Saturday 4 December 2021

অনির ডাইরি ৩০শে নভেম্বর, ২০২১

 

#তাম্রলিপ্ত_কড়চা

প্রথম আলপেই পিলে চমকে দিয়েছিলেন জহর বাবু।আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর তাম্রলিপ্তের চার্জ নিয়েছি সদ্য। তখনও চিনে উঠতে পারিনি কাউকেই। নামও হয়নি মুখস্থ।  ইন্সপেক্টর-সিকেসিও- পিওনদের ভিড়ে খুঁজি এত দিনের পরিচিত মুখ গুলোকে। আপিসটা সদ্য উঠে এসেছে নিমতৌড়ির নব্য প্রশাসনিক ভবন চত্বরে। সবকিছু বড় ঝাঁ চকচকে এথায়। তুলনায় আমাদের আপিসটাই বেশ অগোছালো। পূর্বসুরীরা অনেকটাই করে দিয়ে গেছেন, এবার গুছিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। 


জানলার বাইরে খোলা মাঠ আর ফুটে থাকা থোকা থোকা কাশফুলের দিকে তাকিয়ে তাই হয়তো ভাবছিলাম, এমন সময় চেম্বারের দরজার বাইরে থেকে কে যেন বলল, ‘সেলাম ম্যাডাম। ’ চমকে তাকিয়ে দেখি, দরজার বাইরে করজোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন পাঞ্জাবি-পাজামা-জহর কোট পরিহিত জনৈক ব্যক্তি। গলায় তুলসি কাঠের মালা, কপালে এত্ত বড় বড় মেটে সিঁদুরের টপ্পা। প্রথম দর্শনে মনে হয়েছিল, কোন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি হবেন। তবে কোনো সাংগঠনিক নেতাকে কোনদিন টপ্পা পরে লেবার আপিসে আসতে দেখিনি। নিজেকে সামলে জানতে চাইলাম, ‘হ্যাঁ বলুন?’ জবাব এল, ‘কিছু বলবনি ম্যাডাম। এমনি আর কি। আমি জহর বাবু। এই আপিসের ডিসিএন।’ যাঁরা জানেন না তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, ডিসিএন হল দারোয়ান কাম নাইটওয়াচ ম্যান। 


গতকাল ঝাঁক বেঁধে সবাই এসেছিল আলাপ করতে, এই ভদ্রলোককে তখন দেখেছিলাম কি না মনে পড়ল না। নির্ঘাত দেখিনি। দেখলে মনে থাকত, অমন টপ্পা। প্রশ্ন করার আগেই উত্তর ভেসে এল, ‘কাল আপনার সঙ্গে দেখা হয়নি। এট্টু দরকার ছিল, তাই রবিকে বলে বাড়ি চলে গেছলুম। ’রবিবাবু এই আপিসের পিওন। খামোকা আমি থাকতে তাঁকে বলে কেন গিয়েছিলেন বুঝলাম না। সামান্য ডেঁটে বললাম, ‘পরের বার থেকে আমাকে বলে যাবেন। ’ উনি ঘাড় নেড়ে সুরেলা গলায় বললেন, ‘আজ্ঞে। ’ 


দিন কয়েক পরের কথা, ততোদিনে আমি জেনে গেছি, জহর বাবু আর দিন কয়েকের মেহমান মাত্র।নভেম্বর মাসেই ওণার কর্মজীবন শেষ। তবে উনি আমাদের ছেড়ে যেতে ঘোরতর ভাবে অনিচ্ছুক। আমরা ওণাকে রেখে দিতে ততোধিক ইচ্ছুক, কিন্তু ফাণ্ডের যে বড় আকাল।


 ততোদিনে আমি জেনে গেছি জহর বাবু অত্যন্ত মজার মানুষ। মজাটা উনি জেনে বুঝে করেন নাকি ওণার আচরণে নিছক আমোদিত হই আমরা বলা বেশ মুস্কিল। যেমন ধরুন উনি মাঝে মধ্যেই আমার চেম্বারের দরজা খুলে মুণ্ডু গলান আর বলেন, ‘প্রণাম ম্যাডাম বা সেলাম ম্যাডাম। ’ এত সেলাম আমার গুষ্টির কেউ কোন জন্মে পায়নি রে বাবা। ওণার সেলাম আমি নিলাম কি নিলাম না সেটা নিয়ে ওণার মাথাব্যথা নেই। 


সেদিন কি যেন কাজে সেকশনে গেছি,জহর বাবু এক গলা জিভ কাটলেন। ‘এই যাঃ ম্যাডাম, আমরা সব খেয়ে ফেললুম, আপনাকে তো দিলুম নি। ’ হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। তখন ঘড়িতে সন্ধ্যা পাঁচটা বেজে গেছে। ঘোর অন্ধকারে ডুবতে বসেছে নিমতৌড়ির নতুন কালেক্টরেট। জহর বাবুর হাতে একটা হাফ পাউণ্ড পাঁউরুটি আর ওণার সামনে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা শান্তনু, শুভাশিস, হক বাবু বা রবি বাবুর হাতে কাগজের চায়ের কাপ। যুগপৎ জহর বাবু আর আমার ভেবলে যাওয়া অবস্থা দেখে বাকিরা কুলকুল করে হাসছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে হো হো হাসিতে ফেটে পড়লাম আমিও। শুধু জহর বাবু প্রচণ্ড সিরিয়াস। 


যেমন ধরুন মাঝে মাঝেই আমার আপিসে চলে আসেন শ্রীমতি তুত্তুরী। বিশেষতঃ মাসি না থাকলে তো আমার আপিস ছাড়া গতি নেই। আমার মিটিং ইত্যাদি থাকে তাই হলদিয়ার বড় সাহেবের ফাঁকা চেম্বারে আস্তানা গাড়েন শ্রীমতি তুত্তুরী। চুঁচুড়া আপিসে প্রীতি, রমেশ, ঝুমা কত্তজনের সাথে যে বন্ধুত্ব ছিল তুত্তুরীর। এ আপিসে তারা কেউ নেই বটে,তবে জহর বাবু আছেন। জহর বাবু ফাঁক পেলেই গিয়ে তুত্তুরীকে প্রশ্ন করেন, ‘তা আমাদের ম্যাডামকে তোমার কেমন লাগে?’ যুগপৎ আনন্দিত এবং ক্রোধিত হয়ে তুত্তুরী জবাব দেয়, ‘কেমন আবার লাগবে?  ম্যাডাম তো আমার মা।’ ঘাড় নাড়তে নাড়তে চলে যান জহর বাবু। আবার খানিক বাদে ফিরে আসেন, প্রশ্ন করেন, ‘তা তোমার বাবা কি করেন?’ হতবাক তুত্তুরী বলে, ‘বাবা এসডিও না?’ জহর বাবু কাঁচাপাকা দাড়িগোঁফ চুলকে বলেন, ‘হ্যাঁ। হ্যাঁ। তাই তো। ম্যাডাম তো এসডিওকে বিয়ে করেছে-’। আজ এত বছর বাদে এত ধেড়ে কন্যা সন্তানের জননী হয়েও আমি কাউকে বিয়ে করেছি, শুনে হেব্বি খুশি হয়ে যায় দিল। 


তো এ হেন জহর বাবু বিদায় নিলেন বিগত ৩০শে নভেম্বর। চটজলদি চাঁদা তুলে আয়োজন করা হল তাঁর বিদায় সম্বর্ধনা। ভালো থাকবেন জহর বাবু। আমরা জানি আপনি ভালো থাকবেনই। আপনার মত মানুষেরা কখনও খারাপ থাকে না। তারা যেখানেই যায়, মাতিয়ে রাখে আসেপাশের মানুষগুলোকে।

অনির ডাইরি ১লা ডিসেম্বর, ২০২১

 


#সব_চরিত্র_কাল্পনিক


সে অনেককাল আগের কথা। তারপর কত্ত কি হল, বারো বছরের বনবাস, এক বছরের অজ্ঞাতবাস, আরো না জানে কত, কত কি। সেদিনও এমনিই মিঠে রোদ উঠেছিল। বাতাসে ছিল হাল্কা হিমেল স্পর্শ। অল্প ধোঁয়াশা-কুয়াশা মাখা মহানগর জুড়ে কেমন যেন উৎসবের গন্ধ। রামধনু রঙা পশম আর পশমী পোশাকের পসরা সাজিয়ে ওয়েলিংটনে বসেছিল একেবারে পুতুলের মত দেখতে ভুটিয়া নরনারীর দল, ময়দানে বাঁশ বাঁধছিল যেন কারা, মেলা বসবে যে।  


সেজে গুজে, সবথেকে ভালো জামাটা পরে বেরোল যখন মেয়েটা, ঘড়ি বলছে বেলা এগারো। সাজতেও তেমন জানত নাকি মেয়েটা? সাজ বলতে তো সেই ল্যাকমের ক্লেনজিং মিল্ক, আয়ুরের গোলাপী টোনার আর ভ্যাজলিন বডি লোশন। তাই মুখে মাখত মেয়েটা। তার ওপরে ল্যাকমের সানস্ক্রিন, চোখে ল্যাকমেরই কালো আইলাইনার আর ঠোঁটে লিপস্টিক। লিপস্টিকও একটাই ছিল মেয়েটার। গোলাপী রঙের। ভাগ্যে অমন সুন্দর সোনালী পশমী রোদ উঠেছিল, তাই না অমন অপরূপা লাগছিল মেয়েটাকে। অন্তত মেয়েটার তাই মনে হয়েছিল বটে সেদিন, ‘আমি অপরূপা। আমি অতুলনীয়া।’ সবই মরশুমের দোষ মশাই। 


হেঁটে হাওড়া ময়দান। সেখান থেকে বৈষ্ণবঘাটা মিনি। থিয়েটার রোডে নামবে মেয়েটা। প্রতীক্ষা করছে কেউ। এর আগে একবার দেখা হয়েছিল বটে, সে আরো অনেককাল আগের কথা। ভালো করে আলাপ পরিচয় কিছুই তেমন হয়নি। ছেলেটাকে হেব্বি নাক উঁচু মনে হয়েছিল মেয়েটার। বড় বেশী সবজান্তা। জানিস তো জানিস, তাই বলে দেখানোর কি আছে রে ভাই। না হয় তুই সোনারটুকরো, আমি ঢিপচালতি গোবরগণেশ। তাই বলে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর কি আছে? কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া, গোবরগণেশকে গোবরগণেশ বলতে নেই, এটাও জানিস না? 


তবে সে সব অবশ্যি, এখন অতীত। বিগত কয়েকমাসে দূরভাষের মাধ্যমে বন্ধুত্ব বেশ ভালোই হয়েছে উভয়ের। প্রাথমিক খোলস, সঙ্কোচের বাঁধন খোলার পর দুজনেই তাজ্জব হয়ে গেছে। বড় বেশী রকম মিল উভয়ের মধ্যে। কোথাও যেন মিলে যায়, অনুরণন সৃষ্টি করে উভয়ের হৃদয়ের তরঙ্গ। যেমন যেমন ঘুঁচেছে হৃদয়ের দূরত্ব, তেমনি তিল তিল করে ফুলে উঠেছে মেয়েটা। বাড়িয়ে ফেলেছে বেশ কয়েককেজি ওজন। কে জানে ছেলেটা ওকে চিনতে পারবে কি না। কথাটা তুলেওছিল আগের রাতের আলাপে, উল্টোদিক থেকে জবাব এসেছে, ‘মানুষ মোটা হয় কি করে? এক জোড়া জুতো কিনে, দৌড়তে শুরু করো, সব ঠিক হয়ে যাবে। ’ বলেছিলাম না, বেশ আঁতেল আর অনেকটা কাঠখোট্টা ছেলেটা। 


থিয়েটার রোডের বেশ খানিক আগেই নামিয়ে দেয় বাসটা। সাহারা সদনের সামনে দাঁড়াবে ছেলেটা, দুরুদুরু বুকে হাঁটতে থাকে মেয়েটা। রাস্তা পেরিয়ে মুখোমুখি হয় তার সাথে, একটা সাদা ঢলঢলে গেঞ্জি আর সবজে প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সে। হাতে রোল পাকানো কাগজের বাণ্ডিল। ইতিউতি তাকিয়ে বোধহয় মেয়েটাকেই খুঁজছিল ছেলেটা। সামনে গিয়ে হাত নাড়তে সম্বিত ফিরে পেল ছেলেটা। অদূরে আরেক স্থূলাঙ্গিনীকে দেখিয়ে নার্ভাস ভাবে বলল,‘ আমি তো ভাবছিলাম ঐটা তুমি।’ 


বাকি গল্পটার সাক্ষী মহানগর, সাক্ষী রবীন্দ্রসদন আর নন্দনচত্বর। সাক্ষী ঋতুপর্ণা-সাহেব চ্যাটার্জি আর জয় সেনগুপ্তর ‘চতুরঙ্গ’। সাক্ষী একাডেমির পিছনের ছোট্ট ক্যান্টিন। আর সাক্ষী ধর্মতলা, নন্দন থেকে হাঁটিয়ে ধর্মতলা নিয়ে এসেছিল ছেলেটি। ততোক্ষণে অস্ত গেছেন সূয্যি মামা। জ্বলে উঠেছে মহানগরীর বুকের ওপর শতেক আলোকমালা। বেশ কয়েকবার ফোন করে ফেলেছে গুটি কয়েক ফাজিল বন্ধুবান্ধবের দল। ছেলেটি শুধু একবার জানতে চেয়েছিল, ‘আমার সাথে দেখা করতে এসেছো, এটা জানে না, এমন কেউ আছে?’ বাসে তুলে দিয়ে নীচে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটা। ক্লান্ত মেয়েটার মুখে তখন কয়েক হাজার ওয়াটের দ্যুতি। বাসে স্টার্ট দিল ড্রাইভার,কন্ডাকটর হাঁক পাড়ল ,‘হাওড়া-হাওড়া। বেবোন রোড- হাওড়া স্টিশন-ময়দান-কদমতলা। ’ হাত নাড়ল মেয়েটা। ঘুরিয়ে হাত নাড়ল না ছেলেটা, সামান্য মাথা নাড়ল শুধু। তারপর আলগোছে থুতনি চুলকে বলল,‘আরেকটু জোরে হাঁটা প্রাকটিশ করো। বড্ড আস্তে হাঁটো।’ এবং ‘মানুষ যে কি করে, মোটা হয়?’


আবারও বলছি কিন্তু, সব চরিত্র নিছক কাল্পনিক।

অনির ডাইরি ২৯শে নভেম্বর, ২০২১

 



যবে থেকে তাঁর পরীক্ষা শেষ হয়েছে, আমার সকালগুলো শুরুই হয় লাইভ তুত্তুরী উবাচ দিয়ে। যেমন ধরুন আজ সকালে শ্রীমতী তুত্তুরী বললেন ‘জানো তো মা, কাল না অমুকের ইয়ে(পড়ুন অন্তর্বাস) দেখেছি।’ সদ্য কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠেছি, তখনও কাটেনি খোঁয়ারি। সামনে রাখা এক গ্লাস উষদুষ্ণ গরম জলের দিকে কেষ্ট মুখুজ্জের মত চোখে তাকিয়ে ভাবছিলাম মালটা দিয়ে ঠিক যেন কি করি? মানে কি করতে বলেছিল আমার তন্বী ডায়েটিশিয়ান? দিব্য নিয়ম মেনে চলছিলুম, মাঝখান থেকে দিন দুয়েকের মহানগর বাসটা দিল সব চটকে। একদিন হাটারি, একদিন আর্সলান, একদিন সিটি সেন্টার, তারপর যে ডায়েট বানানটা মনে রাখতে পেরেছি সেই ঢের। শুক্রবার দুপুর থেকে রবিবার সন্ধ্যাটা যে কিভাবে গিলে নিল তিলোত্তমা, নিজেরাই বুঝতে পারলাম না। নিজ আলয় তথা নিজের শহর ছেড়ে আসার সে যে কি তীব্র মনোবেদনা-   


মহানগরের জাদু এই ছোট্ট শহরটায় নেই। তবুও বড় মনোরম এদিকের প্রাক শীতের সকালগুলো। বাতাসে কুয়াশা ভেজা মাটির মিঠে সুবাস, সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি খাওয়া আদুরে নরম পশমী রোদ, বারান্দার গ্রিলে ঝাঁক বেঁধে বসে রোদ পোয়ানো ফুলোফুলো ছাতারে পাখির দল,পাঁচিলের ওপারে থোকা থোকা কুয়াশা। এমন সময় কেউ কারো অন্তর্বাসের কথা যে কি তুলতে পারে, তা মা না হলে হয়তো জানতেও পারতাম না। তবেই না বলে, 'মা হওয়া কি মুখের কথা'। 


চমকে যাওয়া পিলেকে সামলে, হারিয়ে যেতে বসা বোধবুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়ে জানতে চাইলাম,সে কে? কোন নায়িকা বা উপনায়িকা নাকি? জবাব এল, তিনি শ্রীমতী তুত্তুরীর জনৈকা সহচরী। অনলাইন ক্লাশ চলাকালীন বোধহয়, তার হাঁটুতে কোন চোট লাগে, তাই তিনি ক্যামেরা অন থাকা অবস্থাতেই আতঙ্কিত হয়ে চেয়ারের ওপর সটান উঠে স্কার্ট নামিয়ে হাঁটু থেকে রক্ত মুচছিলেন। 


যেমন তুত্তুরী, তেমনি তার বন্ধুবান্ধব। দুদিন আগেই শুনছিলাম মিস কাকে যেন, ‘ইউ নটি গার্ল, ইউ অসভ্য গার্ল, ইউ হনুমান, বাঁদর, জলহস্তী, খ্যাঁকশেয়াল’ বলে গালাগালি দিয়েছিলেন। কারণ তিনি নাকি ক্লাশ চলাকালীন বন্ধুদের তাঁর অনাগত যৌবনের কিছু নিদর্শন দেখাচ্ছিলেন। মিস রেগে আগুন, তেলে বেগুন হয়ে গেলেও আমি রাগতে পারিনি। বিগত দুবছর ধরে কোন শৈশব নেই বাচ্ছাগুলোর। অহর্নিশি বাড়িতে থাকা,  ক্লাশ চলাকালীনই যা বন্ধুদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ হয় আর কদাচিৎ ভিডিও কলে প্রবল হৈহুল্লোড়। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের দল, দেহে এবং মনে কত পরিবর্তন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, কার সাথে ভাগ করে নেবে সেসব অনুভব? 


সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়ে, বাজে আপিস টাইমের ঘন্টা। আজ মাসি নেই, এত বড় বাংলোতে তো আর একা রেখে যেতে পারি না, তাই আমার সঙ্গে আমার আপিসে যাবে তুত্তুরীও। এই আপিসে হলদিয়ার বড় সাহেবের নামাঙ্কিত একখানি ফাঁকা চেম্বার আছে, যা তাঁর অনুপস্থিতির কারণে আজ ফাঁকাই থাকবে। সেই ঘরেই বসে ক্লাশ করবে তুত্তুরী। তবে স্কুল ইউনিফর্ম পরে নয়। 


ঐ ইউনিফর্ম পরে ভদ্রসমাজে মেলামেশা করা যায় না। একে তো দুবচ্ছর আগের, স্কার্টটা আর গলেই না, শার্টটারও সেই কটি বোতামই লাগে,যতটুকু ল্যাপটপের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। শুধু বোতামহীনই নয়,রীতিমত শতরঙী জামাটা। যত্রতত্র জাঁকিয়ে বসেছে হরেক রকম দাগ। যার মধ্যে কি না নেই-পেন্সিলের দাগ, প্যাস্টেল কালার, ওয়াটার কালার,তিন চার রকম জেল পেনের কালি, চকলেট। মোটামুটি সারাদিনে তুত্তুরী যা করে,যা খায় ওর শার্টটাও তাই করে এবং খায়। 


খেয়ে উঠে, থালাবাসন তুলে টেবিল মুছে, বেঁচে যাওয়া খাবার ঠাণ্ডা আলমারিতে তুলে, সেজেগুজে আপিস যাবার জন্য রেডি হয়ে গেলাম অথচ শ্রীমতী তুত্তুরীর বকবকানি আর থামেই না। বকেই চলেছেন অনর্গল। ক্লাশ থ্রিতে পিটি ম্যাম কি করতেন, চলছে সেই মহাকাব্য কথন। ম্যাম নাকি পিটি ক্লাসে খুঁটিয়ে চেক করতেন প্রত্যেকের ইউনিফর্ম, নখ, চুল ইত্যাদি। তারপর প্রশ্ন করতেন, ‘ইনার পরেছো? প্যান্টি পরেছ?’ প্রহারের ভয়ে সবাই বলত পরেছি। কিন্তু মিস নাকি ঠিকই বুঝতে পারতেন, কারা পরেছে আর কারা পরেনি। বলতেন এদিকে আয়, দেখি।  শার্টের গলা সামান্য টেনে ধরলেই দেখা যেত ভিতরে নাদুসনুদুস গা। অমনি কপালে জুটত কানমোলা। ওপরেরটা নিয়মিত চেক করলেও, তলারটা অবশ্য মিস কোনদিন চেক করার সাহস পাননি।ওটা মুখের কথাতেই বিশ্বাস করতেন। মিসের ভয়ে সবাই থরহরি হলেও, কে যেন ছিল সম্পূর্ণ বিন্দাস। তাকে মিস যখন প্রশ্ন করত, ‘ইনার?’ সে বলত, ‘নো ম্যাম’। মিস রেগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে জানতে চাইত, ‘প্যান্টি?’ নির্বিকার মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি জবাব দিতেন, ‘নো ম্যাম। ’ গোটা ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ত, আর হতাশ মিস চড়াও হতেন তার পরবর্তী ছাত্র বা ছাত্রীর ওপর। তার কপালে সেদিন সলিড দুঃখু থাকত। 


তাঁর গল্প শোনানোর এমন তাগিদে, যে তিনি আমার পিছন পিছন সারা বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত চানঘরেও ঢুকে পরছিলেন আর কি। তাঁকে যাও বা ধমকেধামকে তৈরি করলাম, মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন তাঁর পিতৃদেব। সব অবতার একেকটা। ভগবান বেছে বেছে আমার কপালেই দিয়েছেন। তাঁর নাকি আজ কি সব জমকালো, চমকালো মিটিং-ভিসি-ডেপুটেশন আছে অথচ তিনি যে শার্টটা পরে বেরোচ্ছেন তা আমার মায়ের ভাষায়, 'রাস্তায় ফেলে দিলেও কেউ কুড়াবে না'। কুঁকড়ে-কুঁচকে এমন বিশ্রী অবস্থা। 


তা তাঁর শার্ট, তাঁর মিটিং, তাঁর ভিসি। আমার কি? কিছুই না। তবুও আমায় অভিযুক্ত হতে হয়, আমার জন্যই নাকি তাঁর এই দুরবস্থা, আমি কেন সময় থাকতে ইস্ত্রি করে দিইনি। আবার ইস্ত্রিওয়ালাকে দিতেও দিইনি। যত নষ্টের গোড়া নাকি আমিই। দোষ যে আমার কিছুটা আছে তা মানছি, কোন বিস্মৃতপ্রায় অতীতে আমিই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সোহাগ করে বলেছিলুম, ‘ওগো, কেন আর খামোখা ইস্ত্রিওয়ালাকে দেবে, তার থেকে আমায় আমায় দিও, আমি করে দেব।’ তারপর বেশ দুয়েক বার করেও দিয়েছিলাম।ভেবেছিলুম খুশি হবে, কিছু বকশিশ অন্তত পাব। ওমা সে গুড়ে বালি। বকশিসের ভাঁড়ে ভবানী, উল্টে পাওনা বলতে গুচ্ছ খানেক নালিশ, অভিযোগ আর অভিমান।


বাবা বাছা করে, শাশুড়ি মাতার অভিমানী ছানার মান ভাঙিয়ে, শার্ট খুলিয়ে চটজলদি ইস্ত্রি করতে করতে মনে হল, নাঃ বউ হওয়াও মোটেই মুখের কথা নয়। হেব্বি চাপ মাইরি।


ইয়ে ছবিতে সদ্য ইস্ত্রি করা জামা গায়ে তিনি। না খুশি হলেন না পেলাম বকশিশ 😏। উল্টে শুনতে হল, ইস্ত্রীওয়ালা নাকি আরো অনেক ভালো ইস্ত্রি করে।

Saturday 20 November 2021

অনির ডাইরি ১৯শে নভেম্বর, ২০২১




‘বাঙালির দীপুদা’। যিনি বললেন, ভাগ্যচক্রে তিনিও দীপুদা। সময়টা ২০০৭ সাল। সদ্য সদ্য লেবার সার্ভিসে যোগ হয়েছে চোদ্দ জন নবীন সদস্য। নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের এগারো তলায়, জনৈক সদ্য অবসৃত বড় অফিসারের ঘরে জমে উঠেছে আমাদের ঠেক। মাঝে মধ্যে টুকটাক ডাক পড়ে বড় মেজ সাহেবদের ঘরে, ঘাড়ে চাপে ছুটকো দায়িত্ব, আলাপ জমাতে আসে বিভিন্ন জেলার সিনিয়র দাদা-দিদিরা। অন্য সময়টা নিছক আমাদের হুল্লোড়ের। চাকরি জীবনের সেরা সময় বলতে পারেন। 

তেমনি কোন জমে ওঠা আড্ডার ফাঁকে দীপঙ্কর দা ওরফে শ্রী দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় বললেন উপরিউক্ত শব্দবন্ধ। এখন বলতেই পারেন,ব্যাচমেটকে দাদা বলো কেন? এতো দস্তুর নয়। না নয়। এর কারণ বলতে হলে, একটু ঢাক পিটোতে হয় এই আর কি। আমাদের ২০০৫ ব্যাচের তিন মহিলা অফিসারের মধ্যে ছিল এবং শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এখনও আছে ভয়ানক সৌহার্দ্য এবং বেশ অনেকটা ভালোবাসা।  আজও আমাদের তিনজনের যেকোন একজনের অপছন্দের লোককে পছন্দ করি না বাকি দুই জন।  আবার তিনজনের যে কোন একজনকে যদি পটাতে পারেন, তো বাকি দুজনের বন্ধু হতে সময় লাগবে এক পলক। তো এ হেন তিন বান্ধবীর অন্যতম শ্রীমতী (আর একবার ছিমান বা ছিমতী লিখলেই মারবে বলেছে শৌভিক, কি জ্বালা) সুকন্যা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীপুর জুনিয়র। দুজনেই লেবার গিরি শুরু করার আগে যুক্ত ছিল ভূমি রাজস্ব দপ্তরে। ফলে দীপু ছিল সু এর দাদা। অতএব আমাদের তিন কন্যারই দাদা। দীপুর সৌজন্যে বিদেশ-সবুজ- পার্থ- তপন সকলেই হয়ে যায় দাদা। এবং এখনও পূর্ণ বিক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে দাদাগিরি। ব্যাচের সবথেকে মুখরা মেয়ে হিসেবে আমি যদিও বা মাঝে মাঝে, এই ব্যাটা দীপু বা তপন বা সবুজ করি, বাকি দুই নক্ষী মেয়ে আজও শ্রদ্ধাবনত চিত্তে দীপুদা- তপন দা ইত্যাদিই করে। 

যাই হোক, আবার ফিরে যাই ২০০৭ সালের সেই দিনে, যেদিন দীপুর মুখ নিঃসৃত বাঙালির দীপুদা শুনে আমি ভেবলির মত প্রশ্ন করেছিলুম, তিনি আবার কে? উফঃ আজও মনে পড়ে, বলা মাত্রই সরস্বতী ব্যতীত বাকি এক ডজন চোখ কেমন সার্চলাইটের মত ঝপ করে ঘুরে গিয়েছিল আমার দিকে। এ কোথাকার অগা রে? যাই হোক,আমাদের দীপুদা অবশ্য বুঝিয়ে বলেছিল দীঘা-পুরী-দার্জিলিং এর গল্প। পুরী আর দার্জিলিং ঘুরে এলেও তখনও পা রাখিনি দীঘায়। 

বিয়ের পর বরকে শুধালাম, হ্যাঁ গা, তুমি দীঘা গেছ? যায়নি শুনে সে কি আনন্দ। বিয়ে এবং শৌভিকের ব্লকের দায়িত্ব ঘাড়ে নেবার অন্তর্বর্তী সময়ে আমাদের তিন দফা মধুচন্দ্রিমার প্রথমটিই ছিল দীঘায়। পুরানো দীঘা, হোটেল ব্লু ভিউ। মুখের কথায় সবথেকে ভালো সি ফেসিং রুম বুক করে দিয়েছিলেন কর্মসূত্রে শ্বশুরমশাইয়ের পরিচিত তথা সুহৃদ জনৈক স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে দীঘায় যখন নামলাম, বঙ্গোপসাগরের মাথায় ফের সে ঘনিয়ে এসেছে নিম্নচাপের বাদল। দিনের বেলাতেও অন্ধকার সমুদ্র সুন্দরী। সপ্তাহের মাঝখান বলে এমনিতেও বেশ ফাঁকা দীঘা, তারওপর মেঘ আর তুমুল ধারাপাত। হোটেলে পৌঁছে, ঘরে ঢুকে ঝোড়ো বাতাস উপেক্ষা করে বারন্দার দরজাটা যখন খুললাম, কবির ভাষায় ‘জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার, পুড়িয়ে দিল চোখ।’ মসি কৃষ্ণ আকাশ ততোধিক কালো সমুদ্র উভয়েই ফুঁসছে একে অপরকে স্পর্শ করার জান্তব তাগিদে। মাঝে মাঝে আকাশের বুক চিরে ঝলসে উঠছে দামিনী। 

সন্ধ্যে সন্ধ্যেই উঠে গেল দীঘার বাজার। তখন জেনারেটরে জ্বলত সব আলো। বন্ধ করে দেওয়া হল জেনারেটর। নিকষ আঁধের ডুবে গেল দীঘা নগরী, অন্ধকারে কান ফাটানো সমুদ্রের গর্জন। তারই মধ্যে আলো বলতে আমাদের ঘরের নকল ছাতে আঁকা অজস্র সবজে তারা। এত ভালো লেগেছিল সমুদ্র সুন্দরীকে যে ফেরার সময় নিজের বাবা-মায়ের জন্য বুক করিয়ে এসেছিলাম ঐ ঘরটাই। বাবা মা নিম্নচাপ পায়নি বটে, তবে বাংলা বন্ধ পেয়েছিল ফেরার দিন। বাতিল হয়ে গিয়েছিল ট্রেন। একটা দিন অতিরিক্ত থাকতে পারার আনন্দ আজও দীঘার নাম করলেই ঝরে পড়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কণ্ঠ থেকে। হাঁটুর ব্যথা ভুলে কখনও পদব্রজে তো কখনও রিক্সা বা ভ্যানে করে কি ঘোরাই না ঘুরেছিল ওরা। 

সেই শেষ,তারপর দীর্ঘ তেরো বছর বাদে দীঘার মাটিতে পা রাখলাম আমরা। তাম্রলিপ্ত থেকে সড়ক পথে মাত্রই দুঘন্টার পথ দীঘা, এই জেলায় বদলী হয়ে আসা ইস্তক যাবতীয় বন্ধবান্ধব- আত্মীয়স্বজন একটাই প্রশ্ন করে চলছে, হ্যাঁরে তোরা দীঘা যাসনি? তাই ভাবলাম যাই এক চক্কর ঘুরেই আসি। মাত্রই কয়েকঘন্টার ঝটিকা সফর, আপিস সেরে, শৌভিকের সান্ধ্যকালীন ভিসি মিটিয়ে রাত সাড়ে সাতটায় বেরিয়ে পরদিন রাত সাড়ে এগারোটায় ফেরা। সমুদ্রসুন্দরীকে তো দেখলামই, সাথে সাথে ঢুঁ মারলাম তাজপুর আর শঙ্করপুরে। সমুদ্র বা প্রকৃতির রূপে বিমোহিত হবার সাথে সাথে আরেকটা জিনিসও প্রত্যক্ষ করলাম, তা হল প্রকৃতির রুদ্র রূপ। যে ইয়াসে কিছুই হল না বলে দুঃখ করছিলেন মহানগরীর একদল সুখী মানুষজন, তারই অভিঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে বড় বড় বোল্ডারের দল। উড়িয়ে এনে আছড়ে ফেলেছে মূল ভূখণ্ডে। উপড়ে গেছে গাছের পর গাছ। জনবিরল তাজপুর আর শঙ্করপুরের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নিঃসন্দেহে শঙ্করপুর এগিয়ে। তাজপুর অনেক গুছানো হলেও বড় শুঁটকি মাছের গন্ধ বাপু। যাই হোক আর তাই হোক দীর্ঘ এক বছরের পর কোথাও বেড়াতে গিয়ে রাত্রিবাস করলাম আমরা, এই আনন্দের রেশই চলুক না এখন বেশ কটা দিন।

Wednesday 17 November 2021

অনির ডাইরি ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৭

 

সত্তরের দশকের অন্তিম পর্ব। ভিয়েতনামের যুদ্ধ সদ্য শেষ হয়েছে, কোন মতে মুখ বাঁচিয়ে (নাকি লুকিয়ে) পালিয় আসতে বাধ্য হয়েছে সুপার পাওয়ার আমেরিকা। এক দাড়িগোঁফ না গজানো পিছিয়ে পড়া দেশের হাতে নাস্তানাবুদ হবার মাসুল গুণছে আঙ্কেল স্যাম,  টালমাটাল অবস্থা দেশ জুড়ে, প্রথাসিদ্ধ রাজনীতিতে নেমেছে ধ্বস। নেতৃবর্গ দিশাহারা।  দেশের হয়ে লড়াই করতে যাওয়া বীর সেনানীদের দেশে ফেরা মাত্রই সসম্মানে বিতাড়ন করা হচ্ছে, ভবিষ্যতের কোন রকম আর্থিক সুবন্দোবস্ত ছাড়াই। 

২৬বছরের ট্রেভিস বিকল এমনি একজন প্রাক্তন  নৌসেনা। আপাততঃ কাঠ বেকার। শুধু যে বেকার তাই না, ভয়ানক রকমের মানসিক অবসাদগ্রস্ত ও বটে। নিদ্রাহীন অবস্থায় কেটে যায় রাতের পর রাত। ক্রনিক ইনসমনিয়ার হাত থেকে বাঁচতে এবং জীবিকার তাগিদে ট্রেভিস ট্যাক্সি চালাতে শুরু করে। রাতের পর রাত জেগে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্যাসেঞ্জার  নিয়ে যায় ট্রেভিস। রোজগারপাতি মন্দ হয় না, সাথে উপরি পাওনা বিচিত্র মানুষজন এবং নানা চিত্তাকর্ষক  অভিজ্ঞতা। 

সন্ধ্যা ছটা থেকে ভোর ছটা, এমনকি আটটা অবধি ট্যাক্সি চালিয়েও ক্লান্ত হয় না ট্রেভিস। ঘুম কিছুতেই আসে না। নিজের দৈনন্দিন  অভিজ্ঞতা তথা দুঃসহ একাতীত্বকে কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ  করতে থাকে ট্রেভিস। রাতের নিউইয়র্ক তাকে আরো হতাশ করে তুলতে থাকে প্রত্যহ। জঘন্য নোংরা পথঘাট, উপচে পড়া নর্দমা, প্রকাশ্যে নারীদেহের বিকিকিনি হতাশ থেকে হতাশতর করে তুলতে থাকে ট্রেভিসকে। নিজের ভিতর এক লাভা উদ্গিরণকারী আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব টের পেতে থাকে ট্রেভিস। শুধু বেরিয়ে আসার উৎসমুখ খুঁজে পায় না সেই লাভা। 

এমন সময় ট্রেভিসের সাথে আলাপ হয় জনৈক বেটসীর। বেটসী চোখ ধাঁধানো রূপসী।রাষ্ট্রপতি পদাভিলাষী সেনেটর চার্লস প্যালানটাইনের প্রচারক টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লাস্যময়ী বেটসী।সামাজিক ভাবে দুজনের অবস্থানগত পার্থক্য দুই মেরুসম হলেও প্রাথমিক ভাবে একে অপরের প্রতি রীতিমত আকৃষ্ট  বোধ করে দুজনে। কিন্তু গোল বাঁধায় অনভিজ্ঞ ট্রেভিস। প্রথম ডেটেই সিনেমা দেখানোর জন্য বেটসীকে নিয়ে যায় এক পর্ণো থিয়েটারে। ফলশ্রুতি সর্বোত ভাবে ট্রেভিসের সংস্রব বর্জন করে বেটসী। 

ট্রেভিসের শত ক্ষমাপ্রার্থনাও বেটসীর হৃদয় গলাতে ব্যর্থ হয়। নিঃসঙ্গ ট্রেভিস আরো একা হয়ে পড়ে। সাময়িক ভাবে ট্রেভিসের সব ক্রোধ সব ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয় সেনেটর চার্লস প্যালানটাইনের ওপর,যার রাষ্ট্রপতি পদের দাবী প্রচারে মূখ্য ভূমিকা নিয়েছে লাস্যময়ী বেটসি। ট্যাক্সি চালিয়ে জমানো অর্থে একাধিক বন্দুক কেনে ট্রেভিস, নিয়মিত শরীরচর্চার  মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে জীবনে চরম পরিণতির জন্য। সেনেটর প্যালানটাইন হত্যাই আপাততঃ মূখ্য এবং একমাত্র লক্ষ্য ট্রেভিসের।  এমন সময় একটি ঘটনা ঘটে, একরাতে এক কিশোরী বারাঙ্গনা জবরদস্তি  উঠে আসে ট্রেভিসের ট্যাক্সিতে এবং করজোড়ে অনুরোধ করে তাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করার জন্য, থতমত খেয়ে যায় ট্রেভিস, ট্যাক্সি চালু করার আগেই একজন দালাল এসে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় মেয়েটিকে, বদলে রেখে যায় এক দলামোচড়া কুড়ি ডলারের নোট। 

সেই নোটটা খরচ করে না ট্রেভিস, রেখে দেয় যত্ন করে,  একদিন সে ঐ অসহায় মেয়েটিকে উদ্ধার করবে এবং নোটটি ছুঁড়ে মারবে ঐ দালালের মুখে এই আশায়। অতঃপর কি হয়? সত্যিই কি সেনেটরকে মারতে সক্ষম হয় ট্রেভিস? সাড়ে বারো বছরের বাচ্ছা দেহপসারিনীকে কি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়? বেটসীর কি হয়? জানতে হলে অনুগ্রহ করে দেখুন ট্যাক্সি ড্রাইভার। যেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার ট্রেভিস রবার্ট ডি নিরো স্বয়ং। আর বছর বারোর দেহ পসারিনীর চরিত্রে জোডি ফস্টার। পরিচালক মার্টিন স্করসিজের অন্যতম বিখ্যাত সিনেমা ট্যাক্সি ড্রাইভার (১৯৭৬)। অসংখ্য পুরষ্কারপ্রাপ্ত, চার চারখানা অস্কার নমিনেশন পায়,যদিও শেষপর্যন্ত একটাও জেতেনি।কিন্তু তাতে কি?পৃথিবীর সর্বকালের ১০০টা সেরা সিনেমার মধ্যে এই স্থান ৩১। ঐ যে ইংরাজিতে বলে না মাস্ট ওয়াচ মুভি।

Tuesday 16 November 2021

অনির ডাইরি ১৫ই নভেম্বর, ২০২১

 



কোন কোন দিন আমায় রান্নায় পায়। মেয়ের গোল্লায় যেতে বসা পড়াশোনা (সৌজন্য শৌভিকের বদলী, পর্যায়ক্রমে বাবা এবং মায়ের অসুস্থতা তথা হাসপাতালবাস এবং পরিশেষে আমার বদলী), পাট করে না তোলা কাচা জামাকাপড়ের পাহাড়, ঘরের কোণে জমে ওঠা ঝুল আর তাতে দোল খাওয়া শ্যামা পোকার দঙ্গল (কি পোকা এখানে বাপ রে বাপ। গরমে এই মোটকা লাল পিঁপড়ের গুষ্টি জ্বালিয়ে মেরেছিল আর এখন পঙ্গপালের ঝাঁকের মত গোছা গোছা পোকার দল), লুকিয়ে চুরিয়ে পাওয়া নিভৃত দাম্পত্য সব ছেড়ে সেদিন আমি শুধু রান্নাই করে যাই। যেমন ধরুন আজ, দিনটা শুরুই করেছিলাম ক্যারামেল পুডিং দিয়ে।


 বীরসা মুণ্ডার জন্মদিন উপলক্ষে পাওয়া আলগা ছুটির সকাল, মাখন পাঁউরুটি( আমার ভাগে শুধু সেঁকা পাউরুটি আর আলু পটলের তরকারী, ইয়ে করছি কি না), ডিমের পোচ( আমার ভাগে শুধু সাদা, বললাম না ইয়ে করছি, আমার ভাগের কুসুমখানা তাই শ্রীমতী তুত্তুরীই উদরস্থ করলেন, তাও আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে) আর কেলে কফি(আমার জন্য মিষ্টি ছাড়া, আঃ বললাম না আমি ইয়ে করছি) দিয়ে সারা সাহেবী প্রাতরাশ অন্তে ঠিক করলাম পুডিংটা বানিয়েই ফেলি।  কি যে লোভ দেখিয়ে রেখেছে আমার তুতো ভাই অয়ন, তুত্তুরী থেকে থেকেই আব্দার করছে,‘ বড়মামার মত পুডিং বানাও না মা, প্লিজ। ’  


 

বেলা দশটা থেকে তুত্তুরীর পরীক্ষা।  তাঁকে নাকি বেস্ট অব লাক জানাতেই হবে, নিদেন পক্ষে ট্যাঁশ মার্কা ইংরেজিতে গুড লাক। নাহলে পরীক্ষা খারাপ হবেই এবং খারাপ পরীক্ষার জন্য দায়ী থাকব আমি। ঐসব আদিখ্যেতা মিটিয়ে মন দিলাম ক্যারামেল বানানোতে, তিনচামচ চিনিতে দুচামচ জল মিশিয়ে আগুনে বসিয়ে নেড়েই চলতে হয়। না হলেই চিনি পুড়ে কাঠ কয়লা হয়ে যাবে, আর তার গন্ধে বাড়ির মানুষ তো বটেই ভূতও পালাবে।  সাদা চিনি গলে চিনির রস হল, চিনির রস পুড়ে লাল হয়ে তরল সোনা থুড়ি ক্যারামেল। অল্প মাখন মাখিয়ে রাখা স্টীলের বাটিতে টপটপ করে ঝরে পড়ল আগুন গরম ক্যারামেল। তার সঙ্গে যোগ হল আগে থেকে ফেটিয়ে রাখা ডিম আর দুধ-চিনির মিশ্রন।


 পুডিং খেতে সবথেকে বেশি ভালোবাসে আমার বাবা। তবে ওসব সাহেবী ক্যারামেল-ট্যারামেল নয়,ঘন করে গোলা আমূল গুঁড়ো দুধে পরিমাণ মত(পড়ুন বেশ অনেকটা) চিনি, আর ডিমের মিশ্রণ। সাথে উপরি হিসেবে দুফোঁটা ভ্যানিলার তড়কা। এখানে ভ্যানিলা এসেন্স কোথায় পাই, তিনি তো দিব্য নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছেন আমাদের মহানগরের আবাসনে। তাঁকে ছাড়াই পুডিং চড়ল চুলোয়। নির্দিষ্ট সময়ে নামাতে যাব, ঠিক তার আগের মুহূর্তে কন্যার ফরমায়েশ, তাঁর পরীক্ষার খাতা খানা স্ক্যান করে দিতে হবে মাকে। ইচ্ছে হল বলি, অন্য দিন কি করিস? গিলে নিলুম। মায়েদের এসব প্রশ্ন করতে নেই। 


সাদাকালো নয় রঙিন স্ক্যান ইত্যাদি হাজার খানেক ফরমায়েশ নিয়ে বেশ একচোট ঝাড়পিঠ হল আমাদের মা-মেয়ের মধ্যে। শৌভিক যথারীতি সমস্ত অশান্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে বসে বিদ্যাদেবীর আরাধনা রত। বিদ্যাসাগর হয়েই ছাড়বে। সিরিয়াসলি মাইরি পরের জন্মে আমি বাবা হতে চাই। এদিকে তুত্তরী পরীক্ষার খাতা দেখে বেশ ভড়কে যাওয়া আমি। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সত্যি বলছি হাওড়া পুরসভার ভ্যাট ও এর থেকে পরিচ্ছন্ন হয়। নার্ভাস হয়ে গরম পুডিং এর বাটিটাই হাত ফস্কে সোজা পাপোষের ওপর। 


মেয়ের মুখের খাবার নষ্ট করেছি বলে এমনিতেই মরমে মরে ছিলাম। তারওপর আবার পরীক্ষার খাতাকে পৌরসভার ভ্যাটের সাথে তুলনা করেছি,ফলত দ্বিপ্রাহরিক ভোজনটা মনে হচ্ছিল যেন এজলাসে  সারছি। ঝুড়ি ঝুড়ি নালিশ জমা পড়ল আমার নামে। বাদী ছিমতী তুত্তুরী আর বিচারক তথা জুরি এবং ফাঁসুড়ে আমার বর। তিনি তো পারলে সব কথাতেই আমায় ‘তিন মাসের জেল আর সাত দিনের ফাঁসি’ দেন। 


আমি নাকি ভয়ানক মারকুটে এবং দুর্মুখ জননী। ইয়ে দুর্মুখ তো অবশ্যই আর মারকুটেও যে আমি একটু আছি, তাতে কোন দ্বিমত নেই। ছোটবেলায় খোদ এত ধোলাই খেয়েছি, পৃথিবী ছাড়ার আগে, সেগুলো ফেরৎ দিতে হবে তো। কি দিয়ে না ঠেঙিয়েছে মা- ঠাকুরদাদার বিলিতি কাঠের রুলার, যাবতীয় স্কেল, খুন্তি-হাতা, হাতপাখার বাঁট, আরো কি কি যেন আজ আর মনে পড়ে না।  যা হাতের কাছে পেত, তাই দিয়েই মা হাত খুলে ঠেঙিয়েছিল,তাই না এমন শক্তপোক্ত হয়েছি। নাহলে ছিমতী তুত্তুরীর মত লদন্দ(পড়ুন গোবর গণেশ) হতাম। 


বলেই বুঝতে পারলাম, কেস জণ্ডিস করলাম। এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। বাপবেটিতে পত্রপাঠ বাক্যালাপ বন্ধ করল আমার সাথে। তাতে যে আমি খুব একটা মুষড়ে পড়লাম তা নয়, বরং রীতিমত শান্ত ছিল পরিবেশ। ওরা যখন আমার সঙ্গ বর্জনই করল, তখন ভাবলাম ভালোমন্দ কিছু রান্নাই করি বরং। সুগন্ধ ছাড়লে এরা বাপবেটি এমনিতেই আসবে হ্যাংলা বেড়ালের মত রান্নাঘরের চক্কর কাটতে। তখন বলব, ভাব করবি কি না বল? নাহলে খাদ্যকৃচ্ছতার গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো করে সব আমি একাই খাব। 


ছবিতে আমার বর এবং মেয়ের মনপসন্দ বাসন্তী পোলাও, চিকেন রেজালা আর ক্যারামেল পুডিং যা আবার নতুন করে বানিয়েছিলাম। পড়ে যাওয়া পুডিংএর অবশিষ্টাংশটুকুর কি হল, প্লিজ এই সব প্রশ্ন করে লজ্জা দেবেন না। আমি বলে ইয়ে করছি- আজ নিয়ে পাক্কা ছদিন। হ্যাঁ গো একটু রোগা কি হয়েছি, প্রশ্ন করলেই হাসতে হাসতে বিষম খায় এরা বাপ আর মেয়ে।

অনির ডাইরি ১৫ই নভেম্বর,২০১৮

 অনির ডাইরি ১৫ই নভেম্বর,২০১৮

গতকালের কথা, গোটা দেশ উৎসব মোড থেকে বেরিয়ে এলেও চন্দননগর-মানকুণ্ডুর জমকালো জগদ্ধাত্রী পূজা এবং চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়ার আসন্ন কার্তিক পূজাকে কেন্দ্র করে,এই মাঝ নভেম্বরে গোটা হুগলী জুড়ে খুশি আর উৎসবের আমেজ। চূড়ান্ত খিটখিটে লোক বা মহিলার মুখেও এক



গাল হাসি। পুরো পুজোর কলকাতার মত ঝাঁক বেঁধে সুন্দরী এলোকেশীরা ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। রাস্তায় রাস্তায় গোছা গোছা চলমান ফুলের মেলা। সবে ভাবছি,তাহলে এই মওকায় দেখেই আসি কটা ঠাকুর, দরজা খুলে মুখ বাড়ালেন চাইল্ডলাইন হুগলীর জেলা কোঅর্ডিনেটার শ্রী গোপিবল্লভ শ্যামল মহাশয়।“ম্যাডাম আসতে পারি?” নিয়মিত যাঁরা আসেন,তাদের বহুবার বলেছি,আপনাদের জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই। অবারিত দ্বার। “আসুন। আসুন” বলার আগেই কোঅর্ডিনেটর সাহেবের বাহুমূলের তলা দিয়ে গলে তিন তিন জন মান্যগণ্য অথিতি এই অধমের চেম্বারে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। “আরে এণারা?” সবে আগের দিনই শিশু দিবস উদযাপন  করেছি এক দঙ্গল খুদেকে নিয়ে। আজ আবার কি মনে করে অধমের চেম্বার এঁণাদের পদধুলি ধন্য হল? গোপিবল্লভ বাবু খুলে বললেন, শিশুদিবসের পরের দিন এণারা এসেছেন আমাকে চাইল্ডলাইনের হলুদ ব্যাণ্ড পরাতে। এতবড় সৌভাগ্য! তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালাম। লক্ষ্মী,শ্রেয়া এবং মুসকান নাম্নী তিন গণ্যমান্যা এগিয়ে এসে সযতনে পরিয়ে দিলেন হলুদ ব্যাণ্ড। অতঃপর উপহার স্বরূপ তুলে দিলেন একটি হলুদ চাবির রিঙ। তাতে লেখা “চাইল্ডলাইন সে দোস্তি”। হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮ও দেওয়া আছে। ১৮বছর বয়স পর্যন্ত যে কোন শিশু যে কোন বিপদআপদ বা সমস্যায় যেখানে নির্দ্বিধায় ফোন করতে পারে। সাহায্য অবধারিত। গোপীবল্লভ বাবু পকেট থেকে আর একটি চাবির রিঙ বার করে আমায় দিলেন,“এটা আপনার তুত্তুরীর জন্য।ও জানুক ১০৯৮এর কথা।  ” তুত্তুরী এমনিতেই জানে। তবু সাদরে গ্রহণ করলাম এই স্নেহের দান। 

এবার গণ্যমান্যাদের খাতিরের পালা। তুচ্ছ লেবার অফিসের কি এমন সাধ্য আছে,ওণাদের যথোচিত সৎকার করবে,তবু বললাম,“কফি খান অন্তত। সাথে ক্রিম ক্রাকার বিস্কুট চলবে?” আমাদের কালেক্টরেটর চা খেয়ে অডিট টিম যা খচেছিল,তাই চা ওয়ালাকে বললাম,তাঁর আবার এসএসওয়াই কার্ডও করে দিয়েছি আমরা, “দোহাই চা'টা দেবেন না। ভালো কফি দিন। ” যতটা ভাল হয় আরকি। চা কফি খেতে খেতে খানিক খেজুরে গপ্প হল। গোপীবল্লভ বাবু বললেন, এরা সকলেই চাইল্ডলাইনের কটেজের বাসিন্দা। সাধারণতঃ খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলে বা যদি কুমারী মায়ের সন্তান হয় অথবা দেখার কেউ না থাকে বা পরিবার যদি অ্যাবিউসিভ হয় তাহলে বাচ্ছাদের এখানে এনে রাখা হয়। অনেককে তাদের পরিবারও রেখে যায়, প্রতিপালন করার ক্ষমতা না থাকলে। অথিতিদের কাছে জানতে চাইলাম কার বাড়ি কোথায়? এদের সকলেরই বাড়ি আছে। একজনকে মা রেখে গেছে। লোকের বাড়ি বাসন মাজে, বাড়িতে দেখার কেউ নেই। অপর একজন বলল,বাড়িতে মামা আর দিদি আছে। বুঝলাম মামাতো দিদি বা বোন হবে। তৃতীয়ারও মা এবং বোন আছে। মায়ের দেখার ক্ষমতা নেই। জানতে চাইলাম এখানে কেমন আছে? সকলেই বলল,“খুব ভালো। ” সবাই স্কুলে পড়ে। মুসকান এবং শ্রেয়া ক্লাশ ফোর আর লক্ষ্মী ক্লাশ থ্রীতে পড়ে। ওদের হাসিখুশি মুখগুলিই জানিয়ে দিচ্ছে ওরা খুব ভালো আছে। অনুক গল্প হল। মা হওয়ার অভ্যাস বশতঃ খানিক জ্ঞানও দিলাম,“খুব ভালো করে পড়াশোনা করো। তারপর একদিন এসে আমার চেয়ারে বসো।যোগাযোগ রেখো।  আমি আসব তখন ফুল নিয়ে তোমাদের কাছে। ”