনে। সবাই মরে গেল নাকি?
- একি মিতু তুমি কাঁদছ? আমার মাও কেঁদেছিল জানো? খুব কেঁদেছিল।  তোমায় তো সবই বলেছিলাম, আমাদের ভাড়াবাড়ি। বাবার মুদির দোকান-
তিন দিনের জ্বরে যখন চলে গেল বাবা আমি তখন ষোলো । মা চাইতো আমি দোকান চালাই।
আমার শখ কমপক্ষে স্নাতক হব - তোমার সাথে প্রথম দেখা বছর খানেক পর।
-রুপমঃ।  তুমি তো-
- চিনলে মিতু? অবশেষে।
- তু তুমি তো?
- মরে গেছি? ধাক্কা  দিয়েছিলে তুমি। মনে আছে?
-বিশ্বাস কর।  ইচ্ছে করে নয়- আমি-
-কি?  বোঝোনি বুঝি? পড়লে আমি বাঁচব না?
- রাগের বশে।  রুপম বয়সটাও কম ছিল- প্লিজ বোঝ।
- দুর্ঘটনা? এটাই বলেছিল মাকে।  তোমার কাকা মস্ত পুলিশ। তোমার বাবার অনেক টাকা।
-রুপম- আমি-সরি।
-সরি? বড্ড ছোট শব্দ সোনা- খোঁজ নাওনি তো, এত বছরেও।
- ওরা বলেছিল তুমি- তুমি-
-মরে গেছি? আর তুমিও বিনা  বাক্যব্যয়ে চলে গেলে ব্যাঙ্গালোর? পড়া, চাকরি, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফিরে এলে কলকাতা। এখন তুমি আর জে রুদ্রাণী। রোজ সকালে, “মন -খেয়া”তে সুরে ভাসাও কলকাতা।
-এত খবর? তবে কি?
-নাঃ। বেঁচে নেই। হারিয়ে গেছি চিরতরে ষোল বছর আগেই।
- কে তুমি? কি চাও?
- মনে আছে মিতু, তুমি বলেছিলে হবে আমার ছায়াসঙ্গী।  আজ আমি নিজেই ছায়া- সঙ্গীর বড় অভাব- তাই তো তোমায় ডাকতে এলাম।
-নাঃ।  নাঃ।  নাঃ।
- এস মিতু।  তিনটৈ বাজে, আর দেরি নয়-
- না না না না না♥♣♠♦
#aninditasblog
https://amianindita.blogspot.in

আবার দেখা হয় যদি-



আচ্ছা যদি আবার দেখা হয়?
মাঝে মাঝেই ভাবি জানো, তুমিও ভাব কই?
ঘড়ির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি, একা উদাস-আনমনা,
হঠাৎ এগিয়ে এলে তুমি, “কেমন আছিস?”
পেটের মধ্যে ডানা ঝাপটালো  হাজার প্রজাপতি, গলার কাছে প্রবল ব্যথা।
তবুও তোমায় চিনলাম কই, ঘুড়িয়ে নিলাম মুখ।
কেমন নীলচে হল তোমার মুখখানি, ব্যথা পেলে বুঝি?
একটু না হয় পেলে, রোজই তো পাই আমি।
বলেছিলাম তোমায়, মনে আছে? তুমিই প্রথম পুরুষ, বাবা হারিয়ে গেছে সেই কবে,
চটকলে কাজ করত বাবা, মস্ত নেতা, সাম্যের গান গেয়ে দুবেলা দুমুঠো ভাতের  দাবি খুব বেশি ছিল কি?
সেই গানই বুঝি কাল হল, হঠাৎ হারিয়ে গেল বাবা, আমি তখনও ঘুমিয়ে মায়ের অন্তরে।
তারপর সেকি লড়াই! দুমুঠো ভাতের জন্য, জানে শুধু মা আর দিদি।
বাসন মাজতো মা, আর সেলাই করত দিদি, আর আমি? স্কুল পেড়িয়ে পাড়ি দিলাম কলেজে।
কলেজে দেখা তোমার সাথে, মনে আছে? আমার আছে জানো, তোমার  সেই সমুদ্র নীল জিন্স আর ভ্যানিলা গন্ধি শার্ট- লুকিয়ে দেখতাম তোমায়, লজ্জা করতো খুব। আমার সেই সস্তা ছিটের জামা।
কি ভালোই না বেসেছিলাম তোমায়! তুমিও বেসেছিলে ভালো, তাইতো বলেছিলে তখন?
কলেজ শেষে হঠাৎ হারিয়ে গেলে তুমি, ফোন করেছি কত, তোমার মা ধরতো জানো?
বলতো ‘বোকা মেয়ে’। সত্যি কি বোকা ছিলাম আমি?
সত্যি দাঁড়িয়ে আছি আজো সেই ঘড়ি মোড়ে, থমকে গেছে ঘড়ি। কিন্তু তুমি কোথায়?
এবার যদি প্রশ্ন কর। কেমন আছি আমি, জবাব দেব দেখো।

Tuesday 19 July 2016

অনির ডাইরি ১৮ ই জুলাই


( ১৬ ই জুলাইয়ের পর)
আজ ১লা জুলাই, প্রাতরাশ করেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম মহীশুরের উদ্দেশ্যে। রাতে বৃষ্টি হলেও, সকালটা বেশ ঝরঝরে। গাড়িতে মালপত্র ওঠানো হচ্ছিল যখন, আমি আর অন্বেষা দুটো বাচ্ছাকে নিয়ে শেষ বারের মত ফার্ন হিলের আশপাশটা ঘুরে নিলাম। শৌভিকের এক দক্ষিণ ভারতীয় বন্ধু বেড়াতে আসার আগে বলেছিল, “তোমরা দার্জিলিং এর রাজ্যের লোক হয়ে, খামোখা উটি যাচ্ছ কেন?” কথাটা হ্যতো সত্যি, কিন্তু উটি আমাদের দারুণ ভাল লেগেছিল। তার মুখ্য কারণ অবশ্যই ফার্ন হিল স্টারলিং রিসোর্ট, শহরের বাইরে, উঁচু নিঃসঙ্গ টিলার ওপর ছবির মত সুন্দর হোটেল। আমার আজ অবধি বেড়াতে গিয়ে থাকা সবথেকে ভাল হোটেলের গুলির মধ্যে অন্যতম। ফার্ন হিলের আর একটা বৈশিষ্ট হল ওদের এলাহি ব্রেকফাস্ট। অধিকাংশ ভাল হোটেলের মত, এখানেও ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি। বিশাল ডাইনিং হল জুড়ে, থরে থরে সাজানো নানা ধরণের ব্রেড, যথা- সাদা ব্রেড, মিক্সড গ্রেন ব্রেড, ক্রশা ব্রেড, স্টার শেপড ব্রেড বাকি গুলির তো নামই জানি না। পাশেই টোস্টার রাখা আছে, মনের মত করে সেঁকে নেবার জন্য। একটা বড় কাঁচের বোলে ডুমো ডুমো করে কাটা মাখন, প্যান কেক, ওয়াফ্লস, নানা জাতের কেক, নানা ধরণের জুস (সব্জি এবং ফল), গরম, ঠান্ডা দুধ, মিল্ক শেক, তিন চার রকমের সিরিয়াল যেমন- কর্নফ্লেক্স, ওট ফ্লেক্স, মুসেইলি, তুত্তুরির প্রিয় চকোস্, এছাড়া ডুমো ডুমো করে কাটা দু-তিন রকমের ফল (যেমন- তরমুজ, ফুটি বা পাকা পেঁপে), নানা ধরণের স্যালাড, স্প্রাউট (কলা ওঠা ছোলা ও কাঁচা মুগ), মধু, জ্যাম, সটে ভেজিটেবলস। এছাড়া দেশি যাবতীয় জলখাবার যেমন পুরি- সব্জি, চানা-বাটুরা, ইডলি, সাম্বার, বন্ডা, পাওভাজি, উপমা, উত্তপম, চিঁড়ের পোলাও, পোঙ্গল ইত্যাদি। আমিষ কাউন্টার আলাদা- সেখানে সিদ্ধ ডিম, স্টিমড চিকেন সসেজ, গ্রিল্ড বেকন ইত্যাদি। এতেও না পোষালে, শেফ কাউন্টার আছে, সেখানে হাসি মুখে শেফ দাঁড়িয়ে আছেন, বললেই গরম গরম অমলেট (সাদা বা মশলা যা আপনার রুচি), পুরি বা ধোসা বানিয়ে আপানার টেবিলে পাঠিয়ে দেবেন। চাইলে আপনার মনের মত ব্রেডও পাবেন, ফ্রেশলি ব্রেকড।

তাই বলে আমরা কেউ রাক্ষস ছিলাম না যে এত কিছু চেখে দেখব। অন্বেষা তো মোটামুটি ফলের ওপর দিয়েই ব্রেকফাস্ট সারত। আর তুত্তুরির ছিল চকোস আর ঠান্ডা দুধ। আর আমার প্রিয় ব্রেকফাস্ট ছিল, হাল্কা করে সেঁকা ক্রসা ব্রেড আর মাখন, সাথে এক টুকরো চিকেন সসেজ বা মশালা অমলেট। শেষে এক গ্লাস মিল্ক শেক যেটার অর্ধেকটা তুত্তুরি খেত। এত ভাল ক্রসা ব্রেড আমি জীবনে খাইনি, আর সত্যি কথা বলতে কি এর থেকেও অনেক বেশি আইটেম হয়তো অন্য জায়গায় পেয়েছি, কিন্তু এত মাখনের প্রাচুর্য কোন হোটেলে পাইনি, সর্বত্রই আপনার টেবিলে বা ওদের কাউণ্টারে সিল করা আমুল মাখনের ছোট কিউব থাকে, ছুরি দিয়ে লাগিয়ে নিতে হয়। কিন্তু ফার্ন হিলেই প্রথম দেখলাম, বড় পাঁচশ গ্রাম আমুল মাখন কে কেটে টুকরো টুকরো করে কাঁচের বাটিতে রাখা থাকত। যার যতগুলি ইচ্ছা নিত, প্রায়ই ব্রেকফাস্ট করে ফেরার পথে দেখতাম, অথিতিরা খেয়ে উঠে গেছেন, প্লেটে পড়ে আছে একাধিক বড় বড় অভুক্ত মাখনের টুকরো। তখন সত্যি দুঃখ হত, হোক কমপ্লিমেন্টারি, তবু আমাদের মত দেশে, এই অপচয় কি সত্যিই মানা যায়?
সাড়ে নটায় উটি ছেড়ে বেরনোর কথা ছিল, বের হতে হতে প্রায় দশটা- সোয়া দশটা হয়ে গেল। যেতে প্রায় চার- সাড়ে চার ঘণ্টা তো লাগবেই। দেবু উৎফুল্ল হয়ে বলল, “লাগুক লাগুক। মাহিশুরের হোটেলে চেক ইন টাইম বেলা দুটো। আগে গিয়ে কি করবি? আর আমরা যাব দু-দুটো ঘন জঙ্গলের (পড়ুন অভয়ারণ্য) মধ্যে দিয়ে, ড্রাইভার সাব জিতনা দের লাগে ঠিক হ্যায়।” সত্যি আমরা দুটি অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে যাব, প্রথমটা তামিলনাড়ুর মুদুমালাই আর দ্বিতীয়টা কর্ণাটকের বন্দিপুর। ড্রাইভার জানিয়েই দিল, এই জঙ্গলে প্রচুর জীবজন্তু আছে, কিন্তু এখানকার সবথেকে হিংস্র জীবটাই আর জীবিত নেই। বছর বারো আগে, তামিলনাড়ু স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গুলি করে মেরেছিল তাকে। তার নাম? কুশ মুনিস্বামী বিরাপ্পন, সেই বিখ্যাত চন্দন দস্যু।
উটি শহর ছাড়িয়ে ফাঁকা পাহাড়ে উঠল গাড়ি, এদিকে আবার আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল, ড্রাইভার সাহেব গাড়ি চালাতে চালাতে জানালেন, যে এই রাস্তায় ৩৬ টা (যতদূর মনে পড়ছে) হেয়ারপিন বেন্ড আছে। শুনেই প্রমাদ গুনলাম, কারণ হেয়ারপিন বেন্ড থাকলে খুব দ্রুত পাহাড়ে নামা বা ওঠা যায় যেমন, তেমনি যাদের বমি করার ধাত থাকে, তাদের কষ্টও বহুগুণ বেড়ে যায়। আমার আজকাল আর হয়না, কিন্তু এদিকে তুত্তুরি আর ওদিকে অন্বেষার খুব কষ্ট হবে। আমার আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করে তুত্তুরি যথারীতি দুবার বমি করল, তবে ঐ টুকু ছাড়া আর কোন সমস্যা হয়নি। হুহু করে মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে আমরা নীলগিরি থেকে নেমে এলাম। রাস্তা মসৃণ, অপরূপা প্রকৃতি, তবে যাবার সময় নীলগিরির যে রূপ দেখেছিলাম,সেই সৌন্দর্যের কণা মাত্র এ পথে পেলাম না। প্লেনে নামার সাথে সাথেই সোয়েটার, চাদর খুলে ফেলতে হল, আকাশ ঝকঝক করছে, দেবু আর শৌভিক উল্লসিত হয়ে উঠল, এই রকম আবহাওয়ায় নাকি প্রচুর জন্তু দেখা যায়। দেবুর এক বন্ধু বারংবার বলেছে, মুদুমালাই এর ওপর দিয়ে যাবার সময় সে নাকি প্রচুর জীবজন্তু দেখেছে। দেবু আবার ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করল, “ড্রাইভার সাহেব টাইগার দিখেগা?” আমাদের তামিল ড্রাইভার মাথা নেড়ে বলল, “ লাক আচ্ছা হওনে সে জরুর দিখেগা সাব।” মুস্কিল হল, “লাক আচ্ছা”র সংজ্ঞা আমাদের এক এক জনের কাছে এক এক রকম। আমি শৌভিক আর দেবু যেমন মনে প্রানে চাইছিলাম, যেন অন্তত একটি বার বাঘের চন্দ্রবদন দেখতে পাই, তেমনি অন্বেষার ঐকান্তিক প্রার্থনা ছিল আমাদের ইচ্ছা যেন ব্যর্থ হয়।
(চলবে)
#Anirdiary #AninditasBlog
https://amianindita.blogspot.in

Saturday 16 July 2016

অনির ডাইরি ১৬ ই জুলাই


( ১২ ই জুলাইয়ের পর)
৩০শে জুন, আজই উটিতে আমাদের অন্তিম দিন, গতকাল সারারাত ধরে বৃষ্টি হয়েছে, তাও সকাল থেকেই আকাশের মন খারাপ। কালকের ভেজা জুতো আর গরম জামা সারা রাত রুম হিটার চালিয়ে শুকানো হয়েছে। আজ আবার ভিজতে হবে ভাবলেই কান্না পাচ্ছে। অন্বেষা তো বলেই দিল আজ আর বেরোবে না। পুটপুট আর তুত্তুরিকে নিয়ে হোটেলেই থেকে যাবে, আর তাছাড়া যাবেই বা কি করে, আমাদের সব কটা শৌখিন থ্রি ফোল্ড ছাতাই তো ভেঙে বসে আছে। শেষ পর্যন্ত অন্বেষারই উদ্যোগে হোটেল থেকে একটা বিশাল ছাতা যোগাড় হল, পৌনে দশটা নাগাদ আমরা যখন বেরলাম, তখনও আকাশের মুখ ভার, তবে বৃষ্টি ধরেছে। আজ আর দূরে কোথাও নয়, উটি শহরেরই আসে পাশে ঘোরা। শৌভিক আর দেবু হিসেব কষছিল, আমরা যেদিন উটিতে এলাম সেদিন ঠিক মধ্যাহ্নে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল এবং কালকেও মোটামুটি ঐ একই সময় থেকেই প্রবল বৃষ্টি এসেছিল। সুতরাং যা যা দেখার আছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য গুলি, প্রথমে দেখে নেওয়াই নিরাপদ। সেইমত ড্রাইভারকে নির্দেশ দেওয়া হল, প্রথমেই ডোডাবেতা পিক এ নিয়ে যাবার জন্য। ডোডাবেতা নীলগিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, উটি শহর ছাড়িয়ে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সদ্য বর্ষায় ধুয়ে যাওয়া ঘন সবুজ নির্জন, গা ছমছমে জঙ্গলের মধ্যে পৌঁছে মন খুশি হয়ে যায়। খুশির চোটে দেবু তো বলেই ফেলল, “দেখছিস, কি রকম সময়ে এসেছি, টুরিস্ট নেই প্রায়। একটাও বাঙালি পাবি না, আসে পাশে।” । কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হল না, ডোডাবেতার মাথায় পৌঁছে দেখা গেল, প্রচুর গাড়ি এবং ততোধিক লোক। স্থানীয় লোকজন পসরা সাজিয়ে প্রায় বাজার বসিয়ে ফেলেছে। গাড়ি যেখানে নামিয়ে দেয়, সেখান থেকে পাথরের চওড়া চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে, সিঁড়ির দুদিকে হরেক রকম পসরার বাজার। কেউ বিক্রি করছে গরম পোশাক, কেউ বা বাচ্ছাদের খেলনা, কোথাও কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে, কোথাও বা স্থানীয় বিশাল বিশাল গাজর। এছাড়া চানা, বাদাম তো আছেই। তবে এ সব জায়গায় সাধারণত প্রচুর বাঁদর বাঁ হনুমানের উৎপাত থাকে। ডোডাবেতায় তেনাদের একটিকেও দেখতে পেলাম না।
চারিদিকে ঘন মেঘের চাদর, তীব্র বেগে হাওয়া বইছে, অন্বেষা নামল না। তুত্তুরিকেও আমরা আর নামালাম না, যা হাওয়ার বেগ, যদি উড়ে যায়। আমি, শৌভিক আর দেবু দৌড়লাম সিঁড়ি ভেঙে। ডোডাবেতার মাথায় পৌঁছে বেশ হতাশ হলাম। পার্কের মত ফাঁকা বাঁধানো জায়গা, মাঝে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। আমাদের ঘরের পাশের টাইগার হিলের স্মৃতি উস্কে দেয়, যদিও টাইগার হিল অনেক বেশি রাজকীয়। ডোডাবেতার মাথায়ও প্রচুর দোকান পাট, আইসক্রিম পার্লার, যদিও সবই বন্ধ। নীচে যত গাড়ি বা লোক দেখে এলাম তার দশ ভাগের এক ভাগও ওপরে নেই। হাওয়ার তীব্র দাপটে সবাই গিয়ে জড় হয়েছে, ওয়াচ টাওয়ারের ভিতর। ফাঁকা ধুধু ডোডাবেতায় আমরা চারদিক ঘুরতে লাগলাম। রুক্ষ পাথুরে চুড়া চূড়ান্ত নির্জন চারদিকে ঘন জঙ্গল, মেঘে ঢাকা। খানিক ক্ষণ ঘোরাফেরা করে, কাঁচামিঠে আম খেয়ে আমরা চললাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। জনবহুল এলাকা ছাড়িয়ে গাড়ি আবার জঙ্গলে ঢুকল। দেবু বিরক্ত হয়ে বলল, “যেখানে পাহাড়ের মাথা অবধি গাড়ি যায়, সেখানে আর কি বা আশা করি? ট্রেকিং না করলে আবার পাহাড়ে চড়া কিসের?” শৌভিক প্রস্তাব দিল, “ আমরা বরং এই জঙ্গলের মধ্যেই খানিকটা হাঁটি, দুধের স্বাদ অন্তত ঘোলে মিটবে।” গাড়ি দাঁড়িয়ে রইল, তুত্তুরিকে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। গভীর জঙ্গল, পাখির ডাক ছাড়া আর মাঝে মাঝে পাশ দিয়ে এক-আধটা গাড়ি চলে যাবার আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই, গাড়ি থেকে রাস্তা যত ভাল মনে হচ্ছিল, নেমে দেখলাম ততোটাও ভাল নয়। মাঝে মাঝেই খানা খন্দ রয়েছে, রাস্তায় এর মধ্যেই শ্যাওলা পড়ে গেছে, এখানে বাতাসের বেগ প্রায় নেই বললেই হয়। গাছের পাতা থেকে টুপটাপ করে জল পড়ছে, মাঝ খান দিয়ে বেশ খানিকটা হাঁটতে হাঁটতে গেলাম আমরা। একজায়গায় এসে রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে। কোন দিকে যাই? গাড়ি টাকে ডেকে নেওয়াই ভাল। ফোন করতে গিয়ে দেখা গেল, কারো ফোনেই টাওয়ার নেই। অগত্যা দেবু দৌড়ল গাড়ি ডাকতে, আমরা থ্রি মাস্কেটিয়ার্স রয়ে গেলাম জঙ্গলের মধ্যে একা। কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হল হাওয়ার অত্যাচার, সে কি হাওয়া, হাড় পর্যন্ত কাঁপতে লাগল হিহি করে। সাথে শুরু হল টিপটিপ বৃষ্টি। দৌড়তে লাগলাম আমরা, প্রায় মিনিট দশেক পর, আমাদের গাড়ির দেখা পেলাম, মজার কথা হল, যেখানে আমরা গাড়ির জন্য দাঁড়িয়েছিলাম, সেখান থেকে গাড়িতে মিনিট পাঁচেক গেলেই উটি শহর। শহরের এত কাছে ছিলাম, অথচ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।
পরবর্তী গন্তব্য টি ফ্যাক্টরি। যত বলি নারে বাপু, আমরা দার্জিলিং এর রাজ্য থেকে আসছি, খামোখা নীলগিরিতে এসে কেন চা এর কারখানা দেখতে যাব, ড্রাইভার বুঝলে তো? অগত্যা যেতেই হল, পাহাড়ের কোলে মাঝারি মাপের কারখানা। পাশেই পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে চায়ের বাগান। কোন এন্ট্রি ফি নেই, উল্টে ওঁরাই কমপ্লিমেন্টরি চা খাওয়ান। গাইড ভদ্রলোক অত্যন্ত যত্ন করে একটা একটা চা গাছের ডাল নিয়ে বোঝালেন, চা পাতা প্রসেস করলে প্রথমে পাওয়া যায় হোয়াইট টি। যা প্রায় সবটুকুই বিদেশে রপ্তানি করা হয়, এর উচ্চ ঔষধি গুণাবলীর জন্য। হোয়াইট টি নাকি, একই পাতা সকাল, বিকাল সন্ধ্যে তিনবেলা ব্যবহার করতে হয়, এবং শেষবার চা করার পর ঐ পাতা না ফেলে দিয়ে চিবিয়ে খেতে হয়। হোয়াইট টিতে দুধ বা চিনি মেশাতে নেই। হোয়াইট টির পর পাওয়া যায় গ্রিন টি। ওনার বক্তব্য অনুসারে, গ্রিন টির ক্ষেত্রেও একই টি ব্যাগ তিনবার ব্যবহার করা উচিৎ। যদিও এ ক্ষেত্রে পাতা চিবিয়ে খেতে হয় না। শেষে বিভিন্ন ফ্লেভার যুক্ত সাধারণ চা পাওয়া যায়। চা ফ্যাক্টরি থেকে গোটা উটি শহর দেখা যায়, নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। গাইড ভদ্রলোক আমাদের মহা সমাদরে নিয়ে গেলেন চা খাওয়াতে, খেয়ে ভাল লাগলে ওঁদের বিপণি থেকে কেনাও যায়। ওঁদের চা এই বিপণি ছাড়া এমনি বিক্রি হয় না, মূলত এক্সপোর্ট হয়।
ওনার বক্তব্য সবথেকে মন দিয়ে আমিই শুনেছিলাম বা বলা যায়, পুরোটা শুনেছিলাম বলেই কি না জানি না, উনি আমাকে হোয়াইট টি খাইয়েই ছাড়লেন। সে যে কি কদাকার খেতে, মনে হচ্ছিল কাগজের কাপে ঈষৎ উষ্ণ গরম জল খেলাম। বাকিরা সকলে মহানন্দে দক্ষিণ ভারতীয় সুগন্ধি কার্ডামম চা খেল। আমি বোধহয় লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম, তাই শেষ পর্যন্ত এক কাপ আমারও জুটল। যেমন মিষ্টি তেমনি সুন্দর গন্ধ।

এরপর গন্তব্য উটি বোটানিক্যাল গার্ডেন। পরিশেষে উটি লেক। উটি লেক প্রাকৃতিক লেক নয়। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জলাধার। তবে বেশ বড় এবং সুন্দর। এখানে লোকজন বেশ ভাল ইংরাজি এমনকি ভাঙা ভাঙা হিন্দিও বোঝে। বেশ খানিক ক্ষণ বোটে চড়ে আমরা ফিরে গেলাম হোটেলে। ততক্ষণে বৃষ্টি ধরে গেছে, রাস্তা ঘাট শুকনো। আজ শুধু রেস্ট নেওয়া, আর ব্যাগ গোছান, কাল সকালে প্রাতঃরাশ করেই আমরা বেরিয়ে পড়ব, পরবর্তী গন্তব্য মহীশুর।
(চলবে)
#AnirDiary #AninditasBlog
https:amianindita.blogspot.in

Tuesday 12 July 2016

অনির ডাইরি ১২ ই জুলাই


( ১০ ই জুলাইয়ের পর)


দৌড়ে যখন গাড়িতে উঠলাম, ততক্ষণে সব কটা ছাতার হাল কাহিল। আমরাও বেশ ভালই ভিজে গেছি, কিন্তু মজার কথা হল বৃষ্টিটাও ধরে গেছে। পরবর্তী গন্তব্য পাইকারা লেক। জঙ্গলের মধ্যে বিশাল হ্রদ। উটি এলে পাইকারা লেকে বোটিং করা অবশ্যকরণীয় । আমরা ছয় জন, একটু বেশি টাকা দিয়ে আট সিটার বোট বুক করা হল। কাউন্টার থেকে জানাল বোটটি আপাতত যাত্রী নিয়ে হ্রদ পরিভ্রমণে গেছে, মিনিট বিশেক দাঁড়াতে হবে।
পাইকারা লেকের সামনে একটা ছোট্ট ঢাকা দেওয়া ক্যাফে আছে। হিহি করতে করতে সেখানই ভিড় জমালাম আমরা। বৃষ্টি না হলেও হ্রদ থেকে উঠে আসা কনকনে হাওয়া হাড় পর্যন্ত কাঁপিয় দিচ্ছিল। ধূমায়িত নীলগিরির কফিও গা কাঁপুনি বন্ধ করতে পারছিল না। মিনিট বিশেক অপেক্ষা করার পর শৌভিক বলল, “নাঃ জেনে আসি বোটটা এসেছে কি না।” জেনে আবার আমাদের ডাকতে আসবে? অগত্যা বাকিরাও ওকে অনুসরণ করলাম। টিকিট কাউন্টারে কেউ কিছু বলতে পারল না, বোট কোথায়, কখন আসবে- শৌভিকের ইংরাজি, হিন্দি সবই ব্যর্থ হল, অবশেষে দৈহিক বিভঙ্গের দৌলতেই হয়তো, কাউন্টার ক্লার্ক কি বুঝল জানি না, ঠেট তামিলে (তামিলই হবে!) কিছু বলে, ইঙ্গিতে দেখাল, বোট চড়তে হলে জেটিতে যাও। কাউন্টারেই যদি এই হাল হয় তো জেটিতে কি হতে পারে সহজেই বোধগম্য। জেটিতেও ঐ একই ঘটনার পুনরাভিনয় ঘটতে দেখা গেল। যত বলা হল, আমরা স্বতন্ত্র ভাবে নৌবিহার করব বলে, এক গাদা গাঁটগচ্চা দিয়ে এইট সিটার বোট বুক করেছি, ততো তামিল মাঝি (মাঝি ছাড়া আর কি বা বলা যায়?) হাত-পা মাথা নাড়ে। শেষে হতোদ্যম হয়ে মাঝির ইশারা মত সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল ঢাকা বোটেই চড়া হল। আমাদের সমগ্র দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সবথেকে হতাশা জনক অধ্যায় ছিল এই পাইকারা লেকে বোটিং। বিশেষ করে ৯ মাইলে ঐ দুরন্ত অভিজ্ঞতার পর প্রত্যাশাও ছিল অনেকটাই বেশি। বোটের খোলের ভিতর দিকে জানলা দিয়ে প্রকৃতি দর্শন আদৌ আমাদের মন ভরাতে পারল না। বোটের খোলা অংশে যাবার চেষ্টা করলেই মাঝি বাবু তার মাতৃ ভাষায় ধমক দিচ্ছিলেন, ঘোরাবার কথা ছিল বিশ মিনিট, দশ মিনিট চক্কর কেটেই বোট ফিরে যেতে উদ্যত হল, আমাদের সব উত্তেজনা ততক্ষণে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আমরা কিছু না বললেও সহযাত্রী স্থানীয় লোকজন চিৎকার করতে লাগল, মাঝিও ততোধিক সেয়ানা, কিনারায় গেল না বটে তবে বাকি দশ মিনিট শম্বুক গতিতে পাড়ের কাছেই ঘুরতে লাগল। বিরক্ত হয়ে বোট থেকে নেমে মনে হচ্ছিল, এবার ফিরে গেলেই হয়, কিন্তু ড্রাইভার সাহেব অনুরোধ করলেন, পাইকারা ফলসটা দেখে যাবার জন্য। প্রাকৃতিক ঝর্না নয়, স্থানীয় হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্টের জলাধার থেকে ছাড়া জলে তৈরি। নিমরাজি হয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে করতে চললাম আমরা।
গাড়ি যেখানে নামাল, সেখান থেকে পাঁচশ মিটার হেঁটে যেতে হয় পাইকারা ফলসে। উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা, বেশ ফাঁকা, আমাদের মত এক আধজন টুরিস্ট ছাড়া প্রায় কেউই নেই। পথের এক ধারে ফাঁকা ফাঁকা জঙ্গল, অপরদিকে নিচু উপত্যকা, সেখানে গরু চড়ছে মৃদু মন্দ হাওয়া দিচ্ছে, হাঁটতে মন্দ লাগছিল না। পাঁচশ মিটার শেষ হলে টিকিট কাউন্টার, সেখান থেকে চওড়া চওড়া সিঁড়ির ধাপ নীচে নেমে গেছে, পাশেই একটা জলাধার, নতুনত্ব কিছুই নেই, বেশ খানিকটা নেমেও কোন জলপ্রপাতের চিহ্ন চোখে পড়ল না। রেগে আমি আর অন্বেষা ঠিক করলাম আর নামবই না। আকাশ মেঘলা, কখন আবার বৃষ্টি আসে, এই দেখার জন্য সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। দেবু তবু আশাবাদী, আর একটু নীচে নামলে কি কিছুই দেখা যাবে না? জলপ্রপাত যখন, জলটা নিশ্চয় কোথাও না কোথাও পড়বে। পুটপুটকে কাঁধে চড়িয়ে কয়েক ধাপ নেমে দেবু সহর্ষে বলল, “নেমে আয়। আছে! আছে!” শৌভিক ছবি তুলছিল, ও আগে দৌড়ল, পিছু পিছু বাকিরা। নেমে চূড়ান্ত হতাশ হলাম, শিশু জলপ্রপাত, উচ্চতা ফুট খানেক মাত্র।

বিরক্ত হয়ে গজগজ করতে করতে আমরা সবে ফিরব বলে ঘুরেছি, ঝমঝম করে বৃষ্টি, তেমনি জোর হাওয়া। ছাতা গুলো মটমট করে আমাদের মাথার ওপরেই ভেঙে গেল, জনবিরল জঙ্গুলে এলাকা, কাছাকাছি কোথাও দাঁড়াবার মত জায়গা পর্যন্ত নেই। শেষ পর্যন্ত যখন হোটেলে পৌঁছলাম, ঘড়ির কাঁটা আড়াইটে ছুঁয়ে গেছে। সকলে ভিজে চুপচুপ করছি। সবথেকে খারাপ অবস্থা জুতগুলোর। ফার্ন হিলে সাড়ে তিনটে অবধি লাঞ্চ আওয়ার, তারপর টুকটাক খাবার পাওয়া গেলেও ভরপেট লাঞ্চের আশা দুষ্কর। যে যার বর, তাকে হুঁশিয়ারি দিল, ভেজা জামাকাপড় পাল্টে মিনিট পনেরোর মধ্যেই নামতে হবে, নাহলে ফার্ন হিলের কফি শপই ভরসা। আগের দিন রাতে তুত্তুরির আবদারে, আমরা হাক্কা নুডলস আর স্প্যাগেটি খেয়েছিলাম, এত ভাল স্প্যাগেটি (উইথ পেস্টো সশ) আমি কখনও খাইনি। ঠিকই করেছিলাম, এই কটা দিন আমরা সকালবিকাল শুধুই স্প্যাগেটি খাব। পেস্টো ছাড়া বাকি সশ গুলোকেও তো খেয়ে দেখতে হবে, সে আশায় জল ঢেলে দিল শৌভিক। ও কার্ড রাইস খাবে, কার্ড রাইস ছাড়া আর কিছুই খাবে না। স্বপ্নসুন্দরী শ্রীদেবী নাকি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, উনি আজীবন শুধু কার্ড রাইস খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারেন, আর কৃষ্ণমচারী শ্রীকান্ত কোথাও বলেছিলেন উনি প্রত্যহ প্রাতরাশ সারেন শুধুই কার্ড রাইস দিয়ে, তাই শৌভিককেও খেতেই হবে। যত বোঝাই ওরে ভাই, সাদামাঠা দই ভাত, বাড়িতে মাঝে মাঝে গরমকালে আমিই বানাই, দুদ্ধর্ষ কার্ড রাইস। ঠাণ্ডা দই আর ভাত মিশিয়ে, গরম তেলে (আমি সর্ষের তেল দি, এরা নাকি জিঞ্জিরি অয়েল দেয়) শুকনো লঙ্কা, কালো সর্ষে আর কারি পাতা ফোড়ন দিয়ে ঐ ভাতে মেশানো, সাথে পরিমাণ মত নুন আর আচার মিশিয়ে নিলে খারাপ লাগে না। কিন্তু সে নাকি বাঙালি দই ভাত, শৌভিক অথেনটিক কার্ড রাইস খাবেই। অগত্যা ওকে সঙ্গ দেবার জন্য আমরাও রাজি হয়ে গেলাম, তবে কার্ড রাইস নয়, আমাদের জন্য খিচুড়ি।
পুটপুট রোজই খিচুড়ি খায়, তার অবশিষ্টাংশ দিয়েই অন্বেষার দ্বিপ্রাহরিক আহার হয়ে যায়, আজ আমি আর দেবুও তাই অর্ডার দিলাম। যথাসময়ে ধপধপে পোর্সিলিনের বাটি করে এল, কার্ড রাইস আর খিচুড়ি। পইপই করে বলেছিলাম খিচুড়িতে যেন মাখন অবশ্যই দেয়, দিয়েছে নিশ্চয়, কোন গন্ধ নেই তার। বেশ বিস্বাদ, নুন, ঝাল, মিষ্টি কিছুই বুঝলাম না। আর দই-ভাত এক চামচ খেয়ে শৌভিক বলল, “মন্দ নয়, তবে না দইয়ে কোন স্বাদ আছে না ভাতে। এমনকি নুন পর্যন্ত দেওয়া নেই। যাকগে দুদিন ধরে যা হাই ক্যালোরি খাবারদাবার খাচ্ছি আজ পেটটা একটু রেস্ট পাওয়াই ভাল।” আমার মনের কথাটা দেবুই বলে দিল, “এবেলা সিদ্ধসাদ্ধা খাচ্ছি বটে, তবে রাতে কিন্তু পরোটা আর মাটন খাওয়া হবে আগেই বলে দিচ্ছি।”

রাতে সত্যিই লাচ্চা পরোটা আর মাটন রোগন জোস খাওয়া হয়েছিল, লাল খসখসে আটার সেঁকা পরোটা, তাতে তেলের নামগন্ধ নেই আর রোগন জোস বলে যেটা দিল এক গামলা লাল ঝোলে পাঁচ পিস বোনলেস সুসিদ্ধ মাটন। খেতে একদম টিক্কা মশালার মত। শেষ পাতে একটু মিষ্টি না হলে কি বাঙালীর মন ভরে, ওঁরাই বলল, পরোটা (অর্থাৎ আটার তন্দুরি রুটি) মাংসের সাথে গুলাবজাম খেয়ে দেখতে। এক প্লেট গুলাবজাম দেড়শ টাকা, তাতে নাকি মাত্র তিন পিস থাকে। পঞ্চাশ টাকার পান্তুয়া! তার ওপর আবার ট্যাক্স, না জানি কি দেবভোগ্য বস্তুই না হবে। যখন এল সত্যি সত্যি আকাশ থেকে পড়লাম, এইটুকু ছোট্ট চার আনার সাইজের তিনটি সুজির বল চটচটে গরম রসে ভাসছে। খেতে মন্দ ছিল না, কিন্তু কমপক্ষে ছটা খেলে তবে মনে হবে একটা বাঙালি পান্তুয়া খেলাম। খাবার শেষে ওরা যখন জিজ্ঞেস করছিল, “হাউ ডু ইউ লাইক দা ফুড স্যার-” দেঁতো হাসি হেসে বললাম “ভেরি গুড”( অবশ্যই যখন আমার দিকে তাকিয়েছিল) - মন চাইলেও তো আর সর্বত্র সত্যি কথা বলা যায় না। 
[চলবে]

Monday 11 July 2016

অনির ডাইরি ১০ই জুলাই, ২০১৬

অনির ডাইরি ১০ই জুলাই, ২০১৬
[৮ই জুলাই এর পর থেকে]
ফার্ন হিল হোটেল বাইরে থেকে যতটা সুন্দর, ভিতরটাও ততোধিক সুন্দর। ঘরে ঢুকে মন ভরে গেল, ঘরের একটা দিক শুধুই কাঁচের। আর সেই কাঁচের দেওয়ালের ওপারে একটা ছোট্ট ন্যাড়া ছাত। যাকে ইংরাজিতে বলে ওপেন টেরাস। ছাতে বেতের চেয়ার টেবল পাতা, আর ছাতের ওদিকে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত শুধুই পাহাড়। ঝকঝকে, সদ্য বৃষ্টি স্নাত ঘন সবুজ পাহাড়। হিমালয়ের মত বিস্ময় জাগানো নয়, বরং বলা যায় খেলনা শিশু পাহাড়, যদিও বয়সে হয়তো হিমালয়ের ঠাকুরদাদা। পাহাড়ের গায়ে যথারীতি ধাপ চাষ করা হয়েছে। আর ধাপে ধাপে মাঝে মাঝেই এক একটা বিশাল গাছ, যথার্থই শালপ্রাংশু মহাভুজ। গাছের মাথায় মেঘগুলো যেন লুকোচুরি খেলছে। খেতে ছোট ছোট মাথা দেখা যাচ্ছিল, অর্থাৎ চাষের কাজ পুরোদমেই চলছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওখানে বসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু বেতের চেয়ারের গা দিয়ে তখনও চুইয়ে চুইয়ে জল পড়ছে, অগত্যা আমরা দুঃখী মনে দ্বি-প্রাহরিক আহারে গেলাম
ফার্ন হিলের ডাইনিং হলের তিনদিকই কাঁচের, বাইরে সুদৃশ্য ফুলের বাগান, সেখানেও চেয়ার-টেবল পাতা, আগুন জ্বালিয়ে বন ফায়ার বা বার-কি-কিউএর ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছা হলে বাইরে হলুদ আর সাদা লিলিদের রাজ্যে বসে, পাহাড় দেখতে দেখতে খাদ্য বা পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করাই যায়, কিন্তু আমাদের মন্দ ভাগ্য যে এই বর্ষায় টা অসম্ভব। অগত্যা কাঁচের এপাশ থেকেই পাহাড়, বৃষ্টি আর লিলিদের আস্বাদ গ্রহণ করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তখন প্রায় আড়াইটে বাজছে, অগত্যা লাঞ্চেও মুর্গ বিরিয়ানিই বলা হল। উটির বিরিয়ানি চেন্নাই এর থেকে খারাপ তো নয়ই বরং ভাল, তবে এখানে রায়তা আর পাঁপড় দিলেও গ্রেভিটা দেয়নি। রায়তাটাও কেমন যেন, মিষ্টি ঘন মেয়নিজের মত স্বাদ। সেদিন আর কোথাও যাওয়া হল না, দু দিন ট্রেন যাত্রার পর, সকলেই ক্লান্ত ছিল, অবশিষ্ট দুপুর টুকু ঘুমিয়ে আর বিকাল এবং সন্ধ্যাটা ছাতে ঘুরেই কেটে গেল। ঠিক হল পরদিন সকালে উটি দর্শনে বেরোনো হবে। সেই মত হোটেলের ট্রাভেল ডেস্ক কথা বলা হল। উটি এবং উটির আসে পাশের দর্শনীয় স্থানগুলি একদিনেও দেখা যায় তাতে হোটেলওয়ালা দের মতে সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টা। আবার চার ঘণ্টা করে, দুদিনেও দেখা যায়। যেহেতু আমাদের বাচ্ছা গুলো খুবই ছোটো, পুটপুটের তো এখনও তিন বছরও হয়নি, তাই আমাদের ট্যুরটাই এমন ভাবে প্ল্যান করা হয়, যে প্রত্যহই একবেলা বেড়ানো আর একবেলা রেস্ট নেওয়া যায়। তাই ঠিক হল, পরের দিন আমরা সকাল সাড়ে নটায় শুরু করব এবং লাঞ্চের আগেই ফিরে আসা হবে। বৃষ্টির ধরণ দেখে সকলেই একটু দুশ্চিন্তা গ্রস্ত ছিলাম, হোটেল থেকে বলা হল, নিয়ে চিন্তা না করতে, উটিতে এই সময় সূর্যের মুখ প্রায় দেখাই যায় না। তেমনি এখানে বৃষ্টিও দীর্ঘস্থায়ী হয় না, ফলত পর্যটকদের খুব একটা অসুবিধা হয় না।
পরদিন সকাল সাড়ে নটার বদলে বের হতে হতে প্রায় পৌনে দশটা বেজে গেল। শৌভিক আর দেবুর নির্দেশে আমরা প্রথম দিন উটি থেকে কিঞ্চিৎ দূরের দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে চললাম। প্রথম যেখানে এসে গাড়ি থামল, তাকে বলে মাইল শুটিং স্পট। একটা লম্বা প্রাকৃতিক লেক এঁকে বেঁকে চলে গেছে। নিরালা নিঃশব্দ প্রায় জনবিরল। লেকের শুরুর দিকে গোটা কয়েক ঘোড়া এবং সহিস দাঁড়িয়ে ছিল, যদি কোন পর্যটক ঘোড়ায় চাপে সেই আশায়, এছাড়া আমাদের মত গুটি কয়েক টুরিস্ট, যাদের কেউই বাঙালি নয়। শৌভিক এবং দেবু কিঞ্চিৎ হতাশ হয়ে বলেই ফেলল, “ সব জায়গায় আজকাল আর শুটিং হয় না।খানিকটা হাঁটাহাঁটি, দু চারটে ছবি তুলে আমরা ফিরে যেতে উদ্যত হলাম, ফেরার পথেই ঝাঁপিয়ে এল বৃষ্টি। ঝমঝমে বৃষ্টি নয়, ইলশেগুঁড়ি, তাতেই কোনমতে অর্ধেক ভিজে আবার গাড়িতে ওঠা।
পরবর্তী গন্তব্য চকলেট ফ্যাক্টরি। উটিতে প্রচুর চকলেট তৈরি হয়, প্রায় ঘরে ঘরেই হোমমেড চকলেটের বিজ্ঞাপন সাঁটানো। চকলেট ফ্যাক্টরিটা আসলে ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার। ছোট ছোট মডেল রাখা আছে, কোকো ফল কি রকম দেখতে হয়। দু ধরণের কোকো হয়, হলুদ(ছবিতে) অরগানিক কোকো অর্থাৎ কোন কেমিকাল সার বা কীটনাশক ছাড়া আর সবুজ (ছবিতে) সাধারণ কোকো। অনেকটা ছোট ঝুনো নারকোলের মত দেখতে, তার ভেতরে একটা জেলির মত পদার্থ থাকে আর থাকে কোকো বীজ। ফলকে চাপা দেওয়া ড্রামে ফারমেন্ট করিয়ে বীজ গুলো আলাদা করা হয়। অতঃপর সেই বীজকে রোদে শুকানো হয়। এই অবধি সব কাজ কৃষকরাই করেন। এরপর শুকনো কোকো বীজ, ঝাড়াই বাচাই করে ওনারা বেচতে আসেন ফ্যাক্টরিতে। সেখানে নাকি প্রতিটি কোকো বীজ হাতে করে দেখে বাছাই করা হয়। সেই বাছাইকৃত কোকো গুলিকে একটা মেশিনের মাধ্যমে পেসাই করা হয়, প্রথমে পাওয়া যায় কোকো বাটার, তারপর বিভিন্ন মানের কোকো পাউডার। কোকো বাটারের সাথে মিল্ক পাউডার মিশিয়ে তৈরি হয় সাদা চকলেট আর কোকোর সাথে প্রয়োজন মত গুঁড়ো দুধ আর চিনি মিশিয়ে তৈরি হয় মিল্ক চকলেট আর ডার্ক চকলেট।
দেখে শুনে, ফ্রি চকলেট খেয়ে পরবর্তী গন্তব্য মাইল শুটিং স্পট। এখানেই নাকি আমির খান আর করিশ্মা কাপুর অভিনীত রাজা হিন্দুস্তানী সিনেমার সেই বিখ্যাত গান, “ পরদেশী পরদেশী জানা নেই শুটিং হয়েছিল। ৬মাইলেই আমরা বেশ ভিজেছিলাম, তাই এখানে আর অন্বেষা কিছুতেই নামতে চাইল না। পুটপুটকে নিয়ে রয়ে গেল গারিতেই, আমরাও তুত্তুরিকে গাড়িতে রেখেই নেমে গেলাম। এখানে টিকিট কাটতে হয়, এবং মাইলের থেকে বেশ ভিড়, যদিও বাঙালি কেউই ছিলেন না। টিকিট কাউন্টারের সামনে কয়েকটা ধপধপে সাদা হাঁস প্যাঁকপ্যাঁক করে ঘুরছে, দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টি সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়েছিল, আকাশও কিঞ্চিৎ সাফ লাগছিল, অসহায় ভাবে শৌভিককে জিজ্ঞেস করলাম, তুত্তুরিকে নিয়ে আসব কি না? শৌভিক অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ। গাড়িতে কি করছে? ধরে নিয়ে আয় ওকে।মহানন্দে মেয়ের হাত ধরে দৌড়লাম। একটা ঘন সবুজ ঘাসে ভরা ঢালু পাহাড়, একটা ভেজা পাথুরে রাস্তা দিয়ে উঠতে হয়, অনেককে অবশ্য পাশের ঘাসের ওপর দিয়েও উঠছিল। বেশ খাড়াই, তেমনি হাওয়া দিচ্ছিল, আবার শুরু হল টুপটাপ বৃষ্টি। ছাতা খুলব কি, শৌখিন থ্রি ফোল্ড ছাতা প্রায় ভেঙে যায় আর কি। খাড়াই ভেঙে যখন উঠলাম মন ভরে গেল। যতদূর দেখা যায়, গাড় সবুজ পাহাড় আর উপত্যকা। হাল্কা হাল্কা মেঘ ভেসে যাচ্ছে উপত্যকার ওপর দিয়ে। সেই নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্য ভাষায় অবর্ণনীয়। ইতিমধ্যে বৃষ্টিও ধরে গেছে। ছাতা গুলো মুড়ে মাটিতে রেখে সবে পাহাড়ের কিনারে ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে যাব, আচমকা এক ধমকা হাওয়ায় মনে হল উড়ে যাব। আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবার ক্ষমতা যে বাতাসের আদৌ থাকতে পারে কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। হিংস্র ভাবে ধাক্কা মারছিল পাগল বাতাস, দৌড়ে পাহাড়ের মাঝামাঝি আসতে না আসতেই দমকা হাওয়া, আমাদের পিছু নিয়ে সেখানেও এসে হাজির হল, এক টানে উড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগল দু-দুটো মুড়ে রাখা ছাতা। তুত্তুরি মাঝখানে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল, দৌড়ে ছাতা দুটো ধরতে গেল তো ওকে সুদ্ধু উড়িয়ে নিয়ে যাবার তাল করল দুষ্টু হাওয়া। ভয়ে আমার কন্যা চিৎকার করতে লাগল, “মা আমি উড়ে যাচ্ছি-” আমি বা শৌভিক ধরার আগেই হাওয়া ওকে ঠেলে দিল দেবুর দিকে, দেবু খপ করে ধরতে না ধরতেই আমরা দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম। মাতাল হাওয়াতেই এক চোট হাসাহাসির পর, দেবু বলল, “ওরে তোরা যে যার ছাতা ধর। নাহলে তিনটে ছাতা সমেত হাওয়া আমাকেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে অবস্থায় শৌভিক টুপি আর চশমা সামলে গোটা কয়েক চটজলদি ছবি তুলতেই আমরা দৌড়লাম, পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। আমাদের ধরার জন্য ওপর থেকে ধাওয়া করল ক্রুদ্ধ হাওয়া আর নীচে থেকে ঘন থকথকে মেঘ। ক্রমশ আমরা মেঘে ঢাকা পরে গেলাম, একহাতে তুত্তুরিকে আঁকড়ে ধরে অপর হাতে শৌভিকের হাত ধরে ঈশ্বরের নাম নিতে নিতে হুড়মুড়িয়ে নামতে লাগলাম

[চলবে]