Saturday 24 December 2016

অনির ডাইরি ২৪শে ডিসেম্বর ২০১৬


এক ঢিলে দুই পাখি, অর্থাৎ একদিনে দুটি সিনেমা দেখলাম আমরা আজ, সকাল সাড়ে দশটার শোয়ে ব্যোমকেশ পর্ব এবং বিকাল সাড়ে তিনটের শোয়ে ডবল ফেলুদা। পুরো ব্যাপারটাই শৌভিকের মস্তিষ্ক প্রসূত। এর আগে আমি যতবার প্রস্তাব করেছি এক দিনে একাধিক সিনেমা দেখা, ততবারই তা নাকচ হয়েছে। কারণ তাতে নাকি যথার্থ ভাবে কোন সিনেমাটিরই রসাস্বাদন করা যায় না। কিন্তু এবারে যখন শৌভিক নিজে থেকেই প্রস্তাব দিল, আমি তো একপায়ে খাড়া। তা নাহলে সত্যি আর সময় কোথায়? তুত্তুরীকে নিয়েও কোন চিন্তা নেই, কারণ বহুদিন বাদে হাওড়া এসেছি। দাদু-মামমামকে (দিদা) পেলে তুত্তুরীর আর কাউকেই প্রয়োজন নেই।
সুতরাং ভোর বেলা(অর্থাৎ বেলা আটটা) উঠে শ্যাম্পু করে (সারাদিন মলে থাকব কি না), চটজলদি প্রাতরাশ করে দুজনে দৌড়লাম অবনী রিভার সাইড মলের উদ্দেশ্যে। দশটার সময় যখন অবনীতে ঢুকলাম, গোটা মল ঘুটঘুট করছে অন্ধকার। সব দোকানপাট বন্ধ এবং অন্ধকার। আমাদের মত জনা কয়েক সিনেমা পাগল আর মুষ্টিমেয় সিকিওরিটি গার্ড ছাড়া কেউ নেই। ফাঁকা হলে দেখতে বসলাম ব্যোমকেশ পর্ব। আসল গল্প তো অমৃতের মৃত্যু, টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। দেখতে বসেই বেশ হতাশ হলাম, এখানে গল্পের শুরুতেই ব্যোমকেশ বেশ একচোট ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’ মার্কা ডিসুম- ডিসুম করে নিল। প্রচণ্ড রাগে গা রিরি করে উঠল, ব্যোমকেশ বক্সী বড়জোর এক ঘা ব্রজ মুষ্টি প্রহার করতে পারে, কিন্তু এই ভাবে ভ্যান ডেম বা অক্ষয় কুমার টাইপ ফাইট করছে এটা আমি কিছুতেই হজম করতে পারলাম না। যদিও আমার বর বলল, “আউট অফ কন্টেক্সট হলেও বড় খাসা ফাইট করল কিন্তু ব্যোমকেশ।”  এরপর শুরু হল ব্যোমকেশ এবং সত্যবতীর ন্যাকা ন্যাকা দাম্পত্য প্রেম। বহ্নিপতঙ্গ সিনেমাটিতে দেখান হয়েছিল সদ্যবিবাহিত ব্যোমকেশ এবং সত্যবতীর দুষ্টু মিষ্টি দাম্পত্য প্রেম। সেটা যদিও গল্পে ছিল না, তাও মন্দ লাগেনি দেখতে। কিন্তু স্যার বিশ্বাস করুন আর নেওয়া যাচ্ছে না। সোহিনী সরকার আমার অত্যন্ত প্রিয় অভিনেত্রী, কিন্তু ঐ আদুরে আদিখ্যেতা আর স্ফুরিত অধর মার্কা প্রেম স্রেফ বিবমিষা জাগায়। ব্যোমকেশ আর সত্যবতীর এতখানি অধঃপতন একজন শরদ্বিন্দু ভক্ত হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। যাইহোক গল্প এগোয় শম্বুকগতিতে ব্যোমকেশ এবং অজিত সান্তালগোলায় গিয়ে হাজির হয়, সাথে সত্যবতীও যায়। সেখানে গিয়ে দিব্যি বোরলি মাছ, টাটকা সব্জি, কচি পাঁঠা, পোলাও ইত্যাদি কেনা, রান্না, খাওয়া, গান গাওয়া চলতে থাকে। অমৃতের মৃত্যু ঘটে, আমায় শৌভিক ফিসফিস করে আশ্বস্ত করে, ‘এবার গল্প গতি নেবে দেখ’। কচু পোড়া। সদানন্দ শুর মারা যান। সত্যবতীর সাথে সখ্য জমে ওঠে বিশ্বনাথ মল্লিক রুপী কৌশিক সেনের ঝিঙ্কু গিন্নী জুন মালিয়ার। ক্লাব পার্টি, পিকনিক, আদিবাসী নাচের তালে কোমরও দুলিয়ে নেয় দুজনে। রাগে গজগজ করতে থাকি আমি। গল্প আরও এগোয়, সদানন্দ শুর সম্পর্কে খোঁজ নিতে কোলকাতার লালবাতি এলাকায় এসে সরোজ খানের কোরিওগ্রাফিতে সায়ন্তিকার কোমর দোলান মুজরা হয়, রেস কোর্সের আস্তাবলে গিয়ে জনৈক বুকির সাথে আরেক প্রস্ত ঝাড়পিঠ করে অবশেষে ক্লাইম্যাক্সে প্রভূত মারামারি করে ভিলেনকে পাকড়াও করে ব্যোমকেশ। এবং বেআইনি অস্ত্রব্যবসায়ী ভিলেন পুলিশের ভ্যানে ওঠার আগে এক প্রস্ত জ্বালাময়ী বক্তৃতাও দেয়, “আমাদের লড়াই চলতেই থাকবে। এ আজাদি ঝুটা হ্যায়” ইত্যাদি বলে। হল থেকে বেরিয়ে বিশ্বাস করুন কান্না পাচ্ছিল, এতো বাজে সিনেমা দেখব বলে, এই শীতে লেপের আদর ত্যাগ করে দৌড়ে দৌড়ে এলাম? যেমন খারাপ নির্দেশনা, তেমনি খারাপ অভিনয়। সুমন্ত মুখোপাধ্যায় আর ঋত্বিক চক্রবর্তী ছাড়া আর কারো অভিনয় বিন্দুমাত্র দাগ কাটে না। এর থেকে হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা দেখলে খুব খারাপ হত না বোধহয়।

  দ্বিতীয় ছবিটি ছিল ডবল ফেলুদা। দুটি গল্প সমাদ্দারের চাবি এবং গোলকধাম রহস্য।যেমন টানটান গল্প, তেমনি অসাধারণ চরিত্রচিত্রণ তথা নির্দেশনা। নাম দেখানোর সময় থেকেই দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আর সাথে সত্যজিৎ রায়ের সেই বিখ্যাত মিউজিক। কিছু লেখার নেই। সমালোচনা করার কোন জায়গাই রাখেননি সন্দীপ রায়। বহুদিন বাদে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে আবার ফেলুদা হিসাবে পেলাম। একটু বয়স্ক বটে, তবে অভিনয়ের গুণে তা ঢাকা পড়ে গেছে। শুধু ফেলু মিত্তিরের ভুঁড়িটা কিছুতেই চাপা দেওয়া যায়নি। তবে এত ভাল সিনেমায় ঐ টুকু ত্রুটি মার্জনীয়, অন্তত কারো ভুঁড়ি নিয়ে আমি তো কিছু বলতেই পারি না বাবা। সন্দীপ রায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ বর্ষ শেষে এত ভাল একটা সিনেমা উপহার দেবার জন্য।

Sunday 4 December 2016

স্বপ্ন ২


স্বপ্ন দেখলাম, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। না মিত্র-শ্ত্রু পক্ষ মার্কা কিছু পশ্চাৎপক্ক দেশের যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা নয়।  আইসিস মার্কা কোন উগ্র ধর্মান্ধ শক্তির সাথে তথাকথিত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন প্রথম বিশ্বের  মানবতা রক্ষার সংঘাত ও নয়। এ এমন এক যুদ্ধ, যা প্রতিনিয়ত মানবজাতিকে অবলুপ্তির দিকে এক ধাপ করে এগিয়ে দিচ্ছে। কতদিন কোন নবজাত শিশুর কান্না ধ্বনিত হয়নি এই ধরায়। ধরা আজ দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত। একদিকে আমাদের মত মুষ্টিমেয় আশাবাদী মানব সন্তান, যাদের না আছে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা, না কোন মিলিটারি ট্রেনিং। আছে শুধু মনের জোর। আমরা রোজ লড়ি বা, বলা ভাল লড়ার চেষ্টা করি। হারি-জিতি যাই হোক আমরা আশা ছাড়ি না, আমাদের নেতা বলেন, “ যেদিন আমরা আশা ত্যাগ করব, সেদিনটি হবে পৃথিবীতে মানব প্রজাতির অন্তিম দিন।” আমাদের নেতা কোন আর্মি জেনারেল নন। বরং এক ক্ষীণকায়, খর্বাকৃতি, মুণ্ডিতমস্তক, খেটো ধুতি পড়া ন্যুব্জ বৃদ্ধ। গুজরাটের কোন জঙ্গুলে উপজাতির সর্দার ছিলেন এককালে। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষাও জানেন না। চোখে গোল চশমা, যার একটি ডাঁটি ভাঙ্গা, দড়ি দিয়ে কানের পিছনে আটকানো। আমরা আদর করে ডাকি “বাপুজি” বলে।
আমি এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর একজন উদ্ধারক। প্রত্যহ সকালে, বাপুজির নির্দেশ মোতাবেক আমার উদ্ধারকরা ছড়িয়ে পড়ি, পৃথিবীর না না প্রান্তে, যেদিন যেখানে শত্রুপক্ষের হামলা হতে পারে, তার আগাম আভাষ পেয়ে জান বাপুজি। আমরা টেলিপোর্টেশন মারফৎ সেখানে পৌঁছে, সেখানকার জনগণকে নিরাপদে আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্যাম্পে নিয়ে আসি। কিন্তু এই ক্যাম্প ও বেশিদিন নিরাপদ থাকে না, ফলে এক্সোডাসের মত, প্রায়ই বাপুজির পিছু পিছু শিবির ত্যাগ করি আমরা। গড়ে তুলি কোন নতুন কলোনি। এই প্রায় যাযাবর জীবনযাপনের ফলে খাদ্যের বড় অভাব আমাদের। যাই হোক আজ সকালেও অপেক্ষা করছিলাম আমার গন্তব্য সংক্রান্ত নির্দেশাবলীর জন্য, আচমকা আমাকে জানানো হল, বাপুজি আমায় ডেকেছেন। চমকে উঠলাম, এক নিতান্ত মামুলী উদ্ধারক আমি। এক- দুই জনের বেশি কাউকে টেলিপোর্ট করার ক্ষমতা আমার নেই। বাপুজি কেন আমার সাথে দেখা করতে চান? আমার মত পৃথুলা, অবলা নারীকেও এই কাজ করতে হচ্ছে, কারণ সমর্থ পুরুষ বা সবলা নারীদের আগেই দখল করে নিয়েছে শত্রুপক্ষ। ভাবতে ভাবতে কখন যে বাপুজির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি খেয়াল করিনি। বাপুজি একটা বড় গাছের তলায় ছেঁড়া আসন পেতে ধ্যান করছিলেন, আমাকে দেখে হেসে নিজের ভাষায় কিছু বললেন, যা আমি আমার মাতৃভাষায় স্পষ্ট শুনতে পেলাম, আমার মাথার মধ্যে। উনি বলছেন, “নিজেকে দয়া করা, মানুষের সবথেকে প্রিয় চিত্তবিনোদন।” জিভ কাটলাম। বাপুজি যে মনের কথা পড়তে পারেন তা ভুলে গেছিলাম।
বাপুজি গলা ঝেড়ে বললেন, “বাংলাদেশে আজ হামলা হবে রে মা।” বাংলাদেশে? মানে কোথায়? ওদিকে তো আজকাল হামলা হয় না। এই রে বাকি উদ্ধারকরা তো বেরিয়ে গেল। বাপুজি বললেন, “ তোমাদের ঐ সব দেশ সীমানা আমি বুঝি না। তোমাদের মহল্লায় হামলা হবে।” মাথাটা টলে গেল। আমাদের মহল্লা? বাবা-মা-তুত্তুরী? আমাদের মহল্লায় এর আগেও একবার হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বাপুজি। আমরা উদ্ধারকরা সকলকে না পারলেও বেশ কিছু মানুষকে নিরাপদে টেলিপোর্ট করতে পেরেছিলাম। তাদের মধ্যে  বাবা-মা-তুত্তুরীও ছিল। ওরা এখানে আমাদের সাথেই ছিল বেশ কিছুদিন। তারপর বাবা উসখুস করতে লাগল। নিজের পিতৃপুরুষের ভিটে, বাবার ঠাকুমা, কাকা, পিসি আমার দাদু-ঠাকুমা,জেঠু, কাকু, পিসির স্মৃতিবিজড়িত। মায়ের বউ হয়ে আসা, আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিয়ে, তুত্তুরীর জন্ম, শৈশবের লীলাক্ষেত্র। বাবার প্রাণ কাঁদত ঐ ভিটার জন্য। বাপুজির সাথে ব্যাপক দোস্তি হয়ে গিয়েছিল বাবার। বাপুজির অনুমতি নিয়ে একদিন ফিরে গেল ঐ ভিটেয়। সঙ্গে মা আর তুত্তুরীও। বাবাকে ছেড়ে মা থাকবে না, আর মাকে ছেড়ে তুত্তুরী। আমি তখন উদ্ধারকার্যে ব্যস্ত অন্যত্র। ফিরে এসে প্রবল রাগারাগি করেছিলাম। তারপর মেনে নিলাম। আমাদের ভাঙাচোরা জনমানবহীন শহরে বেশ জমে উঠেছিল ওদের লালনীল সংসার। মাঝে মাঝে আমিও যাই।
শুধু ওদের জন্য আমাদের মহল্লায় হামলা করবে? আমার চোখ দিয়ে দরদর করে জল পড়ছে। মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাব। আর একজন উদ্ধারক নেই। আমি একা তিনজনকে আনতে পারব না। কি করি? বাপুজির নির্দেশে ঈশ্বরকে ডাকার পুরানো অভ্যাস ছেড়েছি বহুদিন। বাপুজির মতে ঈশ্বর বড় বিভেদের জন্ম দেয়। মন স্থির করতে না পারলে আমিও পৌছতে পারব না। দরকার হলে তিনবার যাব, আগে তো পৌঁছই।
নীরব জনহীন শহরে, শুধু আমাদের বাড়ি থেকেই প্রবল কলরোল ভেসে আসছে। মা আর তুত্তুরী খাবার নিয়ে কোস্তাকুস্তি করছে। অন্যদিন হলে মাথায় আগুন জ্বলত, যেখানে কেউ পেট ভরে খায় না, সেখানে আমার কন্যা খাওয়া নিয়ে নখরা করছে? আজ প্রবল কান্না পেল। মা আমাকে দেখে খুশি হতে গিয়েও থমকে গেল, “কি রে?” গলায়  ব্যথা ঝেড়ে বললাম, “বাবা কোথায়? এখুনি যেতে হবে।” তুত্তুরী দৌড়ল ভিতরে, “দাদুউউউউউউ। মা ডাকছে।” বাবা সিগারেট লুকোতে লুকোতে দৌড়ে এল, কোথায় পায় কে জানে? আমি কিছু বলার আগেই সদর দরজার অদূরে এসে দাঁড়ালো একটা ট্যাঙ্ক। সারি দিয়ে নামতে লাগল, শত্রু সৈন্যের দল। ভাবলেশহীন রোবটের দল। কোন এককালে আমাদের মত মানুষই ছিল। আজ আর তার কোন অনুভূতিই অবশিষ্ট নেই। ওদের নেতার নির্দেশ মোতাবেক শিকার ধরে নিয়ে যায় ওরা। ওদের কাছে কোন শস্ত্র থাকে না। ট্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এল, ওদের নেতা। এতদিন শুধু গুজব শুনেছি, আজ দেখলাম। নারী না পুরুষ বুঝলাম না। কালো চকচকে ট্রেঞ্চ কোট আর কালো প্যান্ট পরা। শ্বেতাঙ্গ। মাথায় কালো চুল, প্রায় কোমর অবধি। কপাল ঢাকা চূর্ণ কুন্তলে। আমরা চারজনেই আঁতকে উঠলাম চোখ দুটি দেখে। চোখ পুরো সাদা। কোন মণি নেই।
শোনা যায়, এই চোখ দিয়েই নাকি মানুষের আত্মা শোষণ করে নেয়। মানুষটা বেঁচে থাকে, কিন্তু তার মধ্যে কোন ক্ষুধা তৃষ্ণা, সুখ, দুঃখ, ভালবাসা, ব্যথা বেদনার অনুভূতি থাকে না। জড় পদার্থ রোবটে পরিণত হয় মানুষ। রোবটের মত ওনার হুকুম তামিল করে, তারপর একদিন অনাহারে, জলশূন্যতায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাঁ বসে বসে মরে যায়। পৃথিবীর অর্ধেকের ওপর জনসংখ্যা এভাবেই শেষ হয়ে গেছে। এবার আমাদের পালা।

কি করি? আমি কি করি? তিনজনকে এক সাথে তো নিয়ে যেতে পারব না। আর ফিরে আসার অবকাশ ওরা আমায় দেবে না।  বাবা সিগারেট ছুড়ে ফেলে বলল, “তুত্তুরী। ওকে বাঁচা।” মেয়েকে বাঁচাব বলে বাবা-মাকে মৃত্যুর মুখে ছেড়ে চলে যাব? পারছি না। কেঁদেই যাচ্ছি। মায়ের মায়া মাখানো মুখ, ছলছল চোখ, বাবার মুখের সিগারেটের গন্ধ আর তুত্তুরীর গা থেকে ভেসে আসা দুধের গন্ধ। এদের বিনিময়ে আমি মরতে রাজি আছি। কিন্তু প্রাণ থাকতে আমি পারব না। “আঃ। তুত্তুরুকে বাঁচা”। বাবা চিৎকার করে উঠল। আমি কেঁদেই যাচ্ছি। বাবা এগিয়ে এসে আমার কাঁধ ধরে প্রচণ্ড ঝাঁকাতে লাগল, চোখ খুলে দেখি, শৌভিক ঠেলছে, “কাঁদছিস কেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে? এই? কি হল?” কাহিনীর এই অংশটার কথা তো ভুলেই গেছিলাম। উদ্ধারক এসে গেছে। আর চিন্তা নেই। J