Friday, 20 March 2020

গুলমোহর ( বসন্তপূর্ণিমা -২০১৯)


কখন থেকে রাস্তা পার হবে বলে দাঁড়িয়ে আছে এলা, মুখ পোড়া সিগনাল আর লাল হয়ই না। চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক বাস বেরিয়ে যাচ্ছে। মনটা আচমকা খারাপ হয়ে গেল এলার। মহানগরে বসন্ত এসেছে। হাওয়ায় অদ্ভুত মাদকতাময় এক উষ্ণতা। কর্মক্লান্ত ঘেমো শহরের মসৃণ পথে লুটিয়ে পড়েছে সোহাগী লালচে সোনালী নিয়ন আলো। বাতাসে ভেসে আসছে আজব মিষ্টি একটা ফুলের সুবাস। বড় মন কেমনিয়া সে গন্ধ। প্রশ্বাসের সাথে সাথে ফুসফুসে ভরে যাচ্ছে এক হাহাকার। প্রেমহীনতার হাহাকার। এমন দিনে  বড় ইচ্ছে করে, এলার খসখসে হাতটা কেউ চেপে ধরুক। 

বড় মনোরম এই এলাকা, পথের পাশের নয়ানজুলিতে টলটল করছে জল, সেই জলের ধার বরাবর কেয়ারী করা বৃক্ষের দল। নিম- অশ্বত্থ- অর্জুন- জারুল- অমলতাস। দিনের বেলা রাস্তার দুধারে হোলি খেলে পলাশ আর রাধা-কৃষ্ণচূড়ার দল। ডিভাইভার বরাবর জমিয়ে আড্ডা দেয় টগর আর করবী। মাঝে মাঝে দু একটা পুষ্পশোভিত স্থলপদ্ম গাছ যেন আরো বাড়িয়ে তোলে শোভা।  আরও যে কত রঙবেরঙের গাছ। কটা গাছের নামই বা এলা জানে। শুভ্র বটানির ছাত্র ছিল, অনেক গাছ চিনিয়েছিল। গুলমোহর মানে যে কৃষ্ণচূড়া শুভ্রর মুখেই প্রথম শোনে এলা।

শুভ্র চলে গেছে আজ কতদিন হল, গাছের প্রতি প্রেম তাও কমেনি এলার। ডিউটি যাবার পথে, ভোর বেলায় ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যখন হুহু করে দৌড়য় বাস, সূর্যের সোনালি আলোয় স্নান করে সদ্য ঘুম ভাঙা  কুসুমের দল, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এলা, বড় ভালো লাগে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে শুষে নেয় সবটুকু রঙ, বিবর্ণ দীন জীবন যেন সাময়িক ভাবে ঝলমলিয়ে ওঠে।গালের মেচেতা-চোখের কালি, মাথা ভর্তি পাকা চুল, ফাটা গোড়ালী মুহূর্তে মুছে যায়। এলা ফিরে যায় তার শেষ কৈশোরে।যখন জীবন ঘুরত শুভ্রকে কেন্দ্র করে।

  ইশ্ এলা যদি এখানেই  থেকে যেতে পারত, রোজ সকালে এই কথাটা মনে হয়, আর তখনি ঝাঁকুনি খেয়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে যায় বাস। বাস্তবের মাটিতে আছড়ে পড়ে এলারাণী দাস।

রাস্তার ওপারে একটা লোক বেশ অনেকক্ষণ ধরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, বছর দশেক আগে হলেও ভয় পেত এলা, আজকাল আর পায় না। পরণে সস্তা সিন্থেটিক শাড়ি, পায়ে রবারের চপ্পল, কাঁধে ট্রেন থেকে কেনা দুশ টাকার নকল চামড়ার ঢাউস ব্যাগ, মাথায় হাত খোঁপা। ছিটেফোঁটা প্রসাধন নেই। ডিউটির পরও গায়ে লেগে থাকে নার্সিং হোমের ব্লিচিং,  ফিনাইল আর মেডিকেটেড সাবানের গন্ধ। এলারাণী দাস ডাকসাইটে আয়ামাসি, এমন মেয়েদের প্রতি না তো কারো প্রেম জাগে, নাই কামনা। নির্ঘাত বাড়িতে কোন রুগী আছে, আয়া লাগবে। ভাবতে ভাবতে মনটা কেমন ভারি হয়ে গেল এলার। নাঃ যে যায় সে আর ফিরে আসে না। আঠারো বছরেও ফিরে আসেনি শুভ্র।  আর ফিরবে না প্রেম। এভাবেই একদিন হারিয়ে যাবে, ঝরে-মরে মাটিতে মিশে যাবে সোদপুরের এলারাণী দাস।

দূরের লোকটার অবয়ব কেমন যেন বহু বহু বছর আগে দেখা একজনের সাথে বড় মিলে যায়। অথবা সব অচেনা লোকের মধ্যেই তাকে খুঁজতে চায় এলা। দুজনের বাঁধানো সেই ছবিটা। বিয়ের পর প্রথম এবং শেষ ছবি। মিন্টির বাবার একমাত্র ছবি। মিন্টি এখনও লুকিয়ে দেখে। মায়ের সামনে দেখে না,পাছে মা কষ্ট পায়। ছোট বেলায় বলত,“বাবা কি আর ফিরে আসবে না মা? তুমি কি আর এমন সুন্দর করে সাজবে না মা?” আজকাল আর বলে না। শুধু মাঝে মাঝে অন্ধকার ঘরে, একে অপরকে জড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মা-মেয়ে। মিন্টি বলে,“ আমাদেররআর কেউ নেই, বলো মা। আমাদের আর কাউকে দরকার নেই বলো মা। ” এলা কিছুই বলে না। সেদিনও চুপ করে থাকত, আজও তাই থাকে। নীরবে অভিনয় করে চলে মা আর মেয়ে। দুজনেই অভিনেত্রী আবার দুজনেই দর্শক। দুজনেই চেষ্টা করে একে অপরকে টেক্কা দিতে।

অভাব যখন ঘাড়ে চাপে,প্রেম পালায় জানলা গলে। আর অভাব কাকে বলে হাড়ে হাড়ে বোঝে এলা আর মিন্টি। সেই কোন ছোট্ট বেলা থেকে মিন্টিকে মায়ের কাছে রেখে কাজে বের হয় এলা। ভাই-ভাইবউদের অশান্তির ভয়ে, বাপের বাড়ি থাকেনি। মিন্টির যখন আড়াই বছর বয়স, বাপের বাড়ির কাছেই এক কামরার বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল এলা। এখনও সেখানেই আছে। বারো ঘর, এক উঠোন। ভাগের বাথরুম পায়খানা। সেখানে মেয়েকে রেখে যেতে সাহস হত না, মাও দুহাত বাড়িয়ে আঁকড়ে ধরেছিল মিন্টিকে। দিদাই ছিল মিন্টির জীবন। দিদার ঘরেই থাকত, পড়াশোনা করত মিন্টি। রাতে মা ফিরলে, মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরে আসত মিন্টি। দিদা হাজার সাধলেও দিদার কাছে খেত না। পাছে মাকে কথা শুনতে হয়, পাছে মামারা হ্যাংলা ভাবে-। ছোট্ট থেকেই খুব সমজদার এলার মেয়ে।

সেরাতেও তাই করেছিল। স্কুলের বইখাতা- ইউনিফর্ম সব রেখে এসেছিল দিদার কাছে। অন্যদিনের মত সকালবেলা নাকেমুখে গুঁজে, মেয়ের খাবার গুছিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি গিয়েছিল  এলা। সেদিন আর “মিন্টি এলি ” বলে দরজা খোলেনি কেউ। ঘুমের মধ্যেই চলে গিয়েছিল এলার মা।

মা চলে যাবার শোক অসহায়তা ছাপিয়ে এলাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল দাদাদের নিষ্ঠুরতা।বডি বের হতেই মায়ের ঘরের দরজায় তালা মেরে দিয়েছিল বড়দা আর ছোটদা। এলা-মিন্টির শত কাকুতি-মিনতিতেও খোলেনি ঘরের তালা। মিন্টির বারো ক্লাশের সব বই, নোট সব হারিয়ে গেল একরাতের মধ্যে। উঠোনে আছড়ে পড়ে কেঁদেছিল মেয়েটা। “ও বড়মামা, আমার বইগুলো শুধু দাও। ও ছোটমামা আমার যে এইচএস পরীক্ষা। বইগুলো দিয়ে দাও গো। ”
পাষাণ। পাষাণ। ভাবতে ভাবতে টপটপ করে দু ফোঁটা জল ঝরে পড়ল এলার গালে।উল্টোদিকের লোকটা কি ভাবল কে জানে? এলার কিছু যায় আসে না।  এত কষ্ট করেছে জীবনে, যাতে মেয়েটা ভালো থাকতে পারে, তাও হল না। তাও পারল না এলা। ঠিক যেভাবে আঠারো বছর আগে পূর্ণ গর্ভবতী এলা আছড়ে পড়ে কেঁদেছিল, তেমন করেই কাঁদতে হল মিন্টিকে। মেয়ের শোক দেখে তাও তো এলা বলতে পারেনি,মায়ের ঘরে ওর জমানো হাজার দশেক টাকা ছিল। তিলতিল করে জমিয়েছিল, মিন্টির বিয়ের কথা ভেবে।
প্রেম!এই প্রেমই যত নষ্টের মূলে। কেন যে শুভ্রর প্রেমে  পড়েছিল এলা। বামন হয়ে কেন হাত বাড়িয়েছিল চাঁদের দিকে? দশক্লাস পাশ করে, ভর্তি হয়েছিল কোচিংএ। দাদারা তো কেন পড়াশোনা করল না।লোহার  কারখানায় কাজ করতে ঢুকে গেল, বাবা ছিল রঙ মিস্ত্রী। রোজগারপাতি মন্দ ছিল না, তাই মেয়েকে পড়াশোনা শেখানোর সব ব্যবস্থা করেছিল বাবা। নাহলে এলার পিসিরা তো নাম সই করতে পারে মাত্র। কোচিং এ পড়াত শুভ্র। সদ্য এমএ পরীক্ষা দিয়ে পড়াতে এসেছিল শুভ্র। কে জানে কি মাস ছিল সেদিন? কে জানে কার চোখে কে দেখেছিল সর্বনাশ-

এগারো ক্লাশের পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়নি এলার। তার আগেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে দুজনে। সবথেকে ভালো সালোয়ার কামিজটা পরে পালিয়ে  ছিল এলা। যদিও ওর না পালালেও চলত, শুভ্রর মত জামাই ওর বাবা অনেক খুঁজেও জোটাতে পারত না। ওদের বিয়ে খবরটা শুনে শুধু মা বলেছিল,“কয়টা বছর অপেক্ষা করলেই তো পারতিস মানু। তোর বাপের এত শখ ছিল, তুই হবি বংশের প্রথম গ্রাজুয়েট। তোর দাদারা তো কেউ ল্যাখাপড়া করল না- বড় আশা ছেল তোর ওপর। ” বিয়ে মানে তো মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর তোলা। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যায়নি এলা। শুভ্রর সাহস হয়নি, সস্ত্রীক বাবা-মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। মন্দিরের কাছেই একটা পিসিও থেকে ফোন করেছিল মাকে, কি কথা হয়েছিল এলা শুনতে পায়নি। কাঁচের ঘরের বাইরে ওকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল শুভ্র। শুভ্রর ধারণা ছিল, একবার বিয়ে করে গিয়ে দাঁড়ালে ফেলতে পারবে না। হাজার হোক বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল শুভ্র। ওর মা যদিও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শুভ্র যখন খুশি বাড়ি ফিরতে পারে। তবে একাকী। এই বিয়ে ওণারা মানেন না। এলাকে গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই তাই ওঠে না।
এলার বাপের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে, বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার পাতে শুভ্র আর এলা। শুভ্রর টুকটাক উপার্জন, টিউশ্যনি আর ওর নামে ফিক্সড্ করা কিছু টাকা পয়সা ভেঙে গড়ে ওঠে এলা আর শুভ্রর সংসার। খুব সামান্য উপকরণ, খাট কেনার সামর্থ্য ছিল না তাই তক্তাপোশ, একটা সস্তা কাঠের আলনা আর একটা আয়না। একটা অনামি ব্রাণ্ডের স্টিলের আলমারি দিয়েছিল এলার বাবা-মা। এলার দাদার এক বন্ধু বানাত। খুব মজবুত। আজও টিকে আছে এলা আর মিন্টির ঘরে।
গ্যাস নেবার ক্ষমতা ছিল না, তাই পাম্প স্টোভ। প্রেশার  কুকার, হাড়িকুড়ি, শিলনোড়া, চাকিবেলুন,কৌটোবাটা বড় যত্ন করে ঘুরে ঘুরে কিনেছিল এলা আর শুভ্র। বড় সুখের ছিল সেসব দিন। লোহার বাসরঘরে নিদ্রামগ্ন লখিন্দর বেহুলার মত শুভ্র আর এলাও বোঝেনি কালনাগিনী ঢোকার ফুটোটা ঠিক কখন তৈরি হয়েছিল।

সচ্ছলতা তেমন ছিল না। হিসাব করে চলতে হত। দুজনেরই অল্পবয়স,শখসাধও ছিল প্রচুর। এলা আশৈশব টানাটানির সাথে পরিচিত হলেও, শুভ্রর তেমন আলাপ ছিল না। উচ্চমধ্যবিত্তের আদরের দুলাল, স্বল্পতা নিয়ে বিস্তর অনুযোগ করত শুভ্র।যেন এলা ইচ্ছে করে তৈরি করে অভাব আর টানাটানির নাটক।  দুজন মানুষ বলে কেন দুটুকরো মাছই এলা রান্না করে,বেশী হয় না কেন? রোজ মাছমাংস কেন হবে না? মাসের শেষে কেন বাইরে খাওয়া নিষেধ- কেন যখন খুশি বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করা যাবে না- ইত্যাদি প্রভৃতি ছেলেমানুষি অনুযোগ করত শুভ্র।

খেপে গেলে প্রায়ই বন্ধুদের উচ্চশিক্ষিত সুন্দরী গার্লফ্রেণ্ড বা হবু স্ত্রীদের সাথে এলার তুলনা টানত শুভ্র।মাথা ঠান্ডা হলে যদিও ক্ষমা চাইত, আদরে সোহাগে ভরিয়ে দিতে চাইত এলাকে। ক্ষমা চাইবার অছিলায় কিনে আনত কোন দামি উপহার, তাই নিয়ে আবার বাঁধত অশান্তি। 

তারপর এল সেই দিন, শরীর জুড়ে নামল অসীম ক্লান্তি। তারসাথে গা গুলিয়ে তীব্র বমি। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল শুভ্র। দৌড়ে গিয়ে বমির ওষুধ কিনে এনেছিল। নিজে হাতে গুলে দিয়েছিল ওআরএস।  তাও মাথা তুলতে পারছিল না এলা। এদিকে ডাক্তারও ডাকতে দেবে না। বাড়ি এলেই এককাড়ি টাকা নষ্ট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার মুহূর্তে, নীচে থেকে বাড়িউলি কাকিমাকে দৌড়ে ডেকে এনেছিল শুভ্র। তখনও শুভ্রর দুচোখে ছিল নিছক উদ্বেগ আর নির্ভরশীলতা। সেদিনের শুভ্রর দুই চোখের কথা বিগত আঠারো উনিশ বছর ধরে প্রায় ভাবে এলা। প্রিয়তম পুরুষের ভালোবাসায় মাখামাখি দুই চোখ। ভাবলেই নাকে ভেসে আসে শুভ্রর গায়ের গন্ধ।

বাড়িওয়ালি কাকিমার কাছে অবশ্য এসব লক্ষণ ছিল খুবই চেনা। কাকিমার ছদ্ম হুকুম মেশানো আব্দার,“ মিষ্টি কই শুভ্র?” লজ্জায় শুভ্রর দিকে তাকাতে পারেনি এলা। ঝিম ধরে বসেছিল দুজনেই। বাইরে রাস্তার আওয়াজও যেন বিনা অনুমতিতে সেদিন ঢোকেনি শুভ্র আর এলার সংসারে। হঠাৎ শুভ্র বলল,“একটু আসছি। ” কোথায়? প্রশ্ন করতে গিয়েও করেনি এলা। বুঝতে পেরেছিল। শুভ্র যাচ্ছে ওর মাকে ফোন করতে। এতবড় খবরটা মাকে না জানালে চলে? ভিতরে ভিতরে অচেনা এক খুশি থিরথির করে কাঁপছিল যেন।  এবার হয়তো ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু। পুত্রবধূকে না মেনে নিতে পারলেও হবু নাতি বা নাতনিকে নির্ঘাত-

প্রতীক্ষা করেছিল এলা। প্রতীক্ষা ছিল ঋতুরাজ বসন্তের। পরিবর্তে নেমে এসেছিল অনন্ত তুষার যুগ।প্রথমে নেমেছিল, ঘণ কুয়াশা। দমবন্ধ করা কুৎসিৎ কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল চরাচর। তারপর শুরু হয়েছিল তুষারপাত। আজও যা হয়ে চলেছে অবিশ্রাম। আর এই তুষারের তলায় কোথায় মরে জমে পাথর হয়ে গিয়েছিল এলা, সোদপুরের এলারাণী দাস।
এক একটা মুহূর্ত যেন এক একটা যুগ। কোথায় গেল শুভ্র? প্রতীক্ষার প্রহর ক্রমেই লম্বা হচ্ছিল। সূর্যদেব বসলেন পাটে।ভাড়া বাড়ির দোতলায় হুড়মুড় করে নামল সন্ধ্যা। আলো জ্বালাবার ক্ষমতাও ছিল না এলার সেদিন। হৃদপিণ্ড বিদীর্ণ করে উঠে আসছিল দমচাপা কান্নার তুফান। কতক্ষণ ঐ ভাবে পড়ে ছিল জানে না।  সন্ধ্যা নেমে বুড়ো হয়ে,মহানগরের বুকে  নেমেছে রাত। ক্রমশঃ গভীর হয়েছে সে রাত। ফেরেনি শুভ্র। আজও এলার মনে হয় ও আটকে আছে ঐ রাতেই। কোনদিনও কাটবে না সেই কালরাত্রি যেন।

কি অপরিসীম অসহায়তা গ্রাস করেছিল সেদিনের এলাকে ভাবতে বসলে আজও কান্না পায়। ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের কাছাকাছি পৌঁছতে আর থাকতে পারেনি এলা।  সকাল থেকে অনাহারে দুর্বল শরীরটাকে টেনে হিঁছড়ে নিয়ে গিয়োছিল বাপের বাড়ির দোরগোড়ায়।তিনকুলে কে আছে ওর মা- বাবা আর দাদারা ছাড়া। আগে তারা তবু আসত, খবরাখবর  নিত। শুভ্রর ঘোরতর অপছন্দ বলে আজকাল আর আসে না।কাঁদতে কাঁদতে উন্মাদিনীর মত যখন কড়া নেড়েছিল এলা,তখন গভীর রাত।

শুভ্রকে খুঁজতে কসুর রাখেনি দাদারা। বড়বৌদি যদিও শুনেই বলেছিল,“দ্যাখো গে বাপের বাড়ি ফিরে গেছে। এসব বড়লোকের ছেলেরা এমনই করে। বিয়ের নাম করে ভোগদখল করে, তারপর পেট বাঁধলেই কেটে পড়ে ।”
রাত একটা-দেড়টা নাগাদ ফিরেছিল ছোটদা। আন্দাজে খবরাখবর নিতে নিতে হাজির হয়েছিল শুভ্রদের বাড়ির সদর দরজায়।ছোটদার বয়ান মোতাবেক বাড়ি ফিরে দিব্যি খেয়েদেয়ে ঘুমোচ্ছিল শুভ্র। ওদের সাথে দেখাও করেনি। ওর মা-বাবা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ওটা ভদ্রলোকের পাড়া। অসভ্যতা করো লাভ নেই। এলা ওদের চোখে “লাইনের মেয়ে”। এলা ও বাড়ির চৌকাঠ ডিঙোবার সাহস যেন না দেখায়। তাহলে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করবেন ওণারা।
অনেক অশান্তি হয় দুই পরিবারের,অনেক বাদ-বিবাদ। শেষে আইন মেনে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করে শুভ্র। ওদের দামি উকিলের বিপক্ষে দাঁড়াবার মত উকিল রাখার সামর্থ্য ছিল না এলাদের বলাইবাহুল্য। তাই শান্তিপূর্ণ  ভাবে আদালতের বাইরেই মিটমাট করে নেয় দুই পরিবার। এলার জীবন এবং যৌবনের দাম ধার্য হয় চল্লিশ হাজার টাকা। চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে,“লাইনের মেয়ে”টাকে ঘাড় থেকে নামায় শুভ্রদের পরিবার। 

এলার মতামত- ওজর আপত্তির কেউ মর্যাদা রাখেনি। আর রাখলেই বা কি হত, শুভ্রর প্রেম যে মৃত সেটা বুঝতে এলার অসুবিধে হয়নি।  জবরদস্তি মৃত সম্পর্ককে আঁকড়ে থাকলে, বাড়ত শুধু যন্ত্রনা।

সাজানো সংসারের মালপত্র কিছুই ফেরত চায়নি শুভ্রর পরিবার। ঐদিনগুলোকে ওরা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। এলার জিনিসপত্র গুলো অবশ্য কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেয় ওর দাদারা। ঠেলা গাড়িতে চাপিয়ে যেদিন বিয়ের আলমারিটা ফেরত নিয়ে এসেছিল বড়দা, হাউমাউ  করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল এলা।

মিন্টির জন্মের পর এক অদ্ভুত আশায় বুক বেঁধেছিল এলা। হাজার হোক বাবা তো, খবরটা পেলে নিশ্চয় দৌড়ে আসবে। শুভ্র আসেনি।  হয়তো খবর পায়নি, লুকিয়ে বেপাড়ার পিসিও থেকে বেনামে ফোন করে খোদ খবর দিয়েছিল এলা, তাও আসেনি। কেউ আসেনি। কোনদিন আসেনি। আর আসবেও না। জানে এলা। এভাবে সবার অলক্ষে অনাদরে একদিন ঝরে যাবে এলা,যেমন ঝরে গেছে এলার যৌবন।

সিগন্যাল লাল হয়েছে, চোখ মুছে রাস্তা পেরোতে উদ্যত হল এলা। চোখের জল চিরকালই বড় অবাধ্য,বড় লজ্জায় ফেলে দেয়।একা থাকলেই পিছু ফিরে তাকায় এলা, আঠারো বছর আগের কটা দিনের কথা বারবার রিপিট টেলিকাস্ট এর মত চলতে থাকে মাথার মধ্যে। শুভ্র যেদিন ছেড়ে গিয়েছিল সেই রাতের অসহায়তার কথা যতবার ভাবে, ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে হয়। কতবার বাসে ট্রেনে ভিড়ের মাঝে চোখে আঁচল চেপে বসে থেকেছে এলা।কান্নার দমকে  উঠে আসা হেঁচকিকে দমন তথা শাসন করেছে কঠোর হাতে।আজ অবশ্য তা করতে হয়নি, শুধু কয়েকবার মুছতে হয়েছে ভরে আসা চোখ, এই যা। এই হাক্লান্ত বসন্তের রাতে, ব্যস্ত মহানগরে কেউ দেখেনি আশা করি।
রাস্তা পেরোতে পেরোতে আবার দেখতে পেল, ওপাড়ের লোকটা বড় উদ্বেল হয়ে তাকিয়ে আছে এলার দিকে। অবয়বটা বড় চেনা। ধুর। সে কেন হবে? বিগত আঠারো বছরে কখনও দেখেনি তাকে,নিশ্চয় অনেক পাল্টে গেছে সেও। আর এলাও তো পাল্টেছে। এলা যদিও তাকে চিনতে পারে,সে এলাকে কোনদিনই চিনতে পারবে না।
অচেনা অস্বস্তি নিয়ে মাথা নীচু করে রাস্তা পের হল এলা। এত বছরে কখনও এমন উটকো অস্বস্তি হয়নি এলার। কখনও কেউ এভাবে তাকিয়েছে কিনা খেয়ালও করেনি এলা। আজ যে কেন উল্টে পাল্টে যাচ্ছে সব হিসেব।
ফুটপাতের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আড়চোখে দেখতে পেল এলা,সে এগিয়ে আসছে পায়ে পায়ে। নিজেকে এত দীন বহুদিন বোধ হয়নি এলার। ইশ্ এভাবে এলাকে দেখবে সে? এই সস্তা সিন্থেটিক শাড়ি আর রবারের চপ্পলে? মাথায় হাত খোঁপা আর সস্তা ঢাউস ব্যাগে, যার একটা চেনের জিপার উড়ে গেছে বলে সেফটিপিন লাগিয়েছে এলা। যে মুখশ্রীর প্রেমে পড়েছিল সে,সেখানে আজ কালো দাগছোপ আর মেচেতাদের সাম্রাজ্য। হাতের ক্ষয়া নখগুলো, নেলপলিশহীন পায়ের পাতায় আঁকিবুকি কেটেছে সূর্য। আর গোড়ালির ফাটলে তো গজাতে পারে বটের চারা। হে ঈশ্বর, এলার যেন ভুল হয়। আর না হলে দ্বিধা হও ধরণী।
লোকটা কয়েকহাতের মধ্যে এসে গেছে,দমবন্ধ করে অপেক্ষা করছে এলা, কতবার মরতে হয় একটা জীবনে? যদি চিনতে পেরেও থাকে কেন আসছে এগিয়ে? যেদিন থেকে নিভেছে এলার জীবনের সব আলো, গভীর আঁধারে নিদ্রিত কন্যাকে বুকে জড়িয়ে শুধু এইদিনটারই স্বপ্ন দেখে গেছে এলা, একদিন সে ফিরে আসবে। হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে কোথাও আর এলাকে দেখে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে শুভ্র হৃদয়ের সব প্রাচীর।
সে হাত তুলে ডাকতেই যাবে, আচমকা দুজনের মাঝে এসে দাঁড়াল এক দুধ সাদা অ্যাম্বুলেন্স। ঘটাং করে দরজা খুলে দিয়ে চিৎকার করে উঠল রাজীবদা,“রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছ? বোকা মেয়ে।  উঠে এসো, তোমাদের ওদিকেই যাচ্ছি পেশেন্ট তুলতে।” এভাবে এ নাটকের যবনিকা পতনে থতমত খেয়ে গেল এলা। কি করব? আর মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত অপেক্ষা করলেই এসে পড়বে এলার জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণ। নাকি সাড়া দেবে রাজীবদার ডাকে?

রাজীবদা এই নার্সিংহোমে  অ্যাম্বুলেন্স চালায়।এছাড়াও টুকটাক নানা কাজ করে, সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা মার্কা।  বিপত্নীক। সন্তানের জন্ম দিতে নাকি মারা যান ওণার স্ত্রী। বিগত আট দশ বছর ধরে ওরা সহকর্মী। এলা কারো সাথে তেমন মিশত না,পুরুষ সহকর্মীদের থেকে তো দশহাত দূরত্ব বজায় রাখত বরাবর। ওর দুর্ভাগ্যের কথা যত কম লোক জানে, ততোই ভাল। মানুষের অনাবশ্যক কৌতুহল বড়ই অবাঞ্ছনীয় এবং অসহনীয়ও বটে। 
মিন্টির মাধ্যমেই রাজীবদার সাথে আলাপ এবং কিছুটা হৃদ্যতা। মিন্টির বড় প্রিয় রাজীব মামা। মায়ের সাথে সমস্যা হলে,বা মায়ের শরীর খারাপ থাকলে মাঝে মাঝে মিন্টিকে নিয়েই ডিউটিতে আসত এলা।সারাদিন ঘুরে ঘুরে সবার সাথে ভাব জমাত মিন্টি।  মিন্টির ভালো নাম গুলমোহর শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল রাজীব। “ওরকম নাম কেন?মোহর শুনেছি। গুল-মোহর, তুই খুব গুল মারিস বুঝি?” রাজীবের সিরিয়াস মুখে প্রশ্ন শুনে হো হো করে হেসে উঠেছিল মিন্টি। তারপর পাকা বুড়িদের মত বলেছিল, “গুলমোহর হল তোমাদের কৃষ্ণচূড়া। আমার জন্মের আগেই মা ঠিক করেছিল,ছেলে হলে নাম রাখবে অমলতাস। আর মেয়ে হলে-”। এলা অবশ্য আগ বাড়িয়ে কখনই কথা বলত না রাজীবের সাথে, ওই বলত। খোঁজখবর নিত মিন্টির। এলার অনুমতি নিয়ে মিন্টিকে আইসক্রীম খাওয়ানো,টুকটাক গল্পের বই কিনে দেওয়া এইভাবে বেড়েছে পরিচয়। দামি উপহার অবশ্য কখনও দেয়নি, দিলেও এলা নিত না। পৃথিবীতে বন্ধু বা হৈতেষী বলতে বোধহয় শুধু রাজীবমামাই আছে মিন্টির।রাজীবই জানিয়েছিল, মিন্টি লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের বিয়ের ছবিতে নিজের বাবাকে খোঁজে না,খোঁজে নিজের হাসিখুশি সুন্দরী মাকে। এলার কষ্ট,এলার চোখের জল সইতে পারেনা মিন্টি। ঠিক যেমন এলা পারে না মিন্টির দুঃখ সইতে।   দাদারা যখন বইখাতা আটকে দিল,কাঁদতে কাঁদতে নাকি রাজীবমামাকেই ফোন করেছিল মিন্টি। এলা জানেও না কখন।মিন্টি বলেছিল ও ছেড়ে দেবে পড়াশোনা। রাজীব নাকি সেই শুনে এমন গালমন্দ করেছিল, যে মিন্টি ভয়ে আর পড়া ছাড়ার কথা ভাবেনি। স্যার ম্যাডামদের কাছে গিয়ে নিজের সমস্যা খুলে বলার পরামর্শ ও রাজীব দিয়েছিল। বন্ধুরাও হেল্প করেছে মিন্টিকে। সব নোট নতুন করে যোগাড় হয়েছে। এলা আর মিন্টির দুঃসময়ে নিজে অবশ্য আসতে পারেনি রাজীব। কারণ এলার বাপের বাড়ির লোকজন বা ভাড়া বাড়ির প্রতিবেশীরা কি ভাববে। এমনিতেই এ সমাজ নারীদের চরিত্রহননে সদা প্রস্তত। আর তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেয় নারীরা। এই আতঙ্কে কর্মস্থলেও বেশী বাক্যালাপ করে না এলা । রাজীবই গায়ে পড়ে কথা বলে। খোঁজখবর নেয়।  গোটা চারেক বইও রাজীবই কিনে দিয়েছে।এই নিয়ে খুব রাগ দেখিয়েছে এলা, কারো দয়ায় বাঁচতে চায় না ওরা। বইয়ের দামটা ও ধার হিসেবেই নিয়েছে, সময়মত শোধ করে দেবে। সেটা জানিয়েও দিয়েছিল চাঁচাছোলা ভাষায়।  পরে হাল্কা খারাপ লেগেছিল যদিও, মানুষটার তিনকূলে কেউ নেই। হৃদয় ভরা স্নেহের ভাণ্ডারের কিছুটা ভাগ মিন্টি পেয়ে ধন্য হয়ে গেছে। কোন পুরুষ মানুষের স্নেহ বা দুটো মিষ্টি ভরসা দেওয়া কথাও কোনদিন শোনেনি মেয়েটা। তবে এলা অকারণ জটিলতা পছন্দ করে না। এভাবেই মানিয়ে চলতে হবে মিন্টিকে। 
অ্যাম্বুলেন্সের জানলা দিয়ে হু হু করে ঢুকছে বসন্তের ঈষৎ  উষ্ণ নোনতা মাতাল হাওয়া। দূষিত মহানগরের ধোঁয়া ছাপিয়ে কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে হাসনুহানা আর কাঁঠালিচাঁপার মিলিত সৌরভ। বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে আড় চোখে তাকাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল এলা। রাজীব এতক্ষণ ওকেই দেখছিল।

এই বাসন্তী নিয়নের আলোয় বড় মায়াময় লাগছে রাজীবকে, গালের না কামানো দাড়ি, কানের পাশের পাকাচুল, চোখের চশমা, কপালে উড়ে আসা চুলের গোছা সবই যেন বড়ই মনমোহন।
পাশের আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে হঠাতই মুগ্ধ হয়ে গেল এলা, এখনও মসৃণ মুখের ত্বকে ঝিলিক মারছে রাস্তার লালচে সোনা আলো।সাদা আর সিমপাতা রঙের সিন্থেটিক শাড়ি আর সবুজ ব্লাউজটাও ততোটা খারাপ নয়,বরং বেশ ভালোই মানিয়েছে এলাকে।  ঘাড়ে আলগা নেতিয়ে থাকা মোটাসোটা হাত খোঁপায় যেন আরো মিষ্টি লাগছে ওকে, প্রবল হাওয়ায় দুটো চারটে পাকা চুল এদিকে ওদিকে উঁকি মারছে বটে,তাতে যোগ হচ্ছে এক অন্য মাত্রা।গালের গুটিকয় মেচেতা আর চোখের তলার হাল্কা কালি যেন সদম্ভে ঘোষণা করছে এ নারী সাধারণ না। এ নারী বড় মোহময়ী, এর পরতে পরতে রহস্য। সেদিনের ভীতু বছর সতেরো- আঠারোর লজ্জাশীলা কিশোরীর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা এ নারী জীবন যুদ্ধের এক অদম্য  সৈনিক। জীবন একে নিয়ে না,বরং জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এ নারী আজ বড় পরিণত। এর আগে তো কখনও এসব মনে হয়নি এলার। আজ তবে কেন?
আড়চোখে তাকাতে গিয়ে আবার মিলন হল চার চক্ষুর। ধুর কি যে সব হচ্ছে, সব হিসেব কেন যে গড়বড় হয়ে যাচ্ছে আজ। ফোন এল রাজীবের, স্ক্রীনে ফুটে উঠল- গুলমোহর। মিন্টি ফোন করছে?এলা কিছু বলার আগেই,  গাড়ি চালাতে চালাতেই ফোন ধরল রাজীব, “হ্যাঁ গুলু,নিয়ে যাচ্ছি তোর মাকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল, এত বড় ধেড়ে মেয়ে। খুব করে শাসন করে দিস  তো মা। কিচ্ছু বোঝে না তোর মাটা। এক্কেবারে হাঁদাগঙ্গারাম যাকে বলে-”। ফোনের ওপাড়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল গুলমোহর, এলার একান্ত আপন কৃষ্ণচূড়া, ফোন ছাপিয়ে যেন গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল বাসন্তী ফাগ- গাড়ি ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে শহরে। এলা-রাজীবের গালেও কি লাগল সে ফাগের ছোঁয়া? কে জানে? আকাশে তখন স্বমহিমায় দেদীপ্যমান সোনার থালার মত বসন্তপূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্র।
(শেষ)

No comments:

Post a Comment