অনির ডাইরি ১৫ই নভেম্বর,২০১৮
গতকালের কথা, গোটা দেশ উৎসব মোড থেকে বেরিয়ে এলেও চন্দননগর-মানকুণ্ডুর জমকালো জগদ্ধাত্রী পূজা এবং চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়ার আসন্ন কার্তিক পূজাকে কেন্দ্র করে,এই মাঝ নভেম্বরে গোটা হুগলী জুড়ে খুশি আর উৎসবের আমেজ। চূড়ান্ত খিটখিটে লোক বা মহিলার মুখেও এক
গাল হাসি। পুরো পুজোর কলকাতার মত ঝাঁক বেঁধে সুন্দরী এলোকেশীরা ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। রাস্তায় রাস্তায় গোছা গোছা চলমান ফুলের মেলা। সবে ভাবছি,তাহলে এই মওকায় দেখেই আসি কটা ঠাকুর, দরজা খুলে মুখ বাড়ালেন চাইল্ডলাইন হুগলীর জেলা কোঅর্ডিনেটার শ্রী গোপিবল্লভ শ্যামল মহাশয়।“ম্যাডাম আসতে পারি?” নিয়মিত যাঁরা আসেন,তাদের বহুবার বলেছি,আপনাদের জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই। অবারিত দ্বার। “আসুন। আসুন” বলার আগেই কোঅর্ডিনেটর সাহেবের বাহুমূলের তলা দিয়ে গলে তিন তিন জন মান্যগণ্য অথিতি এই অধমের চেম্বারে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। “আরে এণারা?” সবে আগের দিনই শিশু দিবস উদযাপন করেছি এক দঙ্গল খুদেকে নিয়ে। আজ আবার কি মনে করে অধমের চেম্বার এঁণাদের পদধুলি ধন্য হল? গোপিবল্লভ বাবু খুলে বললেন, শিশুদিবসের পরের দিন এণারা এসেছেন আমাকে চাইল্ডলাইনের হলুদ ব্যাণ্ড পরাতে। এতবড় সৌভাগ্য! তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালাম। লক্ষ্মী,শ্রেয়া এবং মুসকান নাম্নী তিন গণ্যমান্যা এগিয়ে এসে সযতনে পরিয়ে দিলেন হলুদ ব্যাণ্ড। অতঃপর উপহার স্বরূপ তুলে দিলেন একটি হলুদ চাবির রিঙ। তাতে লেখা “চাইল্ডলাইন সে দোস্তি”। হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮ও দেওয়া আছে। ১৮বছর বয়স পর্যন্ত যে কোন শিশু যে কোন বিপদআপদ বা সমস্যায় যেখানে নির্দ্বিধায় ফোন করতে পারে। সাহায্য অবধারিত। গোপীবল্লভ বাবু পকেট থেকে আর একটি চাবির রিঙ বার করে আমায় দিলেন,“এটা আপনার তুত্তুরীর জন্য।ও জানুক ১০৯৮এর কথা। ” তুত্তুরী এমনিতেই জানে। তবু সাদরে গ্রহণ করলাম এই স্নেহের দান।
এবার গণ্যমান্যাদের খাতিরের পালা। তুচ্ছ লেবার অফিসের কি এমন সাধ্য আছে,ওণাদের যথোচিত সৎকার করবে,তবু বললাম,“কফি খান অন্তত। সাথে ক্রিম ক্রাকার বিস্কুট চলবে?” আমাদের কালেক্টরেটর চা খেয়ে অডিট টিম যা খচেছিল,তাই চা ওয়ালাকে বললাম,তাঁর আবার এসএসওয়াই কার্ডও করে দিয়েছি আমরা, “দোহাই চা'টা দেবেন না। ভালো কফি দিন। ” যতটা ভাল হয় আরকি। চা কফি খেতে খেতে খানিক খেজুরে গপ্প হল। গোপীবল্লভ বাবু বললেন, এরা সকলেই চাইল্ডলাইনের কটেজের বাসিন্দা। সাধারণতঃ খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলে বা যদি কুমারী মায়ের সন্তান হয় অথবা দেখার কেউ না থাকে বা পরিবার যদি অ্যাবিউসিভ হয় তাহলে বাচ্ছাদের এখানে এনে রাখা হয়। অনেককে তাদের পরিবারও রেখে যায়, প্রতিপালন করার ক্ষমতা না থাকলে। অথিতিদের কাছে জানতে চাইলাম কার বাড়ি কোথায়? এদের সকলেরই বাড়ি আছে। একজনকে মা রেখে গেছে। লোকের বাড়ি বাসন মাজে, বাড়িতে দেখার কেউ নেই। অপর একজন বলল,বাড়িতে মামা আর দিদি আছে। বুঝলাম মামাতো দিদি বা বোন হবে। তৃতীয়ারও মা এবং বোন আছে। মায়ের দেখার ক্ষমতা নেই। জানতে চাইলাম এখানে কেমন আছে? সকলেই বলল,“খুব ভালো। ” সবাই স্কুলে পড়ে। মুসকান এবং শ্রেয়া ক্লাশ ফোর আর লক্ষ্মী ক্লাশ থ্রীতে পড়ে। ওদের হাসিখুশি মুখগুলিই জানিয়ে দিচ্ছে ওরা খুব ভালো আছে। অনুক গল্প হল। মা হওয়ার অভ্যাস বশতঃ খানিক জ্ঞানও দিলাম,“খুব ভালো করে পড়াশোনা করো। তারপর একদিন এসে আমার চেয়ারে বসো।যোগাযোগ রেখো। আমি আসব তখন ফুল নিয়ে তোমাদের কাছে। ”
No comments:
Post a Comment