Sunday, 31 July 2016

মধ্যরাতে মনখারাপে-


নমস্কার কলকাতা। কেমন আছেন সবাই?
 ঘড়ির কাঁটা বলছে এখন মধ্যরাত্রি , আর আমি রুদ্রাণী নিয়ে এসেছি আপনাদের প্রিয় অনুষ্ঠান ,‘মধ্যরাতে মনখারাপে-’।
তিনদিন ধরে আকাশভাঙা বৃষ্টি,  জল থইথই মহানগর।
জনহীন পথঘাট, এমন রাতে নরম বিছানা ছেড়ে আসতে কার ইচ্ছা করে?
কিন্তু আর জে মনখ্যাপার যে মন খেপেছে, তাই বুঝি সে নিরুদ্দেশ-
আর আমি? আমি নিরুপায়- আমি নিবেদিত প্রাণ আমার শ্রোতাবন্ধুদের প্রতি।
তাই তো এসে হাজির হয়েছি,  এবার আপনিও আসুন না-
 খুব জমবে, আপনি, আমি আর?
এমন জনহীন বর্ষণমুখর মধ্যরাতে গা ছমছমে ভূতের গল্প।
আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, ভূত।  জানা আছে কি এমন গল্প?  তাহলে এখুনি ফোন করুন  উদ্দাম এফ এম এ।
আমি বসে আছি আপনার পথ চেয়ে না জানি কোন শতাব্দীর ওপার থেকে।
দেখি, লাইনে কে আছে? হ্যালোঃ
- মিতু।
-ক-কে? ভুল হয়ে গেল দাদা আমি মিতু নই। আমি রু-
-জানি। তুমি আর জে রুদ্রাণী, কিন্তু সে তো তোমার ছদ্মনাম মিতালি ।
- মি-তা- লি?
-হ্যাঁ মিতালী। লাখটাকার লাখটোকিয়া   স্কুলের ফার্স্ট গার্ল মিতালি ধাড়া দেখ তো আমায় চিনতে পার কি না?
- কে তুমি?
-সে কি? আমি না তোমার প্রথম প্রেম?
- কি যাতা বলছেন? আমি ফোন রাখছি।
- দেখ রাখতে পার কি না। আজ আবার ১৬ই অগস্ট। আজ আবার শনিবার।
- উফ লাইনটা কাটছে না কেন?কন্ট্রোল রুমে সবাই ঘুমোচ্ছে না কি?
- ভয় করছে মিতালী? তবে যে বললে এমন জনশূন্য বর্ষণময় মধ্যরাতে শুধু তুমি আমি আর গা ছমছমে ভূতের গল্প?
- দেখুন, ভাল লাগছে না আর-।
- ভাল তখন তো লাগত? তুমি আমি আর ভিজে কৃষ্ণচুড়া। আমার লাগত জান।
মনে হত এভাবেই হেঁটে যাই তোমার পাশাপাশি।
অবিশ্বাসী বস্তুবাদী মন আমার ক্ষণিকের জন্য  বিশ্বাস করে নিত তোমার মধুমাখা কথা গুলো।
জানতাম।  বিশ্বাস কর, জানতাম লাখটোকিয়া স্কুলের মিতালিরা কখনই গুরুচরণ শিক্ষালয়ের রুপমদের প্রেমে পড়ে না। তবুও-
আজ বলবে? কেন খেলেছিলে সেদিন?
-ফোন রাখুন।  প্লিজ কেউ কি নেই আজ এই স্টেশনে। সবাই মরে গেল নাকি?
- একি মিতু তুমি কাঁদছ? আমার মাও কেঁদেছিল জানো? খুব কেঁদেছিল।  তোমায় তো সবই বলেছিলাম, আমাদের ভাড়াবাড়ি। বাবার মুদির দোকান-
তিন দিনের জ্বরে যখন চলে গেল বাবা আমি তখন ষোলো । মা চাইতো আমি দোকান চালাই।
আমার শখ কমপক্ষে স্নাতক হব - তোমার সাথে প্রথম দেখা বছর খানেক পর।
-রুপমঃ।  তুমি তো-
- চিনলে মিতু? অবশেষে।
- তু তুমি তো?
- মরে গেছি? ধাক্কা  দিয়েছিলে তুমি। মনে আছে?
-বিশ্বাস কর।  ইচ্ছে করে নয়- আমি-
-কি?  বোঝোনি বুঝি? পড়লে আমি বাঁচব না?
- রাগের বশে।  রুপম বয়সটাও কম ছিল- প্লিজ বোঝ।
- দুর্ঘটনা? এটাই বলেছিল মাকে।  তোমার কাকা মস্ত পুলিশ। তোমার বাবার অনেক টাকা।
-রুপম- আমি-সরি।
-সরি? বড্ড ছোট শব্দ সোনা- খোঁজ নাওনি তো, এত বছরেও।
- ওরা বলেছিল তুমি- তুমি-
-মরে গেছি? আর তুমিও বিনা  বাক্যব্যয়ে চলে গেলে ব্যাঙ্গালোর? পড়া, চাকরি, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফিরে এলে কলকাতা। এখন তুমি আর জে রুদ্রাণী। রোজ সকালে, “মন -খেয়া”তে সুরে ভাসাও কলকাতা।
-এত খবর? তবে কি?
-নাঃ। বেঁচে নেই। হারিয়ে গেছি চিরতরে ষোল বছর আগেই।
- কে তুমি? কি চাও?
- মনে আছে মিতু, তুমি বলেছিলে হবে আমার ছায়াসঙ্গী।  আজ আমি নিজেই ছায়া- সঙ্গীর বড় অভাব- তাই তো তোমায় ডাকতে এলাম।
-নাঃ।  নাঃ।  নাঃ।
- এস মিতু।  তিনটৈ বাজে, আর দেরি নয়-
- না না না না না♥♣♠♦
#aninditasblog
https://amianindita.blogspot.in

No comments:

Post a Comment