Monday 29 June 2020

তুত্তুরী উবাচ ২৯শে জুন, ২০২০


তিনি আজকাল কথায় কথায় বলেন, “বুদ্ধিতে দুর্ভিক্ষ লেগেছে নাকি?” তিনি দাবী করেন, তিনি এক আজব লিপি আবিষ্কার করেছেন, যার জন্য তাঁর নোবেল পাওয়া উচিত। সাক্ষী আমাদের ফ্ল্যাটের দেওয়াল। লিপি তো নয়, এক্কেরে শিলালিপি, স্কচব্রাইট দিয়ে ঘষে ঘষেও তোলা যায় না। তিনি গভীর ঔৎসুক্য নিয়ে লক্ষ্য করেন, বাবা-মায়ের সম্পর্কের জোয়ার-ভাঁটা। অথচ যখন লাগে ষাঁড়াষাড়ি বান, তাঁকে বলা হয় যে কোন একজনের মূখপাত্র হয়ে অপরজনকে ভর্ৎসনা  করতে, ওমনি তিনি ভুলে যান, কি ভাবে যেন ভাজা মাছটা উল্টাতে হয়? তিনি বন্ধ দরজার ওপারে নিঃশব্দ শশকের মত কান খাড়া করে শোনের বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহ এবং অবস্থাবিশেষে বিনানুমতিতেই বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ  হন মঞ্চে। মাঝখান থেকে ভুলে যাই আমরা, কি নিয়ে যেন চলছিল কোঁদল পর্ব?
শুধু কি তাই, তিনি নানা বিষয় নিয়ে রীতিমত রসালো আলোচনা করেন বাবার সাথে-যেমন জানতে পারলাম মাসির সাথে খানিকটা দেখলেও গুরুদক্ষিণা সিনেমাটা তেমন পছন্দ হয়নি তাঁর। তবে নায়কের প্রেমে রীতিমত হাবুডুবু। নায়কটা কে ছিল গো বাবা? বাবা রহস্যময় হেসে জানায় নায়কের নাম। তুত্তুরী জানায় তার ওমন গোলুগালু ছোটখাট নায়ক দারুণ পছন্দ। বাবা জানতে চায় সদ্য দেখা রয়াল বেঙ্গল রহস্যের ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়কে কেমন লেগেছে? ভালই লেগেছে তাঁর, তবে আপাততঃ তিনি দ্বিধাবিভক্ত  রঞ্জিত মল্লিক আর ভিক্টর ব্যানার্জীর মধ্যে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মা, কিছুদিন ধরেই মায়ের প্রিয় পুরুষদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝেই জানতে চাইছিলেন, “তুমি একে বিয়ে করবে?” ইশ্ সত্যিই যদি ক্যারি গ্রান্ট বা স্যার লরেন্স অলিভিয়ার এই প্রশ্নটা করত? নিদেন পক্ষে পিয়ার্স ব্রসনন বা কিল্ট পরা স্যাম হিউয়ান। মায়ের দীর্ঘশ্বাসকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে বাবা জানতে চায় আর আবির? আবিরকে কেমন লাগে তাঁর? আর প্রসেনজিৎ?
গল্পে গল্পে গড়িয়ে যায় রাত। আবির-প্রসেনজিৎ এর জায়গা দখল করে দীনু  খুড়োর পোষ্যপুত্র  বাঁটুল চন্দ্র। তাঁর এবং তাঁর পিতার আব্দারে বাঁটুলের ফটোল্যাব করা হয়, দুঃখের কথা কি আর বলি, আপদ ফটোল্যাব বাঁটুল বাবুর ছবি থেকে কোন ফেসই ডিটেকশন করতে পারে না। আরেঃ ভাই, জলজ্যান্ত বাঁটুল চন্দর বসে অাছে, তাও পাচ্ছ না তোমরা? এরপর যদি তিনি ক্রন্দসী হন, তখনও আপনারা বলবেন যে তিনি ছিঁচকাঁদুনে। বহুৎ না ইনসাফি হ্যায়, মাইরি!

No comments:

Post a Comment