Sunday 2 February 2020

কথা-

©Anindita Bhattacharya

-কথা বলো-
-এত রাতে? কি কথা?
-জানি না। যা মন চায়-।
-হুঁ।
-বিরক্ত হয়ো না প্লিজ। জানতে চাইছি না, তুমি আমায় ভালোবাসো কি না-,ইত্যাদি। ইত্যাদি। এমনি কথা বলো না,যা হোক কিছু-D
-হুঁ।
-সাদামাটা কথা। ঘর গেরস্থালির কথা। বা মন চায়- যদি মন চায়- আমার সাথে কইতে।
-হুঁ। সে বলাই যায়- কথা।
- তুমি কি জানো? রুবির মা একটি পাকা চোর? আজ রাতে ও তোমার জন্য দুটি পরোটা বানিয়েছিল- বাকি আটটা নিজের জন্য। তোমার নাকের ডগা দিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে গেল- তুমি টেরটিও পেলে নাR।
- তাই নাকি?
- নয়তো কি? তোমার নাকি মাসে এক কিলো সার্ফ লাগে। লাগতে পারে? তোমার কি মনে হয়?
_ হুঁ । এটা আমারও মনে হয় মাঝে মধ্যে। আর তিন কিলো তেল আর দু কিলো চিনিটাও বাড়াবাড়ি যাই বলো। বুঁচকু থাকলেও না হয় মানা যেত-
- তবে? বোঝ তো সবই। কিছু বলো না কেন?
- ধুর। বুঁচকু বারবার বলে, “বাবা, আমার এখানে চলে এসো। ভাবছি, সত্যি কটা দিনের জন্য চলেই যাই-K
- চলে যাবে?
-হুঁ। কটা দিন থেকেই আসি না হয়। ওর বাচ্ছা গুলোও ছোট। আমি থাকলে একটু সুবিধে হয়-
-অ। চ-লে যা-বে।
অতঃপর? অন্তহীন নীরবতা। উঠে পড়লেন সুকুমার বাবু। গলায় বেশ ব্যথা করছে। রাত তিনটে। ঘুম আজ আর আসবে না। খুট করে জ্বলে উঠল রান্নাঘরের আলো। জ্বলল গ্যাস। মেপে জল নিলেন সস্ প্যানে। গ্যাসে চড়াবার আগের মুহূর্তে পিছন ফিরে জিজ্ঞাসা করলেন,“তুমি খাবে?” অখণ্ড নীরবতা। চরাচর যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। আরশোলা টিকটিকি, ব্যস্ত রাজপথ দিয়ে অনর্গল ছুটে চলা লরি বা বাসগুলোরও যেন লুপ্ত হয়েছে অস্তিত্ব। শ্বাস ছেড়ে চা বানাতে লাগলেন সুকুমার বাবু। অভিমান। অভিমান। কথায় কথায় অভিমান হয় এদের মা আর মেয়ের। ওদিকে মেয়ে ঠোঁট ফোলাচ্ছে, “আসছ না কেন বাবা?তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না।”  আর এদিকে মা-। দুজনেই চায় তাঁকে। দাঁড়িপাল্লার দুদিকে দুজনকে চাপিয়েই গোটা যৌবন কাটল সুকুমার বাবু। পান থেকে চুন খসলেই,পক্ষপাতিত্বর  অভিযোগ আনত অপরপক্ষ। অতঃপর চলত দুদ্ধর্ষ মান-অভিমানের পালা। নিজেকে বড় মূল্যবান বোধ হত তখন-। আজকাল সব কিছুই যেন কেমন বিমর্ষ, ধুসর, বিস্বাদ লাগে-। হাঁপিয়ে উঠছেন সুকুমার বাবু-।  বয়সটাও তো-
চায়ের কাপটা রাখলেন টেবিলের ওপর। বসলেন মৃণালিনীর মুখোমুখি। এক গাল হাসি দেখে জ্বলে গেল গা। সারাজীবন ঘুমোতে দিল না, মিনু ওকে। অল্পবয়সে চোখের পাতা জুড়লেই যত সোহাগ উথলে উঠত মিনুর। সেই “অল্পবয়স” চলেছে মধ্যপঞ্চাশ অবধি। তারপর শুরু হল রোগের বাহানা। পা ব্যথা, মাথা ব্যথা, অম্বল-গ্যাস-চোঁয়া ঢেঁকুর। জ্বর হলে তো কথাই নেই। সুকুমার বাবুর অসাক্ষাতে দিব্যি সব করে বেড়াত, যেই বুড়ো বরকে দেখত,অমনি কচি খুকি হয়ে যেত মিনু। কোলের কাছে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকতে চাইত-। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ থাকলেও হাত বাড়িয়ে দেখে নিত, সুকুমার আছে কি না। বাপের বাড়ি গেলেও আসত হুকুম- ফেরার পথে নিয়ে যেও কিন্তু।  সুকুমারকে ফেলে হাসপাতালেও গেল না মিনু- কি অনন্যসাধারণ লজিক,  না, “তোমাকে ছেড়ে গেলে তো এমনিই বাঁচব না-।” ঐ কথা আজকাল সুকুমারেরও বলতে ইচ্ছে হয়। বড় ইচ্ছে হয়- শুনবে কে? শুনছে কে? ডাইনিং রুমের দেওয়াল জোড়া সুন্দর সুন্দর ছবি, না না বয়সের মিনু। হাসি মুখে তাকিয়ে আছে সুকুমার বাবুর দিকে। বলেন। আজকাল ওদের সঙ্গেই কথা বলেন সুকুমার বাবু। ওদের সাথে কথা বলা সহজ।  সেই সব কথা, যা কখনও বলতে পারেননি মিনুকে। ভয় করত যে, দুর্বলতা দেখাতে- জানতে পারলে যদি কমে যায় মিনুর ভালোবাসা। তাই মিনুর সামনে কখনও বলতে পারেননি। আজও পারেন না। যখন স্বপ্নে মিনু আসে,ক্ষণিকের তরে- অব্যক্ত কথায় চাপে শুধু বড় ব্যথা করে গলা। বললেই যদি চলে যায় মিনু,চিরতরে-। স্বপ্নটুকুই তো শুধু সম্বল সুকুমার বাবুর- 
-

No comments:

Post a Comment