Sunday 26 September 2021

অনির পুজোর ডাইরি ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০৩১

 

শৌভিকের গৃহত্যাগের সবথেকে কুপ্রভাব যার ওপর পড়েছে তিনি হলেন ছিমতী তুত্তুরী। একে বাবা থাকে না, তারওপর মাও মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ত। দিনের সাড়ে এগারো থেকে বারো ঘন্টা রাস্তাতেই কেটে যায়, বাকি বারোর মধ্যে ঘন্টা সাত-আটেক কাটে ঘুমে, বা চেপ্পে ধরে ঘুম পাড়ানোর বৃথা প্রচেষ্টায়। রইল হাতে চার, যার মধ্যে ঘরের কাজ-কাচাকুচি- দোকানবাজার- স্নান-খাওয়া আর পড়তে বসার হাকুচ তেতো ঘন্টা কতক বাদ দিলে হাতে পড়ে থাকে পেন্সিল। অবকাশ পেলেই হয় তমলুক নয়তো হাওড়ার টিকিট কাটি  মা-মেয়ে। দীর্ঘদিন অদর্শনে যদি আমাদের ভুলে যায় বাবা অথবা তুত্তুরী হীনতায় নতুন করে অবসাদে ভুগতে শুরু করে মামমাম। বয়স যে বড় অসহায়, বড় শিশুসুলভ বানিয়ে দেয় প্রিয়জনদের। 


বামন অবতারের মত তিনটি পা তিন জায়গায় রেখে ভারসাম্য বজার রাখার দিব্যি চেষ্টা করে চলেছি । ভুলেও তাই বলে ভাববেন না  ঘ্যানঘ্যান করছি। জীবন সিংহাসনে বসিয়েছেই যখন, মুকুট পরার যাতনা তো ভোগ করতেই হবে। সেটা  উভয়েই জানি এবং বুঝিও। শুধু দিনগুলো যদি ২৪ ঘন্টার জায়গায় ৩০ ঘন্টার হত- 


এদিকে বৎসরান্তে দরজায় কড়া নাড়ছেন দশভুজা, ওদিকে কিছুই যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি আমাদের। বামন অবতারগিরি করতে গিয়ে সারা বাড়ি ধূলিমলিন। পুবের দেওয়ালে নতুন করে কলম মক্স করেছে কে যেন। ছিমতি তুত্তুরী জোর গলায় বলছেন, উনি নন। কালপ্রিট অন্য কেউ। কে করল, সেটা উদ্ধার করতে মিঃ বক্সী বা মিঃ মিটারকে খবর দেব ভাবছি। আমি বা তুত্তুরী ব্যতীত এ বাড়ির বাসিন্দা বলতে তো মাসি। তবে কি মাসিই অপরাধী? তুত্তুরীকে দেখিয়ে দেখিয়েই বেচারী মাসিকেই খুব এক চোট চোখ পাকিয়ে হাত-পা ছুঁড়ে ধমকে দিলাম, চা খাওয়া বন্ধ করার এমনকি বাড়িতে আর চা পাতা না আনার কঠোর হুমকিও দিলাম। কোন লাভ হল না যদিও, অপরাধী গোবেচারা মুখে বত্রিশ পাটি প্রদর্শন পূর্বক 'শ্রীময়ী' ধারাবাহিক দর্শনে মনোনিবেশ করলেন। 


সময়াভাব বা আমার বরের ভাষায় টাইম ম্যানেজমেন্টের গড়বড়ে যেখানে শৌভিকের সাধের বাড়িরই এই হাল, সেখানে কেনাকাটা, সাজুগুজু, আর ইয়ে পুজো স্পেশাল রোগা হওয়ার কথা তুলে আর হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করতে চাই না। সব কিছুই সময় থাকতে করতে হত,বেশ বুঝতে পারছি। কি ভিড় সর্বত্র বাপস্। তারওপর আবার ছিমতী গুলাবোর হুংকার। আশ্বিন মাসে এত ঝড়ঝঞ্ঝা বৃষ্টিপাত কেন রে বাপু? দেবী তো নৌকায় নয়, বরং ঘোটকে আসছেন আর দোলায় রওনা দিচ্ছেন। 


কটার সময় যেন আসার কথা গুলাবের,তার আগেই তড়িঘড়ি টেনে নিয়ে গেলাম মেয়েটাকে চুল কাটতে। তখনও ভালো করে খোলেওনি পার্লার। চলছে ঝাঁট দেবার পালা। শ্রীমান সুরজিৎ আজ বছর আটেক ধরে ছুরি কাঁচি চালাচ্ছেন আমাদের মা আর মেয়ের মাথায়। তিনি তখন বসে বসে ঢুলছিলেন। কোন মতে চোখ রগড়ে,লাল মুছে বলল, ‘একদম ঠিক সময়ে এসেছ। কাল রাত বারোটায় বাড়ি ফিরেছি, চিন্তা করতে পারছ। ঘুমিয়েছি রাত দুটোয়। কাল সারাদিন খেতেও পাইনি। ’ জানালাম, ভিড়ের ভয়ে জলদি জলদি এসেছি বটে, তবে আজ আমাদের কোন তাড়া নেই। তুই বাবা ভালো করে খেয়ে,ঘুমিয়ে তবেই কাজে নাম। শেষে টাকলা মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলে, আর আমায় আস্ত রাখবে কেউ?শ্বশর-শাশুড়ির কথা তো ছেড়েই দিলাম আমার জন্মদাতা এবং দাত্রীই আমাকে 'তিনমাস জেল আর সাতদিনের ফাঁসি'র হুকুম শোনাবে। তারওপর আছেন ছিমতী তুত্তুরীর বন্ধুবান্ধবদের দলবল। 


যাই হোক, প্রভাতী ফাঁকা পার্লারে অনেকটা সময় দিয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে ছ্যাম্পু করে, কণ্ডিশনার লাগিয়ে, খুস্কি নাশের কিসব লোশন লাগিয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিট বকবক করে, কেশ কর্তন পূর্বক ব্লো ড্রাই করে পিলে চমকানো মার্কা একখান বিল ধরালো আমায়। তার সাথে সাথে কন্যার মাথায় এটাও ঢোকালো মাথায় শ্যাম্পু দেবার পর অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে মাথা ধুতে হয় আর নিজের চিরুনি অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিতে নেই। পরিণাম স্বরূপ বাড়ি এসে সবকটা চিরুনি তথা হেয়ার ব্রাশ কুক্ষিগত করেছেন তিনি। ভাবছি শ্রীমান Shouvik Bhattacharya কে বলব, মেয়ের কেশ কর্তনের বিলটার সাথে সাথে আমার প্যাডল ব্রাশ আর শ্যাম্পু কম্ব গুলোর দামটাও যদি একটু ট্রান্সফার করে। হামি গরিব লেবার আছি কি না।

ইতি অনিন্দিতা

 মহানগর কলিকাতা 

শনিবার, ১০ই আশ্বিন, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ


ওগো, 


তুমি শুনলে নির্ঘাত পুলকিত হবে, তোমার কন্যা এই আধবুড়ো বয়সে,মধ্যরাতে বসে ‘সহজপাঠ’ পাঠ করছে। 


সেই যে সহজপাঠ, বড় আশা করে যা কিনে দিয়েছিল আমার বাবা। তুত্তুরীর তখন কতই বা বয়স? তিনও হয়নি। বাবার হস্তাক্ষরে লেখা আছে তারিখটা, ১লা জুলাই, ২০১৩।  খাবার টেবিলে বসে সেদিন কি যত্ন করে ব্রাউন পেপার দিয়ে মলাট করছিল বাবা। মাঝে মাঝে সুর করে পড়ছিল, ‘ছোটো খোকা বলে অ-আ/শেখে নি সে কথা কওয়া’।  ‘খিদে পায়, খুকি ঞ/শুয়ে কাঁদে কিয়োঁ কিয়োঁ। ’ শুনে সে কি খিলখিল করে হেসে উঠেছিল সেদিনের বুজু তুত্তুরী। 


 সাড়ে তিন বছর বয়সে যেদিন কেড়ে নিয়ে এলাম দাদুর সোনার তুত্তুরীকে, বিষণ্ণ গলায় বলেছিল বাবা, ‘সহজপাঠ গুলো নিয়ে যাস। সময় পেলে একটু পড়ে শোনাস।’ নৈমিত্তিক পড়াশোনার ফাঁকেফোকরে যে পড়তে বসিনি তাও নয়,তবে যা হয় আর কি, বই পড়ার থেকে  অনর্গল আগডুম-বাগডুম বকা, ডেট এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া জনসন শ্যাম্পু খাওয়া আর দেওয়ালে সাপ-ব্যাঙ-শকুনির ঠ্যাং আঁকার উৎসাহই বেশী ছিল তোমার কন্যার। 


যত বড় হতে লাগল, ক্রমেই দূরে সরে যেতে লাগল বই পড়া । পাঁচন গেলার মত করে পাঠ্যপুস্তক যাও বা পড়ত, গল্পের বইয়ের নাম করলেই দনুজদলনী হয়ে সিংহের পিঠে সওয়ার হয়ে কৈলাশে রওণা দিত মেয়ে। রীতিমত তাজ্জব হয়ে যেতাম আমরা। পড়ার বই ছেড়ে গল্পের বই পড়ার জন্য ধোলাই খেয়ে বড় হওয়া আমাদের প্রজন্ম বুঝতেই পারত না, খামোকা গল্পের বইয়ের ওপর এমন বিরাগ কেন! জনৈকা সিনিয়র দিদি খুব ভালো করে বুঝিয়েছিল একবার,স্কুলে ফিরিঙ্গী ভাষার ওপর জোর দেওয়া হয়, আর বাড়িতে আমরা কথা বলি গোদা বাংলায়। ফলে দোঁআসলা তৈরী হচ্ছে আমাদের উত্তর প্রজন্ম। 


গল্পের বই পড়লে,পড়ার ছুটি এই প্রলোভন দেখিয়ে যাকে ইলিয়াড-ওডিসি পড়িয়েছিলাম, তিনি সম্প্রতি রবিঠাকুরের জনগণমনের প্রেমে পড়েছেন। হঠাৎ হঠাৎ করে আমাকে আর মাসিকে উঠে দাঁড়াতে হচ্ছে কারণ তিনি রাষ্ট্র সংগীত গাইবেন। কি জ্বালা মাইরি।


 তোমারই তো মেয়ে,তাই রাজকাহিনীর জনগণমন তাঁর পছন্দ হয়নি। তিনি খুঁজে বার করেছেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের গান। রাত এগারোটার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই শুনলাম। যত বলি,ওরে এটা জাতীয় সংগীত নয়, এটা নিছক রবীন্দ্র সংগীত।  শুনলে তো? আজ যে কার মুখ দেখে উঠেছি, আপিস থেকে  ফিরে শুনলাম তিনি গীতবিতান নামিয়ে, জনগণমন খুঁজে, পুরো কবিতাটা মুখস্থ করেছেন। শুধু সুরটা এখনও সামান্য টলটলে আছে। আগামী ২৬শে জানুয়ারীর মধ্যে ঠিক করে নেবেন তিনি, বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। 


এই অবধি ঠিকই ছিল,তারপর তিনি শুরু করলেন,এই গানটির নীচে কে,কি মন্তব্য করেছেন। বিমোহিত সুরে বললেন,‘জানো, একজন লিখেছে,আমি এই প্রথম বেঙ্গলি ভার্সানটা শুনলাম। এটা হিন্দি ভার্সনের থেকে অনেক গুণে ভালো। ওরা যে কেন ইয়ামুনা বলে,যমুনা বললেই তো পারে।’ অতঃপর যা হয় আর কি, দৈনিক ক্লান্তি ভুলে লম্বা একখানি বক্তব্য রাখলাম আমি। তুমি না থাকায়,স্বর্গীয় সুকুমার রায়কে উদ্ধৃত করেই বলি, ‘ছুট‌লে কথা থামায় কে? আজকে ঠেকায় আমায় কে?’ যে কিনা ইউনিট টেস্টেই সংসদ আর সংবিধান পড়েছে,সে জানে না, কেন বাংলা গানটা গাওয়া হয় না? বেশ খানিক ইতিহাস চব্য করার পর দেখি তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য জানতে চাইলাম,যে মহাপুরুষ এই প্রথম বাংলা জনগণ শুনলেন,তিনি কি অবাঙালী? ঘাবড়ে যাওয়া জবাব পাই, ‘নাঃ বাঙালী তো। ’ 


বাঃ! তা তাঁর বয়স কত? একগাল হেসে তুত্তুরী জানায়,এই প্রশ্নটা অারো অনেকে করেছে,‘ভাই তোর বয়স কত?’ ও বলেছে ওর বয়স নাকি ২২বছর। ’ ব্রাশ করছিলাম, শুনে প্রবল বিষম খেলাম। আমাদের যুগে না গুগলু কাকু ছিল না উট্যুব পিসি। তাও ভাই, মনে হয় বাইশের অর্ধেকেই শুনেছিলাম। চার আনা বাজি ধরতে পারি,আরো আগেই শুনে থাকতে পারি।  জ্যাঠাইমা আর শ্রীমান অয়নের গান আর ছোটকাকুর সেতারের দৌলতে গানবাজনার চর্চা বেশ ভালোই হত বাড়িতে। 


তোমার কন্যার পুলক আর ধরে না। বলল, লোকজন জানতে চেয়েছে, ভাই তুই কি এই সদ্য রবি ঠাকুরের নাম শুনলি? জবাবে তিনি বলেছেন, মোটেই না, নামটা তিনি চার বছর আগেই শুনেছিলেন। তবে এই গানটা এই প্রথম শুনলেন। বলতে বলতেই বোধহয় অনুভব করলেন, নিজের জ্ঞানের অগভীরতা আর রবির প্রসারতা। রবিই যে সকল শক্তির উৎস,তা মেনে নিয়ে রাত পৌনে বারোটায় ধুলো মুছে উদ্ধার হলেন সহজপাঠ প্রথম ভাগ। তিনি এখন সুর করে পড়ছেন, 

‘গগনে গগনে বরষণ-শেষে 

মেঘেরা পেয়েছে ছাড়া- 

বাতাসে বাতাসে ফেরে ভেসে ভেসে 

নাই কোন কাজে তাড়া। ’ 


আর ক্ষণে ক্ষণে কইছেন, উফঃ কি ভালো লিখতেন বলো মা, পড়তে পড়তে মনটা যেন কেমন ঠাণ্ডা হয়ে যায়, তাই না মা? সাক্ষাৎ জ্ঞানপাপী  বুঝলে। 


ইতি

অনিন্দিতা

Tuesday 21 September 2021

অনির ডাইরি ১৮ই সেপ্টেম্বর,২০২১

 


জীবনের প্রথম পোস্টিং এ ইনসপেক্টর হিসেবে যাঁদের পেয়েছিলাম, মাত্র গুটি তিনেক বাদে, তাঁরা সকলেই বয়সে ছিলেন পিতৃব্যতুল্য আর স্বভাবে নমস্য। পশ্চিম মেদিনীপুর ছেড়ে আসার পরও বেশ অনেকদিন পর্যন্ত দুঃস্বপ্নে আসতেন তাঁরা। 


চুঁচুড়ায় আসতে না আসতেই ধীমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানিয়েছিল, ‘জানেন ম্যাডাম, এই আপিসে লোক টেকে না।’ কথাটা যে কতখানি অকাট্য, হাতে কলমে প্রমাণ পেলাম, চুঁচুড়ায় আসার একপক্ষ কালের মধ্যেই বদলী হয়ে গেল জনৈকা সিকেসিও আর প্রোমোশন পেয়ে আপিস ছাড়লেন তিন জন ইন্সপেক্টর। আর চতুর্থ ব্যক্তির সম্পর্কে কি আর বলি? তাঁর নিরুদ্দেশের আখ্যান রোজ ফোনে লাগাতে হত তৎকালীন বড়সাহেবকে। ‘স্যার এরকম মিস্ গায়েব মার্কা লোক নিয়ে আমি কাজ করব কি করে?’ কাজ করতেই তো এসেছি, নেহাৎ হাই তুলে সময় কাটাতে তো পাঠাননি আপনারা আমায় এ জেলায়। 


ক্রমাগত নালিশে ঝালাপালা হয়ে তৎকালীন নব মহাকরণের বড় সাহেব খোদ আমার নামেই নালিশ করেছিলেন আমার ব্যাচমেটদের কাছে। ‘আরেঃ এত ঘ্যানঘ্যান করলে হয়? তোমরা তো করো না। ওকে একটু বোঝাও-’। তা বোঝানোর চেষ্টাও করেছিল বটে  তারা। পেরেছিল কি?  আজ আমার পাঁচটা ব্লক আর দুটো পৌরসভার ইন্সপেক্টরই বলুন বা সিকেসিও ভ্যাকান্সি উভয় ক্ষেত্রেই কেবল একটি করে। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে ঘ্যানঘ্যানানিও যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা এই জেলা আমায় শিখিয়েছিল। আর তার থেকেও বেশী দরকার স্নেহশীল আর নির্ভরযোগ্য ওপরওয়ালা,যার থেকে কখনও বঞ্চিত করেনি আমায় চন্দননগর। পর-পর তিনজন ভালো ওপরওয়ালা কোথাও না কোথাও বাড়িয়ে দিয়েছেন আত্মবিশ্বাস আর নির্ভরশীলতার পারদ। পরোক্ষ ভাবে ট্রেনিং আর উৎসাহ যুগিয়েছেন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। শিখিয়েছেন,আমার প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু আমিই, অন্য কেউ না। 


ছবিতে আমার অন্যতম প্রিয়তমা ইন্সপেক্টর শ্রীমতী সঞ্চিতা দাস পোদ্দারের সাথে।যদিও আমার সাতজন ইন্সপেক্টরই আমার সমান প্রিয়, তবুও সঞ্চিতার খাতির সামান্য হলেও একটু বেশী। নির্মল যদিও প্রায়ই নালিশ করে, বেশ বেশী। সে তো হবেই।  চুঁচুড়ায় আসার সাথে সাথেই পর পর ঝামেলা বাঁধে জনৈকা ইন্সপেক্টর এবং মহিলা সিকেসিওর সাথে। উভয়েই ত্যাগ করেন মোরে। তারপর আর ছাপ পড়তে সময় লাগেনি, মহানগরের মাননীয় মহানাগরিকেরা খড়কে কাঠি দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলতে শুরু করে দিয়েছিলেন,‘কে অনিন্দিতা? ও মেয়েদের সাথে কাজ করতে পারে না। ’ যেন ফাঁকিবাজ আর দুর্নীতিগ্রস্ত পুরুষ সহকর্মীদের ঝাড়তে আমি কোন কসুর করি। যাই হোক, এই ধরণের হামবাগ জনগণের মুখে ‘টাইট স্ল্যাপ(ফিরিঙ্গী ভাষায় না কইলে ঠিক অনুভূতিটা বোঝানো যায় না)’ কষিয়ে বিগত সাড়ে চার/পৌনে পাঁচ বছর ধরে দিব্যি ঘর করছি সঞ্চিতা আর আমি। চুপি চুপি বলি, এই চূড়ান্ত সৎ এবং কর্তব্যপরায়ন ভদ্রমহিলাকে ভয়ানক ভালোবাসি আমি, তবে তার থেকেও ভয় পাই কয়েক শতগুণ। সঞ্চিতা প্রথম চোটে চিৎকার করবে,তারপর হাত পা ছুঁড়বে,তারপর কাঁদতে বসবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে। প্রতিনিয়ত আয়না দেখি এই ভদ্রমহিলার মধ্যে।

অনির ডাইরি ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

 


বর্ষার কলকাতা আর চুঁচুড়ার অকথ্য জ্যাম কাটিয়ে, একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আজ। পরশু এক হাঁটু জল ঠেলে বাড়ি ফিরে, এখনও বেদনা জর্জরিত প্রতিটি পেশী। সাঁতরে যে ফিরতে হয়নি, এই আমার বাবার ভাগ্যি। যে রাস্তার নামই ভি আই পি রোড,সে রাস্তায় এমন অসভ্যের মত জল জমে কেন কে জানে? আর আপদ জমা জল নামে নাই বা কেন? গত পরশুর বর্ষনের জলে আজও বানভাসি আমাদের এলাকা। আজ বা কাল যদি আরো বৃষ্টি হয়, আপিস যাব কি করে? আর আমার অনুপস্থিতিতে ঘুড়ি উৎসবই বা হবে কি করে?  


কার যে নজর লাগল আমাদের ঘুড়ি উৎসবে। চুঁচুড়ায় তো আজ সারাদিন মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে পাক্কা এক হাঁটু জল। কত সাধ করে বুক করেছিলাম জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠটা। এটা ওদের অন্যতম সেরা মাঠ, আমাদের অনুরোধ ফেলতে না পেরে বিনি পয়সাতেই দিতে রাজি হয়েছেন ওণারা। প্রতি বছরই দেন, কিন্তু এই মাঠটা দেন না। বুক করতে গিয়ে রীতিমত জেরার মুখে পড়েছে আমাদের বিদ্যুৎ। ‘হ্যাঁ বাবা, তা তোমরা আবার বাঁশ-টাঁশ পুঁতবে না তো? মাইক কটা লাগবে বাবা?' ইত্যাদি প্রভৃতি। মাঠ ভর্তি কচি সবুজ ঘাস। ক্রিকেটের মরসুমে ফাঁকাই পাওয়া যায় না মাঠটা। পাছে গরু ঢুকে ক্রিজের ঘাস খেয়ে যায়, তাই রীতিমত তালাচাবি দিয়ে রাখেন ওণারা। আমাদের বেলাতেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমরা মাঠে ঢুকে গেলেই, তালা দিয়ে দেবেন প্রবেশ পথে। তাতে গরু আর উটকো লোক ঢুকতে পারবে না কেউই। শুনে হেসে বাঁচি না। তাহলে তো ঘুড়ির সাথে এডাল্ট ডাইপার ও দিতে হয় লোকজনকে। আমাদের সমীর তো বলেই রেখেছে, মাঠে এবার একাধিক জলের ড্রাম রাখতে। ফি বছর কটা ঘুড়ি ওড়ে আর কটা ঘুড়ি কাটা হয় জানি না বটে, তবে মাঠ জুড়ে প্রবল ছোটাছুটি করে জনগণ।  


আর ভগবান  না করুক কারো যদি ইয়ে মানে বড় বাইরে যেতে ইচ্ছে-টিচ্ছে করে? শুনেই চঞ্চল হয়ে ওঠে নির্মল, 'একটা টয়লেটওয়ালা মাঠ চান তাহলে ম্যাডাম'। 'টয়লেট ওয়ালা মাঠ' ব্যাপারটা কেমন যেন কাঁঠালের আমসত্ত্ব মার্কা না? আমাদের সেই সাধের ঘন সবজে মাঠ, অন্যদিন যার মাথার ওপর নীল সাদা চাঁদোয়া টাঙায় আকাশ, নির্ঘাত আজ এক হাঁটু কাদায় ভরে গেছে। কাল যে কি হবে?


যা হয় হবে, আপাততঃ বাঙালীর নিজস্ব শ্রমদিবসের প্রাক্কালে সেজে উঠছে চুঁচুঁড়া শ্রম দপ্তর। দপ্তরের আবার সাজ কি মশাই? সরকারী আপিস মানেই তো সেই, হাতলভাঙা চেয়ার, সানমাইকা ওঠা টেবিল, চোকলা ওঠা কাঁচের গোল কাগজচাপা, পেনদানীতে রাখা কালি ফুরিয়ে যাওয়া পেন, যত্রতত্র ঝুলে থাকা ঝুল আর ধুলোপড়া দস্তাবেজের ডাঁই।  

জোর গলায় বলতেই পারতাম, ওসব পাবেন না আমাদের দপ্তরে, পারব না শুধু একটাই কারণে, রদ্দি আর দস্তাবেজের ডাঁই কিছু কম নেই আমাদের আপিসে। কোথা থেকে যে রাতারাতি জড় হয়ে যায়, এত নথি আর কাগজ।  যতই বলি, ফেলে দিন, ততই আঁকড়ে ধরে সবাই। ওরে বাপরেঃ সরকারী দস্তাবেজ, ইঁদুরে খাক তবু ভালো, একযুগের আগে বাতিল করা যায় নাকি? তাহলে গোছানো তো যায়? বিশেষতঃ এমন শুভ দিন যখন সমাগত? 


বুড়ো অজিতদা প্রতিবারই বলেন বলল, “ও আমি একাই সব গুছিয়ে দেব ম্যাডাম। কোন চিন্তা নেই।” প্রতিবারই আমরা বলি, ও আপনার একার কম্ম নয়, শোনে কে? এবারে আর আপত্তি করেনি অজিত দা, সময় ক্রমশঃ থাবা বসাচ্ছে বৃদ্ধের দেহেও, ভারী জিনিস আর তেমন নড়াতে চড়াতে পারেন না আজকাল। আমাদের ধীমান, প্রিয়াঙ্কা,প্রীতি, সোমনাথ, সায়নী, রমেশ, শুভজিৎ, সমীর এরা আছে তো। লেবার আপিসে, আবার লেবারের অভাব? ভাগাভাগি করে সব হয়ে যাবে। 


প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই অজিতদাকে ভ্যাকসিনের শেষ ডোজ আনতে পাঠিয়ে ঝাড়ু হাতে নেমে পড়েছিল পুরো চুঁচুড়া টিম। বাতিল ধুলো পড়া টেবিল চেয়ার, সবেধন নীলমণি গুটি কয়েক কম্পিউটার কে ঝকঝকে করে ঝেড়েমুছে বারান্দা বাগান থেকে গুচ্ছ খানেক টব নিয়ে এসে কেমন যেন পলকে ভোল বদলে ফেলল চেনা আপিসটা। 


চাইলে আমরা কি না করতে পারি। দরকার শুধু সদিচ্ছা আর সামান্য ভালোবাসা। দিনের গরিষ্ঠাংশ যেখানে কাটাবেন, যাদের সাথে কাটাবেন, তাদেরকে যদি ভালো না বাসতে পারেন,বিশ্বাস না করতে পারেন, সেই জায়গাটাকে যদি আপন করে নিতে না পারেন, তাহলে জব স্যাটিসফ্যাকশন তো দূরের কথা, আপিসের নাম শুনলেই কান্না পাবে। 


আপিসটাকে ভালোবাসি, তাই না, কিলো খানেক ধুলো ঘেঁটেছি আমরা। সুদিনের আশায়, তাই না যত্ন করে আল্পনা দিয়েছে আমাদের সিকেসিও প্রীতি আর এসএলও প্রিয়াঙ্কা। ডানা মেলে ওড়ার জন্য আমাদের ধীমান নিয়ে এসেছে নীল-গোলাপি ঘুড়ি। ছুটির ঘন্টা বাজতে না বাজতেই, দখল হয়ে গিয়েছে আমার চেম্বার, অজিতদার মুছে দেওয়া মাটিতে বাবু হয়ে বসে ঘপাঘপ্ ছাপ পড়েছে প্রতিটি ঘুড়ির বুকেপিঠে-। কেটে গিয়ে লাট খাবে যখন, উড়ে পড়বে কোন অচীন পাড়ায়, অথবা কুড়িয়ে নিয়ে ছুটে পালাবে কোন পথশিশু, যেন চোখে পড়ে, এই ঘুড়ির সত্ত্ব শুধুই চুঁচঁড়া শ্রমদপ্তরের। গোটা গোটা অক্ষরে ফুটে ওঠে বেগুনী বরণ “বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা-”।  আর তাপ্পর? তারপর কত্ত কি- এখনও তো বাকি আমাদের সংগ্রামের দশকর্মার ফর্দ, ফুল, ফল, মিষ্টি। আপিসের ভাড়ার গাড়ি থেকে আমাদের ফটোকপিয়ার মেশিন হয়ে  আধবুড়ো কম্পিউটার, এমনকি পোর্টালগুলো পূজিত হয় এই অফিসে। আহাঃ ওদের ভরসাতেই না চলে আমাদের দপ্তর। এক দিন না হয় একটু বেশীই খাতির করলাম ব্যাটাদের।  চল বাবা, ধন্নুর নাহয় একটু জোরেই দৌড়লি।


এত আয়োজন, এত উদ্দীপনা কিন্তু চুঁচুড়ার মাথার ওপরে যে ঘনিয়ে এসেছে কৃষ্ণমেঘের চাঁদোয়া। বুড়ো কালেক্টরেটের পিচচট লাগানো ছাতের ওপর ঘুঙুর বেঁধে নেচেই চলেছে ভাদ্র মাসের বর্ষা, জেলা স্পোর্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে জমেছে এক হাঁটু জল আর প্যাচপ্যাচে কাদা। কি হবে এবার? দুয়ারে সরকারের অকথ্য পরিশ্রমের পর, সবে বইতে শুরু করেছিল খুশির হাওয়া, আমাদের আচ্ছে দিন কি সত্যিই আর আসবে না? যদি নাও আসে, যে দিন আসবে, তাকেই 'আচ্চে' বানিয়ে নেব আমরা।এটুকু বিশ্বাস আছে নিজের ওপর আর তার থেকেও অনেক অনেকটা বেশি নিজের টিমের ওপর।

অনির ডাইরি ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

 


গাঙ্গেয় বঙ্গের খাওয়া-দাওয়ার সাথে যে মেদিনীপুরের খাবার তথা রন্ধনশৈলীর বেশ খানিকটা ফারাক আছে, তা আমাদের সাড়ে চার বছর পশ্চিম মেদিনীপুর বাসের সময়ই বেশ স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়েছিল। গাঙ্গেয় বঙ্গ বলতে অনুগ্রহ করে মহানাগরিক উন্নাসিকতা ভাববেন না আবার। আমি মোটেই মহানাগরিক নই, আমি হাওড়ার মেয়ে এবং তার জন্য অত্যন্ত শ্লাঘা বোধ করি। আসলে আমি হাওড়া এবং মুর্শিদাবাদ জিলার সঙ্কর উৎপাদন। জননীর দৌলতে আমার হেঁসেলে হাওড়াকে কোঁৎকা মেরে মুর্শিদাবাদই বিজয়ী।  পেঁপে পোস্ত বা ঝিঙে দিয়ে ডিমের ঝোল বা রসুন দিয়ে পোস্তর বড়া এসবের আস্বাদই পেতাম না যদি না জীবনের প্রথম পোস্টিং খড়্গপুর হত। 


মেদিনীপুরের আরো একখান বৈশিষ্ট্য আছে, যা কেবল আমাদের মত বদলীর চাকরীওয়ালা সরকারী লোকজনই জানে, তা হল, ‘একবার মেদিনীপুর তো বারবার মেদিনীপুর। ’ আমার প্রাণাধিকা সহচরী সুকন্যাকেই ধরুন, ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিক হয়ে মেদিনীপুর, চাকরী বদলে সহশ্রম কমিশনার হয়ে ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম তখনও পশ্চিম মেদিনীপুরেরই অঙ্গ ছিল, যেই জেলা আলাদা হল, মহানগর থেকে বদলী হয়ে সু আবার গেল মেদিনীপুর। যাই হোক, ‘সু-চর্চা’ তো চলতেই পারে দিনরাত ধরে,  কিনা বড্ড গালাগাল খেতে হবে আবডালে। কাজেই ঐ প্রসঙ্গ থাকুক। তো যা বলছিলাম আর কি, মেদিনীপুর কানেকশন যে কতখানি অব্যর্থ তা প্রমাণ করে শৌভিকের আরেকবার পশ্চিম মেদিনীপুর হল না বটে, ঘুরে এসে পড়ল পূর্ব মেদিনীপুরে। এক্কেবারে আগ মার্কা মেদিনীপুর যারে কয়- 


সেই সত্তরের দশকের অন্তিমপর্বে শ্বশুরমশাইয়ের যখন বীরভূম পোস্টিং হয়েছিল, রন্ধনে দ্রৌপদী আমার স্বর্গীয়া দিদিশাশুড়ী যেভাবে কেঁদে আকুল হয়েছিলেন, তাঁর আদরের বাবলু(অর্থাৎ শ্বশুরমশাই) এ যাত্রা বোধহয় অভুক্তই মারা পড়বে ভেবে, ততোটা না হলেও বেশ খানিকটা কেঁদেছিলাম আমিও শৌভিকের বদলীর খবর পেয়ে। ‘হ্যাঁ গা, তুমি কি খাবে? কে তোমায় রেঁধে দেবে আমার মত করে-’। 


জবাব পাই, কেন সতী দেবী আছেন তো। সতীদেবীর নামটা বদলে দিলাম যদিও শুনলাম তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ তমলুকের মহকুমা শাসকদের খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তা বেশ। জানতে চাই, ‘হ্যাঁ গো, সতীদেবী রাঁধেন কেমন?’ জবাব আসে, মন্দ কি?ভালোই তো।  শৌভিকের এই জবাবে আমি মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারি না। শাশুড়ী মাতার সুপুত্তুরকে যাই বেড়ে দেবেন, তাই সোনামুখ করে খেয়ে নেন। নুন- মিষ্টি-ঝাল কম হলেও বলবে না। চাইবেও না। বাসি-পচা দিলেও বুঝবে না। মানতেও চাইবে না। তে-বাসটে রুটিও ভেজে দিলে পবিত্র করে খেয়ে নেবে, বরং ফেলে দিলেই চিল্লিয়ে মাৎ করবে- ‘খাবার নষ্ট করলি কেন?’ সবটুকুই অতসী দেবী থুড়ি শাশুড়ি মাতার অবদান তথা সুশিক্ষা। সাড়ে বারো বছরেও বিগড়াতে পারিনি তাঁর পুত্তুরকে। 


তমলুকে গিয়ে খেতে বসে দেখি পদ বেশ অনেকগুলিই। গরম ভাত-ডাল-কিছু একটা ভাজা-তরকারী এবং মাছ। শুনলাম রোজই নাকি এমনিই রান্নাবান্না করে দেন সতীদেবী। মানে যতক্ষণ  বাজার থাকে। বাজার আনার দায়িত্ব শৌভিকের ড্রাইভারের। যাই হোক, ডালটা আমাদের স্বাদের তুলনায় বা বলা চলে ভাতের ডালের হিসেবে বেশ মিষ্ট। মানতে বাধ্য হচ্ছি মিষ্টি মিষ্টি ডাল দিয়ে নোনতা নোনতা ভাজা মন্দ না। শুধু চিনতে পারলাম না,ভাজা বস্তুটা আদতে কি? শুনলাম কুঁদরি। রাতে রুটির সাথে আবার পেলাম কুঁদরি ভাজা। পর দিন আবার। পর রাতে আবার। যেদিন কুঁদরি অনুপস্থিত থাকেন,অর্থাৎ ফুরিয়ে যান, সেদিন পাত আলো করে থাকেন কাঁকরোল ভাজা। কটকটে বীজ সমেত চাকা চাকা কাঁকরোল ভাজা। 


শৌভিক দেখলাম অতীব যত্নে একটি একটি করে বীজ ছাড়িয়ে পাতের পাশে ছোট্ট টিলা বানাল। ঐ ভাবে খেতে না পারার জন্য, ‘তোরা না,অতি নিন্দুক’  শুনতে হয় তুত্তুরী আর আমাকে। একই বিশেষণে ভূষিত হই, পোস্তকে না চিনতে পারার গর্হিত অপরাধে। পোস্তই বলুন বা সর্ষে ভালো করে বাটলে যে তা আটা বা ময়দা গোলার মত খেতে হয় তাও অাবিষ্কার করলাম। এহেন সর্ষে বাটা দিয়ে মাছ খেয়ে শৌভিক অনুরোধ করে, ‘ওকে একটু কালো জিরে-কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাছটা শিখিয়ে দিয়ে যাস তো।’ তা শেখাই। বাধ্য ছাত্রীর মত, তিনি শেখেনও। তবুও শাশুড়ী মা ছাড়ুন এমনকি আমার হাতেরও সোয়াদও তো আসে না। যেমন রসুনের গন্ধ না ছড়িয়ে মাখামাখা লালচে ডিমের ঝোল রাঁধতে শেখালাম, তিনি দিলেন তাতে চিনির কৌটো উল্টিয়ে, ‘কচি খাবেনি!’ কচি অর্থাৎ ছিমতী তুত্তুরী, তাঁর যদি ঝাল লাগে-। রান্নার তরিকা বা সোয়াদে হেরফের থাকতেই পারে আবেগের ভাষা তো জেলা ভেদে একই। 


যাই হোক সতী দেবী বা পলাশ ড্রাইভারের চব্য পরে হবে, কি ভাবে তাঁরা আমাদের সোমরা( পড়ুন পাঁচফোড়ন) দিয়ে বীচে কলা আর বেগুনের ঘন্ট খাইয়ে মোহিত করেছিলেন বা ঘন দুধ আর সামান্য আদা দেওয়া নারকেলের মিষ্টি খাইয়ে আমাদের হৃদয় হরণ করেছিলেন, কি ভাবে তাঁরা আমাদের থোড়-বেগুনের ঘন্ট তথা আরো কি কি খাওয়াবার ভয় দেখিয়েছিলেন সে চব্য পরে হবে খন, আপাততঃ ফিরে যাই মাননীয় মহকুমা শাসকের কাছে।  


বৎসরান্তে জন্মদিন তো একবারই আসে, এ তো আর আমাদের বিয়ে নয় যে ঘুরে ফিরে দুবার আসবে, আর যাঁর জন্মদিন তাঁকে ছাড়া চলে কি করে? ঐ দিনটিতে শুধু আসুক, তারপর না হয় আর সারা মাস কোন আব্দার করব না আমরা। (চলবে?)

ইতি অনিন্দিতা

 তাম্রলিপ্ত,         সোমবার, ৫ই আশ্বিন, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ


প্রিয় এষা,

তুমি কি জানো, যে গতকাল রাতে শ্রীমতী তুত্তুরী, তোমার আদরের কুট্টুসকে মখমলি চিকেন চাখিয়েছে? ‘মখমলি চিকেন’ বলতে বুঝলে না তো?  ঐ যে তোমার দাদা, লাল টমেটো না হলদে খরগোশ, কোথা থেকে যেন যেটা আনিয়েছিল।  যাদের সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ডেলিভারি করতে বলা হয়েছিল আর রাত পৌনে নটার সময় তাদের ডেলিভারি কাকু তার মান্ধাতার আমলের সাইকেলটা ঠেলতে ঠেলতে এক প্যাকেট ভর্তি কি সব নিয়ে এসেছিল। কি প্রচণ্ড ক্ষেপেছিল শৌভিক। রেগে গিয়ে গোঁ ধরেই বসেছিল, লোকটা এলে, খাবারের প্যাকেটটা কেড়ে নিয়ে ভাগিয়ে দেবে। মূল্য দূরস্থান, এমনকি ডেলিভারি চার্জটাও দেবে না। নেহাৎ আমি নিজেই পেশায় গায়েগতরে খেটে খাওয়া শ্রমিক,তাই অনেক বলে কয়ে মাথাটা ঠাণ্ডা করেছিলাম।


তবে তীব্র কেওড়া গন্ধী মাংসটা চাখার পর, মনে হয়েছিল শৌভিককে না আটকালেই ভালো করতাম। তুত্তুরী বলল,এমনকি শ্রীমান কুট্টুসও নাকি বার তিনেক ঘুরে, ঘুরে এসে শুধুই শুঁকেছিল,হয়তো শুঁকে বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছিল, এই মালটা আসলে কি! তুত্তুরীর বয়ান অনুসারে শেষমেশ অবশ্যি পেটে চালান করে। বিগত তিন বেলায়, তুত্তুরী দিদি তার কুট্টুস ভাইয়ের আরও যে এমনি কত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা আমার ধারণা ধীরে ধীরে জানতে পারব আমরা। ক্রমশঃ প্রকাশ্য ব্যাপারস্যাপার আর কি- 


রবিবার ভোর ভোর তোমরা যখন বেরোলে দেবী বর্গভীমা সন্দর্শনে, শ্রীমতী তুত্তুরী স্বেচ্ছায় ঘাড় পেতে নিল, তোমাদের অনুপস্থিতিতে কুট্টু বাবুর রক্ষণাবেক্ষণের ভার। সেই মোতাবেক ঢাকঢোল পিটিয়ে শ্রীমান কুট্টুসকে নিয়ে গেল ছাতে পায়চারি করতে, যাতে সেই মওকায় গাড়িতে সওয়ার হয়ে কেটে পড়তে পারো তোমরা দোঁহে। কুট্টু বাবু চতুষ্পদী হলেও এতই কি বোকা রে ভাই? যেই অর্জুন গাড়ির দরজা খুলেছে, তিনতলার ছাত থেকে তুত্তুরীর হাত ছাড়িয়ে হুড়মুড় করে দৌড়ে এল কুট্টুস বাবু। অবোলা জীব হলেও তোমাদের এক ঝলক দেখার জন্য ওর আর্তি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম আমরা। তুত্তুরীর প্রবল চিৎকারে সচকিত হয়ে আপ্রাণ শক্তিতে বাইরের দরজাটা চেপে ধরেছিলাম যে আমি-। যেই তোমাদের তুলে পলাশের গাড়ির চাকা গড়াল, দরজার হাতল ছাড়লাম আমি, ওমনি বুলেটের মত ছুট্টে বেরিয়ে এল কুট্টুস। তারপর খানিক গোল গোল করে ঘুরল গাড়ি বারন্দার নীচে, বোধহয় তোমাদের গায়ের গন্ধ শুঁকল আর দৌড়ল গাড়ির পিছন পিছন।প্রহরারত সিভিক ভলান্টিয়ার ছেলেটির এমনিতেই সারমেয় ভীতি আছে, কুট্টুসের ঐ দৌড় দেখে সে তো একলাফে পগার পার। ভাগ্যে শ্রীমতী তুত্তুরী ছিল, রীতিমত জাপটে ধরে, পরম স্নেহে  ‘ঘরে চল না। আসবে, আসবে এখুনি এষা পিসিরা ফিরে আসবে’ বলতে বলতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল কুট্টু বাবুকে।  দুজনের সম্পর্কের বাঁধুনিটা কখন যে আমাদের অসাক্ষাতে এত জবরদস্ত হয়ে উঠেছে, তাই বোধহয়, তুত্তুরীদিদির সাথে শোবে বলে গতরাতে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন শ্রীমান কুট্টুস। 


কি ভালো নামে চেনে ও তোমাদের। চেনে তুত্তুরীকেও। এমনিতে শ্রীমান কুট্টুস বাস্তবিকই শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে,তবে সাময়িক ভাবে ওকে ত্যাগ করার ক্ষোভেই বোধহয় সেদিন পাগলের মত বাগানে ছোটাছুটি করছিল আর ঘাস চিবাচ্চিল।তুত্তুরী তো বেশ কয়েকবার বলেই ফেলল, 'ওরে, তুই ছাগল নস। তুই হলি কুতুয়া। কুতুয়ারা ঘাস খায় না।' 


শেষমেশ শৌভিক ঘাড় ধরে এনে বারন্দার গ্রীলে বেঁধে রাখল কিয়ৎক্ষণ। তখন অবশ্যি দিব্যি ভাজা মাছ উল্টে না খেতে পারার মত মুখ করে বসেছিল। দিব্যি পোজও দিল ভালো মানুষের মত মুখ করে। তারপর আমায় দেখে সটান উঠতে চাইল আমার কোলে। জানে আমি ভয় পাই। কোলে নিতে না পারার অপরাধবোধেই খানিক প্রজাপতি বিস্কুট দিয়েছিলাম খেতে। বেশী না একটা ছোট্ট টুকরো, সেটা কুট্টুস খায়ও নি। অথচ যখন বমি করল, তখন সটান দাদা আর তুত্তুরী আমার ওপর চড়াও হল, আমার দেওয়া বিস্কুটের জন্যই নাকি কুট্টুস বমি করেছে। ঘাস খাওয়া বা তোমাদের ওপর আক্রোশ বশতঃ নয়। তোমাদের ওপর এত আক্রোশ, অথচ যেই তোমরা ফিরে এলে, ওমনি কেমন ভালো ছেলের মত,তোমার পায়ের কাছে শুয়ে তোমার পদযুগল আঁকড়ে ধরল, যাতে আর না ছেড়ে যেতে পারো ওকে। মায়া কিছু কাড়াতে পারে বটে তোমাদের কুট্টুস বাবু। 


যাই হোক, যে কথা বলার জন্য এত্ত বড় প্রস্তাবনা,  তা হল, আশা করি তোমার মনে আছে, গতকাল রাতে শ্রীমান কুট্টুসের নৈশভোজ দেখে আমি হুমকি দিচ্ছিলাম, এবার থেকে যাদের প্রতি আমার প্রেম উছলিয়া উঠবে তাদের ডেকে কুট্টু ভোজ খাওয়াব- আহাঃ কি অনুপমই হবে সে ভোজ।তৈলহীন, লবণ বিহীন মাংসের খিচুড়ির সাথে সীতা ভোগ আর রসোগোল্লার চটকানি। সমগ্র ব্যাপারখানা পর্যবেক্ষণ করে, আমাদেরই ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিয়েছিল,আর ও তো বেচারী নেহাৎ পুঁচকে ছানা। 


আজ এদিকে উপুর্যান্তে বৃষ্টি পড়ছে, নৈশভোজ বলতে রুটি গতকাল রাতে তোমাদের জন্য রান্না করা সতীদেবীর মাংস থুড়ি সতীদেবীর রান্না করা মুর্গির মাংস। অথচ ঝুপঝুপে বৃষ্টি আর ঝোড়ো শীতল হাওয়ার এমন রাত কি জমে খিচুড়ি ছাড়া। যথারীতি রান্না করতে গিয়ে দেখি সবকিছুই বাড়ন্ত। তখন মনে পড়ল কুট্টুস ভোজের কথা। শুকনো খোলায় হাল্কা করে ভাজা মুগ ডাল(সোনা নয়, ইমিটেশন মুগ) আর সুফল বাংলার সিদ্ধ চাল, পরিমাণ মত লবণ আর হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করে, তার সাথে মিশিয়েছি সতীদেবীর মাংস থুড়ি রান্না করা মুর্গির মাংস। মেশানোর আগে আলাদা কড়ায় ফুটিয়ে ফুটিয়ে বেশ ঘন তথা থকথকে বানিয়ে নিয়েছিলাম দুচার টুকরো আলু সমেত মাংটাকে। চুপি চুপি বলি, শনিবার রাতে রান্না করা পনীরের কয়েকটা টুকরো লুকিয়েছিল ফ্রীজের কোন গহীন কোণায়, তাদেরও মিশিয়ে দিয়েছি কুট্টু ভোজে। সব  মিলেমিশে, সিদ্ধ হবার মিলিয়ে নিয়েছি শুধু নুন আর মিষ্টির ভারসাম্যটুকু। আর ছড়িয়েছি পর্যাপ্ত ঘি-গরম মশলা। আমাদের তো আর কুট্টু বাবুর মত লোম ঝরে যাওয়ার ভয় নেই। বিশ্বাস করো খেতে জব্বর হয়েছিল। গতকাল রাতে এই নিয়ে তোমার আর অর্জুনের খিল্লী করার জন্য যৎপরনাস্তি দুঃখিত মাইরি। কুট্টুসের খাবারটা মোটেই খুব খারাপ নয়। 


পুনশ্চঃ- ডেজার্টে ছিল অর্জুনের আনা সীতাভোগ। যা দোকান চেঁচে মাত্র চারশগ্রাম আনতে পেরেছে বলে দুঃখে অর্জুনের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল, অথচ তোমরা কেউ চারচামচও খেয়ে আমায় উদ্ধার করোনি। আজ ফ্রিজ সাফ করতে গিয়ে সন্ধ্যা বেলায় তিনি এবং গোটা দুই পুঁটকে রসোগোল্লা উদ্ধার হয়।ঠান্ডা আলমারিতে রাত্রিবাসের দরুন সীতাভোগটা কেমন যেন ফাটা পায়ের মত দেখতে লাগছিল মাইরি।   কুট্টু ভোজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, মাইক্রোওয়েভ সেফ বোওলে পর্যায়ক্রমে ছানার পোলাও আর রস সমেত রসোগোল্লাদ্বয় মিশিয়ে ভালো করে ঘেঁটে দেড় থেকে দু মিনিট মাইক্রোওয়ভে ফুটিয়ে নিয়েছি। মন্দ হয়নি কিন্তু ব্যাপারটা। পরের বার এলে অবশ্যই খাওয়াব, শুধু তোমাদের। গতরাতে যাদের খাওয়াব মনস্থ করে লিস্টি বানিয়েছিলাম, তাদের আপ্যায়নের জন্য দেখছি অন্য রেসিপি খুঁজতে হবে। ইতিমধ্যে যদি তেমন কিছু তোমরা আবিষ্কার করো, তো অবশ্যই জানিও। যা দেখা তো দূর শুনলেই ক্ষুধামান্দ্য অবধারিত। 

 অনেক ভালোবাসা রইল,পারলে আবার এসো। জলদি জলদি। 


ইতি 

অনিন্দিতা(দি)

Thursday 9 September 2021

ইতি অনিন্দিতা।

 তাং- ২৪শে ভাদ্র, ১৪২৮


ইয়ে বলছি কি না,


কালকের কথা গুলো আজ কেমন যেন বাসি হয়ে যায়, না বলা কথা গুলো কিছুতেই আর বলা হয়ে ওঠে না নৈমিত্তিক ব্যস্ততার চাপে। কখনই তাল মিলিয়ে আসে না অবকাশ উভয়ের দ্বারে। কখনও পরিবৃত থাকো তুমি, তো পর মুহূর্তে একই গল্প শোনাই আমি। এত কাজ বাপের জন্মে করেছি? কান্না পায় মাঝেমাঝে। অথচ কিছুই যেন গুছিয়ে করে উঠতে পারি না, অগোছালোই থেকে যায় সবকিছু। কিছুই কেন যে তোমার মত পারি না আমি।


সকালে ঘুম ভেঙেই যখন ফোন করেছিলে তুমি, তখন দম ফেলার ফুরসৎ ছিল না আমার। বিছানা তোলা, স্নান করতে যাওয়া, বাজার করার সাথে মিলেমিশে ঘন্ট পাকাচ্ছিলো শ্রীমতী তুত্তুরীর সিলেবাসের পাওয়ার পয়েন্ট-আবহাওয়া ও জলবায়ু আর গড়ের অঙ্ক। সামান্য যোগে ভুল করার  ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে মাথা গরম করে, তোমাকে বলা হল না, ঠিক সেই মুহূর্তেই কি দারুণ সোনালী রোদ এসে পড়ছিল তোমার পূবের বারান্দায়। তোমায় জানানো হল না, আমার শুকিয়ে যাওয়া অপরাজিতা গাছে নতুন করে ডানা মেলেছে কিছু কচি সবুজ পাতা। তোমার কাছে অনুযোগ করা হল না, তোমাদের আবাসনের দুষ্টু কাঠবিড়ালি কি ভাবে সব পাতা ছিঁড়ে উলঙ্গ করে দিয়েছে আমার সাধের সিক্স মর্নিং গাছটাকে। কি সুন্দর ফুল ফোটাচ্ছিল কচি গাছটা। আক্ষেপ করা হল না তোমার কাছে, যে দৈনন্দিন ব্যস্ততায় কতদিন হয়ে গেল গাছে সার দেবার সময় হচ্ছে না আমার। তোমাকে দেখানো হল না, যখন ফোনটা রেখে দিলে তুমি, ঠিক তখনই আমাদের দাম্পত্য আলাপ শুনবে বলে ছাত থেকে টেলিফোনের তার বেয়ে সুড়সুড় করে নেমে আসছিল একটা ধেড়ে ইঁদুর। 


অফিস যাবার পথে যখন দুদণ্ড সময় পেয়ে ফোন করলাম তোমায়, আপাদমস্তক কাজে ডুবে তুমি। কতজন অপেক্ষা করছে তোমার একটু খানি সময়ের জন্য। চটজলদি ফোন রাখার চক্করে তোমায় শোনানোই হল না, আমার প্রিয়তমা বান্ধবীর সরকারি আবাসের দোতলার বাথরুমে হঠাৎ ঢুকে পড়া গোখরো সাপের কথা। বর্ষাকালে ব্যাঙ উঠত বটে, জলের পাইপ বেয়ে, পিছু-পিছু যে তিনিও আসবেন এটা কে জানত? তোমাকে শোনানোই হল না, আতঙ্কিত গিন্নিকে ছেড়ে অনুপ্রবেশকারী সাপের কুশল সংবাদ জানতে চাওয়ার অপরাধে বরটাকে ত্যাগই করবে বলে মনস্থ করেছে ও, ঐ যেমন মনস্থ আমরা দিনে অন্তত আড়াই বার নিয়ম মেনে করি আর কি-।


 এই তো সেদিনও প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খনাপুঙ্খ বিবরণ শোনাতাম তোমায়, তীব্র অনাসক্তিতে বেঁকে যেত তোমার ভ্রু, ফুলে উঠত দুই গাল। করুণ চোখে অপেক্ষা করতে, কখন শেষ হবে আমার দৈনিক বৃত্তান্ত। আজ এই মধ্যরাতে, সুপ্ত কন্যার পাশে শুয়ে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে চিঠি লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে, কে জানে সেটা কোন যুগ ছিল সত্য, দ্বাপর না ত্রেতা! 


তোমায় জানানোই হল না, কাজের দরকারে করা ফোন না তোলায়, কাকে যেন কোন গ্রূপে 'পাক্কা হারামজাদা' বলেছি আমি। যাকে লিখলাম, সে দেখার আগেই প্রত্যক্ষ করলাম, সর্বপ্রথম মেসেজটার পাঠিকাও আমি স্বয়ং। কন্যা বিদ্যা গজগজ হবে বলে, সরকারী ফোনটা বাড়িতে রেখে আসি যে। ক্লাস করার নামে তিনি সারাদিন কি করেন,হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি মাইরি। অবিলম্বে যাবতীয় বন্ধুদের গ্রূপ থেকে নিজেকে থুড়ি নিজের ওই নম্বরটাকে হঠাতে হবে। মা হয়েছি বলে কি, প্রাণ খুলে দুটো বাজে কথাও বলা যাবে না মাইরি। কাল থেকে যদি বিশুদ্ধ তথা সংস্কৃত ভাষায় সংস্কৃতিমনস্ক আঁতেলদের মত বার্তালাপ করা শুরু করি, আমার প্রিয় বন্ধুরা যে তৎক্ষণাৎ আমায় ত্যাগ করবে গো- 


তোমার আদরের দুলালী,তুমি বদলী হয়ে যাবার পর থেকে যিনি ক্রমাগত ছাগলের মত, 'ব্যা-ব্যা' করেই চলেছেন, পড়তে বসতে বললেই, ছলছল আঁখি নিয়ে যিনি আপন মনে গুনগুন করেন, ' বাবার জন্য আমার আজ খুব মনটা খারাপ', সেই তিনি শুধু যে আমার একার ফোনটারই বারোটা বাজাচ্ছেন, তাই নয়, দায়িত্ব সহকারে আমার বাবা এবং মায়ের ফোনেরও যাবতীয় দৈনিক ডেটা খতম করছেন। দিনভর ফোন গুলি যে তাঁরই কুক্ষিগত থাকে, তা আমি বেশ বুঝতে পারি, যখনই, যে নম্বরেই ফোন করি, এ বাড়িতে ফোন তোলেন কেবল একজনই। 


 তোমাকে শোনানো হল না,  অফিস ফেরৎ মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার গল্প। মাকে কেমন ধমকাল মায়ের ডাক্তার। যাকে ধমকালেন তিনি তো দিব্যি হাসাহাসি মুখে বসে রইলেন, মাঝখান থেকে আমি কেমন ব্যোমকে গিয়ে বেমালুম ফিজ না দিয়েই, আচ্ছা আসি বলে বেরিয়ে আসছিলাম। বকাবকি করে ক্লান্ত উনিও বলেই ফেলেছিলেন, 'হ্যাঁ আসুন।ভালো থাকবেন'।  ভাগ্যে মা বলল, ফিজটা দিতে। পথে শুনতে হল, 'মাথাটা কার খারাপ? আমার না তোর? পাগলের ডাক্তার কাকে দেখানো দরকার বলতো?'  


ভাবছ বোধহয় আজকের গল্প এইটুকুই, আজ্ঞে না স্যার, এখনো তো তোমায় শোনানোই হয়নি, জনৈক পুলিশের সাথে আমার আদরিণী ইন্সপেক্টরের ঝাড়পীঠের গল্প।' কিভাবে তিনটি জেলা দূর থেকে ফোনেই তার নিষ্পত্তি করলাম,তাও শোনাতে পারলাম না তোমায়। বাড়ি ফেরার পথে ঠাণ্ডা মাথায় পুলিশকে সামলে আমার লোকজনকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলাম,তারপরও মা বলে কি না, 'পাগলের ডাক্তার কাকে দেখানো দরকার বল তো?' এত অপমান ধর্মে সইবে মাইরি? 


ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতি ছাড়ালো। কাল আবার সাড়ে ছটায় দরজা পিটবে, আমাদের সোফিয়া মাসি। বাবা যার নাম দিয়েছে সোফিয়া লরেন। দরজা না খুলতে পারলে, ঝাড়পোঁছ এর দায়িত্বটাও চাপবে আমার ঘাড়ে। তোমার মেয়ের আর কি,ধুলো মেঝেতেই গড়াগড়ি যাবে। সারাদিন হয় নাচ্ছেন নয়তো মাটিতে গড়াচ্ছেন। আপাততঃ ঘুমাতে যাই। তুমি বোধহয় গভীর ঘুমে। চলো শুভরাত্রি। 


ইয়ে জানো তো, সায়নী বলেছে আমাকে বিনি পয়সায় একখান খরগোশ দেবে। এক জোড়া কিনেছিল, দেড় দু  মাস অন্তর পাঁচটা করে বাচ্ছা দিয়ে এখন সাকুল্যে পঁচিশ খান হয়েছে। তার থেকে একটা আমাকে ভালোবেসে দিতে চাইছে। তুত্তুরীও সেই শুনে ধেইধেই করে নাচ্ছে, তোমার অনুমতি নেওয়া হল না, হ্যাঁ গো, আনব নাকি একখান? 


ইতি 

অনিন্দিতা।

Sunday 5 September 2021

অনির ডাইরি ১লা আগস্ট, ২০২১

 

মক্সো করেছিলাম বন্ধুদিবসে লিখব বলে, তারপর যা হয় আর কি, বিশ্বাসঘাতক সময় - । কোনদিনই খুব বেশী বন্ধুবান্ধব আমার ছিল না,আজও বন্ধু বলতে যাদের বদন মুদিত নয়নের সম্মুখে ভেসে ওঠে, তাদের সংখ্যা বেশ সীমিত। অন্তত জুকুদার ফেসবুক যে এগারোশ কত বন্ধু দেখাচ্ছে তার এক দশমাংশের থেকেও বেশ অনেকটাই কম। মোটামুটি সারাদিন যারা অনুপস্থিত থেকেও ঘিরে থাকে আমার দিনটাকে, তাদেরই বন্ধু বলে ধরি আর কি-। 


যাদের সকলকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে হাড়ে হাড়ে চিনি, কারো কপালে সহকর্মীর ছাপ্পা তো কারো গায়ে সহপাঠী বা ক্ষেত্রবিশেষে সহযাত্রীর  উল্কি। ভালোমত চেনা পরিচয় না হলে আবার মৈত্রী হয় নাকি? 


মুস্কিল হল,এই চেনাবৃত্ত-চেনাছকের বাইরেও বেশ কিছু মানুষ ধূমকেতুর মত আচমকা প্রবেশ করেই বেরিয়েগেছেন আমার জীবনের কক্ষপথ থেকে, আর রেখে গেছেন একরাশ সৌহার্দ্যের সুখস্মৃতি। 


তা প্রায় বছর দশেক হল, তুত্তুরী তখন সদ্য পূর্ণ করেছে এক বৎসর। শিশুকন্যার দোহাই দিয়ে মহানগর পোস্টিং পেয়েছি।  চার্চ লেনের পাঁচ তলায় আপিস। বড়সাহেব মহঃ আমানুল হক। আপিস তো নয়, হাওদাখানা, দুবার ফোন চুরি হয়েছে খাস বড়সাহেবেরই, সবাই প্রায় বগলদাবা করে ঘোরে নিজের মুঠোফোন আর আলমারির চাবি। আর আমি এমনি ট্যালা, যে টেবিলে মোবাইল ফেলে ফাইল বগলে ঢুকেছিলাম বড় সাহেবের ঘরে। শুভাকাঙ্ক্ষী বড় সাহেবের পিতৃসুলভ ধমক খেয়ে ছুটতে ছুটতে নিজের চেম্বারে ঢুকে দেখি দিব্যি ফাইলের ওপর শুয়ে আড়ামোড়া ভাঙছেন তিনি। বেশী না মাত্র দুটো মিস কল এসেছে আমার অনুপস্থিতিতে।কোন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি দুবার ফোন করেছেন। 


সাধারণতঃ অচেনা নম্বরে ঘুরিয়ে ফোন করি না। কিন্তু কেন জানি না, সেদিন করলাম। ওপার থেকে এক প্রৌঢ় কণ্ঠ বলে উঠল, ‘হ্যালো অনিন্দিতা? আমি প্রসেনিজিৎ দা বলছি-’। তৎকালে প্রসেনজিৎ নামক দুজন ব্যক্তিকে কেবল চিনতাম, প্রথমতঃ দি প্রসেনজিৎ, সুপারস্টার। তিনি থোড়াই অধমের মত তুচ্ছ ব্যক্তিকে ফোন করবেন?


আর দ্বিতীয়জন সার্ভিসতুতো সিনিয়র দাদা শ্রী প্রসেনজিৎ কুণ্ডু ওরফে পিকে দা। তিনি মাঝেমধ্যেই ফোন করেন থুড়ি করতেন নানা কাজে। নম্বরটা অচেনা যদিও, সে তো হতেই পারে।ব্যস্ত কেজো সুরে জানতে চাইলাম, ‘ হ্যাঁ প্রসেনজিৎ দা বলো? তোমার ক্লেমের ফাইল স্যারের ঘরে। ’ ওপারের গলাটা কিঞ্চিৎ  থতমত খেয়ে বলল, ‘আরেঃ আমি প্রসেনজিৎ দা বলছি ব্যাঙ্ক থেকে। ’ ও হরি। ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি আরেক প্রসেনজিৎকেও চিনি। তবে তাঁকে কোনদিন দাদা বলে ডাকা বা ভাবার ধৃষ্টতা  দেখাইনি। 


প্রৌঢ় ভদ্রলোকের সাথে ব্যাঙ্কেই আলাপ।কিছুদিন আগেই আমি গিয়েছিলাম অ্যাকাউন্টে ঠিকানা বদল করতে, যাঁর টেবিলে পাঠানো হয়েছিল, সেই সৌম্য দর্শন অতি গৌর বর্ণ প্রৌঢ়, আদতে ছিলেন অত্যন্ত সদাশয় তথা অমায়িক  ব্যক্তি। পাশে বসিয়ে, চা খাইয়ে স্নেহশীল ভঙ্গিমায় অনেক খোশগল্প করেছিলেন। না বলতেই কে ওয়াই সি ঠিক করে দিয়েছিলেন, আর সব কি কি করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ আমার নম্বরটা নিয়ে যাও, কোন দরকার হলে ফোন করে দিও, কাজ হয়ে যাবে। কষ্ট করে আর আসতে হবে না। তবে যদি আসো, অবশ্যই এই বুড়োটার সাথে দেখা করে যেও।’


তাই করতামও। ফোন কখনও করিনি, তবে গেলে দেখা করতাম। বেশ কিছুদিন আর ব্যাঙ্কে যেতে হয়নি, তাই দেখাসাক্ষাৎও হয়নি। ভাবলাম তাই বোধহয় কুশল বিনিময় করতে ফোন করেছেন ভদ্রলোক। উৎফুল্ল স্বরে জানতে চাইলাম, ‘ও প্রসেনজিৎ বাবু আপনি? কেমন আছেন?’ ওপার থেকে ভেসে এল মৃদু ধমক, ‘কেমন আছি, পরে জানলেও চলবে। আগে বলো তোমার এটিএম কার্ডটা কোথায়?’ থতমত খেয়ে জানালাম, কার্ডটা যেখানে থাকার সেখানেই আছে, হাতব্যাগের ভিতর পয়সার থলের মধ্যে, ওণারই উপহার দেওয়া ব্যাঙ্কের নাম লেখা ‘ফ’ লেদারের পাউচের ভিতর। ওদিকের গলায় ফুটে উঠল, চাপা উত্তেজনা,‘ তাই নাকি? আমি ফোনটা ধরছি, তুমি খুঁজে দেখো তো। ’ 


হাতব্যাগ উপুড় করে টেবিলের ওপর ঢেলেও পেলাম না, এটিএম কার্ড। সবেধন নীলমণি একটিই অ্যাকাউন্ট,তার একমাত্র কার্ড। আমার সিন্দুকের চাবি। কি করি? রীতিমত আতঙ্কিত সুরে জানতে চাইলাম ফোন করে ব্লক করাব কি? করাতে হলেও বোধহয় কার্ড নম্বরটা লাগবে,যা আমার মুখস্থও নেই, কোথাও টোকাও নেই। 


ওদিক থেকে স্নেহময় বড়দার ধমক ভেসে এল, ‘কাল হাওড়া ময়দান থেকে টাকা তুলেছিলে?’ আলবাৎ তুলেছিলাম। বেশ মনে আছে টাকা তুললাম, টাকা গুণলাম,পয়সার থলে তে ঢোকালাম। থলেটা হাত ব্যাগে ঢোকালাম, তারপর মায়ের ভাষায় ধেইধেই করতে করতে বাড়ি গেলাম। উনি জানালেন, ওখানেই হয়েছে গড়বড়, টাকা গোণার সময়, ফ লেদারের পাউচে ভরা কার্ডটা রেখেছিলাম এটিএম কাউন্টারে। তারপর তাঁকে সেখানে রেখেই ধেইধেই- ।  


জনৈক ব্যক্তি পরে রাতে ঐ এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে কার্ড সমেত পাউচটা পান। উনি তৎক্ষণাৎ এটিএমের রক্ষীর কাছে সেটি জমা করতে উদ্যত হন, এই আশঙ্কায় যে,যার কার্ড সে হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছুটে আসবে। রক্ষী হাই তুলে দায়সারা ভাবে জানান,তিনি নিতে পারবেন না। হয় থানায় জমা করুন, নাহলে ওখানেই পড়ে থাকুক। যার কার্ড সে বুঝে নেবে। 


এত সহজে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেননি ভদ্রলোক, উনি তখন ফ লেদার পাউচটি ঘেঁটে দেখেন ভিতরে কোন ঠিকানা বা ফোন নম্বর আছে কি না। ছোট্ট চিরকৃটে প্রসেনজিৎ বাবুর স্বহস্তে লেখা ফোন নম্বরটি আমি ভাগ্যে ঐ পাউচটাতেই রেখেছিলাম, গতকাল রাত নটা নাগাদ ভদ্রলোক প্রসেনজিৎ বাবুকে ফোন করে সব জানান। কার্ডের নামটা শুনেই উনি চিনতে পারেন, কিন্তু আমার নম্বর না থাকায় আর ফোন করতে পারেননি। আজ আপিসে এসে, ডেটাবেস ঘেঁটে আমার নম্বর খুঁজে সকাল থেকে চেষ্টা করছেন যোগাযোগ করার। 


শুনে স্বস্তি পেলাম। সাথে সাথে ভদ্রলোকের নাম আর নম্বরটাও। প্রসেনজিৎ বাবু জানালেন, ভদ্রলোক কাল রাতেই ওণাকে জানিয়ে রেখেছেন আজ সারাদিন উনি কাজের জন্য হাওড়ার কোন প্রত্যন্ত গ্রামে থাকবেন, যেখানে টাওয়ার থাকবে না। ফলে রাত আটটা নটার আগে ওণাকে পাওয়া যাবে না। তখন ফোন করলে উনি জানাবেন কখন উনি কার্ডটা ফেরৎ  দিতে পারবেন। 


সত্যিই ওণাকে পাওয়া গেল না রাত নটা অবধি। টেনশনে কত সহস্রবার যে ডায়াল করলাম ওণার নম্বর। রাত নটার পর বাজল ফোনের রিং, ওপাশ থেকে ভেসে এল এক ক্লান্ত পুরুষকণ্ঠ। পরিচয় দিতেই , চিনতে পারলেন। মার্জনা চাইলেন এতক্ষণ ফোনে না পাওয়ার জন্য। জানালেন পেশায় ছোটখাট কন্ট্রাক্টর। কাজের ধান্ধায় প্রায়ই এমন দূরদূরান্তে যেতে হয়। আগামী কালও যেতে হবে। যদি আমি সকাল সকাল একটু হাওড়া ময়দানের ঐ এটিএমে আসি, তো উনি কার্ডটা আমায় দিয়ে যেতে পারেন। 


কৃতজ্ঞতায় বুঝে আসছিল গলা। কে বলে আমরা কলি যুগে বাস করি? এখনও কত যে সৎ মানুষ ছড়িয়ে আছেন, এই সমাজে। তাই না এতকিছুর পরও জিতে যায় মানুষ। নিশ্বাস চেপে কোন মতে কাটল রাত, ভোর ভোর পৌঁছালাম এটিএমে। ফোন করতেই এক সৌম্য দর্শন বছর ত্রিশের ব্যক্তি এগিয়ে এলেন, নমস্কার বিনিময়ের পর আমার কার্ডটা আমার হাতে দিয়ে ওণার শান্তি হল। তাড়া ছিল ওণার, তবুও দুদণ্ড কথা বললেন আমার সাথে। ভুল বললাম, আমিই বলে গেলাম একতরফা। জানালাম অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা। জানালাম কি চাকরী করি আমি এবং শৌভিক, জানালাম এছাড়াও আছে বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব, যে কোন প্রয়োজনে উনি যেন নিঃসঙ্কোচে জানান আমাদের। এই উপকারের কোন প্রতিদান তো হয় না, তবুও চেষ্টা করব পাশে থাকার। উনিও কথা দিলেন, অবশ্যই জানাবেন। পরে বাড়ি ফিরে একই কথা জানিয়েছিলাম প্রসেনজিৎ বাবুকেও। মজার কথা হল না উনি কখনও কোন সাহায্য চেয়েছিলেন না প্রসেনজিৎ বাবু। দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে এরপরও বেশ কিছুদিন যোগাযোগ ছিল, প্রথমজনের সাথে আর কখনও যোগাযোগই হয়নি। 


নাই হোক দেখাসাক্ষাৎ, নাই থাকুক যোগাযোগ, ওই যে স্বর্গীয় চাণক্য বলে গেছেন না, বন্ধুত্বের প্রথম শর্তই হল বিপদে পাশে থাকা, এনারা যদি বন্ধু না হন, তাহলে আর বন্ধু কে? প্রতিটি বন্ধুদিবসে তাই একটি বার অন্তত স্মরণ করি এইসব মানুষকে, আর ইথার তরঙ্গে পাঠিয়ে দিই, একরাশ শুভকামনা। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনাদের মত ভালো মানুষদের বড় দরকার এই পোড়া সমাজে।