Wednesday 31 July 2019

অনির ডাইরি ৩০শে জুলাই, ২০১৯

প্রতিটা দিন, শুরু হয়, ঠিক একই রকম ভাবে। সেই ঘুম জড়ানো ভারি চোখ, মনের মধ্যে সুপ্ত ইচ্ছা, আজ বেশ রবিবার। আর তারপর? ট্রেনে বিক্রি হওয়া মুচমুচে কচুভাজার মত ঝাল-নুন ছিটোতে থাকে জীবন।
সকাল ১১টা- “ম্যাডাম, কাল তারা এসেছিল। ঠিক আপনার অসাক্ষাতে। পাক্কা দেড় ঘন্টা ধরে, কি চিৎকার। বলেছে, এবার বেনিফিশিয়ারিদের এনে, আপনার চেম্বারে বসিয়ে বিক্ষোভ দেখাবে?”

“মানে? আমার ঘরে লোক ঢোকাবে? কে ভাই, সেই মহাপুরুষ? ঘরে লোক ঢোকাতে চাওয়াটা দেখছি গাঙ্গেয় হুগলীর মুদ্রাদোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সকাল ১১টা ১৫-  প্রবল ইচ্ছে করছিল বরকে ফোন করে নালিশ করতে,কিন্তু সক্কাল সক্কাল কাউকে ভুঁড়ি নাচিয়ে হাসাতে চাই না। তাই তীব্র ইচ্ছে দমন করে, তাঁকে ফোন লাগালাম, যাঁর ভয়ে আমার তিন তিনটে ইন্সপেক্টরের মুখ কালো হয়ে আছে। ব্যাটারা আবার বলছিল,আমায় নাকি ট্রেনিং করে রোগা এবং কালো লাগছে। ফোনটা বেজে গেল, যাই হোক।

১১টা ৩০- “ম্যাডাম, আঠারোটা ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হয় হারিয়ে গেছে।”
- মানে? কোথায় গেছে? বেড়াতে? ১৮জন একসঙ্গে বেড়াতে গেল? খুঁজেছো? “ম্যাডাম শুভজিৎ ধীমানকে দিয়েছিল।” “না ম্যাডাম আমায় দেয়নি। আমায় দিলে আমি কোনদিন হারাই? আমি সব গুছিয়ে রেখেদি কি না বলুন?  নির্ঘাত রমেশকে দিয়েছিল।” “বাঃ তা শুভজিৎ, রমেশ  এণারা সব কোথায়?” “শুভজিৎ পুজো করছে।” মানে? “ছুটি নিল যে, হোয়াটস্অ্যাপে।” বাঃ। তা ফাইলগুলো দিয়ে কি ধুনো দিচ্ছে?” “ম্যাডাম আমি কতবার বলেছি, আমায় দিতে, আমি সব গুছিয়ে রাখি।” ঝগড়া থামাবে তোমরা? আমি বলে সদ্য শিখে এলাম-নো ব্লেম গেম- নো স্কেপগোট। কোথায় কোথায় খুঁজেছো? চল আমার সামনে খুঁজবে চলো।

১২টা- “হ্যালো ম্যাডাম,আপনি ফোন করেছিলেন, সরি আমি ধরতে পারিনি, একটু ইয়ে করছিলুম। ”
“বেশ করছিলেন। আরে আয়াম সরি, আপনি আমার অসাক্ষাতে আমার অফিসে ডেপুটেশন দিয়ে গেলেন, আমি থাকতে পারলুম না। আপনি একাই আমার তিন তিনজন ইন্সপেক্টরকে আমার অসাক্ষাতে চমকে গেলেন, হ্যাঁ গো,তা আপনারা নোটিশ দিয়েছিলেন? কই দেখিনি তো? মারের আগে ধাক্কা তো দেবেন?”
- “কি যে বলেন ম্যাডাম। আপনাদের সঙ্গে আমার কত ভালো সম্পর্ক। আপনারা কত হেল্প করেন।” “তাই বলে ওসব ছেলেপিলে ঢোকানোর গল্প করে যাবেন? আমি না হয়, মজা পেয়েছি,তবে,আমি আর কদ্দিন বলুন তো। এবার ট্রেনিং এ পাঠাক, আমি আর ফিরব না। ”
“হেঃ হেঃম্যাডাম আপনাকে যেতে দিলে তো।রাগ করছেন কেন? ও তো কথার কথা।  ওসব একটু বলতে টলতে হয়। বুঝলেন কি না। আপনি ট্রেনিং এ ছিলেন, তাই দেখা হল না। আপনি মিষ্টি খেতে চেয়েছিলেন, এবার গেলে নিয়ে যাব। রাগটাগ করবেন না। ”
১২টা৩০- “সঞ্চিতা,চিন্তা নেই,অমুক বাবু মিষ্টি নিয়ে  আসছেন। ছেলেপিলে আনছেন না। এই, তুমি পাহাড়ে চড়ে কি করছ?” “ফাইল খুঁজছি ম্যাডাম। আপনি বললেন তো। ” তাই বলে ধুলোর পাহাড়ে কে চাপতে বলল। শেষে বস্তা চাপা পড়ে মরবে নাকি?” “না ম্যাডাম, এই দেখুন ছটা ফাইল পেয়েছি। বাঃ গুড গার্ল। ধীমান-কৌশিক কিছু শেখো মাইরি তোমরা। সঞ্চিতা আমার একাই দশ শ।” “ম্যাডাম, দাঁড়ান। কাল আমি ময়দানে নামব। সব বস্তামস্তা বিদেয় করে ছাড়ব। ধুলোর আখড়া যত। ”
১। ৩০- রমেশ তোমাকে যে ফাইলটার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেটা রেডি হয়েছে? “ শুনুন না ম্যাডাম, আমি সব গুছিয়ে সঞ্চিতা ম্যাডামকে দেখিয়ে ফাইলটা রাখলাম, আর খুঁজে পাচ্ছি না। ” বাঃ। উনিশ নম্বর। সাত দিন। মাত্র সাতদিনের জন্য ট্রেনিংএ গেছিলামরে বাপ, তোমরা তার মধ্যে আর কি কি হারিয়েছো? একটা লিস্ট করে দাও হ্যাঁ। বার বার আমি জানতে চাইব, তোমরা এক এক করে শোনাবে,~ কাঁহাতক সহ্য হয় বাপ?

২। ৩০- “হ্যালো ম্যাডাম, চিঠি পেয়েছেন?  “আবার? আর কত চিঠি লিখবেন অমুক বাবু? আমি চাপা পড়ে যাব যে।ডিসপিউট চলছে তো। একটু ভরসা রাখুন না। উল্টো পার্টিকেও একটু ভাবতে দিন। এভাবে পত্রাঘাত করলে খেপে যাবে না? ” “না ম্যাডাম। চিঠি আমারই। তবে আইনটা আলাদা।” “ওরে বাবা, আবার নতুন আইন পড়াবেন?”

৩। ৩০-“হ্যালো সুকন্যা। এই আইনে কাজ করেছো?” “হ্যাঁ। ” বাঃ। সাধে কি তোমায় ফোন করি। শালা সবজান্তা মাইরি। এবার বলো দেখি সোনামণি কি করতে হবে। ” “পড়ে দেখ। ” ছিঃ এমন করে দর বাড়াতে আছে? পড়েছি তো। বুঝতে পারলে আর তোমার কি প্রয়োজন। বলো না বাপ-।”

৪টে- “হ্যালো অমুক বাবু, শুনুন। আপনার এই পাঁচ গণ্ডা চিঠির ওপর আরো গুটি ছয়েক অ্যাপ্লিকেশন লাগবে। ফর্মটা এসে নিয়ে যাবেন।” “ আরো ছয় কপি? আমায় যে অমুক বলল-”। “ধুর বাবা। আপনাকে কে বলেছে জানি না, আমায় খোদ আইনের বই বলেছে। জ্যান্ত সরস্বতী বাবা। ভুল বলে না। এবার দয়া করে,আপনি আসুন। আর একদম চিঠি লিখবেন না। ”

৫টা৩০-“দিদি, কাল আসব।” “আচ্ছা। কেন বলো তো?” “সেই যে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টের কেসটা-”।  “অ্যাঁ? কোন কেস? কে কাকে হ্যারাজ করল। ধুর বাবা, মনে পড়ছে না কেন?” “না। না। দিদি, হ্যারাজমেন্ট অ্যাট ওয়ার্ক প্লেস অ্যাক্টটা নিয়ে বলতে বলেছিলাম না, রেকর্ড করে নেব। ” ওঃ। বাঁচলাম।

এইভাবেই অর্ধেকটা দিন কেটে গেল, এবার বোধহয় বাড়ি যাবার পালা। সেখানে আবার অঘটনঘটনপটিয়স তথা তাঁর কন্যা, কি পাকিয়ে রেখেছেন কে জানে? তবে সে তো অন্য গল্প। আপাততঃ অনেক হয়েছে বাপ। বাড়ি যাই।

No comments:

Post a Comment