Thursday, 8 April 2021

ইতি বুজুর মা।

 ইতি বুজুর মা- ৮ই এপ্রিল, ২০২১


আজ খুব ইচ্ছে করছে, তোমাকে একটা চিঠি লিখি। কেন ইচ্ছে করছে জানি নে বাপু। তুমিই শিখিয়েছিলে, ‘ইচ্ছে হল এক ধরণের গঙ্গা ফড়িং, অনিচ্ছেতেও লাফায় খালি তিড়িংবিড়িং। 


 চিঠি লেখার নিয়মে প্রথমেই বোধহয় একটা সম্বোধন দিতে হয়। যেমন গুরুজন হলে পরম পূজনীয় বা শ্রীচরণকমলেষু ইত্যাদি। আর তোমার কন্যার ভাষায় ল্যাঘুজন হলে প্রিয়বরেষু বা প্রিয়তমেষু এই ধরণের কিছু বোধহয়। তবে এতবছর বাদে তোমায় প্রিয়তমেষু বলে সম্বোধন করলে, তুমি নির্ঘাত হোঃ হোঃ হোঃ করে অট্টহাস্য করবে। যেমন করো, তুমি আর তোমার বিশ্বপাকা মেয়েটা। আমার সবকিছুতেই কেন যে তোমরা এত খুঁত খুঁজে পাও, মানছি আমি হদ্দ কুঁড়ে,অলস, অলবড্ডে এবং তোমাদের তুলনায় বেশ খানিকটা নির্বোধ এমনকি হয়তো কিছুটা অগোছালো, অপরিষ্কারও। নাহয় তোমার মায়ের মত গৃহকর্মনিপুনা নই, তাই বলে বুঝি আমি এতই ফেলনা? 


শুধু ‘প্রিয় অমুক’ অবশ্যি লেখাই যায়, কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে তোমার পোশাকী নামটা ধরে তো কোনদিনই তেমন ভাবে তোমায় ডাকিনি, তাই ঐ প্রিয় অমুক লিখতে গেলে শেষে বাবু জুড়ে বসব নির্ঘাত, জানোই তো আমি কতটা সেকেলে। আমি যে তোমার অচল পয়সা।  ব্যাপারখানা কেমন যেন পরপুরুষকে চিঠি লেখার মত হয়ে যাবে। তাতে পূব-পশ্চিম রাগ- অনুরাগ থাকতে পারে বটে, কিন্তু তোমার-আমার এই সুখী দাম্পত্য, আমাদের খুচরো অভাব, তুচ্ছ হীনমণ্যতা, আমাদের সামান্য মনখারাপ, আমাদের সামান্য পিছিয়ে পড়া, ছাপোষা লড়াই, আমাদের তেল নুন লকড়ির গল্প তো করা যাবে না।


আর আমি তোমার সাথে গল্পই তো করতে চাই। হোয়াটস্অ্যাপে লাইভ লোকেশন পাঠিয়ে, ‘বাড়ি ফিরছি’ নয়, আমি তোমার সাথে বলতে চাই অনেক অনেক কথা। চিৎপুর মার্কা ভালোবাসায় জবজবে সেই সমস্ত কথায় থাকব শুধু তুমি আর আমি। জানাতে চাই, ঠিক কখন, কখন, ঠিক কতবার অনুভব করেছি, তোমার মত  আর কেউ নেই। তোমর থেকে ভলো আর কেউ হতে পারে না।  শুধু একটাই অনুরোধ, অনুভূতিটা অনুভব করো, দয়া করে বানান ভুল ধরতে বসো না। তোমর কখনও মনে হয়েছে কিনা জানি না, আমার প্রায়ই মনে হয় বড় বেশী বাবা-মা হয়ে পড়ছি আমরা, সব সময়েই আমাদের মধ্যে বিরাজ করে তৃতীয়া কোন ব্যক্তি। সব শেষে জীবনের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেও সবথেকে বেশী গুরুত্ব পায় সে। হ্যাঁগা তুমি তাকে আমার থেকে বেশী ভালোবাসো না তো? মাঝে মাঝে তাকে বকাঝকা বা ঠ্যাঙানোর পর যেভাবে কালো হয়ে থাকে তোমার মুখ,দেখে রীতিমত কেঁপে উঠি আমি। মা হিসেবে সন্তানকে সুশিক্ষা দেবার দায়িত্ব যে মুখপোড়া সমাজ চাপিয়েছে আমার কাঁধে, খারাপ হলেই বলবে আমার মেয়ে, আর ভালো হলেই, তোমার আর তোমাদের বাড়ির মেয়ে  কিনা। 


আমি তোমায় সোহাগ করে যে নামে ডাকি, সেই নামে অবশ্যি সম্বোধন করতেই পারি, কিন্তু সেই নামটা যে আমার সমস্ত কিছুর পাসওয়ার্ড। চিঠি বেহাত হলেই যে বিপদগ্রস্ত হব।  অবশ্যি তুমি সবই জানো, আমার সমস্ত পাসওয়ার্ড, যাবতীয় পিন, আমার তুচ্ছ উপার্জন ইত্যাদি প্রভৃতি- কোনকিছুই তোমার অজ্ঞাত নয়। তোমার ডেবিট আর ক্রেডিট কার্ডের পিন ছাড়া বাকি কোন কিছু অবশ্য লুকিয়ে রাখো না তুমিও। চুপি চুপি তোমায় বলি,ঠিকই করো।  আমার খরচপাতির হিসেবটা তো তুমি জানো না মশাই। তুমি আমায় যতই চোখবন্ধ করে বিশ্বাস করো না কেন, আজ স্বীকার করছি, অনেককিছু বেমালুম চেপে যাই আমি। মানে টুকটাক কেনাকাটার গপ্প। ভয় পাই, জানতে পারলে যদি কুরুক্ষেত্র করো তুমি, সামনাসামনি স্বীকার না করলেও বড় ভয় পাই তোমায়। ধরা পড়লেও তুমি অবশ্য কিছুই বলো না, বড়জোর বলো, ‘বড় বাজে খরচা করো/করিস। মনমর্জি মোতাবেক কখনও তুমি কখনও তুই বলো তুমি। আমিও তাই বলি।  পরিস্থিতির  তাপমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় আমাদের সম্বোধন। 


বড় বাজে বকছি।পশ্চিমের মরা চাঁদ এবার বুঝি হেলে পড়বে পূবে। ঘুমোতে যেতে হবে এবার, কাল আবার একখান কর্মব্যস্ত দিন। বলার ছিল কতই কথা, বলতে পারলাম কই? বলতে চেয়েছিলাম যা তা মৌখিক ভাবেও হয়তো বলেছি অনেকবার। বলছি কি না, তুমি ভালো থেকো গো। তুমি ভালো থাকলেই ভালো থাকব আমি আর ঐ ছোট্ট লোকটা।।  দেখো আবার তার কথা তুললাম। বলেছিলাম না বড় বেশী বাবা-মা হয়ে গেছি আমরা। 


ইতি

বুজুর মা। 

পুনশ্চঃ-ধ্যাৎ তেরি।

No comments:

Post a Comment