Thursday 20 January 2022

অনির ডাইরি ২০শে জানুয়ারি, ২০২২

 


‘হ্যাঁ কে, অনিন্দিতা? তুমি কি অফিসে?’ অচেনা  নম্বর, অপিরচিত কণ্ঠ। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় আর কোথায় থাকব? তাই জবাব দিলাম। ফোনের ওপাড়ের ভদ্রলোক বললেন, ‘ কি আমাকে চিনতে পারছ?’ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানালাম, নাঃ, মাত্র দুটো বাক্য বিনিময় হয়েছে,এবং তার দ্বারা কণ্ঠের মালিককে চিনতে আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। তিনি মৃদু হেসে বললেন, ‘এর মধ্যেই ভুলে গেলে? আমি রসুল সাহেব।’ 

ফোন ধরা অবস্থাতেই সটান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম, ‘স্যার।’ রসুল সাহেব অর্থাৎ শ্রী আজিজ রসুল ছিলেন লেবার সার্ভিসের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। যে সব সিনিয়র অফিসারদের দেখে তথা যাঁদের থেকে আমরা অর্থাৎ অফিসার হবার তালিম পেয়েছি রসুল সাহেব হলেন তাঁদের অগ্রগণ্য। বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত, তাতে কি? শিক্ষক তো শিক্ষকই থাকেন। স্যার বলেছিলেন বটে মাঝে মধ্যে এদিকে আসেন, তখন অনুরোধ করেছিলাম, যদি একবার অনুগ্রহ করে অধমের আপিসে পায়ের ধুলো দেন। 


স্যারকে আজ আবার বললাম সেই একই কথা। যদি আসেন, একটু কষ্ট করে। শিক্ষক সুলভ গাম্ভীর্যের সাথে স্বল্প হেসে স্যার বললেন, ‘আরে আসব বলেই তো জানতে চাইছি, তোমার আপিসটা কোথায়?’ বললাম আপনি যেখানে আছেন দাঁড়ান, আমি নিজে যাচ্ছি আপনাকে আনতে। এবার বকেই দিলেন স্যার, ‘আরেঃ বাবা, তুমি কেন আসবে? তোমার গাড়িটা একটু পাঠাও।আমার ড্রাইভার খেতে গেছে। ’ কথা শুনে বুঝলাম পাশের, পাশের বিল্ডিং এই আছেন স্যার। গাড়ি তো পাঠালামই, সাথে জসূয়াকেও পাঠালাম। জসূয়া আমার ইন্সপেক্টর। এই মুহূর্তে এই আপিসে আমার পরেই সবথেকে সিনিয়র ব্যক্তি। আমি না যাই, নং ২ তো অন্তত যাক। 


সেই ফাঁকে শুভাশিস আর আমাতে ব্রেন স্টর্মিং করতে লাগলাম, স্যারকে কি দিয়ে আপ্যায়ন করা যায়। স্যার তো রীতিমত মিতাহারী, খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেল ক্যান্টিনে আজ শুধু স্যান্ডউইচ আর মিষ্টি পাওয়া যাবে আর মর্তমান কলা। কফি বললে করে দেবে বটে, তবে ওদের কফি বড় পাতলা লাগে আমার। 


স্যার এলেন, গোটা আপিস ঘুরে দেখলেন, খাবার যাবতীয় প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র চা খাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার চেম্বারে বসলেন। বারবার অনুরোধ করলাম, স্যার আমার চেয়ারে বসুন। ওটাই এ ঘরের সবথেকে উঁচু চেয়ার। শুনলেনই না। টেবিলের উল্টোদিকের বিবর্ণ ভিজিটর চেয়ারে বসলেন। একটা তোয়ালে পাততেও দিলেন না। স্যারের উল্টোদিকে উঁচু চেয়ারে বসতে ভয়ানক অস্বস্তি লাগছিল, আবার বললাম, ‘স্যার প্লিজ বড় চেয়ারটায় বসুন।’ স্যার হেসেই উড়িয়ে দিলেন,‘এখন তো আমি অবসর প্রাপ্ত, ইন সার্ভিস থাকলেও বসতাম না। তোমার চেয়ারটা তোমারই। নির্দ্বিধায় বসো।’ সাধে এই লোকগুলোকে এত ভক্তিশ্রদ্ধা করতাম আমরা। উঁচু চেয়ারে বসেও যে মাটির কাছে থাকা যায়, এগুলো এণাদের থেকেই শেখা। সাধে কি বলি, বস্ এরা আমাদের বস্ হতে শেখায়। ভালো থাকবেন স্যার। সময় পেলে আবার আসবেন। আরেকবার ঝালিয়ে নেব পুরাণ অনুশীলনী যত। 


No comments:

Post a Comment