Sunday 8 January 2023

অনির ডাইরি ৭ই জানুয়ারি, ২০২৩

 

#অনিরডাইরি #কাঁথিরকিস্যা 



পাঁচ ঘন্টা দশ মিনিটের টানা মিটিং, মিটিং চলাকালীন যতবার কোন পক্ষ বলছে, ‘আর পারছি না ম্যাডাম, মাথা ভোঁ ভোঁ করছে-। ’ ততোবার একটাই বুলি আউড়ে যাচ্ছি, আমি পারছি কি করে? আপনাদের তিনচার গুণ দূরত্ব সফর করে এসেছি, আবার এতটাই পথ পেরিয়ে বাড়ি ফিরব। শুধু কি তাই, বাড়ি ফিরে মেয়েটাকে আবার পড়তেও বসাতে হবে। 


তমলুকে অন্তত বিজ্ঞান বিভাগটা পড়ানোর জন্য একজন দিদিমণি ছিলেন, এখানে তো তাও নেই। সেশন শেষ হতে আর খুব জোর বাকি এক মাস, কোন দিদিমণি/মাস্টারমশাই এমন সময়ে আমার গুণধরের দায়িত্ব নেবে মশাই? অগত্যা,  বাংলা, হিন্দি, দুটো ইংরেজি(ভাষা এবং সাহিত্য), অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন,জীববিজ্ঞান,কম্পুটার বিজ্ঞান মায় নাগরিক বিজ্ঞান পর্যন্ত সবাই সদলবলে আমার ঘাড়ে চেপেছেন। সে যে কি চাপ- 


শৌভিকের ভাগে ছিল ইংরেজি সাহিত্য। কিন্তু কাঁথির এমন চাপ সে বেচারা সত্যিই মাথা তুলতে পারে না আজকাল। তাই আমিই পড়িয়ে দিই, বুঝিয়ে দিই। প্রশ্নোত্তর লেখে তুত্তুরী স্বয়ং, চেক অবশ্য শৌভিক করে দেয়। দরকারে টুকটাক লিখেও দেয়। মুস্কিল হয় আমার। এত গুলো বিষয় পড়ানো,লিখতে দেওয়া এবং সেই হোমওয়ার্ক চেক করার জন্য যে সময় এবং অধ্যাবসায় প্রয়োজন,তার কোনটাই আমার নেই। প্রায় দিনই পড়াতে বসে মনে হয়, ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি। 


তাও যদি ছাত্রী একটু পদের হত। পড়তে বসতে কারো যে এত অনীহা থাকতে পারে,মাইরি বলছি তা বাপের জন্মেও দেখিনি। বই নিয়ে আয় বললে তিনি কুঁতিয়েকাতিয়ে শুধু বইটাই নিয়ে এসে হাজির হন। খাতা নিয়ে আসতে বললে, পেন আনেন না। পেন আসে তো পেন্সিল আসে না। জ্যামিতি করাতে বসে দেখি সব পেন্সিলের শিস্  ভাঙা। সারা বাড়ি তোলপাড় করেও জোটে না, পেন্সিল বাড়ার কল। হোমওয়ার্কের পাতায় কি ভাবে যেন জল এমনকি দুধও উল্টে পড়ে মুছে যায় অনেককিছু। সবার ওপর তাঁর নিরন্তর বিড়বিড় করে যাওয়া। কি যে বলেন বুঝি না বটে, তবে গ্রহান্তরের কোন ভাষায় যে অধমের মুণ্ডপাত চলছে তা বেশ বুঝতে পারি। 


তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলেই তাঁর মুখ শুকিয়ে যায়। তখন তিনি দৌড়ে হোমওয়ার্ক করতে বসেন। রাত বাড়লে টোটো পাবার সমস্যা হয় বলে,ফোন করলে বাসস্ট্যান্ডে গাড়িটা পাঠিয়ে দেয় শৌভিক। সামান্য সুবিধা হয়, পাঁচ সাত মিনিটে বাড়ি পৌঁছে যাই আর কি- । তাতেও তার ঘোরতর আপত্তি। বাপকে জপান, ‘গাড়ি পাঠিও না বাবা। এলেই তো- ’ 


এতদিন বাপ একাই হাড় জ্বালাত, এখনও কন্যাও সেই দলে ভিড়েছে। এমনকি আদর করতে গেলেও তিনি আজকাল সন্ধিগ্ধ স্বরে প্রশ্ন করেন,‘ পড়তে বসতে বলবে নাকি?’ আমার বাপের নাম হিটলার হতে পারে, আমার তো নয়। মেয়ের মন পাবার জন্য হরেক রকম কসরৎ করি। হাত ধরে বাগানে হাঁটতে বেরোই দুজনে, জানতে চাই, কোন খেলা খেলবে কি না। শ্রীমতী তুত্তুরীর অন্যতম প্রিয় খেলা অ্যটলাস। অনেকটা অন্তক্ষরীর মত। শুধু শেষ বর্ণটা দিয়ে কোন গান গাইতে হয় না। বলতে হয় কোন দেশ বা জায়গার নাম। প্রায়ই খেলি আমরা এবং শ্রীমতী তুত্তুরী গোহারান হেরে যান। আরে ভাই আমি হলাম সাবেকী বাংলা মিডিয়াম। সবকিছুই এমন ঘাড় ধরে পড়ানো হত আমাদের, তারপাশে সিবিএসসি, আইসিএসসির ছেলেমেয়েরা না সেদিন দাঁড়াতে পারত না আজ পারে। 


আমাকে হারানোর উদগ্র বাসনায় অ্যটলাস বই খুলে রীতিমত দেশের নাম মুখস্থ করে রাখে তুত্তুরী। খুব একটা হেরফের হয় না ফলাফল। তারাসুন্দরী জিন্দাবাদ! রাত বাড়ে, কুয়াশা নামে। বাগানের নিম গাছের ডালের আড়াল থেকে মুখ বার করে শশধর। সজনে ডাঁটার গাছের কোটর থেকে হু হু করে চিৎকার করে ওঠে পেঁচাটা। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে  সারাদিনের ক্লান্তি। বিছানা, বালিশ আর গোলাপী কম্বলটার জন্য আক্ষরিক অর্থে ‘কাঁন্দে প্রতি অঙ্গ মোর।’     


ঘরে ফিরতে উদগ্র মায়ের হাত চেপে ধরে তুত্তুরী। ‘আর একটু খেলো না মা, প্লিজ।’ মেয়ের দুইচোখের চরম আকুতিকে অগ্রাহ্য করা আমার সাধ্যাতীত।  খেলার ফরম্যাট বদলে দেয় তুত্তুরী, অন্তক্ষরী নয়, প্রশ্নোত্তর পর্ব হবে এবার। একে অপরকে একটা করে অক্ষর দেব আমরা, তাই দিয়ে বলতে হবে দেশের নাম। হাই চেপে বলি, বেশ, তবে কেবল দশ দান খেলব কিন্তু। তারপর ঘুমাতে যাব।


 ‘ এম দিয়ে দুটো দেশের নাম বলো’। প্রথম দান দেয় তুত্তুরী। এ আবার কেমন খেলা? দুটো দেশের নাম কেন বলব? থতমত খায় তুত্তুরী, সামান্য ভেবে বলে,‘আচ্ছা একটাই বলো না হয়।’ ততোক্ষণে অবশ্য মালয়েশিয়া হয়ে মালদ্বীপে পৌঁছে গেছি আমি। এবার আমার প্রশ্ন করার পালা, এস দিই আমি তুত্তুরীকে। দুটো দেশেরই নাম বল ব্যাটা।  সুদান থেকে সৌদি আরব হয়ে অস্ট্রেলিয়া, বুরুন্ডি,ডেনমার্ক, এল সালভাডোর, জাপান, কসোভো হয়ে হন্ডুরাসে পৌঁছাই আমরা। দশ দান যে কখন বিশ পঁচিশ হয়ে গেছে খেয়াল থাকে না কারো। 


পঞ্চাশই হয়ে যেত হয়তো, যদি না মাঝে বেরসিকের মত কিছু দেশের রাজধানীর নাম আমি না ধরতাম। বা কোন মহাদেশে অবস্থিত মার্কা বেরসিক প্রশ্ন না করতাম। শোবার সময় সমাগত। রাত এগারোটার মধ্যে আলো নিভিয়ে না শুয়ে পড়লে পরদিন ভোরে উঠতে কাঁদতে হবে। শুয়ে পড়ি দুজনে যে যার ঘরে, নিভে যায় আলো। তন্দ্রা এসে ঘিরে ধরে, সাথে সাথে ঘিরে ধরেন তিনিও। ‘আর একটু খেলো না মা প্লিজ। কাল তো সেই ভোর বেলায় আমায় স্কুলের গেটে ছেড়ে চলে যাবে, তারপর আবার রাতে দেখা হবে।’ 


সেন্টু দিচ্ছে বুঝতে পারি, তাও গলে যায় মায়ের হৃদয়। ভালো করে কম্বলে জড়িয়ে নিই মেয়েকে। খেলতে পারি, তবে আর দেশ-মহাদেশের খেলা নয়। তারথেকে বরং গল্প বানাই চল। সে আবার কেমন খেলা, সন্ধিগ্ধ হয় তুত্তুরী। এই অছিলায় আবার কিছু পড়াতে চাইছে নাকি মা? হেসে বলি, তুইই শুরু কর বরং। পৃথিবীর যে কোন বিষয় নিয়ে। তোর যা ইচ্ছে, সেই গল্প হবে। 


বেশ খানিকক্ষণ, ‘ আমার কিছু মাথায় আসছে না’ করতে করতে শ্রীমতী তুত্তুরী শেষ পর্যন্ত বলেই বসেন। ‘এক যে ছিল রাজা। রাজার সুন্দরী নারীদের প্রতি অসম্ভব ঝোঁক। সুন্দরী মেয়ে পেলেই তাকে বিয়ে করে ফেলে।’ জানলা দিয়ে ঘুম পালায়। এ কেমন গপ্প রে ভাই। আজব দুশ্চরিত্র রাজামশাই মাইরি। আমার দান না আসা পর্যন্ত মুখ খোলা যাবে না। অন্ধকারে দাড়ি থুড়ি থুতনি চুলকাই। ‘রাজার হাতি শালে হাতি, ঘোড়া শালে ঘোড়া, প্রাসাদ ভর্তি রাণী।’ বলে থেমে যায় তুত্তুরী,‘ এবার তুমি বলো।’ 


মাথার ঝিমন্ত কলকব্জাগুলিকে খোঁচাই আমি, গল্প শুরু হলে তাকে শেষ না করে ছাড়া পাপ। অসমাপ্ত কত গল্প যে হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়। সিংহলের রাজকন্যা, চিতোরের রাণীকে স্মরণ করে মুখ খুলি আমি, ‘একদিন সেই রাজার সভায় এসে হাজির হল এক চারণ কবি।’ চারণ কবি ব্যাপারটা বোঝাতে কিছুটা সময় যায়। এগোয় গল্প,‘সেই চারণ কবি এসে বলে, রাজা শুনেছি তুই সৌন্দর্যের পৃজারি। দেশের যাবতীয় সুন্দরী রাজকন্যা তোর ঘরনী। তাই নিয়ে তোর বড় অহংকার। কিন্তু জেনে রাখ, এই সসাগরা ধরিত্রীর সবথেকে সুন্দরী রমণী কিন্তু নেই তোর ঐ হারমে।’ 


চেনা গল্পের গন্ধ পায় তুত্তুরী। নিজের অংশটুকু মক্স করে মনে মনে। কিন্তু এত সহজে দান ছাড়ব নাকি আমি? আমার গল্প এগোয়,‘রাজা জানতে চায়, কে সেই অনিন্দিতা নারী?’ মায়ের নাম শুনে ফিক্ করে হেসে ওঠে তুত্তুরী। তুত্তুরীর বাংলা শব্দভাণ্ডারের সীমিত রূপ নিয়ে ব্যঙ্গ করি আমি। অতঃপর গল্পে ফিরে যাই দোঁহে। ‘চারণ কবি বলে, তারে আমি চোখে দেখিনি। তার অনেক গল্প শুনেছি। সব চারণ কবিরাই তার কথা জানে। তাকে নিয়ে গান বাঁধে। কিন্তু কেউ তাকে দেখতে পায় না। নগরাজ হিমালয়ের কোন গোপন উপত্যকার রাণী তিনি। তিনি সবাইকে দেখতে পান, তাঁর কাছে সবার খবর থাকে। কিন্তু তাঁর খবর কারো কাছে থাকে না। তাকে খুঁজে বার করা দুঃসাধ্য।’ 


ব্যাস গপ্প শেষ। ঘুমাতে যা বলে ঠেলি মেয়েকে। তুত্তুরী নড়ে না। তুত্তুরীর রাজা বেরিয়ে পড়ে সেই পাহাড়ি সুন্দরীর তত্ত্বতালাশে। সঙ্গে যায় লোকলস্কর, হাতিঘোড়া। রাজা একপা যায় আর পথচলতি মানুষজনকে প্রশ্ন করে, ‘কোথায় পাব তারে?’ অবশেষে রাজা একদিন সেই স্বপ্নসুন্দরীর সন্ধান পান।’ কেলেংকারি মাইরি। এবার নির্ঘাত স্বপ্নসু্ন্দরীকে ঘোড়ায় চাপিয়ে বাড়ি ফিরবে রাজা। অতঃপর হারেমের চার দেওয়ালে দম আটকে মরবে আমার হিমালয়ের রাণী।  কিছুতেই রোম্যান্টিক গল্প হতে দেব না আমি। 


মাঝপথে জোরজবরদস্তি গপ্পে ঢুকে পড়ি আমি। ‘এবার আমার পালা। কিন্তু দেখা যায়, এর আগের উনপঞ্চাশ বারের মত, এবারের তথ্যও ভুল। ভেঙে পড়েন রাজামশাই। ফেরৎ পাঠিয়ে দেন যাবতীয় লোকলস্কর, সৈন্যসামন্ত। রাজবেশ ফেলে দিয়ে পরিধান করেন ফকিরের বসন। ছাড়তে পারেন না কেবল তরবারি আর আদরের ঘোড়াটাকে। ঘোড়ায় চেপে পাহাড়ি পথে একাই পরিভ্রমণ করেন রাজা, ঘুরে বেড়ান এই উপজাতি থেকে ঐ উপজাতির রাজ্যে। ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য আতিথ্য দেন ছাপোষা গরীর মানুষের। শিকারে সাহায্য করেন গাঁয়ের পুরুষদের। খেলা করেন ছেঁড়া পোশাকের শিশুদের সাথে। গল্প করেন গাঁওবুড়োদের সঙ্গে। তেমনি এক গাঁওবুড়ো একদিন বলে,‘ আশা ছাড়িস না রাজা। তুই তাকে দেখতে পাচ্ছিস না বটে, সে তোকে দেখছে কিন্তু। তোর কাজে, তোর পরিবর্তনে খুব খুশি হচ্ছে সে। দেখবি ঠিক একদিন তোর সামনে এসে হাজির হবে সে।’ 


আর রাজার কষ্ট সইতে পারে না তুত্তুরী। টেনে নেয় গল্পের রাশি। ‘একদিন রাজা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাচ্ছে, এমন সময় ঘনিয়ে এল রাত। সঙ্গে নামল তুষার ঝড়। কোনমতে একটা গুহায় মাথা গুঁজল রাজা। গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে তো পড়ল রাজা, যখন ঘুম ভাঙল, দেখে সে একটা অন্য জায়গায় শুয়ে আছে।’


এই রে আবার রোম্যান্টিক গল্পের দিকে গড়াল তুত্তুরীর গল্পের গরু। রাশ ধরি আমি,‘ চোখে এসে পড়ছে প্রভাতী সূর্যের কিরণ। রাজা নড়তে গিয়ে বুঝতে পারল, পিচমোড়া করে বাঁধা তার হাত পা। ঘাড় ঘুরিয়ে রাজা এদিক তাকায়, ওদিক তাকায়। যতদূর চোখ যায়, শুধু মেয়ে আর মেয়ে। একটাও পুরুষ নেই। মেয়েরা সবাই সশস্ত্র।এমনকি বালিকারাও।  অস্ত্র নিয়েই কেউ রান্না করছে, কেউ সওদা করছে, কেউ পড়াচ্ছে, কেউ অস্ত্র বানাচ্ছে ইত্যাদি প্রভৃতি। একটা গোল পাথরের চাকার ওপর শুয়ে আছে রাজা। সামান্য নড়তেই, দুজন নারী উঠে এল কাজ ছেড়ে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাল, তারপর নম্র অথচ ঋজু সুরে বলল,‘ মার্জনা করবেন, এভাবে রাতের আঁধারে আপনাকে তুলে আনার জন্য। আপনার ঘোটক এবং অস্ত্র আমাদের জিম্মায় সযতনে রক্ষিত আছে। আমাদের রাণী আপনার সাক্ষাৎপ্রার্থী।’


রাজা কো রাণী মিল গ্যয়ার আনন্দে খলবল করে তুত্তুরী। আমি বলি, তুই বলবি বাকিটা। ঘাড় নাড়ে তুত্তুরী। তোমারটা দারুণ হচ্ছে। তুমিই বলো। বেশ, গল্প গড়ায়, পাহাড়ি নদীতে অবগাহন করে রাজা। ফল দিয়ে প্রাতরাশ সারে রাজা। দুচারজন গ্রাম্য মহিলার সাথে কুশল বিনিময় করতে যায় রাজা। কিন্তু ব্যর্থ হয়। সবাই সম্মান দেয়, সবাই হাসে, কিন্তু আপন করে নেয় না রাজাকে। অবশষে আসে সেই পরম কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। দুই প্রহরিনীকে অনুসরণ করে রাজা মশাই এসে উপস্থিত হন এক উঁচু ঢিপির সামনে। ঢিপির গায়ে কাটা ধাপ বেয়ে রাজা ওপরে ওঠেন, ওপরের খোলা চত্বরে চলছে পাঠশালা। মন দিয়ে শাস্ত্র শিক্ষা করছে জনা ছয়েক অপরূপা বালিকা। প্রত্যেকের পাশে রাখা তার নিজস্ব অস্ত্র। কারো তরবারি তো কারো তীরধনুক। যিনি পড়াচ্ছেন তিনিও অপরূপা। পক্ককেশ, কপালে মুখে হাল্কা বলিরেখা, মুখমণ্ডলে মাখামাখি পরম প্রশান্তি। যেন স্নেহময়ী পরমেশ্বরী। দেখলে মন শান্ত হয়। 


কিন্তু রাণী কই? ব্যগ্র হয়ে ওঠেন রাজা। দুই প্রহরীর একজন, গিয়ে অভিবাদন জানায় শিক্ষয়ত্রীকে। ফিসফিসিয়ে কিছু বলে।  তিনি মৃদু হেসে ওঠেন। ঝলমলিয়ে ওঠে যেন পাহাড়ি উপত্যকা। ইশারায় ছাত্রীদের বলেন, ভাগ্। তোদের ছুটি। ইশারায় চলে যেতে বলেন, প্রহরীদেরও। এবার তাকান রাজার দিকে, চোখ নামিয়ে বলেন বসতে। এ আদেশ অমান্য করা শিবেরও অসাধ্য। মাটির ঢিপির ওপর বসে পড়েন রাজা। মুখোমুখি ঢিপির ওপর বসেন সেই বয়োজ্যেষ্ঠা নারী। তারপর জলতরঙ্গ আর সেতারের যুগলবন্দির সুরে বলে ওঠেন,‘এবার বলো তো বাপু, কেন আমায় খুঁজছিলে?’ 


তারপর? সাগ্রহে জানতে চায় তুত্তুরী। ‘সেটা তো তুই বলবি। ভাব, ভাব, ভাবা প্রাকটিশ কর। আপাততঃ মধ্যরাত হতে বসেছে, ঘুমিয়ে আমায় ধন্য করো মা।

No comments:

Post a Comment