#লকডাউন #লকড_ডাউন
ঐ যাঃ। জামাটা আবার ভিজে গেল। রান্নাঘরের কলটা এত জল ছিটোয়, ঐ জন্যই সবিতা মাসি বাসন মাজার সময়, একটা পুরোনো মোজা জড়াত কলের মুখে। আজ সকালে আবার ফোন করেছিলাম সবিতা মাসিকে। বেতন দিতে পারিনি এখনও। ফোন করলেই মাসির এক কথা, “ কি করে যাব বওদি? লকডাউন কবে উঠিবে কিসু জানো গো বওদি? কি খেয়ে থাকব বলো তো?” টাকা মাসের প্রথম দিন থেকেই তুলে আলাদা করে রেখেছি। বারবার জানতে চাই, চেনা পরিচিত কেউ যদি অাসে এদিকে, যার হাতে পাঠাতে পারি বেতনটুকু। অন্য কোন কাজের দিদি বা সিকিউরিটির লোক। সিকিরিটির গুমটিটাও কদিন ধরে খালিই পড়ে আছে। শৌভিক মানতে নারাজ,কিন্তু আমি জানি গৃহবন্দি সিকিউরিটি গার্ডেরাও। মনের সুখে রাজত্ব করছে কেলে-লেলের দল। সকালে দোকান সেরে ফেরার পথে দেখি, ল্যাজ খাড়া করে চিৎকার করছে লেলোটা। জনমানবশূন্য আবাসনের পথ। দাঁড়িয়ে রইলাম প্রায় মিনিট পাঁচেক, যদি কোন সঙ্গী পাই। মাস্ক পরা এক কাকু মাছের থলি নিয়ে যেই ঢুকলেন, সুড়সুড় করে তাঁকে অনুসরণ করলাম। থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালেন ভদ্রলোক, অতঃপর আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলেন, কি চাই? এইরে অনুপ্রবেশকারী ভাবল বোধহয়। চটজলদি বললাম, কুত্তায় আমার হেব্বি ভয়। আর যে ভাবে চিল্লাচ্ছে।পরিণাম এই হল, যে বাকি পথটা কাকু আমাকে কুকুরের ল্যাজ পুরাণ বোঝালেন।
আজকাল মাঝ রাতে উঠেও বাসন মাজি। খেয়ে উঠে আর ইচ্ছা করে না। ঘুমও তো আসে না ছাই। গতকাল রাত তিনটেয় ঘুমিয়েছি। রাতে ঘুম না এলেই বিকট খিদে পায়। পেট ভর্তি, তবু খিদে পায়। গতকাল সাড়ে বারোটার সময় উঠে, অবশিষ্ট রুটিটা মাখনচিনি দিয়ে খেয়ে ক্যাসারোলটা মেজে রাখলাম। ঠিক টের পায় শৌভিক। আমি ঘর থেকে বেরোলেই, পিছন থেকে জলদ গম্ভীর ধমক ভেসে আসে, “অ্যাই! কি খেতে যাচ্ছিস?” নিজের বাড়িতেও চোরের মত থাকতে হয় শা-
বাসন মেজে মেজে নখগুলোর অবস্থা খারাপ। মা দেখি নেলপালিশ পরেছে। আজ সকালে ভিডিওকল করতে গিয়ে দেখতে পেলাম। চীনের মুণ্ডপাত করছিল মা তখন, বিশেষতঃ চীনেদের খাদ্যাভাস নিয়ে মা দেখলাম বিশেষ বিব্রত এবং রাগাম্বিত। যে সব জিনিসপত্র চীনেরা খায় বলে মায়ের ধারণা দেখলাম, তা সোশাল মিডিয়ায় লিখলে চীন নির্ঘাত আমার নামে মানহানির মামলা ঠুকবে। কোন উৎসব, অনুষ্ঠানে তো পরে না, আজ হঠাৎ নেলপালিশ পরলে কেন? মা লাজুক হেসে জানাল, “ঐ তুই কিনে পাঠিয়ে দিয়েছিস। ” অনলাইন মাসকাবারির সাথে মাস কয়েক আগে মায়ের আবদারে একটা ল্যাকমের নেলপালিশ অর্ডার করেছিলাম বটে। সেটা শুকিয়ে যায়নি? ব্যাণ্ড এবং রঙটাও মা’ই ঠিক করে দিয়েছিল, লাল অথবা মেরুন। আজন্ম এই দুটি রঙই মায়ের পছন্দ। কেনে, কেনার পর আর রঙটা ভালো লাগে না, ফেলে রেখে শুকোয়। পরেছে দেখে আশ্বস্ত হলাম। রঙটা পছন্দ হয়েছে তাহলে? কপাল কুঁচকে মা জানাল, মোটেই না। কেমন যেন কেল্টে কেল্টে রঙটা। জানতে চাইলাম, তোমার কোন নেলপালিশ কোনদিন পছন্দ হয়? জবাব পেলাম, “তুই যেগুলো পরিস ঐ রঙগুলো পছন্দ হয়। তবে ওগুলো আমায় মানাবে না। ” আমি যেন কি পরি? বাঁ হাতের তর্জনী, মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে লেগে থাকা হাল্কা আভা আর পায়ের আঙুলে খাপছাড়া ভাবে লেগে থাকা রঙ মনে করায় সপ্তাহ দুয়েক আগেও বেশ শৌখিন ছিলাম আমি-
আজকাল রান্না করতে করতে যা পাই মুখে লাগিয়ে নি। সকালবেলা টক দইয়ের কৌটটা মাজার আগে অবশিষ্টাংশ লাগিয়েছিলাম মুখে। বিকালেও তুত্তুরী বলছিল, “মা তুমি চুরি করে মাখন খেয়েছ? তোমার গায়ে মাখন মাখন গন্ধ কেন?” সত্যিটা চেপে যাই। দুর্দিনে খাবার জিনিস গায়ে মাখলে খুব রেগে যায় শৌভিক। কদিন আগে একচামচ টক দইয়ে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে গায়ে মেখেছিলাম বলে খুব অশান্তি হয়েছে বাড়িতে। ভালো করে ধোওয়া সত্ত্বেও তোয়ালে এবং কাচা জামায় লাগছিল হলুদ রঙ। জামাকাপড় কাচার ওপর শৌভিকের মনোপলি আছে। ওয়াশিং মেশিনে হাতও দেবার অধিকার নেই আমার। কুকমি না এভারেষ্ট কার যেন ছিল হলুদটা, ভুলে গেছি, এত পাকা রঙ, শৌভিক ঘষে ঘষেও তুলতে পারেনি তোয়ালে থেকে। তাই আজকাল আর হলুদ মাখি না। তবে অন্য অনেককিছু মাখি যা শৌভিক টের পায় না। যেমন সন্ধেবেলা তরকারিতে দেবার জন্য টমেটো ঘষে তার ছালটা ঘষে ছিলাম মুখে। প্রথম দিকে বেশ চিড়বিড় করছিল, তারপর কাজের চাপে যথারীতি ভুলেছি ধুতে। এখন মুখ ধুতে গিয়ে বেশ জ্বালা করছে। নাঃ টমেটো নির্দোষ, দোষ আমার হাতের। লঙ্কা কুচিয়ে ভুলে গেলে যা হয়। নাঃ বেশ জ্বলছে, নাইটক্রীমের বোতলটা নিয়ে শৌভিককেই ধরি, যদি একটু মুখে লাগিয়ে দেয়-
No comments:
Post a Comment