Saturday, 11 February 2023

অনির ডাইরি ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৩

 

#অনিরডাইরি #তাম্রলিপ্তকড়চা 


Happiness is, যখন পুরাণ বন্ধু ফোন করে বলে, ' শোন না, তুত্তুরীর একটা দশ বছর বয়সের ছবি পাঠা না।' প্রথম আলাপের দিনটা ছাড়া, জীবনেও ভদ্র ভাষায় সম্বোধন করিনি হতভাগাকে। আজও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটা একই রকম ঝাঁঝালো ছিল। ‘কেন রে শালা, আমার হাড় জ্বালিয়ে আশ মিটছে না-’। উল্টো দিক থেকে ধমকে ওঠে বন্ধু,‘ বাজে বকিস না। আমার মেয়ের স্কুলে প্রজেক্ট দিয়েছে, ‘বেস্ট ফ্রেণ্ড।’ অফিস আসার সময় বলে এসেছি, দাঁড়া, ফেরার পথে দিদির ছবি নিয়ে আসব। একটু বাচ্ছা বয়সের ছবি পাঠা।’ রোজ খিস্তোই যাকে, আজ I'm honoured ছাড়া কিছু বলতে পারলাম না। ঠিক করলাম এবার থেকে, নো খিস্তি। যথোচিত সম্মান দিয়ে কথা বলব এবং অমুক বাবু ভাই ছাড়া আর কিচ্ছু বলে সম্বোধন করব না। 


Happiness is, যখন জনৈকা ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী এসে এক গাল হেসে জানান,‘ম্যাডাম আমি এসেছি।’ ততোধিক হেসে, ওণার সুর নকল করে, ছদ্ম বিগলিত কণ্ঠে জানাই,‘বেশ করেছেন।’ অতঃপর সুর বদলে মজার সুরে বলি, জানি তো আপনি আসছেন। বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন তো। সাময়িক ভাবে ভড়কে গিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আপনি কি করে জানলেন ম্যাডাম।’ বাসে আসার পথে দেখেছি ওনাকে। সেটাই জানালাম,  ঠিক কোন জায়গায়,কখন দাঁড়িয়ে  থাকতে দেখেছি। উনি আশ্বস্ত হয়ে বললেন,‘ও ঐ কালো গাড়িটা আপনার ছিল!’ হেসে বললাম, গাড়ি নয় দিদি, বাস। বাসটা আমার ছিল বটে। জানলার ধারেই বসতে পেয়েছিলাম আজ। 


‘আপনি রোজ বাসে আসেন ম্যাডাম?’ ইশঃ, আহাঃ চলল খানিকক্ষণ। সমব্যথী মানুষ পেয়ে গলে গিয়ে মনের দুঃখ উজাড় করে দিলাম আমিও। ‘ তাও রোগা হই না, দেখছেন তো।’ আড়ে বহরে উনিও আমারই মতন। ফলে আমার দুঃখটা ভালোই অনুধাবন করতে পারলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মাথা নাড়িয়ে কইলেন,‘তা হবেননি। তবে ম্যাডাম, কিছু মনে করবেননি,আপনি তো ফেসবুকে আছেন, আমি আপনাকে নিয়মিত ফলো করি আর কি।’ একদফা অপ্রস্তুত হাসি হেসে,‘খুব ভালো লাগে আর কি। আপনাকে। আপনার মেয়েকে, স্যারকে। সেদিন যে সিঁড়িতে বসা ছবিটা দিয়েছিলেন, তাতে তো দেখলাম, আপনার পরিবারের সবাই, ইয়ে মানে আপনারই মত আর কি।’ ছবি একটা দিয়েছিলাম বটে, স্টোরিতে। এক বন্ধুর জন্মদিনে তার বাড়ির সিঁড়িতে বসে অন্য একদল বন্ধু পরিবৃত হয়ে। আমার আগে-পিছে- ডাইনে- বাঁয়ে যারা ছিল, সবাই তন্বী এবং রূপসী। ব্যাপারটা দাঁড়াল, আমার জন্য আমার বন্ধুদেরও লোকে মোটা দেখে। হে ভগবান, এই তো আমি চাই, ‘ if you can't make me thin, make my friends fat’। 


Happiness is, যখন বেলা একটা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে ছটা অবধি একটানা মিটিং করে, বিস্তর চিল্লিয়ে, বকে, ধমকে, অনুনয়, বিনয়, বাবা-বাছা করে অবশেষে সই করাতে পারি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি। কোলাঘাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মেস ওয়ার্কারদের  সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের শেষ বার এগ্রিমেন্ট হয়েছিল ২০১২সালে। তাও দ্বিপাক্ষিক। ঠিক এগারো বছর পর সই হল ত্রিপাক্ষিক চুক্তিপত্র। পড়ল সরকারি মোহর। ম্যানেজমেন্ট, মেস ওয়ার্কার এবং ট্রেড ইউনিয়নকে অনেক ধন্যবাদ অধমের ওপর ভরসা রাখার জন্য।

No comments:

Post a Comment