Monday 14 November 2016

শুভরাত্রি


ঘরে ঢুকেই দেখলেন মানিনী একগাল হেসে ওনার দিকে তাকিয়ে আছেন। চট করে মাথাটা গরম হয়ে গেল রামদুলাল বাবুর। রাগে গরগর করতে করতে বললেন “সব সময় দাঁত কেলিয়েই আছেন।”মানিনীর হাসি তো কমলই না, উল্টে বোধহয় বেড়েই গেল। কৌতুকের সুরে বললেন, “ কার রাগ কার ওপর ঝাড়ছ শুনি? মেয়ে ফোন করেনি বলে এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? কোনদিন করে না?” “কোনদিন করে না?” ভেঙিয়ে উঠলেন রামদুলাল বাবু। “বুঁচু জানে যে বাবা রাত এগারোটায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ে-।” কথা শেষ করতে পারলেন না, তার আগেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন মানিনী দেবী, “বুঁচু? ইশ। ফের যদি ঐ ঘেটো নামে ডেকেছ।” “বেশ করব। বেশ করব” গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন রামদুলাল বাবু। “ আমি ঘটি। আমার মেয়েও ঘটি। কি আমার বাঙাল এলেন রে? এ দেশে জন্ম কম্ম, শিক্ষা দীক্ষা চাকরি, আর বলার বেলায় ‘আমাগো দ্যাশ’? যাও না। যাও- তোমাগো দ্যাশে গিয়ে থাকো। যদি পারো তো আমি কান কেটে ফেলে দেব। বিয়ের সময় মা বলেছিল, ‘রামু বাবা তুই আর মেয়ে পেলি না? একে বাঙাল তায় চাকরী করে। তার ওপর আবার জাতে সুঁড়ি।”
“ওরে আমার কুলীন কায়েৎ রে। আমার বাবাও বলেছিল, ‘ মানু, এত কষ্ট করে তোদের দুই বোনকে বড় করলাম, লেখাপড়া শেখালাম। তোরা  দুজনেই নিজ চেষ্টায় সরকারি চাকরীও জোটালি। আর শেষে কিনা রামদুলালকে বিয়ে করবি? কোন অংশে ও তোর সমকক্ষ বল দেখি? সারা জীবন তুই ফার্স্ট হলে ও এক থেকে দশের মধ্যেও আসতে পারত না। দিদির বর সেইলের কর্মচারী আর তোর বর মামুলী রাজ্য সরকারী কেরানী। এতো দেখছি তোর সংসারও আমায়ই টানতে হবে।”
“তোমার বাপটা একটা রাম ঢ্যামনা ছিল। শালা মালের দোকানের পয়সা অথচ কোনদিন এক বোতল মাল ও দেয়নি।” হাত ঝেড়ে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গীতে বললেন রামদুলাল বাবু। মানিনী কোমরে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়ে বললেন, “ হাঁ। তাই তো। আমার বাপ ঢ্যামনাই হোক আর যাই হোক, তোমার মায়ের মত বিষধর নয়। ভুলে যেও না, রাকার জন্য যা করার আমার মা-বাবাই করেছে। তোমার মা-বোনের টিকিটিও দেখা যায়নি। ঐ দুর্দিনে মা-বাবা যদি রাকাকে নিজেদের কাছে না নিয়ে গিয়ে রাখত, রাকা বাঁচত? বুকে হাত দিয়ে বল দেখি?” রামদুলাল বাবু গলা ঝেড়ে, রণে ভঙ্গ দেবার গলায় বললেন, “ সেতো আয়াও ছিল বাবা।” “আয়া?” হিসহিসিয়ে উঠলেন মানিনী, “আয়া তো এখানেও ছিল রাম। তোমার মা কি বলেছিলেন মনে আছে? এতটুকু বাচ্ছার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমার বাবা-মাও যদি তাই বলত? কি করতাম আমরা? বাবা তো ঐ জন্যই বলত, সব দায়দায়িত্ব যখন আমাদেরই, তখন, মেয়েটার নামটাও পাল্টে রাকা বসু থেকে রাকা সাহা করে দিলেই তো হয়। আসলে কি জানো তো, নাতিনাতনির ক্ষেত্রে মেয়ের বাবা-মায়েদের সব সময়ই মনে হয়, এটা আমার সন্তানের সন্তান, আর ছেলের বাবা-মায়ের মনে হয় এটা বউমার বাচ্ছা। হুঃ”
ঝগড়ার প্রাথমিক পর্ব মানিনীই জিতছেন, বুঝতে পেরে, অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলেন রামদুলাল বাবু, ধরা ধরা গলায় বললেন, “ সে যাই হোক, সাড়ে এগারোটা বাজে, বু ইয়ে মানে রাকা এখনও কল করল না। বিয়ের পর মেয়েরা সত্যি পর হয়ে যায়।” “হাঃ।” শাণিত ছুরির মত মানিনী বলে উঠলেন, “তোমার মা তো উল্টোটাই বলেন-। ছেলে নাকি বউ অন্ত প্রাণ।”

গাঢ় গলায় রামদুলাল বাবু বলে উঠলেন, “সেটা কি খুব ভুল বলে? আমার জীবনের চার নারী, মা-দিদি-তুমি আর রাকার মধ্যে যে আমি তোমাকেই সবথেকে বেশি ভালোবাসি তা কি আর কোন প্রমাণের অপেক্ষা রাখে?” মানিনী কিছু বললেন না, কৃষ্ণবর্ণ গালে কি অপরূপ আলতার ছোপ ফুটে উঠল, আজ এত বছর পরেও। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন রামদুলাল বাবু তাঁর সাতাশ বছরের পুরানো স্ত্রীর দিকে। তির্যক কটাক্ষে মানিনী বললেন, “ যত বয়স বাড়ছে, বুড়োর ঢলানিও ততো বাড়ছে।” রামদুলাল বাবু হেসে বললেন, “কত বছর কেটে গেল মানু। আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম।” মানিনী মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠলেন,”তুমি বুড়ো হয়েছ, আমি নই।” সত্যি তো মানিনী বুড়ো হননি, এখনও কোমর ছাপানো এক মাথা ঘন কালো চুল, মুক্তোর মত ঝকঝকে দাঁত, সরু হিলহিলে কোমর, টানাটানা দুটি আয়ত চক্ষু রামদুলাল বাবুর আদরিনী স্ত্রী। রামদুলাল বাবু বললেন, “মানু, আমরা দুজনেই চেয়েছিলাম, জানতাম ও যে মেয়ে হবে। মেয়েই হবে। তোমার সেই ফোলা পেটে হাত রেখে তখনও আমরা ঝগড়া করতাম, আমি বলতাম ওর নাম হবে বুঁচু আর তুমি বলতে কক্ষনও নয় ওর নাম রাকা। সবই হল মানু। শুধু...”। কথা শেষ করতে পারলেন না, ফোনটা বেজে উঠল, “হ্যালো বাবা?” রাকার ফোন, রামদুলাল বাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, “এত ক্ষণে বুড়ো বাপকে মনে পড়ল?” রাকা হাসি চেপে বলল, “সরি বাবা। মিটিং ছিল। এই শেষ হল। শেষ হতেই হল থেকে বেড়িয়ে তোমায় কল করছি। চিন্তা কোরনা, মহাবীর গাড়ি নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে, আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে। আর রাতের ব্যাঙ্গালোর অনেক সেফ, তোমাদের কলকাতার মত নয়। আর আমার বর তো আমার সঙ্গেই আছে।” “হু। সাবধানে ফিরিস। আমি জেগেই রইলাম। বাড়ি ফিরে ফোন করিস।” অধৈর্য গলায় রাকা বলে উঠল, “ মেসেজ করে দেব বাবা। নাউ বি আ গুড বয়, ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়। মায়ের ছবির সাথে আর গল্প করতে বস না। প্লিজ বাবা। ইউ নিড আ লাইফ। পচিশ বছর ধরে একটা মৃত মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে বেঁচে আছ। আর কত দিন? মেনে নাও বাবা। শি ইজ নো মোর। মা নেই। কোথাও নেই...। শুভরাত্রি বাবা।” 

https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/

Saturday 12 November 2016

স্বপ্ন



স্বপ্ন দেখলাম, পালিয়ে বেড়াচ্ছি।  কার ভয়ে? ইংরেজদের নাকি মুঘলদের জানি না।  আমি একা নই।  রাজা নাকি বাদশাহ জানি না, লুকিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সপরিবারে সাথে কেবল একদল বিশ্বস্ত সৈনিক আর স্বল্প সংখ্যক পরিচারক পরিচারিকার দল। রাজার মাথায় বিঁড়ের মত রাজ উষ্ণীষ ঠিক যেমন টিপু সুলতান পড়ত।রাজা ঠিক লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন না উনি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন সেই সর্বশক্তিমান সাম্রাজ্যবাদী প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির বিরুদ্ধে ।  সারা দেশ যার কাছে মাথা নত করেছে এক তুচ্ছ রাজার সাধ্য কি তার সাথে লড়ে? পরিণতি অবোধগম্য নয়। রাজা হারছেন বারবার।  আপাততঃ নতুন বাহিনী  গড়ে তোলার মত রসদ রাজার নেই।  তাই কিছুটা মনখারাপ সকলের।  রাজার এক পুত্র। হতে পারে এইটি সদ্য সাবালক হয়েছে বাকি গুলি এখনও দুগ্ধপোষ্য। রণক্লান্ত সেপাহি এবং পালিয়ে বেড়ানো পরিজনদের মনে আনন্দ দেবার জন্য রাজা হঠাৎ  ঘোষণা করলেন পুত্রের বিবাহ দেবেন। পাত্রী কৈ? পাত্রী ঐ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতেই মওজুৎ আছে, নাম “তারা”।  তারা মূলতঃ রাণীমার ঘর এবং হেঁসেল সামলায়। সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত চঞ্চলা কিশোরী। তারা মত সাধারণ কূলশীলের মেয়ের সাথে নিজ পুত্রের বিবাহ দিতে রাণীমার কিঞ্চিৎ  আপত্তি ছিল। তাছাড়া তারা বয়সেও একটু বড়। প্রায়ই রাণীমার অগোচরে ধমকধামক দেয় রাজপুত্রকে ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া না করলে বা জিনিসপত্র অগোছালো  করে রাখলে। যদিও সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা বড়কুমারের জগৎই তো তারাময়। মহল ছেড়ে যেদিন পালাতে হয়েছিল কুমার সেদিন নিজের পাদুকা নিজে পড়তে জানত না।  চতুর্দিকে পালাও পালাও রব।  সব ছুটে পালাচ্ছে, রাজা এবং রাণী পর্যায়ক্রমে কোষাগার এবং শিশু কুমার কুমারীদের সামলাতে ব্যস্ত। বাকি বিশ্বস্ত দাসদাসীরা ঘোড়া হাতি তথা অন্যান্য গৃহস্থালি সামলাতে ব্যস্ত।  কেউ কেউ সুযোগ বুঝে কিছু হাতিয়ে পালাতে ব্যস্ত কিন্তু কেউ বড় কুমারের খোঁজ নিচ্ছে না।  বড়কুমার অস্থির হয়ে পায়ে পা ঘষে চলেছে পায়ের সামনেই হীরক খচিত পাকুদাদ্বয় ব্যগ্র ভাবে কুমারের প্রতিক্ষারত। কিন্তু আজন্মলালিত অভ্যাস কেউ স্বহস্তে  ঐ জুতা রাজকুমারকে না পরিয়ে দিলে সে পরে কেমনে। দূরে বিজয়ীশক্তির পদধ্বনি ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কুমার কি করে? এমন সময় দৌড়ে এল তারা, কোমরে হাত দিয়ে বলল, “যা ভেবেছি।  নিজের পাদুকা নিজে পরা অভ্যেস কর সোনা। ঝুঁকে হাত দিয়ে পায়ের কাছে টেনে নাও আর পা গলাও। দিন পাল্টাচ্ছে সোনা।  নিজেকে না বদলাতে পারলে পচে মরবে। ” চোখ বন্ধ করে তারার নির্দেশ পালন করেছিল কুমার।  এমন কিছু খারাপ লাগেনি তো। বংশের মাথানত হয়েছিল বলেও মনে হয়নি।
আর সেবার? সদ্য যুদ্ধে যাবে কুমার। জীবনের প্রথম যুদ্ধ তাও সেই সর্বশক্তিমান সাম্রাজ্যবাদী প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির বিরুদ্ধে ।  যুদ্ধ বিদ্যার পাঠ অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে আসতে হয়েছিল রাজ্যপাট ছেড়ে। শিবিরে নিয়মিত অস্ত্রবিদ্যার অনুশীলন তো হয় কিন্তু লড়াই করার মানসিকতাই যে নেই কুমারের। কুমার ভালবাসে চাঁদনী রাতে বাঁশি বাজাতে, ভালবাসে উদ্দেশ্যহীনভাবে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে। কাঁচা সোনা রোদে মাঠে শুয়ে নীল  আকাশে সাদা মেঘের কারিকুরী দেখতে। ভালবাসে তারার বকুনি  খেতে। ভালবাসে ছোট ছোট ভাইবোনের সাথে অহেতুক  খুনসুটি করতে। যুদ্ধ, হত্যা,রক্তপাত সইতে পারে না কুমার। তারা বর্ম পরাচ্ছিল এক্ষুণি রাণীমা আসবেন বরণ করতে রক্ততিলক পরাতে। আচমকা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগল কুমার। পারবে না, কুমার পারবে না লড়াই করতে।  স্নেহময়ী ধাত্রীর মত কুমারের অশ্রুসিক্ত গালে চকাস করে একটা চুমু খেল তারা। তারপর বলল,“ দেখে নাও কি ভাবে বর্ম বাঁধছি। যদি দেখ পরাস্ত হতে চলেছ, সোজা বর্ম খুলে উষ্ণীষ খুলে এক খাবলা মাটি মুখে হাতে ঘষে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেও। মিশে যেও সাধারণ মানুষের ভিড়ে।” কুমার শিউরে উঠে বলল,“ তারা তুই আমায় রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাতে বলছিস? তাহলে তো সবাই আমায় কাপুরুষ বলবে?” তারা ফোৎ করে একটা বিদ্রুপাত্মক শ্বাস ছেড়ে বলল,“ বলুক গা।  ওরা ভারি বীর পুরুষরে। তোমার বাবার ওপর শত্রুপক্ষের  সাংঘাতিক রাগ। আসমুদ্রহিমাচলে একমাত্র আমাদের রাজামশাই ই ওদের বশ্যতাস্বীকার  করেনি। আমাদের রাজামশাইকে লুকিয়ে লুকিয়ে গোটা দেশ মান্যিগণ্যি করে। তলায় তলায় বহুলোক প্রস্তুত হচ্ছে ওদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য। তোমাকে যদি ওরা একবার পায় কি হবে বুঝতে পারছ? চোখ গেলে দেবে, জিয়ন্ত গায়ের চামড়া খুলে নেবে, ফুটন্ত  তেল ঢেলে দেবে গায়ে। যদি দেখ না পালাতে পারছ ঐ তরোয়াল দিয়ে নিজের গলা নিজে কেটে ফেল তবু ঐ শকুন গুলোর হাতে ধরা পড় না। ”

তারাকে বিয়ে করতে একফোঁটাও আপত্তি ছিল না কুমারের। বিয়ের দিন লুকানো শিবিরে সীমিত  সামর্থ্যের  মধ্যে এলাহি ব্যবস্থা করলেন রাজাজী। বাইরের নিমন্ত্রিত বলতে শুধু দুজন। একজন বড় রাজামশাই, আমাদের রাজার দাদা। শত্রুপক্ষের প্রিয়পাত্র। ওণার রাজ্য শত্রুপক্ষই চালায়, উনি সুরা এবং নারীতে মত্ত। শত্রুপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে মাত্র গোটা পনেরো দেহরক্ষী নিয়ে উনি কি করে এসেছেন জানি না। বিশাল মোটা ঘোড়ায় চাপলে বেচারা ঘোড়া না দেহরক্ষা করে। আর দ্বিতীয় নিমন্ত্রিতা হলেন রাণী পিসিমা।  রাজা মশাইয়ের একমাত্র ভগিনী । ওণার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে শত্রুপক্ষের রীতিমত দহরমমহরম চলে। রাজামশাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওনাদের পরিবার প্রতিবার শত্রুপক্ষের দল ভারী করে। উনি এসেছেন মাত্র চারজন সখী তথা দেহরক্ষীণীকে নিয়ে। এককথায় উনি অপরূপা।  দুধের সরের মত গাত্রবর্ণ । শাঁখের মত টানাটানা দুটি চোখ।  আধেক শুকনো গোলাপ পাপড়ির মত দুটি ঠোঁট। বিধবা তাই পরণে একটিও গহণা নেই।  শুধু দুধসাদা মখমলী শারারা আর মাথায় ওড়ণা যা উর্ধাঙ্গকে ও আবৃত করে রেখেছে।

বিবাহ শুরু হল। তারাকে স্বল্প অলংকারে সাজানো হয়েছে।  বেশ সাধারণ দর্শনা তারা, বিশেষত রাণী পিসি বা আমাদের রাণীমার কাছে। হোক তবু বিয়ের কনে হিসাবে ঝলমল করছে আমাদের তারা। বিয়ের রীতি অনুসারে বড় রাজা অর্থাৎ কুমারের জেঠামশাই একটা হীরকখচিত সোনার টিকুলি পরিয়ে দিলেন তারার মাথায়। বংশের জেষ্ঠ পুত্রবধুর প্রাপ্য ঐটি। জেঠা রাজার কোন ছেলে নেই। তারাই বড় বউ। রাণী পিসি এসে শিরচুম্বন করলেন।নিজের গলা থেকে সাতছড়া হীরের ঝাপটা খুলে পরিয়ে দিলেন তারার গলায়। ভারি হারে একটু কি কুঁজো হয়ে গেল তারা? বীণার মত মিষ্ট সুললিত  স্বরে রাণী পিসি বললেন,“ তোমরা বংশ পরম্পরায় আমাদের সেবা করে আসছ। আশা করব আমাদের কুলতিলকের কোন রকম অযত্ন হবে না। প্রাণ দিয়েও ওকে রক্ষা কর তারা। ”
শুরু হল উৎসব। যে যা পারল তারাকে উপহার দিল। বেশির ভাগই শুভকামনা জানালো। পালিয়ে বেড়ানো লোকজনের দেবার মত কি বা আছে? যেমন আমি। আমি রান্নাঘরে তারার সহযোগী । তারা বাটনা বাটে আমি শিল ধুই। তারা রান্না করে আমি উনুন নিকোই। আজ কেন জানি না প্রচণ্ড  কান্না পাচ্ছে, কান্নার দমক চাপতে গিয়ে থরথর করে কাঁপছি। এবার আমার পালা নববধূকে উপহার বা শুভকামনা জানানোর। তারার কাছে গিয়ে আর চাপতে পারলাম না।  কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “ তুমি জানো তো? আমরা কেউ বাঁচব না।” তারা স্বভাবসিদ্ধ হেসে বলল,“জানি। তাই বলে বাঁচব না?”
#Aninditasblog
https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/

মধ্যরাতে গড়ের মাঠে



- এতরাত্রে? একা?
- তাতে তোমার কি? যতঃ গায়ে পড়া পাবলিক।
-নাঃ আমার আর কি? ( কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধতার পর) তা হয়েছেটা কি? ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট?
-উফ্ ভগবান।  ( উঠে স্থানবদল)
- কি? ব্যর্থ প্রেম না খারাপ রেজাল্ট?
- সেই আমার পিছন পিছন ?এখানেও এসে জুটেছো? এবার কিন্তু আমি পুলিশ ডাকব বলে দিলাম। তুমি বোধহয় জানো না আমি ক্যারাটে তে ব্ল্যাকবেল্ট।
- বাঃ। তা এত রাত্রে গড়ের মাঠে কেন?ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট?
- আরে বাপরে!!!! ছিনে জোঁক।  দেখ ভাই আই অ্যাম নট ফিলিং ওয়েল।  গিভ মি সাম স্পেস অর আইল বিট দা  শিট আউটা ইউ।
 --এত ইংরাজি বুঝি না বাপু। ইংরেজি গোটাটাই গোবিন্দর দেখে টুকেছিলুম । সে ব্যাটাচ্ছেলে ফেল করে গেল আর আমি করেগেলুম পাশ। জানো গোটা মহল্লায় কেবল আমিই পাশ দিয়েছিলুম।  গোটা মহল্লায় বাবাঃ হুঁ।
-ওক্কে।  গ্লাড টু নো দ্যাট স্যার্। নাউ প্লিজ লিভ মি এলোন।
- ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট? আমার রেজাল্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেত্ত, পাশ করা সত্ত্বেত্ত  মা বলল,’ বিনয় বাবা চাকরী খোঁজ।  দেখচিস তো, তোর বাপের শারীরিক  অবস্তা কি করে আগে পরাব বলদিনি? দু দুটো সমর্থ বোন বাড়িতে বসে। ’ এত রাগ হল।  বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এলুম এই গড়ের মাঠে। ঘণ অন্ধকারে বসে রইলুম কতক্ষণ। খুব মনে পড়ছিল মায়ের কথা। কি সোন্দর দেখতে ছিল মা।  আর খেটে খেটে কি হয়ে গেছে।  আর পুঁটু আর ফুলি আমার দুই বোন ঠিক যেন ডল পুতুল গো। আর আমার পঙ্গু বাপ।  কতবার মনে হল ফিরে যাই।  কিন্তু তীব্র অভিমান পথ আটকালো।  পড়তে দেবে না?   আমায়? যাঃ। চাই না পড়তে। চাই না বাঁচতে। ঝুলে পড়লাম গলায় ধুতি জড়িয়ে।  ঐখানে একটা তেঁতুল গাছ ছিল জানো ঐটাতে-
-ওঃ গস্।  প্লিজ ম্যান আয়াম স্কেয়ার্ড।
- ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট? আমার কথা শোনো বাড়ি ফিরে যাও।  মরার পর বুঝেছিলুম কি ভুল করলুম। আমার শোক বাবা নিতে পারেনি। পনেরোদিনের মধ্যেই বাবাও--।  মা দুই সমত্থ মেয়েকে কতদিন আগলাবে? ৪৬ এর রায়টে ছোটটাকে তুলে নিয়ে গেল মোছলমানেরা।
-রায়ট? কি যা তা বলছেন? ১৩৪৬? ১৪৪৬-- ইংরেজি মতে কোন সাল? কলকাতায় তো কোন রায়ট হয় নি।
-বুঝে গেছি ফেল করেছো।  তাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছো।  ১৪৪৬ আসতে এখনও ২৩ বছর বাকি আর ১৩৪৬  কেটে গেছে ৭৭ বছর আগে হুঁঃ।
- ওঃ। ১৯৪৬।  ঐ ডাইরেক্ট অ্যাকশান ডে, নোয়াখালি এন্ড অল দ্যাট।
- এন্ড অল দ্যাট- উফ।  যাক বাপু তোমার সাথে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।  তুমি ভালোয় ভালোয় বাড়ি যাও।  আর দেরি কোর না।  রাত  বাড়লেই ওরা এসে হাজির হয়।  ওরা আমায় ও ডরায় না। ছেলে মেয়ে বাছবিচার ও করে না।  যা পায় ছিঁড়ে খায়।
- এই আমার সত্যি ভয় করছে। একদিকে ওদের ভয় আর একদিকে আপনার আষাঢ়ে গপ্প।
- যাক আপনি বলতে জানো তোমরা। যা বলেছি একবর্ণও মিথ্যা নয়।  আমাদের ধর্মে বলে আত্মহত্যা মহাপাপ।  সে যে কতবড় পাপ যে ভুক্তভুগী সে ছাড়া কেউ বোঝে না। এই ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছি আজ ৭২ বছর ধরে।  আমার কোথাও যাবার নেই।  কোন মুক্তি নেই। বিগত ৭০ বছরে তোমার মত কতজনকে এই পাপ থেকে বিরত করেছি তার ইয়ত্তা নেই। তবু আমার মুক্তি হয়নি। ( দীর্ঘ নীরবতার পর ধরা গলায়) বাড়ি ফিরে যাও।
- একা যেতে ভয়- ।  বাবা - মা খুব মারবে-
- কেউ কিছু বলবে না।  ফিরে যাও।  আর বললেও মা- বাবার মুখনিঃসৃত বাণী অমৃতবৎ।
- ( ক্যাব বুক করাবার জন্য মোবাইল  অন করল মেয়েটি।  তৎক্ষণাৎ ফোন) (কাঁপা কাঁপা গলায় ফোন ধরল মেয়েটি ) হ্যালো মা।
(আর কথা বলতে পারল না।  কাঁদতে লাগল। )
আমার ভুল হয়ে গেছে মা।  চরম ভুল হয়ে গেছে।  আমায় বাড়ি নিয়ে চল প্লিজ----

- মা বাবা আসছে আমায় নিতে।
-বলেছিলাম।  আমি আসি।
- শুনুন।  আপনার জন্য কিছু করতে পারি?
- এ কথা বহুবার শুনেছি।  কেউ কথা রাখেনা।  তবু যদি পার হাড়কাটা গলির ভিতরে একটা তিনতলা বাড়ি আছে। বিনু নিকেতন নামটা এখনও পড়া যায়। ওখানে বেবুশ্যেরা থাকে। বাড়ির বুড়ি মালকিনের বয়স ৮৫।  নাম সুললিতা দেবী। খুব অসুস্থ । বেশি দিন বাঁচবে না।  ওকে বলো, “ফুলিরে আমায় মাপ করে দিস। ”
https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/

পাঁচশ- হাজার টাকা



- এজ্ঞে স্যার, এতক্ষণ ধরে এখেনে বসে আছেন, তাই ভাবছি-
- (অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে) তাতে তোমার কি হে ছোকরা? আরো তো বেঞ্চ আছে, তাতে বসো না। তা না তখন থেকে এই বেঞ্চেই বসে আছে।
- না, মানে স্যার, জায়গাটা তো বিশেষ ভালো না তাই আর কি। সামনেই মা গঙ্গা খলখল করে বয়ে যাচ্ছে-
- তো?
- অনেকেই সুসাইড করে আর কি!
- (ক্রোধে হতবাক হয়ে) মানে? আমাকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে যে আমি সুইসাইড করব বলে বসে আছি?
- আজ্ঞে! সেই রাত আটটা থেকে বসে আছেন, এখন রাত বারোটা প্রায়। এতক্ষণে একটাও ফোন করলেননি। কেউ আপনাকে ফোনও করলনি। এর মানে আপনি মোবাইলটা বন্ধ করে –
- (গলার পর্দা বেশ উঁচুতে তুলে) তুমি বোধহয় জানো না, আমি কে?
- আজ্ঞে, জানি তো। আপনি মুখুজ্জে বাড়ির মেজ কর্তা। লতুর বাপ।
- লতু? হাউ ডেয়ার ইউ? লবঙ্গলতিকা কে লতু?
- চটছেন কেন স্যার? লতু তো পুরো মহল্লার গর্ব। কত সুন্দর দেখতে,এনজিনিইয়ার। তারপর বিয়ে করে বিদেশ যাচ্ছে।  কি চাবুকের মত ইংরাজি বলে।আমি তো চুনোপুঁটি। খোদ রন্তুদাই ফিদা ছিল ওর ওপর। রোজ সকালে যখন লতু স্কুলের বাস ধরতে যেত পেছন পেছন যেত। আবার ফেরার সময়ও। একদিন লতু পেছন ফিরে ইংরাজিতে এমন গটমটখট করে বকে দিল, যে রন্তুদা দুহাত তুলে, “ইয়েস- নো- সিস্টার-মাদার-” বলে দে দৌড়। হা হা হা।
- গুড। এই না হলে রামদুলাল মুখুজ্জের মেয়ে। তা এ শালা রন্তু আবার কে?
- রন্তুদা স্যার? এম এল এ সাহেবের ইয়ে আগে ডান হাত ছিল- এখন বোধহয় বাঁ হাত হবে। চিনতে পারছেন না, ওর ভালো নাম রতনচূর ভটচাজ্যি?
- অঃ। মনোময় বাবুর অপোগণ্ড ছোট ছেলেটা। ঠিক করেছে লতু। বেবুন হয়ে চাঁদে হাত- স্কাউন্ড্রেল।
- এমন বলবেননি স্যার।চাকরি পায়নি তাই এম এল এ সাহেবের আসেপাশে ঘোরে। সবাই কি জজ ব্যারিস্টার হবে বলুন? ভেবেছিল এম এল এ সাহেব খুশি হয়ে অন্তত ওকে কাউন্সিলার করে দেবে। ওমা? সে যে তলে তলে তার শালির ছেলের জন্য দরবার করছিল সে কি আর রন্তুদা জানে? আর তা ছাড়া রন্তুদার সাথে তো আপনারাই লতুর বিয়ে দেবেন বলেছিলেন।
- হে ভগবান! সে তো কোন ছেলেবেলায়---। মানিনী মানে আমার স্ত্রী আর মনোময় বাবুর স্ত্রী বলত, আদিখ্যেতা যত। মানিনী চলে গেছে আজ বিশ বছর হয়ে গেল----। সারা জীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে রাখেনি তার দেওয়া খেলনা প্রতিশ্রুতি রাখার কোন দায় আমার নেই (গলা ভেঙে গেল- চোখ মুছলেন ধপধপে ধুতির খুঁটে)
- তা তুমি কে হে? তখন থেকে আমার পিছনে পড়ে আছ?
- না পিছনে পড়ে নেই স্যার। তবে কি না কেমন সন্দ হচ্ছে যে আপনার অভিপ্রায়ে কিছু গড়বড় আছে- আর তাছাড়া আপনি উঠে গেলে আমি – (মাথা নামিয়ে কান চুলকে) একটু মদটদ খেতাম আর কি।
- তা খাও না। এত বড় ঘাট পড়ে আছে-
- আপনার সামনে না আজ্ঞে-
- হু। তা তোমার নাম কি?
- আলি আজ্ঞে।
- আলি? কার ছেলে?
- তহমিনা বিবির। বাপের নাম আমি করি না। সেই শুয়ারটা আমার জন্মের আগেই মাকে তালাক দিয়ে অন্য একজনকে নিয়ে ভেগেছিল।
- ত-হ-মি-না? নামটা চেনা চেনা- ( বলতে বলতেই ভদ্রলোকের মুখে শোকের ছায়া নেমে এল) ওঃ- তুমি তহমিনার ছেলে।
- আজ্ঞে। (অল্প হেসে)আমার আম্মিকে সবাই চেনে একডাকে- । এই ঘাটের পাশেই মায়ের লাশ মিলেছিল। আমি তখন তিন। সেদিন সন্ধ্যে বেলা মা আমাকে নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে বেরোবার সময় নানীকে বলে বেরিয়েছিল, “আম্মু নিকে করে নতুন জামাই নিয়ে ফিরব। দেখিস কি সুন্দর জামাই আনব-”। তালাকের পর নানী আর মামুদের সাথেই থাকতাম আমি আর আম্মি। কুত্তার বাচ্ছাটা আম্মিকে নিকে করার লোভ দেখিয়ে ভোগ করতে চেয়েছিল। আমার আম্মিটা এত বোকা ছিল না- (গলার নোংরা গামছায় চোখ মুছে গলা ঝেড়ে) নিকে করো- নিকে করো করে লোকটার পিছনেই পড়ে গিয়েছিল। সবই শোনা- শাদিসুদা বালবাচ্চাওলা লোকটা থোড়াই একটা তালাকশুদা মেয়েকে বিয়ে করত? তা সে যত ডবকাই হোক না-। নিকে করার নাম করে ডেকে এনে গলার নলি কেটে দিয়েছিল—সারা রাত মরা আম্মিকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি চারদিকে লোকেলোকারন্য- কত কাঁদলাম- আম্মিকে কত ডাকলাম- সাড়াই দিল না স্যার (উচ্চ স্বরে কান্না)
- (কাঁধে হাত রেখে) তারপর?
- আর কি স্যার? নানী যতদিন বেঁচে ছিল নানীর কাছেই ছিলাম, আট বছর হতে না হতেই নানীও- । মামুরা থোড়াই দেখত? ওদেরও শাদি-তালাক- বালবাচ্চা নিয়ে নাজেহাল অবস্থা। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম কটা দিন আধপেটা খেয়ে না খেয়ে- তারপর পাঁচু দা ডেকে ওর চায়ের দোকানে কাজ দিল। ওখানেই থাকতাম রাতে- ওখানেই রন্তুদার সাথে আলাপ- আমার সামনেই লতু ওকে ইংরাজিতে ধমকেছিল- আরে হাঁ- পরশু লতুর বিয়ে না? আপনি এখেনে কি করছেন স্যার? এখনো কত কাজ বাকি- মন খারাপ নাকি?
- কি বলব বাপ। তুই ঠিকই ধরেছিস। আমি এখানে মরতেই এসেছিলাম-। আমার মত অপদার্থ পিতার জীবিত থাকার কোন অধিকার নেই- মানিনী চলে যাবার পর দ্বিতীয় দারপরিগ্রহ করিনি। জেদ করে ভেবেছিলাম মেয়েকে একাই মানুষ করে দেখিয়ে দেব। আর তাছাড়া উপায়ই বা কি ছিল? কেউ পাশে ছিল না বাপ। কেউ না।  পাছে দায়িত্ব নিতে হয় সবাই এড়িয়ে যেত জানিস। অথচ সকলের দায়ে অদায়ে আমি ছুটে গেছি সবার আগে-
-জানি তো।  পাড়ায় আপনার কত সম্মান- কত খাতির করে সবাই-
- হাতির মাথা করে।  আজ আমার এতবড় বিপদে কেউ পাশে দাঁড়াল?
- বিপদ?  মানে?
- আমার লতুর বিয়ে ভেঙে যাবে- কাল সকালে দুই লাখ টাকা তুলে এনেছিলাম। কেটারার ডেকরেটার লাইট জল মিষ্টি -- আজ সে গুলো এক বস্তা কাগজ মাত্র। কি করব?   আমি কি করব? একলা বুড়ো মানুষ। পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি শুধু।  বিয়েটা হয়ে যাক আমি ধার রাখিনা---
- ইল্লি আর কি? লতুর বিয়ে ভেঙে যাবে? কোন হারাম--( জিভ কেটে) কাল সকালেই চলুন।  আমি আর রন্তুদা গিয়ে চমকালে সুড়সুড় করে দিয়ে দেবে চাচা।  আপনি  ঘর যান। আমরা কাল ভোরেই আসছি।  আর হ্যাঁ (লুঙ্গির গেঁজে থেকে এক গোছা নোট বার করে) এটা রাখুন।  বেশি নেই হাজার সাত হবে। একটু একটু করে জমাচ্ছিলাম একটা চায়ের দোকান করব বলে।  আমি আর রন্তুদা- রন্তুদা বলে কি জানেন স্যার,“ আলি সবাই আমাদের খারাপ ভাবে- ভাল হবার সুযোগ কেউ দিতে চায় না। আরে একটা সুযোগ দিয়ে তো দেখুক-”
- বেঁচে থাক বাপ। কিন্তু এ টাকা আমি নিতে পারব না।
- নিন স্যার । পিলিজ। ভালো কাজের সুযোগ রোজ থোড়াই আসে- লতুর বিয়ে বলে কথা। ধারই তো--- একটাও পাঁচশ হাজার নাই স্যার।
-বেশ। নিলাম। তবে শুধু টাকা নয়, টাকার মালিককেও চাই। আমার একতলার গ্যারাজের পাশে বেশ খানিকটা জায়গা আছে।  ওখানে চায়ের দোকান বানা।  তবে ঠেক বানালে চলবে না।
- স্যার।
-নো স্যার।  চাচা বা কাকাবাবু চলতে পারে। তবে আমি ম্যানেজারি করব কিন্তু। শুধু চা নয় বুঝলি- আলুর দম, ঘুঘনি, ডিম পাউরুটি----- আস্তে আস্তে আমরা হোম ডেলিভারি করব----

https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/
#Aninditasblog

Wednesday 2 November 2016

Lekha 4

He woke her up and said in hushed tone, "somebody broke in". "What?" " i am going downstairs. Stay here and lock the door."
After few mintutes a loud thud and somebody shriked. She couldnt resist herself and ran down. Thank god it isnt her husband. She found him sitting on the steps he gave her a blank look and then she found it, the clearly lifeless body of the intruder.
"What have i done?" He was crying, he was afraid, shaking like a dry leaf in a strong breeze. " im going to the jail for sure who'll look after you and the kids?" He was murmuring to self.
She was in tears as well. He is all she got. Her parents disowned her when she chose him over the man of their choice. She couldnt lose the love of her life. Love is all she ever prayed for. And the kids? They do need an earning member. A jobless housewife cant do anything for her kids but she can definitely do something to save her husband ... the father of her kids.

She has been sentenced to 7 years rigorous imprisonment as she successfully made the court understand that it was an accident not an intentional cold blooded murder. The man broke into her house... she tried to stop him from stealing and he attacked her... in order to protect her modesty she hit him with her son's cricket bat.

She was released after 6 years for good conduct. She was taken aback that neither her husband nor their sons had come to receive her. She went to her home, but its not her anymore. Her husband got a new wife. They are really happy together... all of them her husband, his wife, her sons. Her sons, her own flesh and blood believe that she is a cold blooded murderer. She killed the husband of their new mom. Her world shattered..

What to do now? She has no place to go. She thought of committing suicide... but she is too cowardice... finally she knocked the door of the house where she had grown up... the door had been closed for so many years. To her utter surprise the door opened and she found her old ailing parents are waiting for her to return... they have been waiting for her since the day she left. They had indeed threatened her to disown but never meant it.... all her life she craved for love... true love... but it was right there unfortunately she had taken it for granted.
#Aninditasblog

কথোপকথন-



-কেমন আছো?
-ভালোই তো। আর তুমি?
-খুব ভাল।------তোমাকে প্রায় দেখি। ফেসবুকে।
-ওঃ। হ্যাঁঃ।
-তুমি দেখনি আমায়?
-সময় পাই কোথায়।
-হুঁ। যদি দেখতে পেতে? বাড়িয়ে দিতে বন্ধুত্বের হাত?
-উঁ ভাবতাম। ভয় পেতাম যদি তুমি না ধর।
-আজো ভুল বোঝ আমায়। আমিই তো আগে----

- আছো?
-বলো?
-নাঃ।  জাস্ট এমনি--

-আছো?
- বলো।
- নাঃ। জাস্ট-
-বলোই না? জাস্ট এমনিতে আমি ক্লান্ত। আজ না হয় বলেই দাও।
১০
-আছো?
- মনে যা আছে বলেই দাও। কেন শুধু ব্যথা পাও। যা মুখে বলা যায় না তাও এখানে লেখা তো যায়-
-একটা কথা বলবে আমাদের গেছে যে দিন তাকি তোমার কখনও-
- মনে পড়ে কি না? তোমার?
- নাঃ। আমি খুব ভাল আছি।
- তবে কেন জানতে চাও?
-জানি তোমার পড়ে না।  আমি প্রথমা ছিলাম না শেষতমাও নয়। কেনই বা পড়বে?
-তোমারও তো পড়ে না। দামি ঘর-বর-পুত্র পরিজন। তবে কেন জানতে চাও আমার মত নিতান্ত  সাধারণ এলেবেলের মনের কথা।
- আমি ভুলিনি। তোমার দেওয়া প্রতিটি ব্যথা দগদগে ঘা হয়ে আজোও জ্বালায় আমায়।
-আর তোমার দেওয়া ব্যথা গুলো? ভেবেছ আমি ভুলে গেছি? কোনদিন ক্ষমা করতে পারব না তোমায়।
- আমিও না।
একে অপরকে আনফ্রেণ্ড এবং ব্লক করে মর্মাহত দুটি হৃদয় একসাথে ডুগরে উঠল- ইস্।  কি বলতে চেয়েছিলাম আর একি হল।  আর কি কখনও-
#Aninditasblog
https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/