অনির ডাইরি ৫ই জুলাই,২০২১
মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা, তখন আমি এএলসি খড়্গপুর। সুকন্যা ঝাড়গ্রামের রাণী আর দেবুর ভাগ্যে শীলাবতী আর ঘাটাল। ডিএলসি স্বর্গীয় শৈবাল বিশ্বাস সাহেব। শুক্রবার করে শৈবাল দা মিটিং ডাকলে সে যে কি পৈশাচিক আনন্দ হত, তা বলার নয়। ভুজুং ভাজুং দিয়ে চারটের মধ্যে, বা পারলে তারও আগে যদি মিটিংটা শেষ করা যায়, তাহলে খড়্গপুরের বিখ্যাত পূজা মলে ঢুঁ মেরে, টুকটাক উয়িন্ডোশপিং সেরে, মাসের শুরুতে হলে, গলা কাটা সিসিডি, না হলে সস্তা ফুড কোর্টে সর্ষের তেলের গন্ধ ওয়ালা সেউ ভাজা দিয়ে পাপড়ি চাট সাঁটিয়ে, দেশ দুনিয়ার পরনিন্দা আর পরচর্চা করতে করতে সোজা কলকাতা। তেমনি ফিরছি, নতুন বরের ফোন। ' আমার লালবাগ অর্ডার হচ্ছে। '
অ্যাঁ? সে কি? অর্ডার অর্থাৎ বিডিও পোস্টিং এর অর্ডার। সে তো অনেকদিন ধরেই শুনছি, এই বেরোল বলে-এই বেরিয়েই গেল- আজ অবশ্যই বেরোবে- যাক আজও বেরোল না। অবশেষে তিনি প্রসূত হচ্ছেন বটে, তাই বলে লালবাগ? একজন খড়্গপুর- আর একজন লালবাগ?
নাঃ, আর পাঁচটা বিবাহিত দম্পতির মত গার্হস্থ্যজীবন বোধহয় আমাদের স্বপ্নই থেকে যাবে। লালবাগে আমার পোস্টিং জীবনেও হবে না। ২০০৯ সালে লালবাগ মহকুমায় আমাদের কোন অফিসই ছিল না যে। সবথেকে কাছের লেবার আপিস বলতে বহরমপুর এবং সেখানেও কোন জায়গা ফাঁকা নেই।
মনে হয় এই তো সেদিন, দীর্ঘ রুদ্ধশ্বাস নাটকের পর অবশেষে স্পাউজ-পোস্টিংকে মান্যতা দেখিয়ে বিডিও খড়্গপুর-২ হিসেবে জয়েন করল শৌভিক। হিমেল পয়লা ডিসেম্বরের সন্ধ্যায়, এক ব্যাগ জামাকাপড় নিয়ে মাদপুরের বিডিও কোয়ার্টরে আমাদের গৃহপ্রবেশ। এই তো সেদিন ভাগ করে বাসন মাজতাম আমরা। ভোর বেলা ঘুম ভেঙে উঠে রাতের এঁটো বাসন মাজার দায়িত্ব ছিল আমার, আর সন্ধ্যা ঘনালে, আপিস থেকে ফিরে দিনের ভিজিয়ে রাখা বাসন মাজতে বসত শৌভিক। এমনি এক সন্ধ্যায়, চিত্রদীপদা ফোন করেছে, শৌভিকের হাত ভর্তি ভিম লিক্যুইডের ফেনা। আদিষ্ট হয়ে ফোন ধরে যেই না বলেছি,‘শৌভিক বাসন মাজছে, হয়ে গেলে ফোন করবে তোমায়-’, সে কি হাসি চিত্রদীপদার। বাপরেঃ
ব্লক উইথড্রয়াল নিয়ে, প্রতি সন্ধ্যায় কি হিসেব নিকেশই না করত দুই ব্যাচমেটে। কবে শেষ হবে এই বিডিওগিরি।
দেখতে দেখতে দু-দুটো ব্লকের বিডিওগিরি শেষ করে, হুগলীর ওসি ইলেকশন গিরি সামলে, উত্তর কলকাতার ইলেকশনের গুরু দায়িত্ব সামলে এবার তমলুকের এসডিও হবার পালা। সত্যি কি ঝড়ের মতই না কেটে যায় সময়। অনেক অনেক শুভেচ্ছা, Shouvik Bhattacharya । দেখো, পাক্কা এক যুগ পেরিয়ে জীবন কেমন আবার আমাদের এনে দাঁড় করিয়েছে সেই একই পথের বাঁকে-।
No comments:
Post a Comment