Friday 13 March 2020

অনি এবং তুত্তুরীর ডাইরি, ১৩ই মার্চ ২০২০


প্রথম বলেছিল এষা। “দিদি কনকদি কি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছে?” কনকদি হল তুত্তুরীর আদরের মাসি। যিনি পাঁচ দিন বয়স থেকে তুত্তুরীকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন। তিনি সম্প্রতি একটি অ্যানড্রয়েড ফোন কিনেছেন এটা ঘটনা, নিয়েছেন জিও সিমও। কাজেই খুলতেই পারেন। জানালাম, হবে হয়তো। এষা একগাল হেসে বলল, “কি করে জানলাম বলো তো? শ্রীমান কুট্টুসকে তিনি একটি রিকু পাঠিয়েছেন। তাঁর ডিপিটি বড়ই জ্বলজ্বলে, তবে তাঁর মুণ্ডহীন কবন্ধই কেবল দৃশ্যমান। আর যার থোবড়া জ্বলজ্বল করছে তিনি হলেন শ্রীমতী থুড়ি কুমারী তুত্তুরী। ” 
মাসির ফোন আর ইন্টারনেটের ওপর তুত্তুরী যে সুযোগ পেলেই চোরাগোপ্তা আক্রমণ তথা দখলদারি চালায় এটা আমাদের অজ্ঞাত নয়। শ্রীমান কুট্টুস যে তুত্তুরীদিদির প্রিয় ভাই এবং বন্ধু তা আশা করি আপনাদের অজ্ঞাত নয়। আর মাসির যে খুব একটা কুট্টুস পিরিত নেই, এটা এষার অজ্ঞাত নয়। সুতরাং বুঝলেন কি না-

ব্যাপারটা এই অবধি থাকলে তো ভালোই হত। সম্প্রতি আমাদের জবা গাছে একটা এত্ত বড় কমলা ফুল ধরেছিল। মরশুমের প্রথম ফুল। আমার ব্যালকনি বাগিচা আমার বরের যতই অপছন্দ হোক না কেন, মাসির বড়ই প্রিয়। মাসি সেদিন সপ্তাহান্তিক ছুটিতে ছিল। ফিরে আসার দিন দুয়েক পরের সকাল গাছে জল ছিটোতে গিয়ে মনে পড়ে গেল, মাসিকে বলতে গেলাম মরশুমের প্রথম ফুলের গল্প- মাসি আমায় থামিয়ে বলল, “হ্যাঁ। জানি তো। তুমি তো ছবি ছেড়েছিলে-”। ছবি তো আপলোডিয়ে ছিলাম আমার দেওয়ালে,মাসি তো আমার বন্ধু নন, মাসির তো দেখতে পাবার কথা না- ভাবতে গিয়ে খুঁজে পেলাম কারণ। ছবির সেটিংসটি ছিল পাবলিক। অর্থাৎ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল আমার ফুল-  বাপরেঃ আমার প্রোফাইল খুঁজে এবং ঘেঁটে আমার “জবু”র ছবি দেখেছে মাসি! বুঝতে বাকি রইল না, এত খাটুনি আসলে কে খেটেছে-
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে একটু আগে, সদ্য আপিস থেকে ফিরে একটু জিরোতে বসেছি মরশুমে প্রথম চালানো বাতানুকূল যন্ত্রের ছত্রছায়ায়। পাশে শুয়ে ডিগবাজি খাচ্ছে তুত্তুরী। আজ্ঞে হ্যাঁ। আজ তার সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই ডিগবাজির সংখ্যাও বেড়েছে বৈকি। এমনি একটি ডিগবাজির ফাঁকে আবিষ্কার করলাম, চোখের পাতায় লাগানো আমার মাস্কারা।আর হ্যাঁ গা থেকে ভুসভুস করে  ভেসে আসছে পর্যায়ক্রমে বডি লোশন এবং পারফিউমের ফুলেল সুবাস। রাগটা কোঁৎ করে গিলে নিলাম। আহা পরীক্ষা শেষ হলে এই বয়সে এট্টু আধটু এসব না করলে, আর কবে করবে। মা কিছু বলছে না দেখে বোধহয় সাহস বেড়ে গেল তুত্তুরীর, পরের ডিগবাজিতে মায়ের গায়ের ওপর উঠে আদুরে নালিশের ভঙ্গীতে জানতে চাইল, “মা তুমি কতদিন আর তুত্তুরী উবাচ লেখ না।” নাঃ রাগটা ঠিক গিলতে পারিনি বেশ বুঝলাম। তাই জানালাম, তুত্তুরী আজকাল খালি পাকামো করে, তেমন কিছু বলে না যা দিয়ে উবাচ লেখা যায়। মিনিট দুয়েক নীরবে চার হাতপা এক করে ডিগবাজি খেয়েই পরের প্রশ্ন বাবাকে, “বাবা কেউ লম্বা, কেউ বেঁটে হয় কেন?”
ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিল তুত্তুরী আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে। যা নিয়ে রচিত হয়েছিল সেই দিনের তুত্তুরী উবাচ এবং ফেবুর মনে করিয়ে দেবার সুবাদে যা নিজের দেওয়ালেই আবার শেয়ার করেছি আমি আজ সকালে।
নাঃ আর রাগ সামলানো গেল না মাইরি। এই ভাবে মাসির ফোন দিয়ে আমাকে “স্টক(stalk)” করা? দিলাম উদোম ঝাড়। তুত্তুরী সাংঘাতিক ভয় পায় “ব্লু হোয়েল”কে। বেশী ফোন ঘাঁটলে বাচ্ছাদের শরীরে ব্লু হোয়েল ঢোকে এটা তুত্তুরী জানে। জানা সত্ত্বেও এমন ভুল করল? ছিঃ। কতখানি ঢুকে গেছে গো ব্লু হোয়েল। কাল সকালে না নাক-কান দিয়ে ব্লু হোয়েলের ছানা বেরোয়। শাস্তি স্বরূপ আজ ঠাকুর ঘরে একাকী শুয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে তুত্তুরীকে, যদি মা দুগ্গার কৃপায় মরে ব্লু হোয়েলটা।দিব্যি বালিশ চাদর নিয়ে শুতে যাচ্ছিল তুত্তুরী। ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া চোখমুখ দেখে কি অপরিসীম আনন্দ যে হচ্ছিল, মাঝখান থেকে  বাবা ফস্ করে বলে উঠল, “আর তোর মধ্যে যে ব্লু হিপোটা ঢুকেছে তাকে বার করবি কি করে?” উফ্ যেমন বাপ তার তেমন মেয়ে। মূর্তিমান আপদ যত-

No comments:

Post a Comment