Monday, 19 June 2023

অনির ডাইরি ২১শে মে, ২০২৩

 

#অনিরডাইরি #কাঁথি_থেকে_তমলুক 


আজ বেরতে একটু দেরি হয়ে গেছে। বেশি না, মিনিট কতক। তবে প্রিয় লাল বাসটা যে এতক্ষণে ভাগলবা হয়ে গেছে তা বুঝতে নূপুর বাবু বা আমার কোন সমস্যা নেই। আরেকবার পরিচয় করিয়ে দিই, নূপুর বাবু হলেন মহকুমা শাসকের সরকারি বাহন চালক। এই নিয়ে নয় জন মহকুমা শাসককে সওয়ারি করাচ্ছেন ভদ্রলোক। আমার এই বাসে করে অফিস যাওয়াটা কিছুতেই গলদ্ধকরণ করতে পারেন না ভদ্রলোক। প্রায়ই বলেন, " চলেন তো ম্যাডাম, আপনাকে অফিসে ছেড়ে দিয়ে আসি। স্যার তৈরি হতে হতে চলে আসবনি-"।  সেটা হতেই পারে, কারণ আমি যখন নাকে মুখে গুঁজে বাস ধরতে দৌড়াই, তখনও স্নান করতেই ঢোকে না শৌভিক। বাস্তবে যদিও ব্যাপারটা ওই জল্পনা কল্পনার স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। সত্যি সত্যি রূপশ্রী বাইপাসের লক্ষণ রেখা অতিক্রম করার দুঃসাহস নূপুর বাবু বা আমার হয় না। 


 প্রায় দশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি, একটাও বাসের দেখা নেই। প্রতি দেড় মিনিট অন্তর নূপুর বাবু এসে জিজ্ঞাসা করছেন, "ম্যাডাম এসি চালিয়ে দেব?"  অথবা, " চলুন ম্যাডাম বেরিয়ে পড়ি। উত্তমকে একটু এগিয়ে আসতে বলে দিন। মাঝপথে নেমে পড়বেন।" প্রস্তাব খানা লোভনীয় হলেও উত্তমের দৈনন্দিন রুটিন আমার অজ্ঞাত নয়। ঘড়ি বলছে, উত্তম এখন সাইকেলে চাপিয়ে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর ফিরে পুকুরে ডুব গেলে, চাট্টি ভাত খেয়ে ডিউটি করতে বেরোবে। আমার ফোন পেলে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে পড়বে হয়তো, তবে ভাত আর জুটবে না ছেলেটার। এক প্যাকেট বিস্কুট চিবোতে চিবোতে চলে আসবে। আগে বলে রাখলে হত হয়তো, এই মুহূর্তে ও পথে না এগোনই ভালো।


তীর্থের কাকের মত রাজপথের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম। আচমকা নূপুর বাবু ইশারায় ডাকলেন। বাসের টিকিও দেখা যাচ্ছে না, তাহলে খামোখা নামব কেন? ভাবতে ভাবতে ঝোলাঝুলি সমেত নেমেই পড়লাম। উল্টো দিক থেকে একটা মেরুন রং এর অলটো গাড়ি এসে থেমেছে, তারই ড্রাইভারের পাশের দরজাটা খুলে ধরে আমায় ডাকছিলেন নূপুর বাবু। শাটল ট্যাক্সিতে আগেও চড়েছি, মনটা খুশি হয়ে গেল। এই পথে শাটল পাওয়া মানে নিরুপদ্রবে অল্প সময়ে অফিস পৌঁছে যাওয়া।


তবে এটা সত্যিই শাটল, নাকি নূপুর বাবু ম্যাডামের সুবিধার্থে কারো গাড়িতে জোর করে তুলে দিলে, জানতে গাড়ির চাকা গড়াতেই প্রশ্ন করলাম, "আরো যাত্রী নেবেন তো?" ড্রাইভারের বয়স পঞ্চাশের খারাপ দিকে। দোহারা চেহারা, পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া গাত্র বর্ণ, মাথা জোড়া চকচকে টাক। ঝোড়া গোঁপ, সম্ভবত কলপ করা, কারণ গালে সদ্য জন্ম নেওয়া দাড়ি গুলি সবই সাদা। পরণে বেগনি রঙের ঢোলা প্যান্ট আর কনুই অবধি গোটানো পার্পল রঙের ফুলহাতা শার্ট। ভদ্রলোক মিনমিন করে বললেন," বেশি লোক নেব না। যদি কেউ ওঠে তো ভালো না হলে এমনিই বেরিয়ে যাব।"

খড়গপুর বাইপাস, রুপশ্রী মোড়ে বার কয়েক হর্ন বাজালেন ভদ্রলোক, সামান্য ধীমে হল গতি কিন্তু কেউ হাত দেখাল না। গাড়ি আবার ছুটল। নাচিন্দা ছাড়াতে না ছাড়াতেই নামলো বৃষ্টি। মিহি জলকণায় ঢেকে গেল গাড়ির কাঁচ। দু-চারটে  দুষ্টু জলকণা ভিতরে এসে ভিজিয়ে দিল আমাকেও। ওয়াইপার চালাতে চালাতে ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, "জানলা তুলে, এসি চালিয়ে দিব ম্যাডাম?" সজোরে মাথা নেড়ে না বললাম। ভদ্রলোক আবার প্রশ্ন করলেন, "অফিস যাচ্ছেন তো? নিমতৌড়ি নামবেন মানে নিশ্চয়ই সরকারি দপ্তর। আমিও সরকারি অফিসেই গাড়ি চালাই। এই গাড়িটায় কে চড়ে জানেন?" নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করে নিলাম। শুনলাম জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের কোন বড় পদাধিকারী চড়েন। মূলতঃ পশ্চিম মেদিনীপুরেই চলে গাড়িটা। আধিকারিক ছুটিতে থাকলে টুকটাক ভাড়া খাটে গাড়িটা। তেমনি ভাড়ায়  কাউকে দীঘা ছাড়তে এসেছিলেন ভদ্রলোক।


ভালো শ্রোতা হিসেবে বোধহয় নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম, ভদ্রলোক জানালেন অনেকদিন ধরে গাড়ির লাইনে আছেন। বর্তমানে ওনার ছটা না নটা যেন গাড়ি, দুই ছেলে তারাও গাড়ি চালায়। সবকটা গাড়িরই কম বেশি বাঁধা খদ্দের আছে। 

বৃষ্টি থেমে গেল অচীরেই। কালিনগরের খাল পেরোলেই দুদিকে চোখ জুড়ানো সবুজ ধান ক্ষেত। মাঠ থেকে উঠে আসা ভিজে হাওয়ায় ঘুমে ঝুলে আসছে চোখ, তাও সজাগ হয়ে বসে আছি, যেহেতু গাড়িতে অন্য কোন সহযাত্রী নেই। ভদ্রলোকের এর মধ্যে বেশ কয়েকটা ফোন এল। কেউ বোধহয় ক্ষীরপাইয়ের ওদিকে ডাক্তার দেখাতে যাবেন, তাঁর এই গাড়িটাই চাই। ড্রাইভার ভদ্রলোক জানালেন ওনার মেছেদা বা কোলাঘাট ঢুকতে অন্তত আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে। ততক্ষণ সওয়ারি কেন অপেক্ষা করবেন খামোখা, বরং অন্য বিশ্বস্ত কোন গাড়ি খুঁজে দিচ্ছেন উনি তার গাড়িতেই যান। তবে ভাড়া বেশি লাগবে। যেহেতু যাওয়া আসা দুটোই। ওদিকের ভদ্রলোক বোধহয় নিমরাজি হলেন।


এবার শুরু হল মেচেদা বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন ড্রাইভারকে ফোন করা। "এই ইয়াসিন, এই রবিউল, এই শাকিব ভাড়া যাবি?" যা বুঝলাম, কেউই যেতে রাজি হল না। ভদ্রলোক নশো টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে বারোশো টাকা অবধি ভাড়া বাড়ালেন, তাও কোন লাভ হল না। ইতিমধ্যে অপেক্ষমান সওয়ারি বেশ কয়েকবার ফোন করে তাগাদা দিয়ে ফেললেন।


যদিও পাকা ড্রাইভার, রাস্তাও ফাঁকা, তবুও এইভাবে এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে, এত হিসেব-নিকেশ ঠিক সহ্য হচ্ছিল না আমার। শেষে থাকতে না পেরে বলেই ফেললাম, "আপনি বরং গাড়িটা দাঁড় করিয়ে কথা বলে নিন।" ভদ্রলোক জিভ কেটে বললেন, " না,না ম্যাডাম। আপনার অফিসে পৌঁছাইতে দেরি হয়ে যাবে। চিন্তা করবেননি, আমি সেই ১৯৮৩ সাল থেকে গাড়ি চালাচ্ছি। তখন ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। উনি একবার কোলাঘাটে এসেওছিলেন সেই সময়। আমি তখন কত আর, খুব জোর বছর ১৫। পুলিশের পাইলট ভ্যান চালাই। তখন সব গাড়ি পেট্রোলে চলত। পেট্রোলের দর কত ছিল বলুন তো?"


নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করে নিলাম আবার। ১৯৮৩ সালে পেট্রোল কাকে বলে, তাই জানতাম না আমি। উনি হেসে বললেন, " তিন টাকা/লিটার। ভাবতে পারেন?"  তিন টাকা লিটার পেট্রোল যদিও বা ভাবতে পারি, মাত্র ১৫ বছর বয়সে পুলিশের পাইলট ভ্যান চালানো সত্যি কল্পনা করতে ব্যর্থ হলাম। সে কথা বলাতে উনি হাসলেন।" ল্যাখাপড়া তো তেমন শিখিনি ম্যাডাম। ১২ বছর হতেই আব্বা নিয়ে গিয়ে মেছেদা বাসস্ট্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে এল। বলল, ' গাড়ি ধুবি।আর সুযোগ পেলেই চালাবি।' তাই করতাম। মাঝে মাঝে এক আধবার স্টিয়ারিং ধরতে পেতাম। সবই উপরওয়ালার মর্জি বুঝলেন তো। এই করতে করতেই প্রথমে ট্যাক্সি, তারপর ওই পাইলট ভ্যান চালানো।'


"তবে ম্যাডাম এখনকার ছেলেদের মত, কুঁড়ে ছিলুম নি। দেখতেছেন তো, ফোন করে করে কত সাধছি, একটা বুড়ো লোককে একটু ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে যাওয়ার জন্য। একটাকেও রাজি করাতে পারলুম কেমন? কত টাকার তেল পুড়বে? খুব জোর ৪০০ টাকা। ৯০০ টাকা ভাড়া নিলেও ৫০০ টাকা লাভ। তাও যাতেচ্ছে না হতভাগারা। বাসস্ট্যান্ডে বসে আছে, তাও যাতেচ্ছে না। এই ভাবে ব্যবসা হয়? 


জীবনে একটা পয়সা বাজে খরচ করিনি ম্যাডাম।যা পেতাম, সামান্য খরচ করে,বাকিটা জমাতাম। এই পয়সা জমিয়ে জমিয়ে,১৯৮৯ সালে একটা এম্বাস্যাডার গাড়ি কিনে ফেললাম। ঝকঝকে নতুন সাদা এম্বাস্যাডার। দাম পড়েছিল ৫০০০ টাকা। কি গাড়ি ম্যাডাম। জম্পেশ গাড়ি। এই সেদিন পর্যন্ত ভাড়া খেটেছে গাড়িটা। তো যাই হোক গাড়িটা কিনে পুলিশ লাইনেই দিয়ে দিলাম। অমুক সাহেব চড়তেন। এর মধ্যে হল কি, পেট্রোলের দাম খুব বেড়ে গেল। প্রায় ন টাকা/লিটার। ডিজেল তখন সাড়ে তিন টাকা/লিটার। বুদ্ধি খাটিয়ে করলাম কি, নতুন গাড়ির ইঞ্জিনটা দিলাম বদলে, পেট্রোল থেকে ডিজেল।"


তাজ্জব হয়ে বললাম, তা আবার হয় নাকি? উনি জোর গলায় বললেন," আলবাৎ হয়। আমিই করিছি। সরকারি গাড়ি তখন সব পেট্রোলে চলত, ফলে পুলিশ থেকে আমায় যে পেট্রোল দিত ওটা আমি জ্যারিকেনে করে নিয়ে গিয়ে বেচে দিতাম। আর গাড়িতে ডিজেল ভরে নিতাম। এছাড়া কিছু কেরোসিন পেতাম সেটাও বাজারে বেচে দিতাম। পুলিশের অমুক সাহেব আমাকে এত ভালবাসতেন, যে উনি রিটায়ার হবার আগে কনস্টেবল হিসেবে আমাকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ফোর্সে। হিসেব করে দেখলাম, কনস্টেবল হলে তো আর তেল চুরি করতে পারবুনি। মাইনা যা পাব, তাতে চলবে নি। তাই হাত জোড় করে বললাম,' স্যার আমায় মাফ করে দেন।' না হলে আজ ওই চাকরিটাই করতে হতো। তাহলে কি আর নিজের ব্যবসাটাকে দাঁড় করাতে পারতাম?"


এক হতভাগ্য সরকারি নৌকর হিসেবে নীরব থাকাই সমীচীন বলে বোধ হল। ভদ্রলোক আবার ফোন করতে লাগলেন। শেষমেষ বৃদ্ধকে ডাক্তার দেখিয়ে আনতে রাজি হয়ে গেল জনৈক গাড়িওয়ালা, কিন্তু বেঁকে বসলেন বৃদ্ধ সওয়ারি খোদ। উনি এই ড্রাইভারের সাথেই যাবেন। চণ্ডীপুর ছাড়িয়েছি আমরা, কোলাঘাট ঢুকতে আরো এক ঘন্টা অন্তত লাগবে। সে কথা বললেন ও ড্রাইভার দাদা, কিন্তু ওপারের বৃদ্ধ নাছোড়বান্দা। উনি প্রয়োজনের দেড় ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। 


 ফোন রেখে এক গাল হেসে ড্রাইভার দাদা কইলেন," দেখছেন তো ম্যাডাম। একবার আমার গাড়িতে চাপলে, লোকে আর অন্য কোন গাড়িতে চাপতে চায় না। সবই উপরওয়ালার দয়া। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে কি বলব! ব্যবসাটা আমি খুব ঈমানদার হয়ে করি ম্যাডাম। উল্টোপাল্টা ভাড়া চাই না। মানুষ বিপদে পড়লে অনেক সময় বিনা ভাড়াতেও গাড়ি করে নিয়ে যাই। এই তো সেদিন, তখন রাত ন'টা। ডিউটি করে বাড়ি ফেরার পথে মেছেদা স্টেশনে বসেছিলাম, এক ভাঁড় চা খাব বলে। দেখি একটা ছেলে, কি সুন্দর দেখতে। আপনাদেরই কাস্টের হবে। বছর ২৪ বয়স। উদভ্রান্তের মতন ঘুরছে, একবার এদিক, একবার ওদিক। রাতের মেছেদা বাস স্ট্যান্ড খুব ভালো জায়গা তো নয়। বেশ কিছুক্ষন লক্ষ্য করার পর ছেলেটাকে ডাকলাম, একভাঁড় চা হাতে ধরিয়ে বললাম, " বাবা। সত্যি কথা বলত, বাড়ি থেকে পালিয়েছিস তাই না?" ছেলেটা ভেঙে পড়ে বলল হ্যাঁ। বলল, বাগনানে বাড়ি। বেশ সম্পন্ন পরিবার, কাকার পেট্রোল পাম্প আছে, হাই রোডের ওপরে। বাড়ির একটাই ছেলে। মাস তিনেক হল বিয়ে হয়েছে। বউটা আন্দুলের মেয়ে। কলেজে পড়ে। প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়ি থেকেই কলেজ করত, তাতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে দেখে, এখন থেকে বাপের বাড়ি থাকবে বলে মনস্থ করেছে, পরীক্ষা না হওয়া অবধি। এই নিয়েই দুজনের ঝগড়া। বাবু বউয়ের ওপর রাগ করে, কাউকে কিছু না জানিয়ে, মানিব্যাগ,মোবাইল না নিয়েই পালিয়ে এয়েছেন।"


"অনেকক্ষণ ধরে বোঝালাম। আরো কয়েক কাপ চা-কেক- মিষ্টি খাইয়ে মাথাটা ঠান্ডা করে বললাম, 'তোর বাড়ির ফোন নম্বরটা দিবি বাপ? আর কিছু নয়, আমি কেবল একটা ফোন করে জানাব যে তুই নিরাপদে আছিস। একবার ভাব, মা কতখানি চিন্তা করছেন। বউটাও নিশ্চয়ই খুব কান্নাকাটি করছে।' কি ভাবল কে জানে, বাড়ির নম্বর দিল না বটে, কাকার ফোন নম্বরটা দিল। আমি ফোন করতে দেখি, ওদিকে হুলস্থূল কাণ্ড। সবাই মিলে ছেলেটিকে খুঁজতে বেরিয়েছে। আমায় জিজ্ঞাসা করল, ' আপনি কোথায় আছেন বলুন, আমরা এক্ষুনি আসছি।' ছেলেটার যা মানসিক অবস্থা, এসব শুনে যদি আবার পালিয়ে যায়? তখন তো আমি বিপদে পড়ব। তাই বললাম, 'না। আপনারা থাকুন। আমি আসছি।একটু সময় দেন। আগে ওর মাথাটা একটু ঠিক হোক। উঠতি বয়সের ছেলে, আপনাদের দেখলে যদি আবার পালিয়ে টালিয়ে যায়। ভরসা রাখুন, আমি বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠান্ডা করে নিয়ে যাব।' 


ছেলেটাকে নিয়ে যখন পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে বারোটা। ওর বাবা-মা তো আমাকে জড়িয়ে সে কি কান্না। জানেন, ওরা ২৫০০০ টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, আমায় পুরস্কার দেবে বলে। আমি বললাম, আমি পুরস্কারের লোভে আপনাদের ছেলেকে ফেরত আনিনি। আমি এনেছি, কারণ মানুষ হিসেবে মনে হয়েছে সেটাই আমার কর্তব্য। আমাকে কেবলমাত্র তেলের দামটা দিন। কারণ ফিরে যেতে হবে তো।' বিশ্বাস করবেন নি, ম্যাডাম ওরা আজও যোগাযোগ রাখে। বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হলেই ছেলেটা আমায় ফোন করে।" 


দেখতে দেখতে আমার অফিস এসে গেল। ভাড়া দিয়ে নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে। ভদ্রলোক যদিও জোরাজুরি করছিলেন, অফিস অবধি ছেড়ে আসার জন্য। জানালাম তার দরকার নেই। রাস্তার ওপারে অপেক্ষা করছে উত্তম কুমার। গাড়ি থেকে নেমে নিজেই দরজা খুলে দিলেন ভদ্রলোক, হাত দেখিয়ে রাস্তা পার করে দিলেন আমাকে। কি বলব বুঝতে পারলাম না, একই মানুষের মধ্যে যে কত বৈচিত্র থাকে। ভাগ্যে এই চাকরিটা পেয়েছিলাম না হলে কত অভিজ্ঞতা থেকে যে বঞ্চিত হতাম।

No comments:

Post a Comment