Wednesday, 23 June 2021

অনির ডাইরি, ২৩শে জুন, ২০২১

 অনির ডাইরি, ২৩শে জুন, ২০২১


আপিস ফেরতা দরজায় কড়া নাড়লেই, টের পাওয়া যায় প্রবল হট্টগোল। ভেসে আসে উচ্ছ্বাসে ডগমগ কলকাকলি, ‘মা এসেছেএএএএএ। আমিইইই খুলব’। ঝণাৎ করে দরজার ছিটকানি খুলে মুখ বাড়ায় কেউ, ‘মা। আমি আজ কোন অপাট করিনি। ’ দিনান্তে সন্তানকে বুকে পাবার টলটলে আবেগ পলকে ফুস্ করে কোথায় যেন উবে যায়। ধড়াস করে ওঠে অভিজ্ঞ জননীর হৃদয়। আজ আবার কি কেলো বাঁধিয়েছিস বাবু?


যাকে প্রশ্ন করা, তিনি ততোক্ষণে গভীর মনোযোগ সহ ব্যস্ত হয়ে পড়েন অঙ্ক করতে। এত দ্রুত মা আসার উচ্ছ্বাস থেকে মনোযোগী ছাত্রী হয়ে যাবার মধ্যেও কেমন যেন অন্য গন্ধ পায় মা। টের পায়, বাপ-মেয়ের মধ্যে ইশারা-ইঙ্গিতে চলছে কোন গভীর ষড়যন্ত্র। একজনের মুখে, ‘বলে দেব নাকি’ মার্কা দেখন হাসি। আর অপর জনের চোখেমুখে কাতর বিনতি, ‘প্লিজ বোলো না বাবা। ’ অথচ তাকালেই, দিব্যি ভালো মানুষের মত কফির কাপে চুমুক দেয় একজন। অন্যজন তো অঙ্কে মগ্নমৈনাক। কাল সকালে খাতা দেখতে বসে চুল ছিঁড়ব আমি, সাতটা অঙ্কের মধ্যে করা হবে মাত্র চারটে। বাকি তিনটে নাকি দিয়ে, কেটে দিয়েছি আমিই। রোজই নাকি অমন করি। লিখতে দিই, তারপর কেটে দিই। অস্বীকার করলে ঘোঁট পাকিয়ে ঝগড়া করতে আসে বাপ আর মেয়ে।  


আজ যদিও, ততোটা ঐক্যমত মনে হল না। বরং বেশ ঘুষ দিতে ইচ্ছুক বলে মনে হল, এক পক্ষকে। অপর পক্ষ যেন আরো একটু দর বাড়াতে ইচ্ছুক।  কর্মক্লান্ত দিনের শেষে এমন টেনশন তথা রহস্যময়তা কার ভালো লাগে মাইরি। গভীর মনোযোগ সহ পর্যবেক্ষণ করি, সবকিছুই তো গোটাগুটিই লাগছে। আমার সাধের গাছপালা, আমার অবশিষ্ট গুটি কয় লিপস্টিক, কাজল পেন্সিলের মাথা, আধ শুকনো নেলপলিশ, আমার B আর Z বোতাম হারানো ল্যাপটপ, আমার বর, আমার মেয়ে সবই তো অটুট। তাহলে ঘটিয়েছেন কি শ্রীমতী অঘটনঘটনপটিয়সী? 


ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে বিকট দাঁত কিড়মিড় করার পর জানা যায়, তেমন কিছুই না। শোবার ঘরে, ফুটবলে লাথি মারা প্র্যাকটিশ করতে গেলে যা হয় আর কি, ফুটবলটি যথাস্থানে থাকলেও একপাটি চপ্পল সোজা আত্মগোপন করে মস্ত বাক্স-পালঙ্কের  নীচে মাঝবরাবর। তবে আমার চিন্তার কোন সম্যক কারণ নেই, মাটিতে দীর্ঘক্ষণ গড়াগড়ি খেয়ে, গোটা দুয়েক ফুলঝাড়ু এবং ঝুলঝাড়ুর সম্যক ব্যবহারে শেষ পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করেছেন শ্রীমতী তুত্তরী।


 ভুল বললাম, উদ্ধার তো করেছেন বাবা, তুত্তরীর হাত অত লম্বা থোড়াই? তবে শ্রীমতী তুত্তরীও উদ্ধার করেছেন বৈকি, খাটের নীচে নিরূপদ্রবে আস্তানা বানানো বিস্তর চুল আর ঝুল। যাদের চিহ্ন শোবার ঘরের মেঝে জুড়ে তো বটেই, এমনকি এখনও জবজবে করে লেগে আছে কন্যার গা তথা মাথাতেও। সাফাইওয়ালি বাড়ি না থাকলে যা হয় আর কি। 

উফঃ মাগো। মা হওয়া কি মুখের কথা। হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, মা।

No comments:

Post a Comment