অনির ডাইরি ১৯শে জুলাই, ২০১৯
মুণ্ডুখোলার নাম শুনেছেন? কি ভাবছেন কোন জায়গার নাম? আজ্ঞে না মশাই, মুণ্ডুখোলা হল একটি ব্যাঙ্কের নাম। ব্রাঞ্চ নয় কিন্তু। নামটাই মুণ্ডুখোলা ব্যাঙ্ক। তো কথা হচ্ছে আহাম্মদপুর , জিরাট নিবাসী বারীণ বাবুর কি যে মতিগতি হয়েছিল, উনি অ্যাকাউন্ট খোলার আর কোন ব্যাঙ্ক খুঁজে না পেয়ে, অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন এই মুণ্ডুখোলা ব্যাঙ্ক। নিজের,স্ত্রীর তথা তৎকালীন অবিবাহিতা কন্যারও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন এই ব্যাঙ্কে। কি মুণ্ডুখোলা প্রীতি মাইরি বারীণ বাবু আপনার।
উনি প্রাইভেটে সিকিউরিটির কাজ করতেন, স্ত্রী বাড়িতে বসে ব্লাউজ শায়া বানাত। সময়মত দিলেন মেয়ের বিয়ে দিয়ে। তারপর ঐ আর কি, “বুড়োবুড়ি দুজনাতে মনের সুখে থাকত, বুড়ি বসে তামাক সাজত, বুড়ো বসে কাশত। ” বারীণ বাবুর পেনশন,পি এফ আমাদের তৎকালীন সাসফাউ কিছুই ছিল না। তবে ওণার বউয়ের একখানি বই ছিল বটে।
এহেন শ্রীমতী জ্যোৎস্না পাল হঠাৎ করো আক্রান্ত হলেন কর্কট রোগে। ঘটি বাটি বেচে চিকিৎসা তো হল,শুধু প্রাণটাই যা বাঁচল না। বেচারা বারীণবাবুর নুন আনতে পান্তা ফোরায়। সেই সময় গ্রামের কালেক্টিং এজেন্ট দিদি বললেন,“ তোমার বউয়ের একখানি বই ছেল না? জমা টাকা তো পাবেই, আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবে তো গো। ”
মুস্কিল হচ্ছে জ্যোৎস্নাদেবী নমিনি করে গেছেন তাঁর কন্যাকে। মেয়ে থাকে কলকাতায়।তার এত ঘোরার সময় বা প্রয়োজন কি? প্রয়োজন তো বারীণ বাবুর। মেয়েকে দিয়ে সই করিয়ে, উনি জমা করলেন সেই ক্লেম। সময় ২০১৬। তখনও আমাদের চুঁচুড়ায় আসতে বেশ কয়েকমাস দেরী। ২০১৭সালে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা চালু হল। তার আগের সব ক্লেম আমরা অনুমতি সাপেক্ষে ঝেঁটিয়ে সাফ করলাম।
২০১৯এর গোড়ায় এসে হাজির বারীণ বাবু। আমি তো ট্যাকা পাইনি কো। বয়স্ক মানুষ কি যে বলেন বোঝাই যায় না। ভয় পেয়ে যান, নার্ভাস হয়ে যান। সর্বোপরি ওণার ব্যাঙ্ক- মুণ্ডুখোলা। ব্যাপারটা কেউই বুঝে বা বুঝিয়ে উঠতে পারি না। ইতিমধ্যে বদলে গেছে আমাদের অফিসের ঠিকানা। হয়ে গেছে অডিট। বদলে গেছে বলাগড়ের ইন্সপেক্টর। দু আড়াই বছর আগের কাগজ খোঁজা দুঃসাধ্য। সেই দুঃসাধ্যসাধন করেছে এই তিন মক্কেল। বাঁ দিক থেকে ধনিয়াখালির সিকেসিও সোমনাথ হাঁসদা, বলাগড়ের ইন্সপেক্টর দর্পনারায়ণ সাহা ওরফে আমাদের আদরের দর্প আর একদম ডানদিকে শ্রী কৌশিক মুখার্জী, আমার আরএলও ইন্সপেক্টর। পুরাণো কাগজ খুঁজে বার করে, ব্যাঙ্ককে চমকে টাকা ফেরৎ আনিয়ে। জবরদস্তি বারীণ বাবুর কন্যাকে দিয়ে সরকারী ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে তারপর সেই টাকা পাঠানো হয়েছে মেয়ের অ্যাকাউন্টে। টাকা পেয়ে বারীণ বাবু এসেছিলেন কৃতজ্ঞতা জানাতে। আজও অন্যদিনের মতই হাঁউমাউ করছিলেন, তবে গলায় বাজছিল খুশির সুর। বারীণ বাবু কতটা বুঝেছেন জানি না, তবে আমি জানি বারীণ বাবুর গল্পের নায়ক এই তিনজন। হয়তো সবটুকুই কাজের অঙ্গ,তবু যে অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে, দরদ দিয়ে এরা কাজটা করেছে, তার সাক্ষী স্বয়ং আমি । যে কোন ভালো কাজের লাইমলাইট সব সময় ওপর তলাই শুষে নেয়,আর যারা খেটেখুটে কাজটা করে তারা মিশে যায় জনস্রোতে। বেতন হয়তো বাড়াতে পারব না, পদোন্নতি বা চাকরির স্থায়ীকরণ ও করতে পারব না, কিন্তু দলপতি হিসেবে মাথার টুপিটাতো খুলতে পারি-। তাই বললাম, আয় বাপ তোদের একটা ছবি তুলেদি।
মুণ্ডুখোলার নাম শুনেছেন? কি ভাবছেন কোন জায়গার নাম? আজ্ঞে না মশাই, মুণ্ডুখোলা হল একটি ব্যাঙ্কের নাম। ব্রাঞ্চ নয় কিন্তু। নামটাই মুণ্ডুখোলা ব্যাঙ্ক। তো কথা হচ্ছে আহাম্মদপুর , জিরাট নিবাসী বারীণ বাবুর কি যে মতিগতি হয়েছিল, উনি অ্যাকাউন্ট খোলার আর কোন ব্যাঙ্ক খুঁজে না পেয়ে, অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন এই মুণ্ডুখোলা ব্যাঙ্ক। নিজের,স্ত্রীর তথা তৎকালীন অবিবাহিতা কন্যারও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন এই ব্যাঙ্কে। কি মুণ্ডুখোলা প্রীতি মাইরি বারীণ বাবু আপনার।
উনি প্রাইভেটে সিকিউরিটির কাজ করতেন, স্ত্রী বাড়িতে বসে ব্লাউজ শায়া বানাত। সময়মত দিলেন মেয়ের বিয়ে দিয়ে। তারপর ঐ আর কি, “বুড়োবুড়ি দুজনাতে মনের সুখে থাকত, বুড়ি বসে তামাক সাজত, বুড়ো বসে কাশত। ” বারীণ বাবুর পেনশন,পি এফ আমাদের তৎকালীন সাসফাউ কিছুই ছিল না। তবে ওণার বউয়ের একখানি বই ছিল বটে।
এহেন শ্রীমতী জ্যোৎস্না পাল হঠাৎ করো আক্রান্ত হলেন কর্কট রোগে। ঘটি বাটি বেচে চিকিৎসা তো হল,শুধু প্রাণটাই যা বাঁচল না। বেচারা বারীণবাবুর নুন আনতে পান্তা ফোরায়। সেই সময় গ্রামের কালেক্টিং এজেন্ট দিদি বললেন,“ তোমার বউয়ের একখানি বই ছেল না? জমা টাকা তো পাবেই, আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবে তো গো। ”
মুস্কিল হচ্ছে জ্যোৎস্নাদেবী নমিনি করে গেছেন তাঁর কন্যাকে। মেয়ে থাকে কলকাতায়।তার এত ঘোরার সময় বা প্রয়োজন কি? প্রয়োজন তো বারীণ বাবুর। মেয়েকে দিয়ে সই করিয়ে, উনি জমা করলেন সেই ক্লেম। সময় ২০১৬। তখনও আমাদের চুঁচুড়ায় আসতে বেশ কয়েকমাস দেরী। ২০১৭সালে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা চালু হল। তার আগের সব ক্লেম আমরা অনুমতি সাপেক্ষে ঝেঁটিয়ে সাফ করলাম।
২০১৯এর গোড়ায় এসে হাজির বারীণ বাবু। আমি তো ট্যাকা পাইনি কো। বয়স্ক মানুষ কি যে বলেন বোঝাই যায় না। ভয় পেয়ে যান, নার্ভাস হয়ে যান। সর্বোপরি ওণার ব্যাঙ্ক- মুণ্ডুখোলা। ব্যাপারটা কেউই বুঝে বা বুঝিয়ে উঠতে পারি না। ইতিমধ্যে বদলে গেছে আমাদের অফিসের ঠিকানা। হয়ে গেছে অডিট। বদলে গেছে বলাগড়ের ইন্সপেক্টর। দু আড়াই বছর আগের কাগজ খোঁজা দুঃসাধ্য। সেই দুঃসাধ্যসাধন করেছে এই তিন মক্কেল। বাঁ দিক থেকে ধনিয়াখালির সিকেসিও সোমনাথ হাঁসদা, বলাগড়ের ইন্সপেক্টর দর্পনারায়ণ সাহা ওরফে আমাদের আদরের দর্প আর একদম ডানদিকে শ্রী কৌশিক মুখার্জী, আমার আরএলও ইন্সপেক্টর। পুরাণো কাগজ খুঁজে বার করে, ব্যাঙ্ককে চমকে টাকা ফেরৎ আনিয়ে। জবরদস্তি বারীণ বাবুর কন্যাকে দিয়ে সরকারী ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে তারপর সেই টাকা পাঠানো হয়েছে মেয়ের অ্যাকাউন্টে। টাকা পেয়ে বারীণ বাবু এসেছিলেন কৃতজ্ঞতা জানাতে। আজও অন্যদিনের মতই হাঁউমাউ করছিলেন, তবে গলায় বাজছিল খুশির সুর। বারীণ বাবু কতটা বুঝেছেন জানি না, তবে আমি জানি বারীণ বাবুর গল্পের নায়ক এই তিনজন। হয়তো সবটুকুই কাজের অঙ্গ,তবু যে অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে, দরদ দিয়ে এরা কাজটা করেছে, তার সাক্ষী স্বয়ং আমি । যে কোন ভালো কাজের লাইমলাইট সব সময় ওপর তলাই শুষে নেয়,আর যারা খেটেখুটে কাজটা করে তারা মিশে যায় জনস্রোতে। বেতন হয়তো বাড়াতে পারব না, পদোন্নতি বা চাকরির স্থায়ীকরণ ও করতে পারব না, কিন্তু দলপতি হিসেবে মাথার টুপিটাতো খুলতে পারি-। তাই বললাম, আয় বাপ তোদের একটা ছবি তুলেদি।
No comments:
Post a Comment