#অনিরডাইরি #কাঁথিরকিস্যা
সাড়ে এগারোটায় বেরোনোর কথা ছিল। মাত্র নয় মিনিট লেট করেছি আমি। গন্তব্য অনেকদূর, তিলোত্তমা কলকাতা। দিন দুয়েক আগে ভূপতিত হয়েছেন শাশুড়িমাতা। সকালে উঠে চায়ের জল চড়িয়ে বাথরুমে গিয়েছিলেন। বেরিয়ে আসা মাত্রই টলে উঠেছে মাথা। শ্রবণেন্দ্রিয়ের দুর্বলতা জনিত কারণে ভারসাম্য রাখার সমস্যা ওনার আছেই। তার ওপর আছে ভার্টিগো। ফলে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার বেশ লম্বা ইতিহাস আছে অতসী দেবী থুড়ি শাশুড়ী মাতার। এই তো গত বছরেই সোফা থেকে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে এমন পড়ে যান যে অপারেশন করে পায়ে বসাতে হয় প্লেট।
সেই সময় ছেলেদের ভয়ে একজন রাতদিনের আয়া রাখতে বাধ্য হলেও তার স্থায়িত্ব ছিল বড়ই স্বল্প। শাশুড়ী মাতার বক্তব্য হল, মেয়েটি ভয়ানক অপরিচ্ছন্ন। বড় কাজ করে ফ্লাশ করে না। তার থেকেও বড় কথা হল, সে নাকি শাশুড়ী মাতার গোটা তিনেক বাটি ঝেঁপে দিয়েছে। বাটি গুলি ছিল শৌভিকের অন্নপ্রাশনে পাওয়া উপহার। উনি দাবী করেন, ওণার অধিকাংশ বাটিই নাকি জ্যেষ্ঠপুত্রের অন্নপ্রাশনে পাওয়া। দেখলে বিশ্বাস হয় না যদিও। নিজে হাতে যত্ন করে মেজে, ধুয়ে, জল ঝরিয়ে, মুছে, গুছিয়ে রেখে এসেছেন এত বছর। ফলতঃ সব কিছু ঝকঝক করে এ বাড়িতে।
মোদ্দা কথা হল ইয়ে করে, ইয়ে না করাটাও উনি হয়তো মেনে নিতেন, তিনটি বাটি নিখোঁজ হওয়াটা উনি কিছুতেই মানতে পারেননি। ফলে চাকরী গেছে বেচারীর।শুধু তাই নয়, তারপর শতানুরোধেও আর কাউকে রাখতে রাজি হননি বৃদ্ধা। বললেই বলেন, ‘আর লোক রাখলে আমি পাগল হয়ে যাব।’
বৃদ্ধ এবং তাঁর প্রিয়তমা বৃদ্ধার বক্তব্য হল,এমনিতে তো রান্না আর বাসন মাজার দিদিরা আছেন, তাঁরা রন্ধনে দৌপদী না হলেও ওণাদের পরম স্নেহ ভাজন তথা বিশ্বাসের পাত্রী। টুকটাক দোকানবাজার করে দেবারও লোক আছে। এরপরেও আর লোক রেখে কি হবে।
যাই হোক, এমনিতে হয়তো সব ঠিকঠাকই চলে। মুস্কিল হয় যখন ঘায়েল হয়ে পড়েন যুগলের কোন একজন। সেদিন যেমন শাশুড়ী মা পড়ে যাবার পর হয়েছিল। ভদ্রমহিলা আড়ে এবং বহরে শ্বশুরমশাইয়ের দেড় গুণ। দু-দুবার কর্কটরোগ আক্রান্ত হেঁপো বৃদ্ধের সাধ্য কি ওণাকে টেনে তোলেন। বৃদ্ধাকে ঐ অবস্থায় ফেলে রেখে দৌড়ে গিয়ে ফোন করলেন বাসন মাজার দিদিকে। অন্য বাড়ির কাজ ফেলে ছুট্টে এসে, প্রায় চাগিয়ে শাশুড়ী মাতাকে সোফায় তুলে নিয়ে যায় মেয়েটি। দৌড়ে নিয়ে আসে বমি করার বালতি। এক দফা বমি করেই চাঙ্গা হয়ে ওঠেন শাশুড়ী মা। মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেন অন্য বাড়ির কাজ সারতে এবং নিজে যান চা বানাতে।
পিছন পিছন ঘুরতে থাকেন শ্বশুরমশাই,‘কি গো, ঠিক আছ তো? অমন ভাবে উল্টে পড়লে কোথাও লাগেনি তো?’ বেশী প্রশ্ন করলেও চটে যেতে পারেন প্রিয়া। বেচারা শ্বশুরমশাই। সকালের অঘটনকে পিছনে ফেলে পূর্ণ বিক্রমে নৈমিত্তিক সাংসারিক কাজে লেগে পড়েন শাশুড়ী মা। টানতে পারেন না অবশ্য বেশীক্ষণ। হুড়মুড় করে গা গুলিয়ে বেরিয়ে আসে সকালের চা টুকু। এবার মুখের কাছে বালতি ধরেন শ্বশুরমশাই। দ্বিতীয় দফার বমির পর সব কাজ ফেলে সটান শুয়ে পড়েন বৃদ্ধা। ঘন্টা তিনেক অচৈতন্যের মত ঘুমান। তারপর, সব ঠিক।
ব্যাপারটা লিখতে বা পড়তে যতটা সহজ, এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়াটা মোটেই অত সহজ ছিল না। প্রতিটি ধাপে কেঁপে কেঁপে উঠেছি আমরা। কপালগুণে সেই দিনই আমার দেওরের আশার কথা ছিল দুর্গাপুর থেকে। দায়িত্ব নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে, ওষুধ এনে দেয় সেই। শ্বশুর-শাশুড়ীও সমানে জানাতে থাকেন, দিব্যি আছেন দোঁহে, হঠাৎ ঠাণ্ডা পড়ায় কেবল সামান্য বাতের ব্যথা বেড়েছে একজনের আবার হঠাৎ ঠাণ্ডা টা কমে যাওয়ায় সামান্য শ্বাসকষ্ট বেড়েছে আরেকজনের। বাড়িতেই আনিয়ে নিয়েছেন অক্সিজেন সিলিণ্ডার। ডাক্তারের সাথে কথা বলে অ্যান্টিবায়োটিকও।
সবই ভালো, শুধু মন যে মানে না আমাদের। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বড় জেদী, সহস্রবার বলা হয়েছে, আমাদের সাথে তমলুক/কাঁথিতে এসে থাকতে। বললেই মিল্টন আওড়ান বৃদ্ধ। নিজেদের সাজানো সংসার ছেড়ে নড়তে ইচ্ছুক নন কেউই। ঠিক একই কথা শুনি আমার বাবা-মায়ের মুখেও। ‘তোরা বুঝবি না, এই বয়সে নতুন করে ভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার কাজটা কত কঠিন। তোরা তোদের মত সুখে থাক, আমাদের অসুবিধা হলে তো ডাকবই।’ এর থেকেও বড় অসুবিধা/সমস্যা যে কি হতে পারে ঈশ্বরই জানেন।
গতকালও কি সব ফিল্ড ভিজিটে বেরিয়েছিল শৌভিক। তাই আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি কলকাতা। আজ তাই আর বিলম্ব নয়। শ্রীমতী তুত্তুরীর গুচ্ছখানেক প্রজেক্ট বাকি, শিয়রে পরীক্ষা। তাই তাকে রেখে যাওয়া হল। সত্যি কথা বলতে কি, একদিনে কাঁথি থেকে কলকাতা হয়ে আবার কাঁথি ফেরা বেশ পরিশ্রমসাধ্য ব্যাপার। অন্তত শ্রীমতী তুত্তুরীর পক্ষে। কাল ভোরেই আবার তাঁর স্কুল।
যে পথে নিত্য আপিস যাই, ছুটির দিনও ঐ পথে সফর করতে জাস্ট কান্না পায়। কিন্তু কাঁথি শহর ছেড়ে বেরোনোর যে এই একটিই রাস্তা। কন্টাই বাজার থেকে রূপসী বাইপাস ধরে ছুটে চলি আমরা। বাজকুল ছাড়ানোর সাথে সাথেই কাঁথি মহকুমা শেষ হয়ে শুরু হয় তমলুক।
চণ্ডীপুরের ঝাঁ চকচকে গহনার দোকানের সারি ফেলে, মকরাজপুরের নির্মীয়মান উড়াল পুলের তলা গলে নরঘাট ব্রিজ। নীচে দিয়ে কুলকুল করে বয়ে চলেছে হলদি নদী। আজ মকর সংক্রান্তি, নদীতে পূণ্যস্নানের জোয়ার এসেছে। নববধূর মত সেজে উঠেছে পাশের গঙ্গা মন্দিরটি। বিশাল মেলা বসেছে। ব্রিজের উপরে-নীচে শয়ে শয়ে লোক। মাইক্রোফোনে ভেসে আসছে বার্তা, ‘ অমুকপুরের শ্রীমান/ শ্রীমতী তমুকের কাছ থেকে ১০/২০/৫০ টাকা আমরা মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে পরম কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করছি।’ আজ্ঞে হ্যাঁ, লাখ নয়, হাজার নয়, এমনকি ৫০০ও নয়, প্রণামীর পরিমাণ ১০-৫০,তাও সোচ্ছারে জানিয়ে চলেছে মেলা কতৃপক্ষ।
এদিকে মকর সংক্রান্তি বেশ বড় উৎসব। পিঠে-পুলি- পায়েস তৈরী হবে আজ ঘরে ঘরে। দেবতাকে দেওয়া হবে অর্ঘ্য। উপোসী থাকবে শুধু আমার ঠাকুর। অন্যান্য বছর আমিও বানাই, গুড়ের পায়েস, নোনতা- মিষ্টি পুলি, দুধ পুলি,মালপোয়া, পাটিসাপটা, ভাজা পিঠে এবং সরু চাকলি। তিনদিন ধরে করার মত সময় পাই না বলে একদিনই সব বানিয়ে ধরি ঠাকুরের সামনে। এবারে আর পারব না। বাড়ি ফিরতে ফিরতেই রাত নটা বাজবে। তারপর আর কখন-। আসার আগে মার্জনা চেয়ে এসেছি, আগে মানুষ গুলোকে দেখি, পিঠেপুলি তোমাদের পরে ছুটির দিন খাওয়াব। আশা করি বুঝবে। আমার চিলতে ঠাকুর ঘরে বড়ই উদারমনা দেবদেবীদের বাস। আমি যে জন্ম কুঁড়ে, অলবড্ডে এবং অপদার্থ ওণারাও জানেন।
চলন্ত গাড়িতে মোবাইল দেখলে বড় মাথা ঘোরে। জানলা দিয়ে আর বাইরে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। আপদ রাস্তা আর শেষ হয়ই না। দরজা খুলে খুশিতে ডগমগ হয়ে যান শাশুড়ি মাতা। অতঃপর আর পাঁচজন স্নেহশীলা জননীর মতই আওড়ান,‘ বুড়োবুড়ির জন্য সেই এতটা পথ দৌড়ে এলি? কেন এলি বল তো? আমি তো ঠিকই আছি। তোর বাবা বরং বেশ কাহিল।’ অক্সিজেন নিচ্ছিলেন শ্বশুরমশাই, আমাদের গলা পেয়ে বেরিয়ে এলেন। মহানগরে আজ বড় গরম, ঘামে ভিজে গেছে আমার জ্যাকেট। পায়ে কুটকুট করছে মোজা। বৃদ্ধ এরই মধ্যে ফুলহাতা শার্টের ওপর একখানা ফুলস্লিভ পুলওভার চাপিয়েছেন। মাথায় উলের টুপি।
জ্যেষ্ঠ পুত্রের কাছে মাঝেমাঝেই আব্দার করেন বৃদ্ধ নতুন সোয়েটার বা জ্যাকেট কিনে দেবার। অ্যামাজন খুলে সেগুলো বকলমে পছন্দ আমিই করি। তবে এই সোয়েটারটা চিনতে পারলাম না। ভুষো ভুষো রঙ। বেঢপ সাইজ। মনে হচ্ছে যেন হ্যাঙারে ঝুলছে। মাথার টুপিটাও হড়কে নেমে এসেছে নাকের কাছে। শৌভিক আবার বলছিল বাবার নাকি আড়াই কিলো ওজন বেড়েছে।
জানতে চাই,‘বাবা এটা কি নতুন?’ বেজায় খুশি হয়ে বৃদ্ধ জানান সোয়েটারটা নাকি ১৯৭৪সালে কেনা। বাপরে। ওটা আমার বাবা মায়ের বিয়ের বছর। এত পুরাতন জিনিস, বেশ আছে তো। পাশ থেকে বিরক্ত শৌভিক বলে ওঠে,‘মোটেই না। এটা লেট নাইনটিজ্ এ কেনা। দিল্লী থেকে। তখন তুমি খাদি বোর্ডে ছিলে।’ নব্বইয়ের দশকের শেষে কেনা হলেও সোয়টারটার বয়স বছর পঁচিশ। সেটাই কি কম রে বাপু।
সময় এগোয়, গল্প গড়ায়। দিনরাত না হলেও শুধু একবেলার জন্য একজন আয়া রাখার জন্য পিড়াপিড়ি করি আমরা। শাশুড়ী মাতা অনড়। উল্টে উনি দাবী করেন কাজের লোকেদের অত্যাচারে উনি এবার বৃদ্ধাবাসে যাবেন। কোথায় নাকি পড়েছেন, একবারে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে দিলে আর মাসে মাসে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধাবাসে থাকা যায়। তারাই যত্ন নেবে, ডাক্তারবদ্যিও তারাই দেখাবে। সংসারের যাবতীয় কাজ তারাই করে দেবে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এক্কেবারে ঝাড়া হাত পা হয়ে থাকতে পারবে। এত্ত সুবিধে তাও শ্বশুরমশাই কেন যে রাজি হচ্ছেন না।
হাসি চাপতে গিয়ে চোখে জল এসে যায় আমার। শ্বশুরমশাই মুখ নীচু করে হাসেন আর প্যাঁচার মত মুখ করে তাকিয়ে থাকে শৌভিক। বৃদ্ধার মস্তিষ্কে এমন সব পরিকল্পনা আসতে যেতেই থাকে। যত উৎপটাং খবরাখবর কেবল ওণার চোখেই পড়ে, তারওপর ভিত্তি করে নানা আজব পরিকল্পনা করেন এবং আশা করেন তাতে উনি বাড়ির লোকেদের সম্মতি এবং সহযোগিতা পাবেন। যথারীতি যখন কাউকে পাশে পান না, মনের দুঃখে ওণার পেটেন্ট নেওয়া সংলাপটি আওড়ে গোঁসা ঘরে খিল দেন, ‘বেঁচে থেকে আর লাভ নেই’। অনেকবার ভেবেছি তুত্তুরী উবাচের মত ধারাবাহিক ভাবে, শাশুড়ী উবাচ লিখতে শুরু করি, নেহাৎ সাহসে কুলোয় না আর কি।
বেচারা শ্বশুরমশাই সোচ্চারে হাসতেও পারেন না। প্রিয়ার অভিমান বড়ই মর্মন্ত্তদ। উঠে গিয়ে জেবিএল এর ছোট স্পিকারটা নিয়ে আসেন। এই এক খুড়োর কল কিনে দিয়েছে আমার বর। ব্লু টুথ দিয়ে কানেক্ট করে ইউটিউবের গান শুনবে বাবা এই আশা নিয়ে। মিথ্যে বলব না, বৃদ্ধ শুনতও। স্পিকারটি ওণার বড় প্রিয়। মুস্কিল হল প্রায় প্রতিবারই আমরা চলে আসার পর উনি ভুলে যান কি ভাবে গানটা শুনতে হয়। বহু চেষ্টা করেন, সাধের স্পিকার তাও নীরবই থাকে। নেড়েচেড়ে দেখিয়ে দেয় শৌভিক আবার। আবার। আবার। শাশুড়ী মাতাকে চমকে চারবার গেয়ে ওঠেন হেমন্ত বাবু, ‘শোন কোন এক দিন-’। তাও মাথা চুলকান বৃদ্ধ। ‘শোন না, আরেকবার দেখা তো।’ সহমর্মী হয়ে বলি,‘স্টেপগুলো লিখে দিই না বাবা।’ পছন্দ হয় না বৃদ্ধের। আরেকবার দেখালেই নাকি উনি পারবেন সবকিছু।
‘এতদূর থেকে এলি,কি খেতে দিই বলতো’ বলতে বলতে সোফা থেকে উঠে পড়েন শাশুড়ী মাতা। যুগলে হাঁহাঁ করে উঠি। কিচ্ছু খাব না। তুমি বসো তো। সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধা বলে ওঠেন,‘কেন রে? আমার কষ্ট হবে বলে?’ জবাব দেবার আগেই টেবিলের ওপর চলে আসে খোলায় ভাজা চিঁড়ে, ফুরিয়ে যেতে বসা বিস্কুটের ডাব্বা, মুড়ি ওয়ালার থেকে কেনা গুলি গুলি নারকেল নাড়ু। শ্বশুরমশাই মনে করিয়ে দেন,‘ফ্রিজে গুড়ের রসগোল্লা আছে না? দাও না।’
বড় জোরে দৌড়ায় সময়। মহানগরের বুকে নামে সন্ধ্যা। আড়ামোড়া ভেঙে উঠে পড়ি আমরা।অভিমানী বৃদ্ধা বলে চলেন,‘এমন আশার কি যে মানে হয়, কতক্ষণই বা বসতে পারলি।’ বৃদ্ধ জানান শীঘ্রই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, আমাদের অসুবিধা থাকলে উনি একাই-। পুনরায় হাঁহাঁ করে উঠি যুগলে।
চাকা গড়ায় কাঁথির দিকে, গাড়ির কাঁচে যার ছায়া পড়ে, তার মুখে এক পোঁচ ক্লান্তির কালি মাখা। বিকট হাই তুলি আমি। ক্লান্তিতে বুজে আসে চোখের পাতা, চমকে উঠে চোখ খুলি যখন নরঘাট ব্রিজ পেরোচ্ছি। ঘড়িতে সাড়ে আটটা। মাইকে তখনও হয়ে চলেছে একই ঘোষণা।
মহকুমা শাসকের নিবাসে যখন পৌঁছাই ঘড়িতে পৌনে নয়। ছুট্টে আসে তুত্তুরী, 'মা দেখবে এসো রঞ্জিত কাকু কত পিঠে বানিয়েছে। যা যা তুমি প্রতিবছর বানাও সব বানিয়েছে মা। মাসি আমাকে একটাও খেতে দেয়নি, বলেছে তুমি এসে ঠাকুরকে দেবে তবে খাব।' রঞ্জিত বাবু মহকুমা শাসকের পাকশালা সামলান। বিভিন্ন প্রদেশের অফিসারদের মুখরোচক রান্না করে দিতেই অভ্যস্থ রঞ্জিত। বানাতে পারে গুজরাটি থেপলা থেকে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি সবকিছুই। আমাদের নৈমিত্তিক রুটি আর কুমড়োর ঘ্যাঁট বানাতে বানাতে রীতিমত মনমরা হয়ে পড়েছিল রঞ্জিত। আজ সুযোগ পেয়ে তাই উজাড় করে দিয়েছে নিজের প্রতিভা। পথ দেখিয়েছে তুত্তুরীর মাসি। বলে বলে দিয়েছে, পুলি পাকিয়ে দিয়েছে। মাঝপথে ফুরিয়ে গেছে দুধ। দৌড়ে গিয়ে দুধও কিনে এনেছে রঞ্জিৎ।
নতুন ডাইনিং সেটের না ব্যবহার হওয়া থালা বাটিতে সাজিয়ে দিই রঞ্জিত আর মাসির হাতের কাজ। তুলে ধরি আমার ঠাকুরের মুখের সামনে, আর মনে মনে বলি, ঠাকুর তুমি ধন্য। আমার মত সব অলবড্ডে অপদার্থ মেয়েদের পাশে সারাজীবন এমনিই থেকো প্রভু। মন্ত্র তন্ত্র তেমন জানি না, যা জানি তাও কতটা সঠিক কে জানে। তবে একটা জিনিস জানি,‘আই লাভ ইউ ঠাকুর।’ এটাই আমার প্রাণের মন্ত্র। এভাবেই ভালো থেকো আর রেখো কেমন।
No comments:
Post a Comment