জাতীয়তাবাদের ঢল নেমেছে। তেরঙ্গায় মুড়ে গেছে ফেসবুক। হাবাগোবা মহিলা শ্রমিক আমি, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ফান্ডাটাই বুঝি না। সকালে কাগজ দেখার সুযোগ হয় না, খুব একটা ঔৎসুক্য ও নেই, ফলে সমসাময়িক ঘটনাবলী সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ।এমনকি তথাকথিত পেজ থ্রী সেলেব দেরও খুব একটা চিনি না। সেদিন এক বন্ধু এক অপরূপার ছবি পাঠাল, রক্তবর্ণ বসনে স্বয়ং ঊর্বশী, কেবল হাতে একটি ত্রিশূল । কোথায় যেন দেখেছি, কোন সিনেমা, কিছুতেই মনে করতে পারলাম না, সাধারণত সর্বসমক্ষে নিজের অজ্ঞতা যাতে না প্রকাশ পায়, সে ব্যাপারে আমি অত্যন্ত যত্নশীল কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে সেদিন জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলাম, যে অভিনেত্রীর নামটা যেন কি? পেটে আসছে বটে তবে --- । বন্ধু বেশ কিছু বাছাই অসংস্কৃত শব্দ প্রয়োগ করে জানাল, উনি একজন পুণ্যাত্মা সন্যাসিনী।
যাই হোক, সকাল বেলা ফেসবুক খুলেই চমকে উঠলাম, ব্যাপার কি? হঠাৎ করে সবাই তেরঙা ছবি লাগাচ্ছে কেন? দেশের বাবার জন্মদিন আসতে বিলম্ব আছে, আর দেশের বাবাকে উদোম খিস্তিখেউড় করাটাই তো হেপ এণ্ড হ্যাপেনিং। ওনার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র না জেনেও যত বিকৃত ভাষায় ওণার সমালোচনা করতে পারবেন, তত বোদ্ধা হিসাবে আপনার নাম ছড়াবে। মাঝে ঝালনুন হিসাবে নেতাজীর সাথে ওণার একটু তুলনা, আঃ জমে ক্ষীর । আজও কতলোক যে ওণাদের বেচে খাচ্ছে। সেদিন দেখলাম জনৈক গবেষক নানা তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেই ছেড়েছেন যে গান্ধীজী ঘোরতর বর্ণবিদ্বেষী ছিলেন।
মোদ্দা কথা হল, বাপুর জন্মদিন নয়, স্বাধীনতা বা প্রজাতন্ত্র দিবস ও নয়। তবে কি হল রে বাবা? প্রোফাইল পিকচার তো আমিও ঘনঘন পাল্টাই। নার্সিসিস্ট হওয়া মোটেই দোষের নয়। পরের খুঁত দেখার থেকে নিজেকে নিখুঁত দেখা ভাল। কিন্তু নতুন ছবি কেউ লাগায়নি, পুরানোটাই তেরঙা হয়ে গেছে। ওপরে লেখা “ডিজিটাল ভারতের সমর্থনে । ” ব্যাপারটা কি? যত বেলা বাড়তে লাগল, তেরঙা ছবির সংখ্যা বাড়তে লাগল। কিছুকাল আগে আমেরিকায় সমকামী বিবাহ আইনসিদ্ধ হওয়াতে বহু লোক এরূপ রামধনু রঙের ছবি লাগিয়েছিল। যে দেশে সম্মান রক্ষার্থে খুনজখম আকছার হয়, যেখানে এখনও গাড়ু নিয়ে লোকে মাঠে ছোটে, সমকামী এবং হিজরার প্রভেদ বোঝাতে চুল ছিড়তে হয়, তারাও আমেরিকান সমকামীদের জয়ের উল্লাসে সাত রঙে রাঙিয়ে ফেলল আননবই। মন্দ কি। যতক্ষণ আপনার পুত্র -কন্যা, ভাই- বোন বিষমকামী থাকছে, হেপ হতে সমস্যা কোথায়। হলে পঞ্চম বেদ তো রইল।
কিন্তু ডিজিটাল ভারতটা কি? খায় না মাখে? বেশ কয়েকজনকে প্রশ্ন করলাম, উত্তর এল না বটে তবে তাদের ছবিগুলি চটপট তেরঙা হয়ে গেল। শেষে আমার এক ভগিনীসম সহকর্মী জানাল যে প্রতিটি গ্রাম কম্পুটর দিয়ে ঢেকে ফেলা হবে। অন্তরজালে মুড়ে যাবে ভারতবর্ষ । দীন ,দরিদ্র , অর্ধউলঙ্গ, পূর্ণ উলঙ্গ ভারতবাসীও আননবই পড়তে পারবে। বাঃ বলতে গিয়েও থমকালাম, পড়বে কি করে? অক্ষরজ্ঞান থাকলে তো? বন্ধু বলল, এসব গাড়ল মার্কা প্রশ্ন করলে তোমাকে আই এস আই এর এজেন্ট বলবে। ঠিক । ঠিক। মুখবন্ধ করে কল্পনা করছি, আমার মামার বাড়ির গ্রাম, সুদূর মুর্শিদাবাদের একটা অখ্যাত গ্রাম, আর অখ্যাত থাকবে না। পাষানী গয়লানী , ইসমাইল মাষ্টার, অশোক মুদি, নারান হাড়ির গৃহপরিচারিকা বউ, খোঁড়া অনাথা সরস্বতী মাসি সবাই ল্যাপটপ নিয়ে ঘুরবে। ট্যাবলেট হাতে বুনো পাড়ার ছেলেগুলো বাগালি করতে যাবে। এমনকি বুনোপাড়ার ঘরে ঘরে যখন ধেনো মদ তৈরি হবে তখনও----- “বড়িয়া হ্যায়”।
#Anirdiary #Aninditasblog
#Anirdiary #Aninditasblog
No comments:
Post a Comment