Wednesday 8 April 2020

অনির ডাইরি, ৮ই এপ্রিল, ২০২০


#lockdown #lockeddown
কি যে সব হচ্ছে-। সারা দেশ করোণা আতঙ্কে গর্তে সেঁদিয়েছে, আর আমার বৃদ্ধ বেরোচ্ছেন দুধ আনতে। শুধু দুধ? চেপে ধরলে, ট্রেনের ওয়াগনের মত আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে আরো কত কি? দই(টক এবং মিষ্টি), বাতাসা--।  বাতাসা? ঘচাং করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ে, সকালের ভিডিও কল। বাতাসা কি করতে অ্যাঁ? সুগারওলা লোকজনের বাড়িতে বাতাসা ঢোকে কেন? ধমকালে পাল্টা ধমকায় বৃদ্ধ। গলার জোর এবং বিক্রম দুইই বড় বেশী বৃদ্ধের।

মাঝপথে ফোন রাখতে বাধ্য হই, সদ্য কিনে আনা বাবার শেভিং ফোম, পাউডারের মত গালে মেখেছে আমার কন্যা। রীতিমত যুদ্ধ করে ফোম আর ক্ষুর কিনে এনেছে শৌভিক। ক্ষুর বললে, বড় রেগে যায় এরা শ্বশুর-জামাই। করোণার উৎপাতে মাথায় মুখে গজিয়েছে ঘণ জঙ্গল। বিগ বাস্কেটে নাপিত থুড়ি চুল-দাড়ি কাটার লোক পাবো কিনা জানতে চায় শৌভিক দুই বেলা। বাজারে গেলে করুণ চোখে তাকায়, বন্ধ সেলুনের দিকে। প্যাঁচ কষে, লক আউট উঠলেই, কাকডাকা ভোরে লাইন দেবে সেলুনের সামনে। কতবার বলেছি, আমিই পারব। ছোটবেলায় তো তুত্তুরীকে দিতাম কেটে খামচা কাট। তুত্তুরীর ঘণ আর কোঁকড়া চুল, কান কাটতাম, ধান হতো। মা অকারণ হাঁউমাউ জুড়ত। সে তুলনায় ছেলেদের চুল কাটা অনেক সহজ। এই তো সুকন্যা কি সুন্দর কেটে দিয়েছে উটোর চুল। দাড়িটাও কামিয়ে দেব, যদি আমার কাছে চুল কাটতে রাজি হয়- না হলেও দেব।  এদের বাপমেয়ে এত নাক উঁচু না, সেই দাড়ি কামালো, তাও আমাকে ক্ষুর চালাতে দিল না।  আবার বলে, করোণা যুদ্ধে প্রথম ক্যাজুয়ালিটি আমার দাড়ি।

দুপুর গুলো কাটে, রিপোর্ট আর তত্ত্বতলাশে। কোথায় কার বেতন হয়নি? কোথায় কে আটকে পড়েছে- সব মিটলে জেলা প্রশাসন থেকে আসে ফোন “যোগে ভুল আছে বুঝলেন তো। ১৭ জন কমবেশী আসছে। ” কি জ্বালা বাবা, করোণার সময় এক্সেলও যদি যোগে ভুল করে কি করি?

সব কেমন গড়বড় হয়ে যাচ্ছে। দুপুরে যারা ঘুমিয়েছিল, বিছানা তোলেনি কেউ। যত্ন করে, বালিশ চাদর বক্সে ভরে,সপাসপ ঝ্যাঁটালাম বিছানা। ভাবলাম,  বর খুশি হবে, সাবাশি দেবে। কচু। ঘেঁচু। কাঁচকলা। ষাঁড়ের মত চিৎকার করছে শৌভিক। রাতে শোবার জন্য বিছানা ঝেড়ে, সদ্য বালিশ-চাদর গুচিয়ে রেখেছিল- আমি নাকি কেঁচেগণ্ডুষ করেছি সব।

এবার ঘুমোতে যাব। এই লক ডাউনের বাজারেও এত ঘুম পায় কেন? তুত্তুরী রীতিমত ঈর্ষান্বিত। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও আপিসেরই স্বপ্ন দেখব, যেমন সেদিন দেখলাম, সারা দিন জুড়ে এজেন্ট-এসএলওদের ট্রেনিং। নব্যপ্রশাসনিক ভবনের গতিধারা হল কানায় কানায় ভর্তি। অথচ মূল ট্রেনার, ওরফে আমাদের এএলসি শ্রী সুখেন বর্মন, ট্রেনিং এর কথা বেমালুম ভুলে দার্জিলিং ঘুরতে চলে গেছেন। স্বপ্নে নিজের ধমকে নিজেই চমকে উঠি। সকালে বলাতে হেসে গড়াগড়ি যায় বর্মন। “ম্যাডাম আমি বলেছি, আমি ট্রেনিং হলের দরজার সামনে। আপনি ভুল শুনেছেন। ” সে তো গেল সেদিনের কথা। আজ আবার আমার দুই ইন্সপেক্টরকে স্বপ্ন দেখলাম- দেখলাম আমি দেখলাম সঞ্চিতা আর আমি গাছ কিনতে গেছি, কোন একটা নার্সারিতে। মালিকের সাথে কি নিয়ে যেন হাল্কা মতান্তর হল, ফলতঃ মালিক আমার গাছটা কেড়ে নিল। এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া। তারপর নির্মলকে নিয়ে ইন্সপেকশন।  নির্মল যত বোঝাবার চেষ্টা করে,  ম্যাডাম, আপনার গাছটা কেড়ে নিয়েছে, এই অপরাধে মালিককে  কোর্টে তোলা যাবে না- ওর জেল-জরিমানাও হবে না।  ততো রেগে যাই আমি। স্বপ্নের মধ্যে বলেও দিলাম কি কি সব আইনে কেস দেওয়া যায়। মুস্কিল হচ্ছে যার একটাও নির্মলের পড়া নেই। “এ্যাইঃ  কাকে ধমকাচ্ছিস?” শৌভিকের গুঁতোয় যখন ঘুম ভাঙল, তখনও হেব্বি রাগ হচ্ছিল নির্মলের ওপর। হোক না স্বপ্ন। এত ফাঁকি কেউ মারে?

No comments:

Post a Comment