ঠ্যাং খোঁড়া হয়ে বাড়িতে বসে আছি। কখন যে মচকালাম, তাও বুঝতে পারছি না। অবশ্য, এতদিন কেন যে মচকায়নি,সেটাই আশ্চর্যের। বিধাননগর স্টেশনের যে কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে লোকাল ট্রেনে চড়া বা নামার আগে বীমা থাকা অবশ্য প্রয়োজন। কি অখাদ্য স্টেশন মাইরি! কোন প্ল্যাটফর্মে কোন পাখা পাবেন না। শুধু কি তাই? কি নীচু প্ল্যাটফর্ম গুলো বাবারে। ঐ প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিদিন হাঁচোড় পাঁচোড় করে,জনা কয়েক নিত্যযাত্রিনীকে কোঁৎকা মেরে ট্রেনে ওঠা, তথা ফেরার পথে, গেট অালো করে হাওয়া খাওয়া পাবলিকদের পুনঃ কোঁৎকা মেরে, তথা নামতে না দিয়েই ঠেলে উঠতে চাওয়া যাত্রীদের গুষ্টি উদ্ধার করে ঝপাং করে নামা চাট্টি খানি কথা নয়। তাও মাঝে মাঝে আবার শাড়ি পরে। সাধের হিলস্ গুলোতে ঘরবাড়ি বানিয়েছে মাকড়সারা। বৃষ্টির দিনে পাতি চপ্পল আর শুকনো কালে স্নিকার ছাড়া গতি নেই ।
আমার যদিও ধারণা, পা মচকানোর সাথে বিধাননগরের কোন যোগ নেই। কালপ্রিট আমার কন্যা। ঘুমের ঘোরে নির্ঘাত আমার পায়ে চেপেছিল। অবশ্য তাতে আমার ঘুম কেন ভাঙল না, সেটা একটা লাখ টাকার প্রশ্ন বলতে পারেন। আমার বরের মত যথারীতি অন্য। মারুতি ৮০০র ইঞ্জিনের ঘাড়ে টাটার ট্রাক চাপালে যা হয়-। ভাবনা চিন্তা গুলোও কেমন যেন হুল ফোটানো মাইরি। বলল, আমার জন্য ছুটি নিয়েছে, একা নড়তে চড়তে পারছি না বলে, পরে বুঝলাম কারণ ম্যানচেস্টারনগর।
একে তো ঠ্যাঙ খোঁড়া হয়ে বসে আছি, তারওপর কি বিষফোঁড়া মাইরি এই হোয়াট্স অ্যাপ। কেন যে এই অফিশিয়াল গ্রুপ গুলো তৈরি হয়? হ্যাঁ গা বিতান দা, রজত স্যার, সুকন্যা আর নবীন, যত কাজ কি আজই করার ছিল ভাই তোমাদের?
পৌনে ছটা নাগাদ বাধ্য হয়েই ছাতের উদ্দেশ্য রওণা দিলাম, প্যারাসিটামলের দাক্ষিণ্যে ব্যথাটা আপাততঃ কিঞ্চিৎ প্রশমিত আর বসার ঘরে বাপ মেয়েতে যা “আপনা ধোনি আয়েগা” শুরু করেছে। বিশেষতঃ ছোটটার চিড়িংবিড়িং বেড়ে গেছে আড়াইগুণ। বড়টা তো শুধু খেলা নিয়েই মগ্ন, ছোটটা আবার খেলার সাথে সাথে যাবতীয় বিজ্ঞাপন নিয়েও সমান উৎসুক। পারলে সবই কিনে ফেলে আর কি।
হাঁটতে যে খুব একটা পারলাম তা নয়, তবে সাময়িক ভাবে সব ব্যথা সব হীনমন্যতা, অপদার্থতা বোধ ভুলিয়ে দিল আকাশ। ঘিঞ্জি, দূষিত, জনবিস্ফোরনে ক্লান্ত, ক্লেদাক্ত রোজকার শহরটা, চোখের সামনে সামান্য মেঘের প্রসাধনীতে পলকে তিলোত্তমা।এমনকি ফাঁকা বিলবোর্ডের কঙ্কাল বা ছাতে গজানো আগাছার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা কালো মেঘ আর ঝোড়ো হাওয়াও কি অপরূপ মোহময়। বারংবার এটা হয়, জানেন তো, যতবারই বিরক্ত হয়ে উঠি জীবনের প্রতি,একঘেঁয়ে লাগে সবকিছু, প্রকৃতি ততোবারই স্বতোঃপ্রণোদিত হয়ে মনে করিয়ে দেয়- বড় ভাগ্যবান আমরা। বড় সুন্দর এ পৃথিবী, বড় বেশী মোহময় এ জীবন। ভালো থাকুন আর আশ মিটিয়ে ভালোবাসুন। আকাশও বোধহয় তাই শেখায়-
No comments:
Post a Comment