Monday 11 October 2021

অনির পুজোর ডাইরি ৮ই অক্টোবর, ২০২১

 

(পর্ব-৩) 

শুভ প্রতিপদ


কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙালো মা,‘দরজাটা একটু খুলে দিবি? তোর বাবা'ই তো দিত-’। সেন্টু দিতে কিছু জানে বটে আমার গর্ভধারিণী। দরজা,অর্থাৎ চাটুজ্জে বাড়ির সিংহ দরজা। যাকে আমরা তিন প্রজন্ম সোহাগ করে ডাকি, সদর দরজা বলে। কাক ডাকা ভোরে, ঘুম ভেঙে উঠেই বাবা ছুটত সদর দরজা খুলতে।  বাবা খুলত বলেই, আর কেউ অতটা গা করত না। বাবা হাসপাতালে ভর্তি হবার সাথে সাথেই, মায়ের প্রধান মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সদর দরজা খোলা। কাল রাত সাড়ে এগারোটায়, জবরদস্ত পারিবারিক আড্ডার মাঝেও মনে করিয়ে দিয়েছে আমার খুড়তুতো ভাই অয়নকে। ‘দরজাটা একটু মনে করে খুলে দিস বাবা। দুধ- কাগজ সব ফিরে যাবে নইলে। ’ 


 জমাটি আড্ডার ফাঁকে, অয়ন আশ্বস্তও করেছিল, ‘তুমি চিন্তা করছ কেন? ও চৈতি ঠিক খুলে দেবে। ’ চৈতি অর্থাৎ চাটুজ্জে বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের জ্যেষ্ঠ কুলবধূ। এবাড়িতে সব সমস্যার একজনই মুস্কিল আসান, শ্রীমতী চৈতি। প্রত্যহ প্রাতে বাবার পরই যদি এবাড়িতে কেউ শয্যা ত্যাগ করে তবে তিনি চৈতি। এহেন চৈতি দায়িত্ব নেওয়া মানে, সে কাজ হবেই।  


তবুও ঘুম চোখে, বাসি মুখে অন্ধকার দালান টপকে,  দরজার খিল খুলে, লাল রোয়াক পেরিয়ে, তিন ধাপ সিঁড়ি নেমে, সাবেকী উঠোনের পড়ে থাকা ভগ্নাংশকে আড়াআড়ি পেরিয়ে দিলাম দরজা খুলে। পূব আকাশে তখন এক মুঠো আবির ছড়িয়েছে কে যেন।বইছে মৃদু ঠান্ডা হাওয়া। মনে পড়ে গেল বৃদ্ধ এরপর-পরই পাম্প চালাতে যেত। দিলাম পাম্পটা চালিয়ে-। নিঝুম বাড়িতে গুনগুন করে চলা জলের পাম্পের আওয়াজ বড় ঘুম পাড়ানিয়া, হাই তুলে চালিয়ে দিলাম রেডিও- রফি সাহাবের মধু ঢালা কণ্ঠ পলকে গুঞ্জরিত হল সমগ্র বৈঠক খানা জুড়ে, "ওয়াক্ত ইন্সান পে এয়সা ভি কভি আতা হ্যায়- রাহ মে ছোড়কে সায়া ভি চলা যাতা হ্যায়। দিন ভি নিকলে গা কভি, রাত কে আনে পে না যা, মেরি নজরো কে তরফ দেখ, জমানে ফে না যা।" আমরা বাপ-মেয়ে দোঁহে রফি সাহেবের বড় অনুরাগী। শৌভিক আবার টিম কিশোর কুমার। মা মুকেশ আর শ্রীমতী তুত্তুরী অরিজিৎ সিং।  


জল উঠতে, উঠতে নেলপালিশ লাগিয়ে নিলাম হাতে-পায়ে। সময় বড়ই মূল্যবান আমার জীবনে, নিছক অবকাশ পেলেই টুকটাক কাজ সেরে নি আমি। 


আপিস ঢুকতে সামান্য বেলা হল, একদল লোক অপেক্ষা করে বসেছিল শুধু আমারই তরে। সকাল বেলাই ফোন করেছিল পালের গোদা থুড়ি নেতা, ‘ম্যাডাম আপনার বাবা কেমন আছেন? সেরকম হলে দুদিন না হয় পিছিয়ে দিন মিটিংটা-। পুজোর আগেই মিটে গেলে ভালো হয়,তবে আপনার অসুবিধা থাকলে পুজোর পরই বসব আমরা।' আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলাম, আজ আসব তো বটেই, তবে হয়তো বড়জোর আর এক বা দুদিনই যাব চুঁচুড়া, বদলী হয়ে গেছি আমি। এবার সিদ্ধান্ত আপনাদের, যদি আসতে চান, আমার সাথেই বসে মিটিয়ে নিতে চান আপনাদের দাবীসনদ, তো সুস্বাগতম, না হলে আমার  সুযোগ্য উত্তরাধিকারী তো রইলেনই। তা সত্ত্বেও এসেছে ব্যাটারা। মালিক এবং শ্রমিক উভয়পক্ষই। 


বেলা তিনটে পর্যন্ত ধস্তাধস্তি করে,কখনও প্রবল হুমকি, কখনও সেন্টু, কখনও নিছক দর কষাকষি করে নোটশিটে নামল সেটেলমেন্ট। শেষ দিনে এসে সই করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উভয়পক্ষকে বিদায় জানিয়ে, পড়ে থাকা ফাইলপত্রে সইসাবুদ করে, বেঁচে থাকা বিল ভাউচার ছেড়ে যখন গাড়িতে উঠলাম, ভিজিটিং আওয়ার শুরু হতে বাকি মাত্র সোয়া একটি ঘন্টা। একঘন্টায় কি পৌঁছাতে পারব চুঁচুড়া থেকে হাওড়া? আপদ নার্সিংহোম, ইনটেনসিভ কেয়ারের রুগীকে দেখার সময় নির্দিষ্ট করেছে মাত্রই আধটা ঘন্টা। কালও দেরী হয়েছে মিনিট সাতেক, আজ যে কি হবে- 


ও রঞ্জিৎ, একটু জোরে চালাও বাপু। কেন যে আজই এত জ্যাম, দিল্লী রোড জুড়ে। সোয়া পাঁচটা নাগাদ ঝড়ের মত ঢুকলাম ইন্টেনসিভ কেয়ারে। নিদ্রিত বাবার হাতটা ধরতে গিয়ে মনে পড়ল, স্যানিটাইজ করা হয়নি তো। ভিজে হাতে হাতটা ধরতেই চোখ খুলল বাবা, সুপ্তোত্থিত পিতার মুখমণ্ডলে কেন জানি না, নিজের শিশুকন্যার মুখাবয়ব প্রত্যক্ষ করলাম আমি। ঠিক এই ভাবেই ঘুম ভাঙলে আড়ামোড়া ভাঙে তুত্তুরী। মুখটা ঠিক এই রকমই রক্তিম বর্ণ ধারণ করে পলকের তরে। 


‘অফিস যাসনি?’  প্রশ্ন করে বৃদ্ধ। জবাবে জানাই, আপিস ফেরতাই তো এসেছি। তাই না পরণে শাড়ি, উন্মুক্ত কেশদাম। চোখের পাতায় কাজলের হাল্কা ছোঁয়া। লিপস্টিক অবশ্যি খেয়ে নিয়েছি অনেক আগেই, মিটিং এর ফাঁকেফোকরে। অপলক দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে থাকে বৃদ্ধ, তারপর বলে, ‘বাইরে নিশ্চয়ই খুব ভিড়, নারে? আমার জন্যই তোদের পুজোটা ঘেঁটে গেল নারে?’ হাসি চেপে জবাব দিই, পাগল নাকি, বছর ঘুরে মা আসছে, আর বৃদ্ধের কন্যার মনে পুলক জাগবে না তা আবার হয় নাকি? যতই প্রতিকূল হোক পরিস্থিতি, ঠিক ফাঁকফোকর খুঁজে আনন্দ করে নেব আমি।  আর এসব কথা উঠছেই বা কেন, এটা যদি উল্টো হত, আমি শুয়ে থাকতাম ঐ দুধসাদা বিছানায়, আর এপারে দাঁড়িয়ে থাকত বৃদ্ধ, তাহলে সে কি একটি বারও ভাবত যে নষ্ট হয়ে গেল তার পুজো? আমি হয়তো অতটা মহান নই, প্রাথমিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম খানিকটা, ঘেঁটে গিয়েছিলাম পুরোপুরি, তারপর তো দিব্যি সামলে নিয়েছি নিজেকে। সামলাতে তো হতোই। সবাই সামলে নেয়। বৃদ্ধের সাথে দেখা করে,রিশেপসনে গিয়ে বসে থাকব এবার, ডাক্তার আসতে আরো ঘন্টা দেড়েক। তাঁর সাথে কথা বলে, ‘ছেড়ে দিন না ডাক্তারবাবু’র বৃথা অনুরোধ করর রোজকার মত। অতঃপর ডাক্তারের অনুমতি সাপেক্ষে ভিডিও কলে সংযুক্ত করব বৃদ্ধ আর তাঁর পক্ককেশ প্রেয়সীকে। ফাঁক দিয়ে দু একটা কথা বলে নেবে পিসিও। কথা বলতে বিবর্ণ শাড়ির আঁচলে মুছবে ভিজে চোখ। পিছন থেকে নানা মুখ ভঙ্গী করবেন ছিমতী তুত্তুরী। 


তারপর যাব বাজার। আঁকাবাঁকা হস্তাক্ষরে লম্বা ফর্দ পাঠিয়েছেন শ্রীমতী তু্ত্তুরী। সারাদিন ধরে আমার মা যা যা বলেছে,আমার কন্যা তাই বাংলায় লিখে এবং স্ক্যান করে পাঠিয়েছে আমায়। ফেরার পথে ভাবছি একবার ঢুঁ মারব সুবল স্মৃতির মণ্ডপেও। তুলে  নিয়ে যাব আনন্দময়ীর ছবি, গৃহবন্দী জননী আর কন্যার জন্য। আমাদের যে ভালো থাকতেই হবে। আমরা ভালো না থাকলে বাবা ভালো থাকবে কি করে? আর ভালো হবেই বা কি করে?

অনির পুজোর ডাইরি ১০ই অক্টোবর, ২০২১

 অনির পুজোর ডাইরি ১০ই অক্টোবর, ২০২১

শুভ পঞ্চমী


'মা, মা একটা খেলা খেলবে?' দিন দুয়েক ধরে বলে যাচ্ছে তুত্তুরী। একাধিক চরিত্রে নাম ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হতে, কোথাও যেন সবথেকে বেশী অবহেলিত থেকে যায়, মায়ের ভূমিকাটাই। এই উৎসবের দিনেও শুকনো মুখে ঘরে বসে রয়েছে মেয়েটা। কাল সন্ধ্যে থেকে সামান্য জ্বর জ্বর ভাব। মধ্যরাতে ঘুমের আশ্লেষে একে অপরকে জড়িয়ে ফিসফিস করে কথা বলি আমরা, ‘বাবু, তুই যেন আমায় আর বিপদে ফেলিস না।’ ‘কাল ঠিক, ঠিক হয়ে যাব। তুমি দেখো। ’ ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে তুত্তরী। 


বোধহয় দরজার বাইরে হলেও কান পেতে শোনেন আনন্দময়ী। আজ সকাল থেকে সত্যিই উধাও হয়ে যায় জ্বর। নাকটানা আর কাশি অবশ্য বিদ্যমান। তবে ও যৎসামান্য। প্যারাসিটামলের পাহাড় উপুড় করে দিয়েছে বড় মামা। কত খাবি খা। শুধু সুস্থ থাক পুতু। এবাড়ি আর কোন মনোবেদনা সহ্য করার মত অবস্থায় নেই এই মুহূর্তে।  


যাই হোক, এরপর তো তুত্তুরীর আবেদন অগ্রাহ্য করা যায় না। খেলতেই হয়। তবে খেলার শর্ত হচ্ছে, গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে খেলতে হবে। আতঙ্কে এসির রিমোট লুকিয়ে রেখেছে মামমাম(থুড়ি দিদা)। কমানো সব পাখার রেগুলেটর। খেলা বলতে একটি পাতায় লিস্ট বানাতে হবে গোটা পনেরো প্রিয় গানের। কেউ কারো লিস্ট দেখতে পারব না আমরা। তারপর যখন তৈরি হয়ে যাবে লিস্টি, তখন আমরা মিলিয়ে দেখব কতগুলি গান পছন্দ দোঁহের। তবে শর্ত একটাই যে এই খেলায় জড়ানো যাবে না দাড়ি বুড়োকে।  তাঁর লেখা গান যেহেতু দুজনেরই পরম প্রিয়। 


বেশ তো, তৈরী হল লিস্টি-

এই মুহূর্তে তুত্তুরীর সেরা -১৫

১। নোকঝোক(ছপাক)

২। টু লেট টু টার্ন ব্যাক নাউ

৩। কভিরা✔️

৪। রাধারাণী লাগে✔️

৫। ঘর মোরে পরদেশীয়াঁ ✔️

৬। কলঙ্ক (টাইটেল ট্রাক)

৭। কানহা শো যা যারা

৮। চিডিয়া

৯। লগনলাগি রে

১০। এয় ওয়াতন (মেল ভার্সন)✔️

১১। ভারত✔️

১২। ভারত কি বেটি

১৩। আশমাঁ দি পরী

১৪। রাঞঝা(শেরশাহ)✔️

১৫। মন ভরেয়া ২.০


এবার আমার পালা, লিখতে বসে যত গানের কলি মাথায় আসে সবই তো দাড়ি বুড়োর লেখা। ধুৎ তেরী, যাই হোক, তাঁকে বাদ দিয়ে যে কটি গানের কলি মাথায় এল,তাই লিপিবদ্ধ করলুম শেষে-


১। দিল কি আওয়াজ ভি শুন, মেরে ফ্যসানে পে না যা ( আহাঃ পরম পূজনীয় রফি সাহেব)✔️

২। ও মেহবুবা (রাজ কাপুর আর মুকেশ জী। পিওর লাভ)

৩। রাঞ্জনা হুয়া ম্যায় তেরা, কওন তেরে বিন মেরা (ধনুষ)✔️

৪। ফুলোঁ কে রঙ সে, দিল কি কলম সে✔️ (কিশোরকুমারকে ছাড়া আবার লিস্টি হয় নাকি?)

৫। আজিব দাস্তান হ্যায় ইয়ে, কাঁহা শুরু কাঁহা খতম( আহাঃ লতাজী)✔️

৬। কুছ না কহো ( রাহুল দেববর্মন আর কুমার শানু❤️)

৭। ওঠো গো ভারতলক্ষ্মী✔️

৮। আজি এসেছি,আজি এসেছি নিয়ে এই হাসি- রূপ-গান✔️ (এই গানটি দেখে শ্রীমতী তু্ত্তুরী ভয়ানক রাগ করেছিলেন, ‘বলেছিলাম না তোমায়,রবীন্দ্র সঙ্গীত রাখবে না’। স্বর্গীয় ডি এল রায় সাহেব, অনুগ্রহ করে আমার গণ্ডমূর্খ কন্যাটিকে মার্জনা করিবেন) 


৯। প্যার হুয়া হ্যায় জব সে, মুঝকো নেহি চ্যায়ন আতা (শৌভিকের প্রিয় জুটি লতা জী আর কিশোরকুমার)

১০। ম্যায়নে প্যার কিয়া (এস পি বালাসুব্রহ্মমণিয়ামের কণ্ঠ আমার শৈশবের প্রেম) 

১১। তারে বলে দিও, সে যেন আসে না আমার দ্বারে✔️ (চিরন্তন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ❤️আর উত্তমকুমার ❤️)

১২। নিশিরাত বাঁকাচাঁদ আকাশে ✔️(গীতা দত্ত❤️)

১৩। এয় দিল মুঝে বতা দে, তু কিসপে আগয়া হ্যায় (গীতা দত্ত❤️)✔️

১৪। আকাশ কেন ডাকে,মন ছুটি চায়✔️

১৫। বদনাম হবে জেনেও ভালোবেসেছিলাম


খেলা শেষে মেলাতে বসে দেখা গেল, ছিমতী তুত্তুরীর ১৫টা গানের মধ্যে ৬টা আমার মনোমত। যেগুলির পাশে ✔️ দেওয়া আর কি। আর আমার ১৫র মধ্যে ১০টাই ভীঈঈঈষণ প্রিয় তুত্তুরীর। ফলতঃ আমি বিজয়ী হইলাম এবং গতরাতে চাটুজ্জে বাড়ির বড় তরফের রাজাদার কাছ থেকে উপহার পাওয়া বিশাল বড় সিল্ক আর ক্যাডবেরী ফ্রুট এন্ড না্ট দুটোর ওপরেই আমার অধিকার স্বীকৃত হল। তবে জিতেও শান্তি নেই, তুত্তরী তালিকার বাকি ৯টা গান এবার আমায় শুনতে হবে এবং বিশদে বোঝাতে হবে কেন আর  দ্বিতীয়বার শুনতে আমি আগ্রহী নই👺👹👹। মা হওয়া কি মুখের কথা।😡😡

Sunday 26 September 2021

অনির পুজোর ডাইরি ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০৩১

 

শৌভিকের গৃহত্যাগের সবথেকে কুপ্রভাব যার ওপর পড়েছে তিনি হলেন ছিমতী তুত্তুরী। একে বাবা থাকে না, তারওপর মাও মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ত। দিনের সাড়ে এগারো থেকে বারো ঘন্টা রাস্তাতেই কেটে যায়, বাকি বারোর মধ্যে ঘন্টা সাত-আটেক কাটে ঘুমে, বা চেপ্পে ধরে ঘুম পাড়ানোর বৃথা প্রচেষ্টায়। রইল হাতে চার, যার মধ্যে ঘরের কাজ-কাচাকুচি- দোকানবাজার- স্নান-খাওয়া আর পড়তে বসার হাকুচ তেতো ঘন্টা কতক বাদ দিলে হাতে পড়ে থাকে পেন্সিল। অবকাশ পেলেই হয় তমলুক নয়তো হাওড়ার টিকিট কাটি  মা-মেয়ে। দীর্ঘদিন অদর্শনে যদি আমাদের ভুলে যায় বাবা অথবা তুত্তুরী হীনতায় নতুন করে অবসাদে ভুগতে শুরু করে মামমাম। বয়স যে বড় অসহায়, বড় শিশুসুলভ বানিয়ে দেয় প্রিয়জনদের। 


বামন অবতারের মত তিনটি পা তিন জায়গায় রেখে ভারসাম্য বজার রাখার দিব্যি চেষ্টা করে চলেছি । ভুলেও তাই বলে ভাববেন না  ঘ্যানঘ্যান করছি। জীবন সিংহাসনে বসিয়েছেই যখন, মুকুট পরার যাতনা তো ভোগ করতেই হবে। সেটা  উভয়েই জানি এবং বুঝিও। শুধু দিনগুলো যদি ২৪ ঘন্টার জায়গায় ৩০ ঘন্টার হত- 


এদিকে বৎসরান্তে দরজায় কড়া নাড়ছেন দশভুজা, ওদিকে কিছুই যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি আমাদের। বামন অবতারগিরি করতে গিয়ে সারা বাড়ি ধূলিমলিন। পুবের দেওয়ালে নতুন করে কলম মক্স করেছে কে যেন। ছিমতি তুত্তুরী জোর গলায় বলছেন, উনি নন। কালপ্রিট অন্য কেউ। কে করল, সেটা উদ্ধার করতে মিঃ বক্সী বা মিঃ মিটারকে খবর দেব ভাবছি। আমি বা তুত্তুরী ব্যতীত এ বাড়ির বাসিন্দা বলতে তো মাসি। তবে কি মাসিই অপরাধী? তুত্তুরীকে দেখিয়ে দেখিয়েই বেচারী মাসিকেই খুব এক চোট চোখ পাকিয়ে হাত-পা ছুঁড়ে ধমকে দিলাম, চা খাওয়া বন্ধ করার এমনকি বাড়িতে আর চা পাতা না আনার কঠোর হুমকিও দিলাম। কোন লাভ হল না যদিও, অপরাধী গোবেচারা মুখে বত্রিশ পাটি প্রদর্শন পূর্বক 'শ্রীময়ী' ধারাবাহিক দর্শনে মনোনিবেশ করলেন। 


সময়াভাব বা আমার বরের ভাষায় টাইম ম্যানেজমেন্টের গড়বড়ে যেখানে শৌভিকের সাধের বাড়িরই এই হাল, সেখানে কেনাকাটা, সাজুগুজু, আর ইয়ে পুজো স্পেশাল রোগা হওয়ার কথা তুলে আর হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করতে চাই না। সব কিছুই সময় থাকতে করতে হত,বেশ বুঝতে পারছি। কি ভিড় সর্বত্র বাপস্। তারওপর আবার ছিমতী গুলাবোর হুংকার। আশ্বিন মাসে এত ঝড়ঝঞ্ঝা বৃষ্টিপাত কেন রে বাপু? দেবী তো নৌকায় নয়, বরং ঘোটকে আসছেন আর দোলায় রওনা দিচ্ছেন। 


কটার সময় যেন আসার কথা গুলাবের,তার আগেই তড়িঘড়ি টেনে নিয়ে গেলাম মেয়েটাকে চুল কাটতে। তখনও ভালো করে খোলেওনি পার্লার। চলছে ঝাঁট দেবার পালা। শ্রীমান সুরজিৎ আজ বছর আটেক ধরে ছুরি কাঁচি চালাচ্ছেন আমাদের মা আর মেয়ের মাথায়। তিনি তখন বসে বসে ঢুলছিলেন। কোন মতে চোখ রগড়ে,লাল মুছে বলল, ‘একদম ঠিক সময়ে এসেছ। কাল রাত বারোটায় বাড়ি ফিরেছি, চিন্তা করতে পারছ। ঘুমিয়েছি রাত দুটোয়। কাল সারাদিন খেতেও পাইনি। ’ জানালাম, ভিড়ের ভয়ে জলদি জলদি এসেছি বটে, তবে আজ আমাদের কোন তাড়া নেই। তুই বাবা ভালো করে খেয়ে,ঘুমিয়ে তবেই কাজে নাম। শেষে টাকলা মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলে, আর আমায় আস্ত রাখবে কেউ?শ্বশর-শাশুড়ির কথা তো ছেড়েই দিলাম আমার জন্মদাতা এবং দাত্রীই আমাকে 'তিনমাস জেল আর সাতদিনের ফাঁসি'র হুকুম শোনাবে। তারওপর আছেন ছিমতী তুত্তুরীর বন্ধুবান্ধবদের দলবল। 


যাই হোক, প্রভাতী ফাঁকা পার্লারে অনেকটা সময় দিয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে ছ্যাম্পু করে, কণ্ডিশনার লাগিয়ে, খুস্কি নাশের কিসব লোশন লাগিয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিট বকবক করে, কেশ কর্তন পূর্বক ব্লো ড্রাই করে পিলে চমকানো মার্কা একখান বিল ধরালো আমায়। তার সাথে সাথে কন্যার মাথায় এটাও ঢোকালো মাথায় শ্যাম্পু দেবার পর অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে মাথা ধুতে হয় আর নিজের চিরুনি অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিতে নেই। পরিণাম স্বরূপ বাড়ি এসে সবকটা চিরুনি তথা হেয়ার ব্রাশ কুক্ষিগত করেছেন তিনি। ভাবছি শ্রীমান Shouvik Bhattacharya কে বলব, মেয়ের কেশ কর্তনের বিলটার সাথে সাথে আমার প্যাডল ব্রাশ আর শ্যাম্পু কম্ব গুলোর দামটাও যদি একটু ট্রান্সফার করে। হামি গরিব লেবার আছি কি না।

ইতি অনিন্দিতা

 মহানগর কলিকাতা 

শনিবার, ১০ই আশ্বিন, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ


ওগো, 


তুমি শুনলে নির্ঘাত পুলকিত হবে, তোমার কন্যা এই আধবুড়ো বয়সে,মধ্যরাতে বসে ‘সহজপাঠ’ পাঠ করছে। 


সেই যে সহজপাঠ, বড় আশা করে যা কিনে দিয়েছিল আমার বাবা। তুত্তুরীর তখন কতই বা বয়স? তিনও হয়নি। বাবার হস্তাক্ষরে লেখা আছে তারিখটা, ১লা জুলাই, ২০১৩।  খাবার টেবিলে বসে সেদিন কি যত্ন করে ব্রাউন পেপার দিয়ে মলাট করছিল বাবা। মাঝে মাঝে সুর করে পড়ছিল, ‘ছোটো খোকা বলে অ-আ/শেখে নি সে কথা কওয়া’।  ‘খিদে পায়, খুকি ঞ/শুয়ে কাঁদে কিয়োঁ কিয়োঁ। ’ শুনে সে কি খিলখিল করে হেসে উঠেছিল সেদিনের বুজু তুত্তুরী। 


 সাড়ে তিন বছর বয়সে যেদিন কেড়ে নিয়ে এলাম দাদুর সোনার তুত্তুরীকে, বিষণ্ণ গলায় বলেছিল বাবা, ‘সহজপাঠ গুলো নিয়ে যাস। সময় পেলে একটু পড়ে শোনাস।’ নৈমিত্তিক পড়াশোনার ফাঁকেফোকরে যে পড়তে বসিনি তাও নয়,তবে যা হয় আর কি, বই পড়ার থেকে  অনর্গল আগডুম-বাগডুম বকা, ডেট এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া জনসন শ্যাম্পু খাওয়া আর দেওয়ালে সাপ-ব্যাঙ-শকুনির ঠ্যাং আঁকার উৎসাহই বেশী ছিল তোমার কন্যার। 


যত বড় হতে লাগল, ক্রমেই দূরে সরে যেতে লাগল বই পড়া । পাঁচন গেলার মত করে পাঠ্যপুস্তক যাও বা পড়ত, গল্পের বইয়ের নাম করলেই দনুজদলনী হয়ে সিংহের পিঠে সওয়ার হয়ে কৈলাশে রওণা দিত মেয়ে। রীতিমত তাজ্জব হয়ে যেতাম আমরা। পড়ার বই ছেড়ে গল্পের বই পড়ার জন্য ধোলাই খেয়ে বড় হওয়া আমাদের প্রজন্ম বুঝতেই পারত না, খামোকা গল্পের বইয়ের ওপর এমন বিরাগ কেন! জনৈকা সিনিয়র দিদি খুব ভালো করে বুঝিয়েছিল একবার,স্কুলে ফিরিঙ্গী ভাষার ওপর জোর দেওয়া হয়, আর বাড়িতে আমরা কথা বলি গোদা বাংলায়। ফলে দোঁআসলা তৈরী হচ্ছে আমাদের উত্তর প্রজন্ম। 


গল্পের বই পড়লে,পড়ার ছুটি এই প্রলোভন দেখিয়ে যাকে ইলিয়াড-ওডিসি পড়িয়েছিলাম, তিনি সম্প্রতি রবিঠাকুরের জনগণমনের প্রেমে পড়েছেন। হঠাৎ হঠাৎ করে আমাকে আর মাসিকে উঠে দাঁড়াতে হচ্ছে কারণ তিনি রাষ্ট্র সংগীত গাইবেন। কি জ্বালা মাইরি।


 তোমারই তো মেয়ে,তাই রাজকাহিনীর জনগণমন তাঁর পছন্দ হয়নি। তিনি খুঁজে বার করেছেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের গান। রাত এগারোটার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই শুনলাম। যত বলি,ওরে এটা জাতীয় সংগীত নয়, এটা নিছক রবীন্দ্র সংগীত।  শুনলে তো? আজ যে কার মুখ দেখে উঠেছি, আপিস থেকে  ফিরে শুনলাম তিনি গীতবিতান নামিয়ে, জনগণমন খুঁজে, পুরো কবিতাটা মুখস্থ করেছেন। শুধু সুরটা এখনও সামান্য টলটলে আছে। আগামী ২৬শে জানুয়ারীর মধ্যে ঠিক করে নেবেন তিনি, বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। 


এই অবধি ঠিকই ছিল,তারপর তিনি শুরু করলেন,এই গানটির নীচে কে,কি মন্তব্য করেছেন। বিমোহিত সুরে বললেন,‘জানো, একজন লিখেছে,আমি এই প্রথম বেঙ্গলি ভার্সানটা শুনলাম। এটা হিন্দি ভার্সনের থেকে অনেক গুণে ভালো। ওরা যে কেন ইয়ামুনা বলে,যমুনা বললেই তো পারে।’ অতঃপর যা হয় আর কি, দৈনিক ক্লান্তি ভুলে লম্বা একখানি বক্তব্য রাখলাম আমি। তুমি না থাকায়,স্বর্গীয় সুকুমার রায়কে উদ্ধৃত করেই বলি, ‘ছুট‌লে কথা থামায় কে? আজকে ঠেকায় আমায় কে?’ যে কিনা ইউনিট টেস্টেই সংসদ আর সংবিধান পড়েছে,সে জানে না, কেন বাংলা গানটা গাওয়া হয় না? বেশ খানিক ইতিহাস চব্য করার পর দেখি তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য জানতে চাইলাম,যে মহাপুরুষ এই প্রথম বাংলা জনগণ শুনলেন,তিনি কি অবাঙালী? ঘাবড়ে যাওয়া জবাব পাই, ‘নাঃ বাঙালী তো। ’ 


বাঃ! তা তাঁর বয়স কত? একগাল হেসে তুত্তুরী জানায়,এই প্রশ্নটা অারো অনেকে করেছে,‘ভাই তোর বয়স কত?’ ও বলেছে ওর বয়স নাকি ২২বছর। ’ ব্রাশ করছিলাম, শুনে প্রবল বিষম খেলাম। আমাদের যুগে না গুগলু কাকু ছিল না উট্যুব পিসি। তাও ভাই, মনে হয় বাইশের অর্ধেকেই শুনেছিলাম। চার আনা বাজি ধরতে পারি,আরো আগেই শুনে থাকতে পারি।  জ্যাঠাইমা আর শ্রীমান অয়নের গান আর ছোটকাকুর সেতারের দৌলতে গানবাজনার চর্চা বেশ ভালোই হত বাড়িতে। 


তোমার কন্যার পুলক আর ধরে না। বলল, লোকজন জানতে চেয়েছে, ভাই তুই কি এই সদ্য রবি ঠাকুরের নাম শুনলি? জবাবে তিনি বলেছেন, মোটেই না, নামটা তিনি চার বছর আগেই শুনেছিলেন। তবে এই গানটা এই প্রথম শুনলেন। বলতে বলতেই বোধহয় অনুভব করলেন, নিজের জ্ঞানের অগভীরতা আর রবির প্রসারতা। রবিই যে সকল শক্তির উৎস,তা মেনে নিয়ে রাত পৌনে বারোটায় ধুলো মুছে উদ্ধার হলেন সহজপাঠ প্রথম ভাগ। তিনি এখন সুর করে পড়ছেন, 

‘গগনে গগনে বরষণ-শেষে 

মেঘেরা পেয়েছে ছাড়া- 

বাতাসে বাতাসে ফেরে ভেসে ভেসে 

নাই কোন কাজে তাড়া। ’ 


আর ক্ষণে ক্ষণে কইছেন, উফঃ কি ভালো লিখতেন বলো মা, পড়তে পড়তে মনটা যেন কেমন ঠাণ্ডা হয়ে যায়, তাই না মা? সাক্ষাৎ জ্ঞানপাপী  বুঝলে। 


ইতি

অনিন্দিতা

Tuesday 21 September 2021

অনির ডাইরি ১৮ই সেপ্টেম্বর,২০২১

 


জীবনের প্রথম পোস্টিং এ ইনসপেক্টর হিসেবে যাঁদের পেয়েছিলাম, মাত্র গুটি তিনেক বাদে, তাঁরা সকলেই বয়সে ছিলেন পিতৃব্যতুল্য আর স্বভাবে নমস্য। পশ্চিম মেদিনীপুর ছেড়ে আসার পরও বেশ অনেকদিন পর্যন্ত দুঃস্বপ্নে আসতেন তাঁরা। 


চুঁচুড়ায় আসতে না আসতেই ধীমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানিয়েছিল, ‘জানেন ম্যাডাম, এই আপিসে লোক টেকে না।’ কথাটা যে কতখানি অকাট্য, হাতে কলমে প্রমাণ পেলাম, চুঁচুড়ায় আসার একপক্ষ কালের মধ্যেই বদলী হয়ে গেল জনৈকা সিকেসিও আর প্রোমোশন পেয়ে আপিস ছাড়লেন তিন জন ইন্সপেক্টর। আর চতুর্থ ব্যক্তির সম্পর্কে কি আর বলি? তাঁর নিরুদ্দেশের আখ্যান রোজ ফোনে লাগাতে হত তৎকালীন বড়সাহেবকে। ‘স্যার এরকম মিস্ গায়েব মার্কা লোক নিয়ে আমি কাজ করব কি করে?’ কাজ করতেই তো এসেছি, নেহাৎ হাই তুলে সময় কাটাতে তো পাঠাননি আপনারা আমায় এ জেলায়। 


ক্রমাগত নালিশে ঝালাপালা হয়ে তৎকালীন নব মহাকরণের বড় সাহেব খোদ আমার নামেই নালিশ করেছিলেন আমার ব্যাচমেটদের কাছে। ‘আরেঃ এত ঘ্যানঘ্যান করলে হয়? তোমরা তো করো না। ওকে একটু বোঝাও-’। তা বোঝানোর চেষ্টাও করেছিল বটে  তারা। পেরেছিল কি?  আজ আমার পাঁচটা ব্লক আর দুটো পৌরসভার ইন্সপেক্টরই বলুন বা সিকেসিও ভ্যাকান্সি উভয় ক্ষেত্রেই কেবল একটি করে। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে ঘ্যানঘ্যানানিও যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা এই জেলা আমায় শিখিয়েছিল। আর তার থেকেও বেশী দরকার স্নেহশীল আর নির্ভরযোগ্য ওপরওয়ালা,যার থেকে কখনও বঞ্চিত করেনি আমায় চন্দননগর। পর-পর তিনজন ভালো ওপরওয়ালা কোথাও না কোথাও বাড়িয়ে দিয়েছেন আত্মবিশ্বাস আর নির্ভরশীলতার পারদ। পরোক্ষ ভাবে ট্রেনিং আর উৎসাহ যুগিয়েছেন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। শিখিয়েছেন,আমার প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু আমিই, অন্য কেউ না। 


ছবিতে আমার অন্যতম প্রিয়তমা ইন্সপেক্টর শ্রীমতী সঞ্চিতা দাস পোদ্দারের সাথে।যদিও আমার সাতজন ইন্সপেক্টরই আমার সমান প্রিয়, তবুও সঞ্চিতার খাতির সামান্য হলেও একটু বেশী। নির্মল যদিও প্রায়ই নালিশ করে, বেশ বেশী। সে তো হবেই।  চুঁচুড়ায় আসার সাথে সাথেই পর পর ঝামেলা বাঁধে জনৈকা ইন্সপেক্টর এবং মহিলা সিকেসিওর সাথে। উভয়েই ত্যাগ করেন মোরে। তারপর আর ছাপ পড়তে সময় লাগেনি, মহানগরের মাননীয় মহানাগরিকেরা খড়কে কাঠি দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলতে শুরু করে দিয়েছিলেন,‘কে অনিন্দিতা? ও মেয়েদের সাথে কাজ করতে পারে না। ’ যেন ফাঁকিবাজ আর দুর্নীতিগ্রস্ত পুরুষ সহকর্মীদের ঝাড়তে আমি কোন কসুর করি। যাই হোক, এই ধরণের হামবাগ জনগণের মুখে ‘টাইট স্ল্যাপ(ফিরিঙ্গী ভাষায় না কইলে ঠিক অনুভূতিটা বোঝানো যায় না)’ কষিয়ে বিগত সাড়ে চার/পৌনে পাঁচ বছর ধরে দিব্যি ঘর করছি সঞ্চিতা আর আমি। চুপি চুপি বলি, এই চূড়ান্ত সৎ এবং কর্তব্যপরায়ন ভদ্রমহিলাকে ভয়ানক ভালোবাসি আমি, তবে তার থেকেও ভয় পাই কয়েক শতগুণ। সঞ্চিতা প্রথম চোটে চিৎকার করবে,তারপর হাত পা ছুঁড়বে,তারপর কাঁদতে বসবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে। প্রতিনিয়ত আয়না দেখি এই ভদ্রমহিলার মধ্যে।

অনির ডাইরি ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

 


বর্ষার কলকাতা আর চুঁচুড়ার অকথ্য জ্যাম কাটিয়ে, একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আজ। পরশু এক হাঁটু জল ঠেলে বাড়ি ফিরে, এখনও বেদনা জর্জরিত প্রতিটি পেশী। সাঁতরে যে ফিরতে হয়নি, এই আমার বাবার ভাগ্যি। যে রাস্তার নামই ভি আই পি রোড,সে রাস্তায় এমন অসভ্যের মত জল জমে কেন কে জানে? আর আপদ জমা জল নামে নাই বা কেন? গত পরশুর বর্ষনের জলে আজও বানভাসি আমাদের এলাকা। আজ বা কাল যদি আরো বৃষ্টি হয়, আপিস যাব কি করে? আর আমার অনুপস্থিতিতে ঘুড়ি উৎসবই বা হবে কি করে?  


কার যে নজর লাগল আমাদের ঘুড়ি উৎসবে। চুঁচুড়ায় তো আজ সারাদিন মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে পাক্কা এক হাঁটু জল। কত সাধ করে বুক করেছিলাম জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠটা। এটা ওদের অন্যতম সেরা মাঠ, আমাদের অনুরোধ ফেলতে না পেরে বিনি পয়সাতেই দিতে রাজি হয়েছেন ওণারা। প্রতি বছরই দেন, কিন্তু এই মাঠটা দেন না। বুক করতে গিয়ে রীতিমত জেরার মুখে পড়েছে আমাদের বিদ্যুৎ। ‘হ্যাঁ বাবা, তা তোমরা আবার বাঁশ-টাঁশ পুঁতবে না তো? মাইক কটা লাগবে বাবা?' ইত্যাদি প্রভৃতি। মাঠ ভর্তি কচি সবুজ ঘাস। ক্রিকেটের মরসুমে ফাঁকাই পাওয়া যায় না মাঠটা। পাছে গরু ঢুকে ক্রিজের ঘাস খেয়ে যায়, তাই রীতিমত তালাচাবি দিয়ে রাখেন ওণারা। আমাদের বেলাতেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমরা মাঠে ঢুকে গেলেই, তালা দিয়ে দেবেন প্রবেশ পথে। তাতে গরু আর উটকো লোক ঢুকতে পারবে না কেউই। শুনে হেসে বাঁচি না। তাহলে তো ঘুড়ির সাথে এডাল্ট ডাইপার ও দিতে হয় লোকজনকে। আমাদের সমীর তো বলেই রেখেছে, মাঠে এবার একাধিক জলের ড্রাম রাখতে। ফি বছর কটা ঘুড়ি ওড়ে আর কটা ঘুড়ি কাটা হয় জানি না বটে, তবে মাঠ জুড়ে প্রবল ছোটাছুটি করে জনগণ।  


আর ভগবান  না করুক কারো যদি ইয়ে মানে বড় বাইরে যেতে ইচ্ছে-টিচ্ছে করে? শুনেই চঞ্চল হয়ে ওঠে নির্মল, 'একটা টয়লেটওয়ালা মাঠ চান তাহলে ম্যাডাম'। 'টয়লেট ওয়ালা মাঠ' ব্যাপারটা কেমন যেন কাঁঠালের আমসত্ত্ব মার্কা না? আমাদের সেই সাধের ঘন সবজে মাঠ, অন্যদিন যার মাথার ওপর নীল সাদা চাঁদোয়া টাঙায় আকাশ, নির্ঘাত আজ এক হাঁটু কাদায় ভরে গেছে। কাল যে কি হবে?


যা হয় হবে, আপাততঃ বাঙালীর নিজস্ব শ্রমদিবসের প্রাক্কালে সেজে উঠছে চুঁচুঁড়া শ্রম দপ্তর। দপ্তরের আবার সাজ কি মশাই? সরকারী আপিস মানেই তো সেই, হাতলভাঙা চেয়ার, সানমাইকা ওঠা টেবিল, চোকলা ওঠা কাঁচের গোল কাগজচাপা, পেনদানীতে রাখা কালি ফুরিয়ে যাওয়া পেন, যত্রতত্র ঝুলে থাকা ঝুল আর ধুলোপড়া দস্তাবেজের ডাঁই।  

জোর গলায় বলতেই পারতাম, ওসব পাবেন না আমাদের দপ্তরে, পারব না শুধু একটাই কারণে, রদ্দি আর দস্তাবেজের ডাঁই কিছু কম নেই আমাদের আপিসে। কোথা থেকে যে রাতারাতি জড় হয়ে যায়, এত নথি আর কাগজ।  যতই বলি, ফেলে দিন, ততই আঁকড়ে ধরে সবাই। ওরে বাপরেঃ সরকারী দস্তাবেজ, ইঁদুরে খাক তবু ভালো, একযুগের আগে বাতিল করা যায় নাকি? তাহলে গোছানো তো যায়? বিশেষতঃ এমন শুভ দিন যখন সমাগত? 


বুড়ো অজিতদা প্রতিবারই বলেন বলল, “ও আমি একাই সব গুছিয়ে দেব ম্যাডাম। কোন চিন্তা নেই।” প্রতিবারই আমরা বলি, ও আপনার একার কম্ম নয়, শোনে কে? এবারে আর আপত্তি করেনি অজিত দা, সময় ক্রমশঃ থাবা বসাচ্ছে বৃদ্ধের দেহেও, ভারী জিনিস আর তেমন নড়াতে চড়াতে পারেন না আজকাল। আমাদের ধীমান, প্রিয়াঙ্কা,প্রীতি, সোমনাথ, সায়নী, রমেশ, শুভজিৎ, সমীর এরা আছে তো। লেবার আপিসে, আবার লেবারের অভাব? ভাগাভাগি করে সব হয়ে যাবে। 


প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই অজিতদাকে ভ্যাকসিনের শেষ ডোজ আনতে পাঠিয়ে ঝাড়ু হাতে নেমে পড়েছিল পুরো চুঁচুড়া টিম। বাতিল ধুলো পড়া টেবিল চেয়ার, সবেধন নীলমণি গুটি কয়েক কম্পিউটার কে ঝকঝকে করে ঝেড়েমুছে বারান্দা বাগান থেকে গুচ্ছ খানেক টব নিয়ে এসে কেমন যেন পলকে ভোল বদলে ফেলল চেনা আপিসটা। 


চাইলে আমরা কি না করতে পারি। দরকার শুধু সদিচ্ছা আর সামান্য ভালোবাসা। দিনের গরিষ্ঠাংশ যেখানে কাটাবেন, যাদের সাথে কাটাবেন, তাদেরকে যদি ভালো না বাসতে পারেন,বিশ্বাস না করতে পারেন, সেই জায়গাটাকে যদি আপন করে নিতে না পারেন, তাহলে জব স্যাটিসফ্যাকশন তো দূরের কথা, আপিসের নাম শুনলেই কান্না পাবে। 


আপিসটাকে ভালোবাসি, তাই না, কিলো খানেক ধুলো ঘেঁটেছি আমরা। সুদিনের আশায়, তাই না যত্ন করে আল্পনা দিয়েছে আমাদের সিকেসিও প্রীতি আর এসএলও প্রিয়াঙ্কা। ডানা মেলে ওড়ার জন্য আমাদের ধীমান নিয়ে এসেছে নীল-গোলাপি ঘুড়ি। ছুটির ঘন্টা বাজতে না বাজতেই, দখল হয়ে গিয়েছে আমার চেম্বার, অজিতদার মুছে দেওয়া মাটিতে বাবু হয়ে বসে ঘপাঘপ্ ছাপ পড়েছে প্রতিটি ঘুড়ির বুকেপিঠে-। কেটে গিয়ে লাট খাবে যখন, উড়ে পড়বে কোন অচীন পাড়ায়, অথবা কুড়িয়ে নিয়ে ছুটে পালাবে কোন পথশিশু, যেন চোখে পড়ে, এই ঘুড়ির সত্ত্ব শুধুই চুঁচঁড়া শ্রমদপ্তরের। গোটা গোটা অক্ষরে ফুটে ওঠে বেগুনী বরণ “বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা-”।  আর তাপ্পর? তারপর কত্ত কি- এখনও তো বাকি আমাদের সংগ্রামের দশকর্মার ফর্দ, ফুল, ফল, মিষ্টি। আপিসের ভাড়ার গাড়ি থেকে আমাদের ফটোকপিয়ার মেশিন হয়ে  আধবুড়ো কম্পিউটার, এমনকি পোর্টালগুলো পূজিত হয় এই অফিসে। আহাঃ ওদের ভরসাতেই না চলে আমাদের দপ্তর। এক দিন না হয় একটু বেশীই খাতির করলাম ব্যাটাদের।  চল বাবা, ধন্নুর নাহয় একটু জোরেই দৌড়লি।


এত আয়োজন, এত উদ্দীপনা কিন্তু চুঁচুড়ার মাথার ওপরে যে ঘনিয়ে এসেছে কৃষ্ণমেঘের চাঁদোয়া। বুড়ো কালেক্টরেটের পিচচট লাগানো ছাতের ওপর ঘুঙুর বেঁধে নেচেই চলেছে ভাদ্র মাসের বর্ষা, জেলা স্পোর্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে জমেছে এক হাঁটু জল আর প্যাচপ্যাচে কাদা। কি হবে এবার? দুয়ারে সরকারের অকথ্য পরিশ্রমের পর, সবে বইতে শুরু করেছিল খুশির হাওয়া, আমাদের আচ্ছে দিন কি সত্যিই আর আসবে না? যদি নাও আসে, যে দিন আসবে, তাকেই 'আচ্চে' বানিয়ে নেব আমরা।এটুকু বিশ্বাস আছে নিজের ওপর আর তার থেকেও অনেক অনেকটা বেশি নিজের টিমের ওপর।

অনির ডাইরি ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

 


গাঙ্গেয় বঙ্গের খাওয়া-দাওয়ার সাথে যে মেদিনীপুরের খাবার তথা রন্ধনশৈলীর বেশ খানিকটা ফারাক আছে, তা আমাদের সাড়ে চার বছর পশ্চিম মেদিনীপুর বাসের সময়ই বেশ স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়েছিল। গাঙ্গেয় বঙ্গ বলতে অনুগ্রহ করে মহানাগরিক উন্নাসিকতা ভাববেন না আবার। আমি মোটেই মহানাগরিক নই, আমি হাওড়ার মেয়ে এবং তার জন্য অত্যন্ত শ্লাঘা বোধ করি। আসলে আমি হাওড়া এবং মুর্শিদাবাদ জিলার সঙ্কর উৎপাদন। জননীর দৌলতে আমার হেঁসেলে হাওড়াকে কোঁৎকা মেরে মুর্শিদাবাদই বিজয়ী।  পেঁপে পোস্ত বা ঝিঙে দিয়ে ডিমের ঝোল বা রসুন দিয়ে পোস্তর বড়া এসবের আস্বাদই পেতাম না যদি না জীবনের প্রথম পোস্টিং খড়্গপুর হত। 


মেদিনীপুরের আরো একখান বৈশিষ্ট্য আছে, যা কেবল আমাদের মত বদলীর চাকরীওয়ালা সরকারী লোকজনই জানে, তা হল, ‘একবার মেদিনীপুর তো বারবার মেদিনীপুর। ’ আমার প্রাণাধিকা সহচরী সুকন্যাকেই ধরুন, ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিক হয়ে মেদিনীপুর, চাকরী বদলে সহশ্রম কমিশনার হয়ে ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম তখনও পশ্চিম মেদিনীপুরেরই অঙ্গ ছিল, যেই জেলা আলাদা হল, মহানগর থেকে বদলী হয়ে সু আবার গেল মেদিনীপুর। যাই হোক, ‘সু-চর্চা’ তো চলতেই পারে দিনরাত ধরে,  কিনা বড্ড গালাগাল খেতে হবে আবডালে। কাজেই ঐ প্রসঙ্গ থাকুক। তো যা বলছিলাম আর কি, মেদিনীপুর কানেকশন যে কতখানি অব্যর্থ তা প্রমাণ করে শৌভিকের আরেকবার পশ্চিম মেদিনীপুর হল না বটে, ঘুরে এসে পড়ল পূর্ব মেদিনীপুরে। এক্কেবারে আগ মার্কা মেদিনীপুর যারে কয়- 


সেই সত্তরের দশকের অন্তিমপর্বে শ্বশুরমশাইয়ের যখন বীরভূম পোস্টিং হয়েছিল, রন্ধনে দ্রৌপদী আমার স্বর্গীয়া দিদিশাশুড়ী যেভাবে কেঁদে আকুল হয়েছিলেন, তাঁর আদরের বাবলু(অর্থাৎ শ্বশুরমশাই) এ যাত্রা বোধহয় অভুক্তই মারা পড়বে ভেবে, ততোটা না হলেও বেশ খানিকটা কেঁদেছিলাম আমিও শৌভিকের বদলীর খবর পেয়ে। ‘হ্যাঁ গা, তুমি কি খাবে? কে তোমায় রেঁধে দেবে আমার মত করে-’। 


জবাব পাই, কেন সতী দেবী আছেন তো। সতীদেবীর নামটা বদলে দিলাম যদিও শুনলাম তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ তমলুকের মহকুমা শাসকদের খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তা বেশ। জানতে চাই, ‘হ্যাঁ গো, সতীদেবী রাঁধেন কেমন?’ জবাব আসে, মন্দ কি?ভালোই তো।  শৌভিকের এই জবাবে আমি মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারি না। শাশুড়ী মাতার সুপুত্তুরকে যাই বেড়ে দেবেন, তাই সোনামুখ করে খেয়ে নেন। নুন- মিষ্টি-ঝাল কম হলেও বলবে না। চাইবেও না। বাসি-পচা দিলেও বুঝবে না। মানতেও চাইবে না। তে-বাসটে রুটিও ভেজে দিলে পবিত্র করে খেয়ে নেবে, বরং ফেলে দিলেই চিল্লিয়ে মাৎ করবে- ‘খাবার নষ্ট করলি কেন?’ সবটুকুই অতসী দেবী থুড়ি শাশুড়ি মাতার অবদান তথা সুশিক্ষা। সাড়ে বারো বছরেও বিগড়াতে পারিনি তাঁর পুত্তুরকে। 


তমলুকে গিয়ে খেতে বসে দেখি পদ বেশ অনেকগুলিই। গরম ভাত-ডাল-কিছু একটা ভাজা-তরকারী এবং মাছ। শুনলাম রোজই নাকি এমনিই রান্নাবান্না করে দেন সতীদেবী। মানে যতক্ষণ  বাজার থাকে। বাজার আনার দায়িত্ব শৌভিকের ড্রাইভারের। যাই হোক, ডালটা আমাদের স্বাদের তুলনায় বা বলা চলে ভাতের ডালের হিসেবে বেশ মিষ্ট। মানতে বাধ্য হচ্ছি মিষ্টি মিষ্টি ডাল দিয়ে নোনতা নোনতা ভাজা মন্দ না। শুধু চিনতে পারলাম না,ভাজা বস্তুটা আদতে কি? শুনলাম কুঁদরি। রাতে রুটির সাথে আবার পেলাম কুঁদরি ভাজা। পর দিন আবার। পর রাতে আবার। যেদিন কুঁদরি অনুপস্থিত থাকেন,অর্থাৎ ফুরিয়ে যান, সেদিন পাত আলো করে থাকেন কাঁকরোল ভাজা। কটকটে বীজ সমেত চাকা চাকা কাঁকরোল ভাজা। 


শৌভিক দেখলাম অতীব যত্নে একটি একটি করে বীজ ছাড়িয়ে পাতের পাশে ছোট্ট টিলা বানাল। ঐ ভাবে খেতে না পারার জন্য, ‘তোরা না,অতি নিন্দুক’  শুনতে হয় তুত্তুরী আর আমাকে। একই বিশেষণে ভূষিত হই, পোস্তকে না চিনতে পারার গর্হিত অপরাধে। পোস্তই বলুন বা সর্ষে ভালো করে বাটলে যে তা আটা বা ময়দা গোলার মত খেতে হয় তাও অাবিষ্কার করলাম। এহেন সর্ষে বাটা দিয়ে মাছ খেয়ে শৌভিক অনুরোধ করে, ‘ওকে একটু কালো জিরে-কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাছটা শিখিয়ে দিয়ে যাস তো।’ তা শেখাই। বাধ্য ছাত্রীর মত, তিনি শেখেনও। তবুও শাশুড়ী মা ছাড়ুন এমনকি আমার হাতেরও সোয়াদও তো আসে না। যেমন রসুনের গন্ধ না ছড়িয়ে মাখামাখা লালচে ডিমের ঝোল রাঁধতে শেখালাম, তিনি দিলেন তাতে চিনির কৌটো উল্টিয়ে, ‘কচি খাবেনি!’ কচি অর্থাৎ ছিমতী তুত্তুরী, তাঁর যদি ঝাল লাগে-। রান্নার তরিকা বা সোয়াদে হেরফের থাকতেই পারে আবেগের ভাষা তো জেলা ভেদে একই। 


যাই হোক সতী দেবী বা পলাশ ড্রাইভারের চব্য পরে হবে, কি ভাবে তাঁরা আমাদের সোমরা( পড়ুন পাঁচফোড়ন) দিয়ে বীচে কলা আর বেগুনের ঘন্ট খাইয়ে মোহিত করেছিলেন বা ঘন দুধ আর সামান্য আদা দেওয়া নারকেলের মিষ্টি খাইয়ে আমাদের হৃদয় হরণ করেছিলেন, কি ভাবে তাঁরা আমাদের থোড়-বেগুনের ঘন্ট তথা আরো কি কি খাওয়াবার ভয় দেখিয়েছিলেন সে চব্য পরে হবে খন, আপাততঃ ফিরে যাই মাননীয় মহকুমা শাসকের কাছে।  


বৎসরান্তে জন্মদিন তো একবারই আসে, এ তো আর আমাদের বিয়ে নয় যে ঘুরে ফিরে দুবার আসবে, আর যাঁর জন্মদিন তাঁকে ছাড়া চলে কি করে? ঐ দিনটিতে শুধু আসুক, তারপর না হয় আর সারা মাস কোন আব্দার করব না আমরা। (চলবে?)