কোন গুলো তুত্তুরীর বানানো বলুন দিকি? খুব সাবধান কিন্তু, ভালো করে দেখে বলুন আর ইয়ে মোটেই সত্যি কথাটা বলবেননি কিন্তু। বললেই গোঁসা ঘরে খিল দেবেন শ্রীমতী তুত্তুরী। এই অধম ভুক্তভোগী আজ্ঞে।
আজ আমাদের পৌষ পার্বন কিনা, পর্যায়ক্রমে গুড়ের পায়েস, নোনতা পুলি, সিদ্ধ পুলি, দুধ পুলি, রস বড়া, ভাজা পিঠে, সরু চাকলির গন্ধে সুরভিত মোদের ক্ষুদ্র গৃহ কোণ। দৌড়ে দৌড়ে সব কিছুতে হাত লাগাচ্ছিলেন শ্রীমতী তুত্তুরী। শুধু পড়তে বসতে বললেই, ছলছলিয়ে উঠছিল আঁখি দ্বয়। তাঁর নাকি 'পচন্ড' I repeat 'পচন্ড' মাথা ব্যথা করছে।
তা সেই মাথা ব্যথা নিয়েও তিনি গেলেন মাসির সাথে নোনতা পুলি গড়তে, নোনতা পুলি বোধহয় হাওড়া জেলারই বৈশিষ্ট্য। সিদ্ধ পুলির মধ্যে মিষ্টি নারকেলের পুরের পরিবর্তে আলু ফুলকপি/বাঁধাকপি মটরশুঁটির শুকনো ঝাল তরকারির পুর ভরা হয়। এক নাগাড়ে মিষ্টি খেয়ে মুখ বিস্বাদ হয়ে আসে যখন ঝাল পুলি তখন মঞ্চে নামে এবং বাকিটা যাকে বলে, 'veni vidi vici'।
মাসির অপরিসীম ধৈর্য্য, মাসি দেখিয়ে দিল, বুঝিয়ে দিল। একটা হাতে ধরে বানিয়েও দিল। তারপরও যখন শ্রীমতী তুত্তুরী পুলির পরিবর্তে একখানা মণ্ড নির্মাণ করলেন, তখন মাসি কিঞ্চিৎ উত্যক্ত হয়েই বললেন, 'তোকে আর করতে হবে না। তুই যা তো।' ওমনি আর কি, গোঁসা ঘরে পড়ল খিল। কেবল বাবা ছাড়া আর কারো অনুমতি ছিল না সেই ঘরে প্রবেশ করার। নেহাত মা'টা কোন নিয়ম মানে না, তাই না ধরে আনল আদরে সোহাগে। একবার মাসি বলে দিল তুই পারবি না, ওমনি তুইও বিশ্বাস করে নিলি যে তোর দ্বারা হবে না?মাসি না হয় তোর ভালোবাসায় অন্ধ, সারা জীবন এমন বহু মানুষের সংস্পর্শ এ আসবি, যারা আরো খারাপ ভাবে, বলবে। বলবে তুই পারবি না। বলবে তোর দ্বারা হবে না। তখন কি করবি? পালিয়ে আসবি? আরে চেষ্টা তো কর। করে তো দেখ? হলে হবে, না হলে না হবে। মহাভারত তো অশুদ্ধ হবে না। আর ইয়ে তোকে পড়তেও বসানো হবে না।
অতঃপর আবার পূর্ণ উদ্যমে পুলি বানাতে হাত লাগলেন শ্রীমতী তুত্তুরী। ভালো গুলো ওরই বানানো বুঝলেন তো, ইয়ে খারাপ গুলো, ধরে নিন আমিই বানিয়েছি না হয়। মা কালি, আমি মিথ্যে কথা বলি না-
No comments:
Post a Comment