Sunday 12 July 2020

তুত্তুরীর রূপকথারা-



“মেলা বসাবে তুত্তুরী, রথের মেলা। মা যেমন বসায় শ্রমিক মেলা, ঠিক তেমনি। কোন এক পাহাড়ের কোলে, ছলছলে কোন নদীর তীরে, ঘন সবুজ গাছপাতায় মোড়া কোন উপত্যকায় বসবে তুত্তুরীর রথের মেলা। উপত্যকাকে ঘিরে বাস করে অনেক দীনদরিদ্র মানুষ, জঙ্গল থেকে কাঠকুটো জোগাড় করে, কখনও বা বুনো শুয়োর শিকার করে চলে তাদের সংসার। তাদের নিয়ে, তাদের জন্যই মেলা বসাবে শ্রীমান তুত্তুরী।
ঝড়ে উপড়ে পড়া জংলী গাছ দিয়ে তৈরী হবে রথ, তিনতিনটে রথ-  কাঠ কি কম পড়িতেছে? চিন্তা নেই, বিগত দুর্গাপুজোয় যখন দাদু-মামমাম আর তুত্তুরী গিয়ে পৌঁছেছিল স্বপ্নময় উপত্যকায়,তখন বসতি স্থাপন করার জন্য সাফ করা হয়েছিল অকিঞ্চিৎ জঙ্গল। সেই সব কাঠ যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছে মামমাম।আর উপত্যকার অধিবাসীদের জন্য অবারিত দাদুর তুত্তুরী ভিলা।
তৈরি হওয়া রথগুলিকে টানতে টানতে চিত্রকরদের কাছে দিয়ে আসে তুত্তুরী। বারেঃ রঙ করতে হবে তো?  ওদিকে মাটির পুতুল গড়িয়েরা বানাতে শুরু করল হাত কাটা তিন ভাইবোন। মাঝে মাঝেই নজরদারী করে আসে তুত্তুরী, উৎসাহের আতিশয্যে ব্যাটারা আবার হাত-পা না বানিয়ে বসে-
এমনি একদফা পর্যবেক্ষণ করে ফিরছিল দাদু আর তুত্তুরী, চতুর্দিকে শালপ্রাংশু মহাভুজের সারি মাঝখান দিয়ে সরু পায়ে চলা পথের ওপর আড়ামোড়া ভাঙা কচি মেঘের দল, গল্প বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে দাদু পাশাপাশি তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে মন্ত্রমুগ্ধ তুত্তুরী, আচমকা কি যে হল, চেনা পথটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল- আর তুত্তুরী সবিস্ময়ে দেখল সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক পোড়ো মন্দির। কোন মান্ধাতার আমলে তৈরি কে জানে, কত বছর কোন জনমনিষ্যির পা পড়েনি কে জানে। মন্দিরের চালের ওপর গজিয়ে উঠছে বিশাল বটের চারা। যার মোটা মোটা শিকড় আর ঝুড়ি নেমেছে মন্দিরের গা বেয়ে। মন্দিরের ভাঙা দুয়ার। ভিতরে শূণ্য বেদীতে লেপা আছে কবেকার সিঁদুর- তুত্তুরী চিৎকার করে উঠল, “ইউরেকা! পেয়েছি দাদু। পেয়েছি। মাসির বাড়ি পেয়েছি। এই বেদীতেই বসাব মাসির মূর্তি।” এই অবধি শুনেই বিষম খায় মাসি। চোখ গোলগোল করে ধমকে ওঠে তুত্তুরী, “আহঃ তুমি নয়। জগন্নাথদেবের মাসি। ”
ওদিকে তুত্তুরীর উপত্যকায়, তৈরি হতে থাকে মাসির মূর্তি। মামমামকে (দিদা) নিয়ে দূরের ছোট্ট শহরে পৌঁছয় তুত্তুরী। গয়না গড়াতে হবে যে। জগন্নাথ-বলরাম আর সুভদ্রার জন্য এই মোটা মোটা সোনার হার আর সুভদ্রার নাকের নথ। মাসির জন্য কিছু বানাবি না, প্রশ্ন করে মামমাম, “নাঃ। মাসি তো গরীব। জঙ্গলে থাকে। ঝুটো গয়না পরে মাসি।”

দেখতে দেখতে এসে যায় রথের দিনটা। তার আগের রাতে সমগ্র উপত্যকা জুড়ে গড়ে ওঠে অসংখ্য চালা দোকান। কি নেই তাতে, খাবার-দাবার- এই অবধি বলেই থামে তুত্তুরী, “খাবার স্টলে থাকবে খাজা, জিলিপি,পেরাকি,রসগোল্লা আর লবঙ্গলতিকা। আর থাকবে কাঠি বরফ আর কুলফির দোকান।”। এছাড়া থাকবে অনেকজন গ্যাসবেলুনওয়ালা। তারা সবাই জোকারের মত ঝলঝলে পোশাক পরে, সাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়াবে মেলাময়। প্রতিটি সাইকেলের সামনে বাঁধা থাকবে চৌকো গ্যাসের ট্যাঙ্ক আর সাইকেলের কেরিয়ারে বাঁধা থাকবে বিভিন্ন আকৃতির গ্যাসবেলুন। গ্যাসবেলুনের দামও বেঁধে দিয়েছে তুত্তুরী, ১টাকায় ১টা। আর কুলফি/ কাঠি বরফের দাম ১টাকায় ২টো। বাচ্ছারা যাতে চুটিয়ে উপভোগ করতে পারে রথের মজা। আর থাকবে বাঁশ, কাঠ আর মাটির পুতুলের দোকান। থাকবে তালপাতার বাঁশি,ঢোল আর ঢুগঢুগি। থাকবে কাঁচের রেশমি চুড়ি, ঝুটো গয়নার দোকান। বিক্রি হবে নানা ধরণের কলম আর সাবানের বুদবুদ তৈরির খেলনা। থাকবে নাগরদোলা, মেরি-গো-রাউণ্ড আর টয় ট্রেন। ছলছলে নদীর সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটবে খেলনা ট্রেন। গন্তব্য মাসির বাড়ি।
রথের দিন সকাল থেকেই যাতে বাচ্ছারা চুটিয়ে আনন্দ করতে পারে,সেদিকে কড়া নজর রাখে তুত্তুরী। তুত্তুরীর নির্দেশে উপত্যকাবাসী নিঃসহায় বিধবারা সানন্দে বানিয়ে ফেলে রসগোল্লার পাহাড়। বিশাল বিশাল পাত্রে টগবগ করে ফোটে রস, ছপাছপ ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁচা রসগোল্লার দল। তুত্তুরী ভিলার সামনে এসে পৌঁছয় তিন তিনটে রথে সওয়ার তিন ভাইবোন। এসে পৌঁছয় ফুল আর গয়না। রথের দিন সকাল আটটা থেকে রথ সাজাতে বসে মামমাম। হাঁটুর ব্যথা তাই ওপরে তো উঠতে পারবে না, তাই উপত্যকাবাসী তুত্তুরীর বন্ধুরা এগিয়ে আসে সাহায্য করতে। ফুলে ফুলে অপরূপ সেজে ওঠে তিন ভাইবোনের বাহন। ঘনিয়ে আসে মাহেন্দ্রক্ষণ, তিন ভাইবোনের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল সোনার কণ্ঠহার। সুভদ্রার নাকে ঝোলে নোলক। কুচানো ফুলের সাজি নিয়ে রথে চাপে পাণ্ডাবেশী কুচোকাচার দল। তুত্তুরী নিজে ওঠে সুভদ্রার রথে। শুরু হয় তুত্তুরীর রথের মাসির বাড়ি যাত্রা। উপত্যকা জুড়ে বয়ে যায় আনন্দধারা- পথের ধারে সমবেত হয় হাসিখুশি উপত্যকাবাসী। পিঁ পিঁ করে বেজে ওঠে তালপাতার বাঁশি, প্রত্যুত্তরে শিলাবৃষ্টির মত রথের ওপর থেকে ধেয়ে আসে ফুলের কুচি আর বাতাসা। হুড়োহুড়ি লেগে যায় কুচোকাচাগুলোর মধ্যে। খিলখিলিয়ে ওঠে তুত্তুরীর উপত্যকা-”
✍🏼©তুত্তুরী থুড়ি পুরোযা ভট্টাচার্য

তুত্তুরী উবাচ ১২ই জুলাই, ২০২০



👧🏻-খুব ভুল করেছে, কাজটা।
👩🏻-অ্যাঁ? কে? কি?
👧🏻-আমাদের ম্যামেরা খুব ভুল করেছে। লকডাউন মানে সব বন্ধ। পড়াশোনাও বন্ধ থাকা থাকার কথা। ছুটি মানে ছুটি। তা নয়, ম্যামেরা গ্রুপ খুলেছে, আর রোজ পড়াশোনা করাচ্ছে। আমাদের কাছে তো ম্যামের নম্বর ছিল না, তাহলে ম্যাম আমাদের নম্বর পেল কোথা থেকে?
👩🏻-পড়তে বসালেই যত উদ্ভট চিন্তা আসে তোর মাথায়?
👧🏻-মা, জানো তো, বাবা হল কেসিয়াস আর তুমি না পাক্কা ব্রুটাস।
👩🏻-বাবা রে! আর তুমি কে মা? জুলিয়াস সিজার?

Monday 6 July 2020

অনির ডাইরি ৬ই জুলাই,২০২০



বেশ কিছুদিন আগের কথা, করোণা তখনও মেলেনি ডানা। চীনে কি সব ঝকমারি বিমারি হচ্ছে বটে, আঁতেল বন্ধুবান্ধব এবং আমার বর সেটা নিয়ে বেশ গুরুগম্ভীর আলাপ-আলোচনাও করছে, তবে তার ছাপ পড়েনি আমার চুঁচুড়ায়। ভর দুপুর নিজের চেম্বারে বসে কাজ করছি, সন্ত্রস্ত পায়ে মেয়েটা ঢুকল। সন্ত্রস্ত হয়ে জানাল আমার সাথে একটু একা কথা বলতে চায়। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার চেম্বারের কাঁচের ঘুলঘুলি দিয়ে উঁকি মেরে গেছে, সবসময়ই ঘর ভর্তি ছিল।
একা একা কি কথা রে? জানতে চাইলাম। হাত কচলে বলল,“অমুক তারিখে আমাকে একটু অর্ডার করে ডেকে নেবেন?” মানে? খামোকা অর্ডার করে ডাকার কি আছে, ওরা তো এমনিতেই আসে, যখন কাজ থাকে। আজও তো এসেছে। বেশ খানিকক্ষণ মাথা নত করে বসে থাকল মেয়েটা, দেরী হয়ে যাচ্ছে পরের মিটিংএ। এখনও হয়নি টিফিন। সুজয় বাবু দুবার মুণ্ডু গলিয়ে গেলেন, ঘুঘনি তৈরি, বললেই রুটি সেঁকে দিয়ে যাবে। মেয়েটা আর ওঠেই না। বললাম, “ আচ্ছা সে একটা হাবিজাবি মিটিং ডেকে দেব খন। তুমি এমনি এসে ঘুরে যেও। ” বলতে বলতে থমকে গেলাম, মেয়েটার কাজল চোখে তখন আষাঢ়ের মেঘ। টুসকি মারলেই ঝরে পড়বে ঘন বর্ষার ধারা। এবার ঘাবড়ে যাবার পালা আমার, ব্যাপার কি?
বলতে বলতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল মেয়েটা, বাঁহাতে দরজার বাইরের লাল আলোটা জ্বালিয়ে দিলাম, এই মুহূর্তে কেউ মাথা গলালে বড় বাজে হবে। মেয়েটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “আমার শ্বশুরবাড়ি খুব খারাপ ম্যাডাম। ” এ আর নতুন কথা কি? শতকরা ৯৮জন মেয়েই এই কথা বলে। যত মহিলা ক্ষমতায়নের কর্মশালা করেছি,সবেতেই সব ছাপিয়ে উঠে আসেন শাশুড়ী মা। বন্ধুদের অাড্ডাতেও সেলিব্রিটি গুটি কয়েক বন্ধুর শাশুড়ী মা। ওরা শাশুড়ী চর্চা না করলে বরং চিন্তা হয়, শরীর টরীর বিগড়াল না তো? সেই ভাবেই হেসে উড়িয়ে দিতে গেলাম- তাতে ফোঁপানী বেড়ে গেল মারাত্মক।
“না ম্যাডাম, আমার শাশুড়ী মা নেই। আমার বর যখন কলেজে পড়ত তখনই মারা গেছেন। আমার ভাসুর আমার বরের থেকে অনেকটাই বড়, ওর বৌদিই ছিল বাড়ির গিন্নী।“ বাঙালীর আরেক সমস্যা এই বৌদি। নির্ঘাত ক্ষমতায়নের লড়াই। মেয়েটা তখনও কেঁদে চলেছে, “জানেন ম্যাডাম, আমার ভাশুর তেমন কিছুই করত না। আমার বরই বড় হয়ে চাকরী পেয়ে লোন নিয়ে বাড়িটা তৈরী করে। আমার শ্বশুর মশাই ওপার থেকে এসেছিলেন তো, আজন্ম ভাড়া বাড়িতে থেকেছেন। ওণার একটাই স্বপ্ন ছিল, নিজের ভিটেতে শেষ নিশ্বাস ফেলবেন। তাই আর কি-”।
দুজনেই চুপচাপ বসে আছি, ঘরঘর করে ঘুরছে দেওয়ালে লাগানো পাখা দুটো। কাঁচের কাগজ চাপার তলা থেকে উড়ে যেতে চাইছে একদিস্তা নানা সরকারী কাগজ। জানতে চাইলাম “জল খাবে?” ঘাড় নেড়ে অসম্মতি জানাল মেয়েটা। ওড়নায় নাক-চোখ মুছে এতক্ষণে আমার দিকে চোখ তুলে তাকাল-“জানেন ম্যাডাম ওরা চায়নি আমাদের বিয়েটা হোক। আমাকে দেখতে এসেই নাকচ করে গিয়েছিল ওরা। আমার মায়েরও পছন্দ হয়নি ওর বৌদির হাবভাব। বড় বেশী ক্যাটক্যাটে কথা ওণার। পরে শুনেছি ওরা এটাই করত। ওরা আসলে চায়নি আমার বরের আদৌ বিয়ে হয়। বেশ কয়েকবার নানা ছুঁতোনাতায় অনেকগুলো সম্বন্ধ নাকচ করায়, ওর সহকর্মীদের সন্দেহ হয়। আমার বেলাতেও ওরাই ফোন করেছিল আমার বাবাকে। বাড়ির লোকের অপছন্দ হলেও, ওর পছন্দ হয়েছিল আমায়। মা অবশ্য নিষেধ করেছিল- কিন্তু-”।
ঘরঘরে পাখার হাওয়া আবার এলোমেলো করে দেয় সব কথা। নীরবতাও হয়ে ওঠে বাঙ্ময়। বুঝি মেয়েটির অপছন্দ ছিল না পাত্র। উভয় পক্ষের সম্মতিতে ভেঙে পড়ে প্রতিবন্ধতার পাঁচিল। কিছুটা দম নিয়ে, ব্যাগ থেকে একটা ছোট বোতল বার করে দু ঢোঁক জল খায় মেয়েটা। আমিও বেল বাজিয়ে বলি,টিফিনটা দিয়ে যেতে-।
কুচি কুচি কাঁচা লঙ্কা ছড়ানো আগুন গরম রুটি-ঘুঘনীর সাথে গড়ায় কিস্যা। মেয়েটি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। বরের গল্প করতে থাকে, বলতে বলতে আবার বেজে ওঠে বেসুরো ভায়োলিন। “জানেন ম্যাডাম আমার শ্বশুর মশাই প্রথম দিকে আমাকে একেবারেই মেনে নেননি। বাড়ির অমত থাকা সত্ত্বেও ওণার ছেলে নিয়ম ভেঙে আমায় ঘরে এনেছে এই অভিযোগ প্রায়ই করতেন। বলতেন, যারা বাড়ির মতের বিরুদ্ধে যায়, তারা কখনও সুখী হয় না। কিন্তু আমরা তো সুখী হয়েছি ম্যাডাম। খুব সুখী আমরা একে অপরকে পেয়ে।” কেমন যেন গুলিয়ে যায় মাথা। তাহলে সমস্যাটা কি?
মেয়েটা বলে চলে, “ আমাদের যখন বিয়ে হয়, তখন একতলাটা খুব সাজানো গোছানো ছিল। দোতলাটা আধখেঁচড়া পড়ে ছিল। কিন্তু আমার ভাশুর আর জা জোর করে আমাদের দোতলায় থাকতে বাধ্য করে। কি কথা শোনাত ম্যাডাম। জানেন না। উঠতে বসতে খোঁটা দিত। ভালো করে খেতেও দিত না ম্যাডাম”। আবার হাপুস নয়নে কাঁদতে লাগল মেয়েটা। আবার জ্বালিয়ে দিলাম দরজার বাইরের লাল বাতি। মহাজ্বালায় পড়েছি তো-
“যখন কনসিভ করলাম ম্যাডাম, কতদিন না খেয়ে পঞ্চায়েত আপিসে গেছি কাজ করতে আপনি জানেন না। ইচ্ছে করে আমায় খেতে দিত না। চাইত না আমার পেটেরটা বাঁচুক। যা দু পয়সা পেতাম রাস্তায় যা পেতাম কিনে খেতাম ম্যাডাম-”। সুজয় বাবুর রুটি হঠাৎ বড় বেসোয়াদ লাগল। এদের বড় ভালোবাসি। সব সাব স্টাফ, এজেন্ট-এসএলও যাদের সাথেই নিয়মিত দেখা হয়,সবাইকেই ভালোবাসি। যখন ধমকাই, জ্ঞানশূণ্য হয়েই ধমকাই। কাঁদিয়েও ছাড়ি অবস্থাবিশেষে। তবে তার স্থায়িত্ব বড় জোর পাঁচ থেকে দশ মিনিট। বাকি সময়টা যতটা পারি ভালোবাসি। এরাও বাসে, সব গোপন কথা অকপট ভাবে উন্মুক্ত করে যায় আমার ঘরের চার দেওয়ালের ভিতর। সব মিলিয়ে কেটে যায় টক-ঝাল-মিষ্টি দিনগুলো, আপিসে আসতে কখনও বিরক্তি লাগে না, না আমার- না এদের। আজ সম্পূর্ণ অন্য কারণে কাঁদতে দেখে বড় কষ্ট হচ্ছে,। এ এমন কারণ যার সমাধান এদের ম্যাডামের হাতে নেই।
“জানেন ম্যাডাম, ঐ অবস্থায় আমাদের ওরা আলাদা করে দিল। অজুহাত দেখাল, আমি কাজে বেরোই কি না, আমার বাচ্ছা হলে ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে আমি বাইরে হাওয়া খেতে যাব- সেসব হবে না। জানত শ্বশুরমশাই আমাকে দেখতে পারেন না, তাও তাঁকে ঠেলে দিল আমাদের ঘাড়ে। ওণাকেও তুলে দিল দোতলায়। অর্ধেক জানলায় পাল্লা বসেনি। দালানের মেজে হয়নি, ঘরগুলো সব প্লাস্টারও হয়নি। তারমধ্যেই আমরা তিনজন থাকতে বাধ্য হলাম। ঐ ঢাউস পেট নিয়ে সব কাজ করতে হত ম্যাডাম। বাপের বাড়িতে গিয়ে যে থাকব এরা বাপছেলে তো ভুখা মরবে। একতলা থেকে বালতি করে জল টেনে আনতে হত জানেন ম্যাডাম। একদিন এমনি জল আনতে গেছি, ওরা দুজনে চলে এল ঝগড়া করতে।” একটু দম নিয়ে বলল মেয়েটা,“আমার গায়ে সেদিন ওরা হাতও তুলেছিল ম্যাডাম। আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল-”।
সে কি? থানায় জানাওনি? ৪৯৮এ? মৃদু হেসে ওঠে মেয়েটা। “জানিয়েছিলাম তো ম্যাডাম। কিছুই হয়নি। হাসপাতালের কাগজের কপিও দিয়েছিলাম। লেখা ছিল অল্পের জন্য বেঁচে গেছে আমার বাচ্ছাটা। নইলে হয়তো দুজনেই-। থানা থেকে বলে মিটমাট করে নিন। আমার বরও হয়তো নিমরাজি ছিল, বাড়ির কলঙ্ক বাইরে-”।
সত্যি মাইরি। মারাটা কলঙ্ক না। নালিশ করাটা কলঙ্ক। মেয়েটা বলে,“শুধু আমার মা। বেঁকে বসে আমার মা। মা বলেছিল, ‘আমি কোনদিন হাত তুলিনি আমার মেয়ের ওপর। কোন সাহসে হাত তোলে ওরা?’ আমরা ঐ বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে উঠি। উকিলের কাছে যাই, আদালতে কেসও ওঠে ম্যাডাম। ওরা অামার বরের সাথে যোগাযোগ করে চাপ দেয় কেসটা তুলে নিতে হবে। শ্বশুরমশাই অবধি বলেছিলেন-ওসব একটু আধটু। তাই বলে ঘরের কেচ্ছা কেউ আদালতে টানে। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে কেস তুলতেও গেছিলাম। আমার উকিল যদিও আপত্তি করেছিলেন।  জজ সাহেব একজন মহিলা ছিলেন। উনি আমার মুখে শুনতে চান। আমায় কাঠগোড়াতে তোলা হয়। আমাকে জজ ম্যাডাম নিজে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি স্বেচ্ছায় কেস তুলছেন? কেন?’ আমি না কিছু বলতে পারিনি। শুধু বারবার মনে পড়ছিল, ওরা আমার গায়ে হাত তুলেছিল। ওরা আমায় ঐ অবস্থায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। আমার বাচ্ছাটা মরে যেত আরেকটু হলে-। এই সব ভেবে কি না জানি না,আমি একটা কথাও বলতে পারিনি, খালি টপটপ করে জল পড়ছিল চোখ দিয়ে। জজ ম্যাডাম তখন আমার বরকে ধমকান। বলেন কেস তোলার জন্য আমায় না চাপ দেয়-”।
তারপর? তারপর শুনলাম কেস চলছে, অনেক বছর ধরেই চলছে। সামনেই একটা ডেট আছে। যেদিন মেয়েটা ওকে আমার আপিসে ডেকে নেবার আর্জি নিয়ে এসেছে, ঐ দিনই ওর কেসের ডেট। তবে? ঐ দিন তো ওর আদালতে থাকার কথা, খামোখা আমার আপিসে আসতে চাইছে কেন? “ ওরা আবার কেস তুলে নেবার জন্য চাপাচাপি করছে ম্যাডাম। আমার বরের আপিসে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছে। ওদের মেয়েটা একটা সরকারী চাকরী পেয়েছে। আমি কেসটা না তুললে তো আর জয়েন করতে পারবে না। পুলিশ ভেরিফিকেশনেই আটকে যাবে। ” অবাক হয়ে জানতে চাইলাম,“তুমি ঐ মেয়েটা মানে তোমার ভাশুরঝির নামেও নালিশ করেছিলে নাকি? ও কি করেছিল?” জবাব পেলাম, “ও দাঁড়িয়ে ভিডিও তুলছিল ম্যাডাম। ওর বাবা মা আমায় পেটাচ্ছিল আর ও ভিডিও তুলছিল। আমি কেস তুলতে চাই না ম্যাডাম। এখনই চাই না। একটি বারও ক্ষমা চায়নি ওরা। একটি বারও কোনদিন আমায় কাকিমা বলে সম্বোধন করেনি মেয়েটা। আমার বর সবই বোঝে,কিন্তু রক্তের সম্পর্ক তো। জলের থেকেও ঘন। ও চায় আমি কেস তুলেনি। উকিল বাবু বললেন, আপনি যদি চিঠি করে ডাকেন, তাহলে সাপও মরবে- আর।”
নাঃ আর কথা বাড়াই নি। একটা মামুলী চিঠি করতে আর কতক্ষণ। তারপর যথারীতি কেটে গেছে অনেকগুলি  দিন। শুনলাম শেষ পর্যন্ত কেসটা তুলেই নিয়েছে মেয়েটা। ওরা আর ফিরে যায়নি ঐ বাড়িতে। ভাড়া বাড়িতেই থাকে। ভাবছে বাড়িটা বিক্রি করে দেবে। তবে যতদিন বৃদ্ধ জীবিত আছেন- ততোদিন না। ভাড়া বাড়িতে বাবা-বউ আর বাচ্ছা নিয়ে সংসার সাজিয়েও, নিজের ভিটেয় বৃদ্ধের শেষ নিশ্বাস ফেলার স্বপ্নটা পূরণ করার স্বপ্ন আজও দেখে চলে ওরা।
✍🏼©Anindita Bhattacharya

Sunday 5 July 2020

অনির ডাইরি ৪ঠা জুলাই, ২০২০


আনলক ডাউন শুরু হতে তখনও বাকি বেশ কয়েকটা সপ্তাহ, ঘোরতর গৃহবন্দী ভারতবর্ষ। মাঝ সপ্তাহেও জনশূন্য আমাদের চুঁচুড়ার আপিসপাড়া। হাতে গোণা কর্মী নিয়ে ভর দুপুরেও বুড়ো কালেক্টরেটটা যেন হানাবাড়ি।
এমনই এক দুপুরে হঠাৎ এসে হাজির হয়েছিলেন বাপন বাবু (নামটা পাল্টে দিলাম)। এসেছিলেন মহকুমা শাসকের কাছে নালিশ ঠুকতে। তিন মাস হয়ে গেল, বেতন পাননি। রীতিমত ভেঙে পড়েছেন ভদ্রলোক, জরুরী পরিষেবা দেন উনি, ধরে নিন কোন পঞ্চায়েতে জল সংক্রান্ত কোন কাজ করেন। ঘোরতর লকডাউনের মধ্যেও তিনমাস কাজ করে গেছেন অনর্গল। অথচ পাননি মজুরী। সংসারে নিত্য অনটন, বাড়িতে অসুস্থ সন্তান- বলতে বলতে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন ভদ্রলোক।
কান্না আর ফোঁপানি থামাতে বেশ বেগ পেতে হল। পর্যায়ক্রমে সুজয় বাবুর ঘোর কালো চা আর বাতানুকূল যন্ত্রের হাওয়া খাইয়ে খানিকটা শান্ত করার পর দেখতে চাইলাম কাগজপত্র কি আছে। 
ওণার গলায় ঝোলানো জনৈক সরকারী দপ্তরের আইকার্ড। কিন্তু বাকি কাগজপত্র তেমন উৎসাহ ব্যঞ্জক নয়। সবই ঐ দপ্তর থেকে পঞ্চায়েতের কোন কমিটির সাথে পত্রালাপ- অর্ডার ইত্যাদি। কোথাও ওণার নাম নেই। শুনে বুঝতে পারলাম, জলসম্পদ সম্পর্কিত কোন পরিকাঠামো নির্মাণ করার পর, বাপন বাবু সমেত সমস্ত দায়িত্ব পঞ্চায়েতের কমিটির হাতে তুলে দিয়েছে সরকারী দপ্তর। টাকাপয়সা এখনও তাঁরাই দেন বটে, ব্যবস্থাপনাটা দেখে কমিটি।

মাসে ২৮দিন কাজ করেন বাপন বাবু, ফেব্রুয়ারি মাস অবধি ঠিকঠাক বেতনও পেয়েছেন। মার্চে লকডাউন ঘোষণা হওয়াতে বিলম্বিত হয়ে পড়ে বেতন। অনটনের সংসার।  উনি লকডাউনের মাঝেই নিয়ম করে তাগাদা দিতে থাকেন। ইতিমধ্যে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে ওণার কন্যা, একে অর্থাভাব তায় ওণার আবেদনে কেউ কর্ণপাত করছে না দেখে, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বেতনের অনুরোধ জানান ওণার স্ত্রী।
এখান থেকেই শুরু হয় মূল সমস্যা। ঘরের মেয়েছেলে কেন ফোন করে টাকা চাইবে? এই নিয়ে যৎপরনাস্তি ভর্ৎসনা  করে ভাগিয়ে দেওয়া হয় ওণাকে।
সেই থেকে বেতনের দাবীতে নানা আপিসে ঘুরছেন উনি। আজ এসেছেন মহকুমা শাসকের কাছে ফরিয়াদ জানাতে।
যেহেতু সমস্যাটা  বেতন সম্পর্কিত, তাই মহকুমা শাসকের কাছে যাবার আগে দিন দশেক সময় চেয়েনিলাম।  লকডাউনে বন্ধ পোস্টাফিস, অগত্যা মেইলই ভরসা। আমাদের ইন্সপেক্টর নির্মলের এলাকা, ওর মাধ্যমেই পঞ্চায়েতের মেইল আইডি যোগার করে ওণার আবেদনের কপিটা পাঠানো হল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মূখ্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকেও জানানো হল ব্যাপারখানা। সাথে মূখ্য সচীবের নির্দেশ, লকডাউনের বেতন অবশ্যই দিতে হবে। আর এ বেচারা তো নিয়মিত কাজ করেছে।

দিন দুয়েকের মধ্যেই জবাব পেলাম।  পঞ্চায়েতের তরফ থেকে জানানো হল, ওণার চেক তৈরি আছে। উনি নিয়ে নিলেই ল্যাটা চুকে যায়। ওণাকে জানানো হল- ভাবলাম যাক ঝামেলা মিটল তাহলে। পরের দিন আবার এসে হাজির বাপন বাবু। চেকটা নেননি উনি। কেন রে?

শুনলাম ওণার যা প্রাপ্য তার থেকে অনেক কম টাকা ধার্য করা হয়েছে ওণার জন্য। ফেব্রুয়ারী মাসেও যিনি বেতন পেয়েছেন বারো হাজার টাকারও বেশী, সেখানে আমার চিঠির গুঁতোয় বর্তমানে ওণার জন্য ধার্য হয়েছে তিন মাসে থোক ১৪হাজার। এতো মহা জ্বালা। আনলক ডাউন শুরু হওয়া অবধি আর অপেক্ষা করা গেল না, তার আগেই ডাকতে হল মিটিং। কমিটি এবং দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার সাহেব উভয়কেই অনুরোধ করা হল কাউকে পাঠান। দপ্তর থেকে নির্দিষ্ট দিনে এসে হাজির হলেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র সাহেব। পাত্তা নেই পঞ্চায়েতের কমিটির। এদিকে বাপন বাবু রোজই এসে বসে থাকেন আমাদের দপ্তরে। দেখতে পেলেই সামাজিক দূরত্ব ভেঙে ধরতে আসেন পা। সংসার চলছে না। মেয়ে অসুস্থ। নিজেই বলেন, “মাথার ঠিক নেই ম্যাডাম।”
প্রথম মিটিং ব্যর্থ হলেও দেখলাম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বাপন বাবুর প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ওণারা শ্রম কমিশনারেটের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করতে চান, কিন্তু ফেঁসে আছেন নিয়মের গেরোতে।

দ্বিতীয় মিটিং ডাকা হল। এবার এলেন জনৈক পদাধিকারী খোদ। জানালেন উনি ব্যস্ত মানুষ,পকেটে বিডিও সাহেবের ডাকা মিটিং এর চিঠি, জরুরী মিটিং ফেলে এসেছেন একটা পেটি ব্যাপার নিয়ে বারবার আমরা গুঁতো মারছি তাই। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এবং আমার যুগপৎ ধমকে একটু থমকে গেলেন অবশ্য। ভেবেচিন্তে জানালেন, বাপন বাবুর বেতন কত হওয়া উচিৎ তা ওণারা জানেন না। জানলে মিটিয়ে দেবেন বটে। ঠিক হল একটা চিঠি করে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়ে দিলেই ওণারা সেই মত দিয়ে দেবেন।
বাপন বাবুকে বলা হল, দিন দশেক ধৈর্য্য ধরুন। হয়েই যাবে এবার। দিন কয়েকের মধ্যেই মজুরীর চিঠিও করে দিলেন মূখ্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। একেবারে আমার বলে দেওয়া বয়ানে, শ্রমদপ্তরের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরী মেনে। ভাবলাম মিটেই গেল কেসটা। একটা সংসার অন্তত বাঁচল আমাদের ধমক-ধামকে।

ও হরি। এক সপ্তাহ বাদে নির্মলের ফোন, “ম্যাডাম, লোকটা রোজ ফোন করে কান্নাকাটি  করছে। বেতন তো দেয়ই নি। উল্টে ধমকাচ্ছে শ্রম কমিশনারের ক্ষমতা নেই, পঞ্চায়েতের ব্যাপারে নাক গলায়। দেখে নেব, কেমন করে বেতন পাও তুমি। ” ধমকের কথা শুনে মজা লেগেছিল, সাহস থাকলে আমার সামনে এসে বলে যেত -।
কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে না দিলে এবার কি করব? বেসরকারী সংস্থান হলে,সোজা ইন্সপেক্টর পাঠিয়ে তুলে আনাতাম খাতাপত্র। গুনে গুনে প্রতিটা শ্রম আইনের প্রতিটি ধারা-উপধারায় কেস দেবার ভয় দেখাতাম হয়তো, কিন্তু সরকারে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কেস করা এত্ত সোজা নয়। অনুমতি লাগে অনেক উচ্চ মহল থেকে, যা প্রায় কখনই আসে না। এমনি একখানি কেসের আবেদন করে নির্মল আর আমি বসে আছি বছর দেড়েক। ততোদিনে তো লোকটা সপরিবারে আত্মঘাতী হবে। অন্তত মুখে তো তাই বলছে।
পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে কি শ্রম আইনে ইন্সপেকশন বা কেস করব আমরা? ওপরতলার সমর্থন ছাড়া ব্যাপারটায় এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। অবশেষে বড় সাহেবের শরণাপন্ন  হলাম আমরা। স্যার অর্ধেকটা শুনেই জারি করলেন ফরমান, “অত ভাবার দরকার নেই। ইন্সপেকশন করাও এবং পে কেস ঠুকে দাও।”

যুগ্ম ইন্সপেকশনে পাঠানো হল, আমার দুই তুখোড় ইন্সপেক্টর নির্মল আর সঞ্চিতাকে, আগের দিন বদ্ধ কামরায় তিন মাথা এক হয়ে ঠিক করা হল, কি ভাবে এগোবে ওরা। কে যেন ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়েছে নির্মলকে জনৈক দাদার নামে-

দিদির জমানায়, দাদাদের অত ডরাই না আমরা, তবে সামান্য বেচাল হলে কেসটা কেঁচে গণ্ডুষ হবে। নির্মল আর সঞ্চিতার মাখন মার্কা ভয় দেখানোতেই হয়তো অবশেষে ওনারা রাজি হলেন বেতন দিতে। গত শুক্রবার তিন মাসের বেতন একসাথে পেয়েই ছুটে এসেছিলেন বাপন বাবু। বারবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলেন স্যারের উপস্থিতিতে, জানতে চাইলাম, “চেকে আপনার নামটা ঠিক লিখেছে তো?” উনি ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, “তা তো দেখিনি ম্যাডাম। পেয়েই ছুটে এসিছি আপনার কাছে। যদি আপনার সাথে না দেখা হয়- সেই টেনশনে আর নামের বানানটা দেখা হয়নি। এখন দেখলে হবে ম্যাডাম?” ফাইলটা ক্লোজ করতে করতে জানালাম, তা দেখুন আর একটা ছবি না তুলে যাবেন না যেন- এই ছবিগুলোই আমাদের ট্রফি। আর এই ট্রফি কখনই জেতা যায় না যদি না টিমে খেলা হয়- আর বড় সাহেব থেকে আমি হয়ে সুকন্যা ঘুরে নির্মল-সঞ্চিতা আমাদের টিমটাই যে ছিল জবরদস্ত। ছবিতে নির্মলের সাথে বাপন বাবু।

পুনশ্চঃ- সুকন্যার নামটা কেন করলাম? আমাকে যাবতীয় আইনি বদবুদ্ধি কে দেয় বলুন তো? নামটা উহ্যই থাক বরং।