Friday, 9 July 2021

অনির ডাইরি ৯ই জুলাই, ২০২১



এই তো মার্চ মাসের কথা, মায়ের জন্মদিন ছিল সেদিন। বাবার অগোছালো ঘরে জামাই বরণের সঙ্কোচকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সদলবলে কেক কাটা হল।  উঠল গোছা গোছা ছবি, নিষেধাজ্ঞা জারি হল সামাজিক মাধ্যমের ওপর। সৌজন্য- মায়ের আজন্ম  লালিত সঙ্কোচবোধ। ছিঃ লোকে দেখলে কি বলবে? ভূতের আবার জন্মবার! 

মাতৃআজ্ঞা আমার শিরোধার্য বটে, তুড়ি মেরে, বাবা অবশ্য দিব্যি পোস্ট করেছিল ফাটিয়ে। নেহাৎ ট্যাগাতে জানে না। সোমাদির হোমবেকড ডার্ক চকলেট কেকের ওপর সাঁটানো আমার মা- আর আমার মেয়ের মিষ্টি মিষ্টি ছবি। প্রথম চোটে তো বাবা- মা বা পিসি বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে, ছবিটাও খাওয়া হবে। টুকরো টুকরো হবার পর, মায়ের ছবির অংশটার ওপর লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তুত্তুরী, হাত বাড়াবার আগেই, ‘আমার বউ’ বলে খপ করে তুলে নিল বাবা। 

মাত্র কমাসেই বদলে গেছে কত কিছু। না, লকডাউন বা বর্ধিত তেলের দাম নয়, বদলে গেছে আমাদের বাচ্ছাগুলো, তালগাছের মত লম্বা হয়ে গেছে বুল্লুটা।  খোলতাই হয়েছে গায়ের রঙ, বেপাত্তা হয়েছে শরীরের যাবতীয় স্নেহ পদার্থ। গলা না ভাঙলেও, আমাদের জেলার ভাষায়  সিড়িঙ্গে, তাল ঢ্যাঙা হয়ে উঠেছে ছেলেটা। বললেই বুল্লুর বাপের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আমার বাপ বলে, ‘হবে না। পড়া পড়া করে পেঁদিয়েই লম্বা করে দিল ছেলেটাকে-’।  যেন মা আমাকে কম ইয়ে করেছে, তাও যে কেন ----(দীর্ঘশ্বাস)। কত যে ভুল ধারণা থাকে মানুষের, তুত্তুরীর যেমন মনে হয়, ওর গালের যাবতীয় বেবি ফ্যাট নাকি আমার চপেটাঘাতেই ঝরে গেছে। যেন মা আমাকে চপেটাঘাত কিছু কম করেছে- তাও তো----(দীর্ঘশ্বাস)। এখন এসব বলতে বসলেই তো গোঁসা হবে মায়ের,  ছিটকে আসবে যাবতীয় তির্যক মন্তব্য,  ‘হ্যাঁ, জানি তো। মা খুব খারাপ। যত দোষ তো মায়েরই। দাঁড়া, মা যেদিন থাকবে না- ’। কি আশ্চর্য শুনতে শুনতে বড় চেনা মনে হয় শব্দ গুলো, আজ সকালেই কাকে যেন বলছিলাম- ‘মা না থাকলে বুঝবি-’।

No comments:

Post a Comment