Saturday 25 March 2017

বস্ পুরাণ


বস্ অর্থাৎ ওপরওয়ালা। হোয়াট্স্ অ্যাপের দৌলতে প্রতিনিয়ত বন্ধুমহলে যে আলোচনা হয়, তার গরিষ্ঠাংশ জুড়েই থাকে নানা বন্ধুর বিভিন্ন  ধরনের  বসের গপ্প। আমরা যারা সরকারি চাকুরে তারা ধারণাই করতে পারব না, বেসরকারি ক্ষেত্রে ওপরওয়ালা এবং অধস্তন কর্মচারীর সম্পর্ক ঠিক কেমন হয়।একটা ছোট উদাহরণ দিই, ঠিক এই মুহূর্তে আমার এক বন্ধু হোয়াট্স্ অ্যাপে প্রবল ভাবে তার বসের মৃত্যুকামনা করে যাচ্ছে,  যা লিখছে , তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়,“গোটা অফিসের পরিবেশ দূষিত করে দিচ্ছে। মালটা মরে না কেন? মরলে হাড় জুড়োয়। মরুক। মরুক।  মরুক। ”মুস্কিল হচ্ছে শকুনের অভিশাপে গরু তো আর সবসময়---

এই বন্ধুটি আমার এএমআইইর বন্ধু। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আগে গুরুগ্রামে কর্মরত ছিল। সেখানে ওর বস্ ছিল এক অপরূপ দর্শন মধ্যবয়সী জাঠ। উচ্চতায় আমার বন্ধুটির প্রায় দ্বিগুণ। আপেলের মত ফর্সা গায়ের রঙ। রীতিমত জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করা চেহারা। গোটা অফিসের সব মেয়ে বসের প্রেমে হাবুডুবু খেত, শুধু আমার বন্ধুটি বাদে। যেহেতু ওর প্রত্যক্ষ বস, তাই হয়তো ওর সাথে লোকটির একদম পটত না। রোজ সকাল থেকে বন্ধুটি মেসেজ পাঠাতে শুরু করত,“ ‘আমার হারামি বস্’ আজ এই করেছে, কাল এই করেছিল। আজ অমুককে নিয়ে ঘুরতে গেল। কাল তমুকের কোমর জড়িয়ে ঘুরছিল--”। মজার কথা হল, গ্রুপের বাকি সদস্যরাও না জেনে শুনেই এক সম্পূর্ণ অপরিচিত লোককে আশ মিটিয়ে গালমন্দ করত।  আমার লাভ এই হত, যে রোজ নতুন নতুন গসিপ আর গালি শিখতাম।
যাই হোক, বিগত বৈশাখ মাসে বন্ধুটি তার ‘হারামি বসের’ চাকরি ছেড়ে হায়দ্রাবাদে একটি ভাল চাকরি নিয়ে চলে যায়। এখানে বস একজন মহিলা। ইনিও মধ্যবয়সী। তবে প্রথাগত সুন্দরী নন। কিছুদিন গ্রুপটা আলুনি গেল, কারণ বন্ধু আর বসের গপ্প করে না। ভাবলাম চলো মেয়েটি শান্তিতে কাজ করুক। রথের পর থেকেই শুরু হল, পুনরায় বসের মুণ্ডপাত। মহিলা নাকি মহা ছকবাজ। অফিসে এসেই কেটে পড়েন, সন্ধার মুখে ঢোকেন এবং মাতব্বরি করেন। মাতব্বরি তো ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যা হল, মহিলা একা কেটে পড়েন না, প্রায়শঃ কোন নব্য পুরুষ কর্মচারীকে বগলদাবা করে কেটে পড়েন। এমনকি অফিসে থাকলেও নানা রূপ দৃশ্যদূষণ ঘটান। ফলে অফিসে দিনরাত ফিসফাস চলে। এবং সবাই পর্যায়ক্রমে এসে আমার বন্ধুটিকে নালিশ করে যায়।

এতো গেল এক বন্ধুর বসের গপ্প। আর এক বন্ধু, যে এই মুহূর্তে প্রবলভাবে বসের মৃত্যুকামনা করে চলেছে তার গল্পটা একটু বলি। এই বন্ধুবর একটি ছেলে। যার বস্ মধ্যবয়সী এবং বাঙালি। মোটামুটি সুদর্শন এবং ওনার দৃঢ় বিশ্বাস, ঐ অফিসের সব মহিলা কর্মীই ওনার প্রেমে হাবুডুবু খায়। প্রতিদিন ঘোর ব্যস্ততার মুহূর্তে বস্ ডেকে পাঠায় এবং নিজের নানা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে ফলাও করে গল্প করে। একই গল্প বারবার লাগাতার--শুনে শুনে বন্ধু তো দূর আমাদের এমন কি আমার মুখে শুনে শৌভিকেরও মুখস্থ  হয়ে গেছে। বসের ধারণা মেয়েরা ওনাকে দেখলে প্রেমে না পড়ে থাকতেই পারে না। কত মেয়ে ওনার জন্য ঘর সংসার স্বামী ত্যাগ  করে পথে নামতে রাজি হয়েছে কিন্তু উনি কারো সংসার ভাঙেননি। আর বন্ধু কি বলে? ওর মেসেজ গুলি একটু শেয়ার করছি, যথাবিহিত সেন্সর করে,“ হারামজাদা বলে কি রে? সবাই ওর প্রেমে হাবুডুবু খায়?কে খায় বাপ?পঞ্চাশ বছুরে বুড়ো ভাম। চোখের তলায় কালি। চামড়া ঝুলে গেছে। মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলেই ঘাড় কাৎ করে অর্ধেক নিমিলিত চোখে মুচকি হাসে, ভাবে হেব্বি সেক্সি লাগছে, মেয়ে গুলো বাথরুমে গিয়ে বমি করে নির্ঘাত। কোন দিন হ্যারাসমেন্টের কেসে সিওর ফাঁসবে মাইরি--। কারো ঘর ভাঙেনি!! ন্যাকা__ ক্ষমতাই নেই তো ভাঙবে কি?-”। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে এই দুই বন্ধুকে নিয়ে আমার খুব বেশি মাথা ব্যথা নেই। বস যতই বুনো ওল হোক, এরা বাঘা তেঁতুলের বাপ। সমস্যা আমার অপর এক নিরিহ গোবেচারা বন্ধুকে নিয়ে। মেয়েটি বড় ভালো। কিছুদিন আগেই প্রোমশন পেয়ে হেড অব দা অফিস হয়েছিল। সম্প্রতি জয়পুর থেকে মালিকের ভাই এসে বড় সাহেব হয়ে বসেছে। অদ্ভুত কেস, সব অধিকার ওনার, সব দায় এই মেয়েটির। মেয়েটির জমানায় অফিসে বেশ এক ফ্যামিলি ফিলিং ছিল। সবাই মনের আনন্দে কাজ করত। ঝামেলা হলেও আপোসে মিটমাট হয়ে যেত। বস এসেই এক নীচু তলার কর্মীর সাথে প্রণয়জালে আবদ্ধ হলেন। মেয়েটি আমার বন্ধুর ভাষায় অতি চতুর। যদিও বিবাহিতা তবু ইতিপূর্বে অপর এক সহকর্মীর সাথেও প্রেমজালে জড়িয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি করেছিল। বন্ধুবর সুকৌশলে ম্যানেজ করেছিল। কিন্তু এবারে পরিস্থিতি এতটাই জটিল, যে ওর হাতে আর কিছু নেই। মেয়েটি স্বেচ্ছায় স্বামীকে এবং প্রাক্তন প্রেমিককে ছেড়ে নব্য প্রেমিকের সঙ্গে থাকবে বলে বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে গৃহত্যাগী হয়েছে। ফলে দফায় দফায় লোকজন এসে আমার বন্ধুটিকে নানা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। যার কোন কিছুর জন্যই ও দায়ী নয়। বন্ধুর প্রেশার দড়াম করে নেমে গেছে। চাকরী টার্গেট সংসার মাথায় উঠেছে।  বন্ধু ক্ষোভে নিজের মৃত্যুকামনা করছে আজকাল।

কথা প্রসঙ্গে শৌভিককে গল্পটা বলছিলাম, নৈশাহারের সময় রোজই বলি সবই বলি। সেদিন শৌভিক বলল, "এর একটাই সমাধান আছে। তোর বন্ধুকে এই লিঙ্কটা পাঠিয়ে দে। এক আমেরিকান(?) ভদ্রমহিলা কি ভাবে বসকে শায়েস্তা করেছে। "

বন্ধুকে পাঠাবার আগে একপ্রস্থ নিজেই পড়ে দেখি। কি পাঠাচ্ছি যেনে বুঝে পাঠানোই ভাল। পড়ে দেখি এক মহিলা তিন  মিলিয়ন ডলার লোট্ট জিতেছিল। জেতার পরদিনই মহিলা গেলেন পদত্যাগ  করতে। পদত্যাগপত্র লিখে বসের চেম্বারে  গিয়ে দেখেন বস্ চেম্বারে নেই।  মাথায় কি দুষ্ট বুদ্ধি চাপল জানি না, চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে, মহিলা এক অপকর্ম করে বসলেন। উনি বসের টেবলে মলত্যাগ  করে,  মনের আনন্দে বেরোতে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তে মঞ্চে বসের প্রবেশ। প্রবল ঝগড়া ঝাঁটির পর পুলিশ ডাকলেন বস। মহিলা গ্রেপ্তার হলেন, আদালতে পেশ করা হল। আদালতে বিচারকের সামনে মহিলা গলা বাজিয়ে বললেন,   “হ্যাঁ করেছি। আমি এতটুকু লজ্জিত নই। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমি ওর ‘শিট্’ ঘাঁটতে বাধ্য হয়েছি। জীবনে অন্তত একটিবার, একটিবার ও আমার ‘শিট্’ ঘাঁটুক। ”

https://amianindita.blogspot.in