Friday 2 August 2019

অনির ডাইরি, ২রা আগস্ট, ২০১৯


ধনিয়াখালির শ্যামল আহেরী ছিলেন পেশায় রঙ মিস্ত্রী।বেশ কিছুদিন আগের কথা, হরিপাল থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন, বসেছিলেন জানলার ধারে। ভাবতেও পারেননি, দিনের শেষে দুটি বাসের রেষারেষি রাতারাতি বদলে দেবে ওণার জীবন। স্বচক্ষে  প্রত্যক্ষ করেছিলেন, কিভাবে ওণার ডান হাতটা কেটে  পড়ে মাটিতে। খবরটা তৎকালীন স্থানীয় সংবাদ পত্রেও ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। বাসওয়ালারা তাই বলে শিক্ষা নিয়েছে, বা রেষারেষি বন্ধ করেছে,এমন ভেবে বসবেন না কিন্তু।

হ্যাঁ, বন্ধ হয়েছে বটে, তবে সেটা হল শ্যামল বাবুর উপার্জন। সেই থেকে বেরোজগার হয়ে বাড়িতে বসে। কি ভাগ্যি আমাদের নির্মানকর্মী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতে বসা এসএলও দিদির মুখে শোনেন, অঙ্গহানি, বিশেষ করে একটা হাত কাটা গেলে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

সেই থেকে আমাদের ধনিয়াখালি শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্রে ওণার আনাগোনা। ফর্ম দিয়ে সব বুঝিয়ে দেন ইন্সপেক্টর বাবু। সেই মত জমা ও করে দেন শ্যামল বাবু। ইতি মধ্যে বদলে গেছে বেশ কিছু নিয়মকানুন। সেই মোতাবেক নতুন ওয়েবসাইটে ওণার ডিটেলস্ তোলা হয়, নতুন পোর্টালটি আবার আধার নম্বর ধরে মেলায়, এই আধারনম্বরের মালিকের অন্য কোথাও বই নেই তো। অন্য কোথাও থেকেও অনুরূপ সুবিধা পাচ্ছেন না তো? সারা পশ্চিমবঙ্গের এক দেড় কোটি নথিভুক্ত মানুষের অগুনতি ডেটার সাথে তুল্যমূল্য বিচার করতে লেগে যায় বেশ কিছুদিন। যতদিন না পোর্টাল বলছে ইউনিক কেস, ওণার সামাজিক মুক্তি কার্ড জেনারেট করতে পারে না ইন্সপেক্টর। কার্ড যখন জেনারেট হল,ততোদিনে বেজে উঠেছে নির্বাচনের দামামা। ফলে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয় শ্যামল বাবুকে। ক্রমশই অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকেন উনি। প্রায়ই চলে আসতেন ইন্সপেক্টর সাহেবের কাছে, সাহেব বলতেন,“ধৈর্য ধরুন। ” কতদিন ধৈর্য ধরে থাকা যায়? মাথা গরম করে দু চার কথা শুনিয়ে বসতেন শ্যামল বাবু। বেচারা ইন্সপেক্টর আমার কপাল বৈগুণ্যে ঝাড় খেত।

 যাই হোক, সবুরে মেওয়া ফলেছে। সম্প্রতি সামাজিক সুরক্ষা যোজনায়  অঙ্গহানির জন্য ১লক্ষ টাকা পেয়েছেন শ্যামল বাবু।  আপাততঃ মধুরেন সমাপয়েৎ। ধনিয়াখালি শ্রমিক কল্যাণ সহায়তা কেন্দ্রে এসেছিলেন,ইন্সপেক্টর শ্রী চঞ্চল মণ্ডলকে ধন্যবাদ জানাতে। বার বার বলে গেছেন শ্যামলবাবুর চোখে “ইঞ্চপেক্টর বাবু” সাক্ষাৎ ভগবান।

চঞ্চল ঝাড়টা বেমালুম হজম করে গেলেও এত প্রশংসা বোধহয় হজম হয়নি, পেটরোগা ভালোমানুষ ইন্সপেক্টর আমার। ম্যাডামের বড়ই অনুগত। শ্যামল বাবুকে ধরে এনেছিল আমার কাছে। “অনেকটা দেখ আমি বাড়ছি মামি” সুলভ ভঙ্গীতে। খুব খুশি হলাম শ্যামল বাবুর সাথে প্রত্যক্ষ আলাপে। শ্যামল বাবু কি বললেন জানেন? ওণার জবানীতেই লিখি,“খুব উপকার হল স্যার/ম্যাডাম।বড় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম গো। এখন আবার বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাচ্ছি। ” আমরা এএলসি ইন্সপেক্টর যদিও পইপই করে বললাম, টাকাটা বুঝে খরচ করতে। শ্যামল বাবু জানালেন, উনি একটা দোকান দিতে চান। অনেক শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য শ্যামল বাবু। ভালো থাকুন।
আর হ্যাঁ, দিনের শেষে আমাদের(এএলসি-ইন্সপেক্টর-সিকেসিও-এসএলও) সান্ত্বনা এই যে, আমরা অন্তত একজন বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।

No comments:

Post a Comment