Sunday 14 November 2021

অনির ডাইরি, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

 

শৌভিকের জন্মদিনের ডাইরিটা আর লেখা হয়ে ওঠেনি। কতকিছুই তো হয় না। জীবনের সবথেকে নরম মূহূর্তগুলো, সবথেকে তেঁতো- বিস্বাদ, সবথেকে সাদামাটা, সবথেকে রোমাঞ্চকর, সবথেকে পরিপূর্ণ, টলটলে, মনখারাপি কত মুহূর্তই যে থেকে যায় অধরা- 


অথচ কি প্রচণ্ড খেটেছিলাম দিনটার জন্য, প্রিয়জনেদের মাঝে সাজিয়েগুছিয়ে তার সামনে বেড়ে দেব কিছু সুখাদ্য, তারই জন্য পাগলের মত দৌড়েছিলাম উদয়াস্ত। কিছুই তো দাবী করে না লোকটা, বিগত একযুগে সামান্যতম যাতনাও দেয়নি, বরং যখনই রান্না করতে চেয়েছি থামিয়ে দিয়েছে টেনে। থাক না। সিদ্ধ ভাত, এমনকি বাসি রুটিও খেয়ে নিয়েছে মুখটি বুজে।  এবারেও হয়নি তার ব্যতিক্রম, ফাটা রেকর্ডের মত বাজিয়েই গেছে, কি দরকার এত কষ্ট করে, খাবার কিছু আনিয়ে নিলেই তো মিটে যায়।  


মিটে তো যায়,শুধু মন যদি মানত-। এবছর শৌভিকের জন্মদিনটা পড়েছিল শনিবার, অন্যদিনে পড়লে করা হত না কিছুই।  শনিবার বলেই আশায় বেঁধেছিলাম হৃদয়, মাসে তো একবার বাড়ি ফেরে আমার বর, মাননীয় জেলাশাসক নিশ্চয়ই এ হপ্তায় বাড়ি ফিরতে বাধা দেবেন না। 


সন্ধ্যা গড়িয়ে যখন বাড়ি ফিরল আমার বর, যোগাড় যন্ত্র প্রায় শেষ। গ্যাসের ঢিমে আঁচ ফুটছে লালচে হয়ে আসা পায়েস। চাপচাপ পায়েস বড় ভালোবাসে এরা বাপ আর মেয়ে। আসলে ভালোবাসে গোটা ভট্টাচার্য পরিবারই।  পায়েসে কাজু কিশমিস নিছক ঝঞ্জাল মনে করে এরা। তাই ঢিমে আঁচে ঘন হয়ে আসা দুধে একমুঠো ভিজে গোবিন্দভোগ চাল আর একচামচ ঘি দিয়ে রাঁধি পায়েস। চাল সিদ্ধ হয়ে এলে শুধু মেশে চিনি। অপর গ্যাসে ফুটছে টমেটো,আমসত্ত্ব আর খেজুরের চাটনি। ফ্রিজে ম্যারিনেট করা আছে রেজালার মুর্গি আর বিরিয়ানির খাসি। কাঁচের পাত্রে পেঁয়াজ- আদা-রসুন-কাঁচালঙ্কা-ধনেপাতা আর পুদিনাপাতার প্রলেপ মেখে ঘুমাচ্ছে ভেটকির ফিলে। 


রান্নার আলমারি ঠাসা বাসমতী চাল,মাখানার প্যাকেট, কাশ্মীরি লঙ্কা, চাটমশলা, সামরিচ গুড়ো, মিঠা আতর, কসুরি মেথি ইত্যাদি বিজাতীয় মশলায়। কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠে অন্তত বার পাঁচেক বাজারে গেছি, বার দুয়েক টাকা তুলেছি। মিথ্যে নয় মশাই। আমি টাকা তোলার ব্যাপারে বেশ কিপটে আর ইয়ে বাজারদর সম্পর্কে একেবারে অগা। সব বাজারদোকান যে শৌভিক করত-।  


দোকানবাজার সেরে,স্নান সেরে দৌড়েছি মেয়ের স্কুলে রেজাল্ট আনতে। এক বস্তা নম্বর নিয়ে বাড়ি ফিরেই দৌড়েছি সিটি সেন্টার বরের জন্মদিনের উপহার কিনতে। সামনেই পুজো, পুজোর উপহার স্বরূপ কিছু নগদ পেয়েছি বাবার থেকে, কি আর বলব নিজের বাপের কথা, টাকাপয়সা দিয়ে আমায় একফোঁটা বিশ্বাস করে না গো। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পড়েই আছে আমার পিছনে, ‘তুত্তুরী আর শৌভিকেরটা কিনে আন, আমরা দেখে যাই। শেষে- ’। বাকিটা অনুক্ত থাকলেও বুঝতে বাকি থাকে না। শেষে যদি অন্য খাতে উড়িয়ে দিই আমি। 


 এক সপ্তাহের জন্য এসেছিল আমার বাড়ি। আসেনি, মোটামুটি আধহাত নাক খৎ দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম কটাদিন হাওয়া বদলের জন্য। আজ জামাই আসার আগেই তেনারা ফিরে যাবেন, দ্বিপ্রাহরিক আহারের পর রেখে আসতে যাব সেই আমিই, তার আগেই কিনে আনতে হবে জামাতার জামা। বেলা একটা নাগাদ বরের জন্মদিন আর পূজার জামাকাপড় কিনে বাড়ি ফিরে, চাট্টি নাকেমুখে গুঁজে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর লটবহর নিয়ে দৌড়েছি হাওড়া। তাঁদের চাটুজ্জে বাড়িতে নামিয়ে, প্রায় সন্ধ্যে নামার মুখে বাড়ি ঢুকে মুখ হাত পা ধুয়ে শুরু করেছি রান্না। 


ঘড়ি বলে রাত আটটা। টং করে বেজে ওঠা দরজা ঘন্টি। আমি খুলব বলে যুগলে দৌড়ে আসা মা মেয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তুত্তুরীকে কোঁৎকা মেরে দরজা খোলা, চৌকাঠের ওপারে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকা আমার বর। বাম হাতের ফোনটা বোঝাচ্ছে, সদ্য কেটেছে কলটা। দীর্ঘ অদর্শনের পর প্রিয় সম্ভাষণ ভেসে এল,ভীষণ চেনা, সহস্রবার চাখা ওষ্ঠাধর থেকে-‘ আমায় বোধহয় এখুনি ফিরে যেতে হবে-। ’ 


মুখ কালো করে কোথায় যেন সেঁদিয়ে গেল তুত্তুরী। উদ্গত কান্না চেপে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ারে বসে আছি আমি। পোশাক না বদলে একের পর এক ফোন করে চলেছে শৌভিক। কোথায় যেন লেগেছে মস্ত গোলমাল। কাল জমায়েত হবে কয়েকহাজার লোক। বিঘ্ন ঘটবে আইন শৃঙ্খলায়। আমার অবস্থা দেখে, ভিজে পরাজিত সুরে কাকে যেন বলছে আমার বর, ‘আসলে একমাস পর বাড়ি ফিরলাম তো। কাল আবার আমার জন্মদিন। ’। জানি আমার বরের জন্মদিন নিয়ে মাথাব্যথা নেই বিন্দুবিসর্গও। যাবতীয় মাথাব্যথা শুধু আমার জন্য। আমার ঘেমো,হলুদের ছোপ লাগা, আঁশটে গন্ধওয়ালা হাতটা ধরা একহাতে, আর অপর হাতে ফোন। 


ঐ ভাবেই পাক্কা চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ মিনিট সালিশি করা। কখনও কাউকে ধমকানো, তো কখনও কাউকে, বাহবা দেওয়া। সবার শেষে দুই অনুজপ্রতিম সহকর্মীর আশ্বাস বাণী,‘এত চিন্তা করছেন কেন স্যার।  আমি/ আমরা তো আছি।’ তবুও উৎকণ্ঠা চেপে কাটানো রাত। ঘুমের ঘোরেও উৎকর্ণ দুই জোড়া কান। এই বুঝি এল কোন অবাঞ্ছিত সংবাদ। ভোর হয়।  বেলা গড়ায়। শুভেচ্ছা বার্তা উপচে পড়ে শৌভিকের মোবাইল, ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপে। কারা কারা যেন ফোনও করে বসে। আমাদের উমারাণী উঁকিঝুঁকি মারে, কি রাঁধছ দিদিভাই। বলোই না।  এসে যায় তাঁর মনের মত ক্রিম ছাড়া জন্মদিনের কেক। সদর থেকে ডেলিভারি আনতে আনতে আমার মুণ্ড চটকান তিনি, ‘আমার জন্মদিনের কেক আনতেও আমায় পাঠালি কেন?’ রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে বিরিয়ানির সৌরভ। রেজালায় মেশে গোলাপ আর কেওড়াও জল। স্পেশাল ব্রেড ক্রাম্বের বিকিনি পরে উত্তপ্ত তেলে স্নান করতে নামেন ফিশফ্রাইয়ের দল। বেকিং পাউডার আর খাবার সোডার কল্যাণে দই দিয়ে মেখে রাখা সাদা ময়দার লেচি, গ্যাসের আগুনে ফুলে ফেঁপে তৈরি হয় নান।  আমার অন্নপ্রাশন উপলক্ষে আমার দিদিমার পাঠানো আশির্বাদী খাগড়ার কাঁসার থালা বাটি গ্লাসে একে একে বেড়েদি তাকে। জীবনের সব রঙ শুধুই যাকে ঘিরে।

অনির ডাইরি ১৪ই নভেম্বর, ২০২১

 

আচ্ছা এমন কখনও হয়েছে,সম্পূর্ণ অপরিচিত বা নিছক মুখচেনা কোন মানুষের মৃত্যুতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছেন? অযথা ভারী হয়ে থেকেছে মন আর মাথা দীর্ঘক্ষণ। ভুগেছেন অপরিসীম নিরাপত্তাহীনতায়- । 


কেন যে এমন হয় আজকাল-। খেতে বসে জনৈক মুখ চেনা, নাম শোনা সদ্য প্রয়াত ব্যক্তির চলে যাবার গল্প শোনাচ্ছিল শৌভিক, পরিণত বয়সে, প্রিয়জন পরিবৃত হয়ে যন্ত্রণা বিহীন মৃত্যু। তবুও কি যে হল, কেঁদেই চললাম বেশ অনেকক্ষণ। বেচারা তুত্তরী ঘাবড়ে গিয়ে জানতে চাইল, স্বর্গীয় ভদ্রলোক আমার আত্মীয় হন কিনা। শোককে বোধহয় সবসময় আত্মীয়তার নিরিখে যাচাই করা যায় না। কেজানে কার কপালে লেখা থাকে কার চোখের দুফোঁটা জল- 


 অথচ আমার শোকতাপ বোধ বেশ কমই ছিল শৈশবে। আত্মীয়- স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, বাবা-কাকার বন্ধুবান্ধব মিলে কত মৃত্যু দেখেছি, বাড়ির লোককে কাঁদতে দেখেছি, অথচ ভেজেনি চোখের কোণা। বরং মহিলাদের সীমাহীন বিলাপে বেশ বিরক্তই হতাম শৈশবে। শোক প্রথম স্পর্শ করল দিদা চলে যাবার সময়। সদ্য কলেজে উঠেছি আমি, মোড়ের মাথার ফোন বুথ থেকে কি যেন দরকারে ফোন করেছিলাম বড় মাসির বাড়ি, আজও মনে আছে মেজদা ধরেছিল ফোন। দুচারটে কেজো কথা বলে ফোন রাখতে যাচ্ছি, মেজদা বলল,‘দিদার সাথে কথা বলবি না? তুই ফোন করেছিস শুনে ছুটে আসছে দেখ না-’। একটা কলটাইম তখন শেষ হবার মুখে, দিদার সাথে কথা বলতে হলে আরো তিনটাকা দিতে হবে। তখনও আসেনি সহস্রাব্দ, তৎকালীন তিন টাকা বোধহয় বর্তমান কুড়ি পঁচিশ টাকার সমতুল। পয়সা বাঁচাতে বললাম, সপ্তাহান্তে তো যাবই দিদাকে দেখতে, তখন কথা বলব না হয় আশ মিটিয়ে।  


সেই সপ্তাহান্ত আর আসেনি। হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, আর রাত গভীর হবার আগেই দিদার চলে যাওয়া। বড়মাসির বাড়ির সামনে এনে রাখা খাটে শায়িত বৃদ্ধাকে স্পর্শ করতে পারিনি আমি। পাগলের মত দিদার মুখে চুমু খাচ্ছিল মা আর মাসিরা। ডাকছিল ঠেলে, ঠেলে। বড়দা- মেজদা- সেজদা- ছোটদা না কাঁদার ভান করে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিল চোখ লাল করে, আর আমি ভাবছিলাম, কেন সেদিন আর দুমিনিট কথা বলে নিলাম না। আর তো কোনদিন খুলবে না ঐ ভীষণ প্রিয় একজোড়া চোখ। 


কতদিন যে গুমরে গুমরে, ইনস্টলমেন্টে কেঁদেছি দিদার জন্য। ঘুমের ঘোরে নাকে এসেছে দোক্তা পাতা চেবানোর চেনা গন্ধ। আজও লিখতে লিখতে চোখ মুছে চলেছি দুই দশকেরও আগে হারিয়ে যাওয়া এক থপথপে আলুভাতে মার্কা বৃদ্ধার জন্য। 


শোকের দ্বিতীয় স্পর্শ পেয়েছিলাম যেদিন ঠাকুমা চলে গেল। সেদিন আবার আমার জন্মদিন। রাত দশটা নাগাদ প্যারালাল লাইনে ফোন করে নীচে ডাকল বাবা। কিছু কিছু মুহূর্ত বোধহয় ছেনি হাতুড়ি দিয়ে খোদাই করা থাকে স্মৃতিতে। ক্যাম্পখাটে শুয়ে আছে ঠাকুমা। পায়ের কাছে বসে রণক্লান্ত বাবা। একহাতে বাবাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছোটকাকু, উল্টোদিকে ঠাকুমার সাবেকী পালংকের এক কোণে জড়ভরতের মত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে পিসি।  অন্যকোনে পা ঝুলিয়ে বসে বিলাপ করছে মা। দিন চারেক আগেই বাড়ি ফিরেছিল ঠাকুমা। নার্সিংহোম থেকে বলেই দিয়েছিল, নিছক সময়ের অপেক্ষা। সান্নিপাতিক রোগে সম্ভবতঃ মারাই গেছে মস্তিষ্ক,একা লড়াই করে চলেছে মূঢ় হৃদপিণ্ড। 


দুবেলা ছাড়ুন, একবেলা আয়া রাখার মত সামর্থ্যেরও তখন বড় অভাব। আর দরকারটাই বা কি? বাড়ি ভর্তি এত লোক আছে তো? মুখে বলা যত সোজা, হাতেকলমে কাজটা করা যে কত কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমরা। বিগত চারদিন চোখের পাতা এক করেনি বাবা-দিদি(পিসি)-ছোটকাকু। দিনরাত নির্বিশেষে দুই খুড়তুতো ভাই অনর্গল ছুটে বেরিয়েছে নানা ওষুধ আর যন্ত্রপাতির সন্ধানে। আমার দায়িত্ব ছিল কেবল ওষুধ আর পথ্য দেওয়া। নাকে লাগানো টিউবের মুখটা খুলে, একটা বড় সিরিঞ্জ লাগিয়ে তার মধ্যে ঢেলে দিতাম ওষুধ বা পথ্য। তারপর পিষ্টনটা দিয়ে চাপ দিলেই নেমে যেত নাক দিয়ে ঠাকুমার দেহের ভিতর। কিরকম যেন একটা ঘড়ঘড় শব্দ করত ঠাকুমা, চোখের মণি গুলো যেন স্ফীত হয়ে কাউকে খুঁজত। ডান হাতে স্যালাইন চলত, ছোটকাকু এসে,বাঁ হাতটা ধরে মাঝে মাঝে জানতে চাইত,‘কি হয়েছে মা? কাকে খুঁজছ?’ বাপ-জেঠা-কাকা-পিসিদের মধ্যে ছোটকাকুই যে ছিল  ঠাকুমার প্রিয়তম সন্তান।


উপরোক্ত দুই ভদ্রমহিলাই ছিলেন আমার পরম আত্মীয়। বাবা, মা আর পিসির পর আমার তথা আমাকে সবথেকে ভালোবাসা মানুষ। তাঁদের জন্য শোকাহত হওয়া, চোখের জল ফেলাটা তাও মগজে ঢোকে, কিন্তু এই ভদ্রলোকের জন্য হঠাৎ উথলে ওঠা শোক কেমন যেন ধাঁধা লাগায়। আয়নার দিকে তাকালে, চেনা প্রতিবিম্বের আড়ালে স্পষ্ট দেখতে পাই অন্য একজনের ছায়া। আত্মীয়- অনাত্মীয় নির্বিশেষে যাবতীয় মৃত্যুতে ভেঙে পড়ত যে, ছুটে যেত শেষ বারের মত মৃত ব্যক্তিকে এক ঝলক দেখতে,  'একটা মানুষ চলে গেল, আর তাকে শেষ বারের মত দেখতে যাব না?' তখন মনে হত, নিছক আদিখ্যেতা আর আজ মনে হয়, দেখো মা আমি একদম তোমার মত হয়ে যাচ্ছি দিনদিন।

Monday 8 November 2021

অনির ডাইরি ৮ই নভেম্বর ২০১৮


কি কুক্ষণে বলেছিলাম,“ ঘুমিয়ে পড় বাবু, তাহলে বিকালে তোকে ভূত সাজিয়ে দেব। ”“দেবে মা?সত্যি দেবে?” বাপের বাড়ি,মায়ের আদর আর অখণ্ড বিশ্রামের আমেজে তখন ভারি হয়ে এসেছে চোখের পাতা,বললাম,হ্যাঁ দেবোই তো। অবশ্যই দেব। এরপর শুরু হল প্রশ্নবান,কাকে ভয় দেখাবো? কি ভাবে ভয় দেখাবো?কি পরব? ভূতেরা কি জামাকাপড় পরে? কেনে কোথা থেকে?বানায় কে? ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, বাপের জন্মেও কোন হিন্দি ইংরেজি বা বাংলা সিনেমায় উলঙ্গ ভূত দেখিনি। বরং হিন্দি “লাশ কা মাউন্টেন,খুন কা ফাউন্টেন” মার্কা সিনেমায় বরাবার দেখেছি,যে উদ্ভিন্ন যৌবনা যুবতী সর্বপ্রথম বস্ত্র উন্মোচন করতে উদ্যোগী হয়, ভয়াল আওয়াজ সহ ভূত বাবাজী প্রথমেই তার ঘাড় মটকায়। হুঁ হুঁ বাবা। ভূত অত্যন্ত সংস্কারী। 

এরপর প্রশ্ন তাহলে আমি কি পরব?মামমামের শাড়ি না দাদুর লুঙ্গি?“লুঙ্গি পরা ভূত” কেমন হয় ঘুম চোখে ভাবতে গিয়ে গেল ঘুম চটকে। যদি ভয় দেখাতে গিয়ে ইয়ে লুঙ্গি খুলে টুলে যায়-। তাহলে শাড়িই ভালো। সূর্য  পশ্চিমাকাশে মুখ লুকানোর সাথে সাথে প্রবল বায়না,“দাও। দাও। এখুনি ভূত সাজিয়ে দাও। দাদু আর দিদি(অর্থাৎ আমার পিসিকে) ভয় দেখাব। ” খুঁজে পেতে মায়ের পুরানো সাদা শাড়ি যোগাড় হল। তুত্তুরীর ধারণা ভূতেরা মাত্রই বিধবা। সিনেমায় তো সাদা শাড়ি পরে। এই শাড়িতে যদিও লালের আধিক্য প্রকট। অগত্যা পেত্নী আর শাঁখচু্ন্নির থিয়োরী বোঝালাম। জিন্সের প্যান্ট আর গোলাপী লাভ লেখা টিশার্টের ওপর গিঁট দিয়ে পরানো হল শাড়ি। এবার মেকআপ করে দাও মা। লাল লিপস্টিক ভূতভূতে করে ঠোঁটে মেখে রক্ত সিঞ্চিত ওষ্ঠাধর হল। সাধের কাজল পেন্সিলটিকে দিয়ে চোখে কালি ফেলাতে গিয়ে সেটি মট করে ভাঙল। ইত্যাদি প্রভৃতির পর দুহাত দিয়ে মাথার চুল ঘেঁটে একগলা ঘোমটা দিয়ে তু্ত্তুরী গেল সবাইকে ভয় দেখাতে। শুধু হাঁউমাউখাঁউ করে তেমন জমল না। তখন গল্প ফাঁদল,“আঁমি ১৬৯৯সাঁলে জঁন্মেছি। আঁমায় ইঁংরেজরা পুঁড়িয়ে মেঁরেছিল।” কমবেশী সবাই ভয় পেল শুধু বাবাকে যখন ভিডিও কল করা হল, বাবা বলল,“এত সাজগোজের কি দরকার ছিল?এমনিতেই তো ভূতের ছানা-”। ভিডিও কলে ঠিক ভয় দেখানো জমে না,কি বলেন?

Saturday 6 November 2021

আমাদের কথা

আমাদের কথা ১০ই জুন,২০২২


👨🏻-(  কাঁধে টোকা মেরে, নিপাট ভালোমানুষের ঢঙে) একটা মশা কিন্তু আছে। 

👩🏻- (মোবাইলের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে)আচ্ছা। 

👨🏻-(কিয়ৎক্ষণ পর,পুনরায় টোকা মেরে) ওটা কিন্তু কামড়াবে। 

👩🏻- (অন্যমনস্ক ভাবে) আচ্ছা। 

👨🏻-(আবার টোকা দিয়ে) আমাকে কামড়াতে এলে, আমি কিন্তু তোকে দেখিয়ে দেব। 

👩🏻-(বিরক্ত হয়ে মোবাইল বন্ধ করে,তার দিকে ফিরে) তাই দিস। তাইই দিস। মশার কামড় আমার দিব্যি সহ্য হয়,কিন্তু মাঝ রাতে আলো জ্বেলে মশা মারার নামে,‘হাইয়া’করে চিৎকার আর চড় থাপ্পড় খাওয়াটা জাস্ট অসহ্য।


আমাদের কথা ২০শে এপ্রিল, ২০২২


👩🏻-"হ্যাঁ গো, সালোয়ার পরব না শাড়ি?"

👨🏻-( চশমার ওপারে একজোড়া নির্বিকার চোখ, এক পলকের দৃষ্টি বিনিময় করে ডুবে গেল ফোনে।) ঝাঁকানো কাঁধ বার্তা বয়ে আনল, যা খুশি। 


👩🏻-"পরপর দুদিন সালোয়ার পরেছি, আজ বরং শাড়িই পরি নাকি? তবে যা গরম-।"


👨🏻-আপিসের জন্য দ্রুত  প্রস্তুত হওয়া দোলচালহীন কণ্ঠ জানাল,‘ তা বটে।’ 


👩🏻- (গোটা তিনেক শাড়ি বেরোল আলমারি থেকে, আনুসাঙ্গিক শায়া-ব্লাউজ সমেত। অতঃপর- )

‘এই শাড়িটা আর পছন্দ হচ্ছে না। এটা পরব না থাক। ওটা পরি। আচ্ছা ঐ শাড়িটার সঙ্গে এই ব্লাউজটা চলবে-’। 

👨🏻-(এতক্ষণের নির্বিকার চোখে এবার নামল তীব্র আতঙ্কের ছায়া, কোনমতে ঘাড় নেড়ে বলল,)‘হ্যাঁ।  হ্যাঁ। খুব চলবে। চালালেই চলবে-’।

👩🏻- (আরো কয়েকমিনিট উদ্দিষ্ট শাড়ি এবং ব্লাউজকে পর্যবেক্ষণ পূর্বক,) ‘নাঃ চলবে না। তোমায় প্রশ্ন করাই ভুল হয়েছে। তুমি কিছুই দেখো না। ভালো করে দেখো, ঐ শাড়িটার সঙ্গে ঐ ব্লাউজটা চলবে কিনা। আর এই হারটা কেমন মানাবে-’। 


👨🏻-(কয়েক গ্যালন কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন পূর্বক, মিনতি করে) ‘ আমাকে ছেড়ে দে না। আমি এসব বুঝি না। তুই বরং আমার শ্বশুরটাকে ফোন কর, কেমন? সে ঠিক বলে দেবে-’। 

👩🏻- নাঃ নিজের বাপকে খামোখা আর বিরক্ত না করে, নিজের মর্জি মোতাবেক তৈরি হয়ে বললাম,‘একটা ছবি তুলে দে অন্তত-’। উপরোধে ঢেঁকি গেলার মত গোটা কয়েক তুলে দিল বটে, সবকটা অখাদ্য। অতঃপর ফোনটা হাতিয়ে নেওয়া ছাড়া গত্যম্তর ছিল না। 


👨🏻-গোটা দুই তুলেছি কি তুলিনি,নীচে থেকে প্রথমে হুঙ্কার,তরপর অনুনয় বিনয় ‘ফোন দে। ফোনটা দে রে বাবা-। অফিস টফিস যেতে হবে তো নাকি? তুইও যা কেমন। আপিসটা করে আয়, বিকেলে ল্যাবেঞ্চুষ পাবি। এখন ফোনটা- ’। 


প্রসঙ্গত: শাড়িটার বয়স দুদশকেরও বেশি। কার যেন বিয়েতে পাওয়া উপহার, ভাগ্যে মা যত্ন করে তুলে রেখেছিল। এটা আর বললাম না, ওমন লক্ষ্মীস্বরূপা গুছানো মায়ের এমন অলবড্ডে,অগোছাল মেয়ে সংক্রান্ত ভাষণ এই আপিস টাইমে শোনার থেকে ফোনটা ফেরত দিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হল।

 আমাদের কথা,  ২রা নভেম্বর, ২০২১

👨🏻- আলোটা নেভা। 

👩🏻-দাঁড়া আজ ধনতেরাস, একটু সোনা কিনব। সবাই কিনছে আর ছবি দিচ্ছে। 

👨🏻-না। একদম নয়। রাত বারোটা বেজে গেছে। ধনতেরাস শেষ। এবার ভূতচরাস।

👩🏻- (লোভী সুরে) এই হারটা কিনে দিবি? পিসি চন্দ্র। বেশী নয়, মাত্র আটষট্টি হাজার টাকা বলছে অ্যামাজন। 

👨🏻-একদমই দেব না। আজ ধনতেরাস বলে সোনা চাইছিস, কাল ভূত চতুর্দশী, বলবি দুটো ভূত কিনে দে।

অনির ডাইরি ৬ই নভেম্বর, ২০২১

 

কি যে হইচই হত ভাইফোঁটার সকালগুলোয়। পুরো গমগম করত ব্যাঁটরার চাটুজ্জে বাড়ি। হবে নাই বা কেন, বাবারা তিন ভাই, পাঁচ বোন। উপরি পাওনা হিসেবে মাঝেমাঝেই এসে উপস্থিত হতেন বাবলু পিসি, সম্পর্কে বাবাদের পিসতুতো দিদি। সাবেকী ঠাকুর ঘরে,তিনটি আসন পেতে, পিতলের লম্বা পিলসুজের ওপর রাখা মস্ত প্রদীপের কাঁপা আলোকে পরপর বসত জেঠু, বাবা আর ছোটকাকু। একে একে ফোঁটা দিত বড়পিসি, বাবলুপিসি, মেজো পিসি(যাঁকে আমরা তিন প্রজন্ম ধরে দিদি বলে ডেকে আসছি) আর অন্যান্য পিসিরা। এত মিষ্টি পেত বাবারা যে ছোটখাট একটা মিষ্টির দোকান দেওয়াই যেত বোধহয়। সাতদিন ধরে ঘুরতে ফিরতে মুখ চালিয়েও শেষ হত না সব।  


তারপর যা হয় আর কি, বয়ে যায় সময়ের নদী। টুপটাপ করে ঝরে যায় প্রিয় সম্পর্কগুলি। ১৯৮৯ সালে চলে গেল বাবলু পিসি। ২০০৬এ বড়পিসি। ২০১২ এ ছোটকাকু। ২০১৫য় বড় জেঠু। বাকি সম্পর্কগুলিতেও লাগল জরার ছোঁয়া। সবাই কেমন যেন ছিটকে গেল আরোও আরোও দূরে। পড়ে রইল কেবল মেজো পিসি আর বাবা।


কিছু সম্পর্কে বোধহয় হাত দেবার সাহস পায় না সময়, তাই তো কয়েক মাস কম ৮২ বছরের ছোট ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেবার জন্য আজও একই রকম ব্যগ্র আমার ৮৭ বছরের বৃদ্ধ পিসি। টুকটুক করে জমানো পয়সা নিয়ে খোদ গিয়েছিল মিষ্টি কিনতে। ভুল লিখলাম,পিসি অনুরোধ করেছিল আমায়। তখনও আসেনি কোজাগরী পূর্ণিমা, ব্যাগ গুছিয়ে তাম্রলিপ্ত যাবার তোড়জোর করছি আমি, পিসি ফিসফিস করে বলল,  ‘শোন না, ভাইফোঁটায় আসবি তো? আমার জন্য তিনটে প্যাকেট কিনে আনিস তো। একটা একটু বড়, আর দুটো একটু ছোট। টাকাটা নিতে হবে কিন্তু। ’ বুঝলাম বড় প্যাকেটটা আমার বাবার আর ছোট দুটো ছিমান বুল্লু কুমার আর ছিমতী তুত্তুরীর। কথা দিয়েছিলাম অবশ্যই কিনে আনব। 


কাল তাম্রলিপ্ত থেকে এক পক্ষকাল পর নিজের শহরে ফেরার পর খেয়াল হল,পিসির অনুরোধ আমি বেমালুম ভুলে এবং গুলে খেয়ে নিয়েছি। কি হবে এবার? অগতির গতি আমার খুড়তুতো ভাই শ্রীমান অয়ন কুমার চাটুজ্জে।  তিনি বংশের জ্যেষ্ঠ পুত্র কিনা, তিনি আশ্বাস দিলেন, ‘কুচ পরোয়া নেই। আমি কিনে আনছি। ’ কিন্তু গোঁ ধরল পিসি, তিনিও যাবেন।  অগত্যা, দ্বিপ্রাহরিক আহার সমাপন অন্তে পিসি ভাইপো রওণা দিল মিষ্টি কিনতে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে মোড়ের মাথা, সেখান থেকে টোটোয় চেপে কদমতলা বাজার। বাইকে চড়তে যে মোটেই চায় না পিসি। 


আর আমি, ভরদুপুরে চাদর মুড়ি দিয়ে, বিড়বিড় করে প্রার্থনা করতে লাগলাম,‘ হে ধরণী, দয়া করে দ্বিধা হও মা। ’ নিজের অপদার্থতা সম্পর্কে বরাবরই আমি সন্দেহহীন, তবে এবারের অপরাধটা একেবারে অমার্জনীয় যাকে বলে। 


ভাগ্যে পিসি ভুলে মেরেছে, এমন কোন অনুরোধ করেছিল,তাই রক্ষে। মা হলে নির্ঘাত আর মুখ দেখত না আমার। এক ডজন কথা ইতিমধ্যেই শুনিয়ে দিয়েছে তাও।  বিকাল চারটের সময় মস্ত লাইন দিয়ে বিরাট বাক্স করে মনপসন্দ মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরল পিসি। 


রাত পোহাতেই, স্নান সেরে, বুড়ো হাড়ে কাঁপতে কাঁপতে কাচা শাড়ি পরে, প্লেট সাজিয়ে দোতলা থেকে একতলায় নেমে, শ্যাওলা ধরা উঠোনের একফালি পেরিয়ে, মস্ত লাল রোয়াক ধরে হেঁটে এসে বাবার শরিকি বসার ঘরে। ফোঁটা মিটলে বললাম, চল দুই ভাইবোনের একটা ছবি তুলে দিই। এমন সম্পর্ক যে বড় বিরল আজকের দিনে। বড় ভাগ্যবান এরা, হয়তো টাকাপয়সা, সোনা দানা, ব্যাংক ব্যালেন্স কিছুই নেই দুজনের তবুও এমন ভাগ্য, এত ভালোবাসা কজন পায় আর কজনই বা দিতে পারে। খুব ভালো থেকো দিদি আর বাবা, তোমারই আমাদের আদর্শ। তোমরাই তো শিখিয়েছ, অন্তে সব হিসেব মিলেই যায়, আর যা মেলে না, ভুল আছে সেই অংকটাতেই। #ভাইফোঁটারগপ্প

Sunday 31 October 2021

অনির ডাইরি ২৫শে অক্টোবর, ২০২১

 

আমরা যারা সরকারী চাকরি করি, পরিযায়ী পাখির মত বাঁচি, তাদের বদলীর সময় এলেই দুটি চিন্তা ভ্রমরের মত গুঞ্জরিত হয় মাথায়, প্রথমতঃ অবশ্যই আমার কোথায় হবে আর দ্বিতীয়তঃ আমার  জায়গায় কে আসবে? কার হাতে তুলে দিয়ে যাব আমার দলবলকে, কেমন মানুষ সে? যখন দুটি প্রশ্নের উত্তরই হয় মনোমত তখন আর চিন্তা কি? 


একে তো যেখানে যাচ্ছি, চেয়ে চিন্তেই যাচ্ছি, তারওপর উত্তরসুরি আবার পরম সুহৃদ। ফলতঃ 'আমার মত সুখী কে আছে'?অন্তত আজকের দিনটায়। বাকি থাকে কেবল বড়দি, অর্থাৎ উপরওয়ালীর মৌখিক সম্মতি। এমনিতে বড়দি নির্ঝঞ্ঝাট, প্রথম দিনেই বলেছিলেন, ম্যাডাম আর আপনি বলে সম্বোধন করলেই ঠ্যাঙাবেন। যেমন দিদিগিরি চলত, তেমনিই যেন চলে। তা এহেন বড়দি যদি অনুমতি দেন তো 'রইল ঝোলা, চলল ভোলা' করে গুটি গুটি রওণা দিই আর কি। বড়দি যে খুব একটা খুশি খুশি, ‘ আচ্ছা তাহলে পাততাড়ি গুটাও’ বললেন তাও না, বরং মৃদু অনুযোগের সুরেই বললেন,‘ এত তাড়া কিসের তোমার?’ বলবেন নাই বা কেন, একই অর্ডারে নাম ছেপে বের হওয়া কেউই যে এখনও অব্যাহতি পায়নি দায়ভার থেকে


শেষ পর্যন্ত অবশ্য বড়দিকে পটিয়ে, কাগজপত্র গুছিয়ে রেডি হয়ে গেলাম, বেশ একটা,‘ পেয়েছি ছুটি, বিদায় দেহ ভাই, সবারে আমি প্রণাম করে যাই’ মার্কা ফুরফুরে অনুভূতি নিয়ে শেষ করলাম সোমবারটা। মাঝখান থেকে ত্রিপাক্ষিক এগ্রিমেন্টটাও সই হয়ে গেল মালিক আর শ্রমিকপক্ষের মধ্যে। সব পক্ষের আনা মিষ্টির বন্যা বয়ে গেল আপিসে। মাথা পিছু তিন চারখানা মিষ্টি সাঁটিয়েও শেষ হল না। ধীমান বিরক্ত হয়ে বলল,‘ এই বাক্সটা বাড়ি নিয়ে যান। আর কেউ খেতে চাইছে না। ’  


মেশিন বন্ধ করে উঠতে যাচ্ছি, কৌশিক বলল,‘ ম্যাডাম একটু সার্কিট হাউসটা যদি-’। বুক করাব? কেন? কেউ থাকবে নাকি রাতে? ঘাড় মাথা চুলকে যা বলল, বুঝলাম সার্কিট হাউসের মিটিং হলে ফেয়ারওয়েল দিতে চায় ওরা আমায়। ধীমান এমনিতেই খবর নিয়ে এসেছে, ফাঁকাই আছে মিটিং হলখানা।  নাজিরের সাথে কথা বলে হাতে লিখেও দিয়ে এসেছে, শুধু একটা চিঠি যদি করে দি, আরো পোক্ত হয় ব্যাপারটা।  নিজের ফেয়ারওয়েলের জন্য নিজেই চিঠি করলাম, একটু নজ্জা নজ্জা করছিল যদিও। 


বাড়ি ফিরছি, সঞ্চিতার ফোন, ‘টিফিন আনবেন না। লাঞ্চের সামান্য ব্যবস্থা করেছি আমরা।তুত্তুরীকে অবশ্যই আনবেন। ওকেও ধরা হয়েছে-। ’ লজ্জায় আর বলতে পারলাম না, ওকে তো আনতেই হবে। প্রথমতঃ আমার বদলীর খবর আসা ইস্তক চুঁচুড়া আর তার মানুষগুলোর জন্য বিলাপ করে চলেছেন শ্রীমতী তুত্তুরী। বিগত পাঁচ বছরে বেশ অনেক বারই এসেছে কিনা, পিকনিক থেকে মেলা সবেতেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। প্রথম দিকে রমেশ আর প্রীতিই ছিল তাঁর প্রিয় বন্ধু, এখন আরো অনেকের সাথে দোস্তি হয়েছে তাঁর। আমার সাথে সাথে এই মানুষগুলোকে বিদায় জানাবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তাঁরও।  


তবে শুধু এই জন্যই নয়, তুত্তুরীকে আনব, কারণ তেমনিই মানত করেছিলাম দেবী হংসেশ্বরীর কাছে। মানত করেছিলাম সেই বিগত জানুয়ারীতে। তারপর আর সেই মানত পুরো করা হয়ে ওঠেনি। এমনিই হয় আমার। প্রতিবছর মেলার আগে মানত করি, ঘাড় ধরে যখন বাঁশবেড়িয়াতেই টেনে আনো বারবার, তখন নির্বিঘ্নে মেলা মেটানোর দায় আমার পাশাপাশি তোমারও। তুমি এইবারটি করে দাও, তারপরই আমি এসে পুজো দিয়ে যাব। বলি বটে, তবে পুজো দিতে দিতে এসে পড়ে পরের বছরের মেলা। বাঁধে তুমুল গণ্ডগোল,দেখাদেয় উটকো সমস্যা, কিছুই হয় না ঠিকঠাক। তখন মনে পড়ে,হায় মা, তোর পুজোটা তো বাকি রয়ে গেছে। আসছি মা, আসছি, আর সমস্যা সৃষ্টি করিস না। অতঃপর চূড়ান্ত ব্যস্ত নির্মলকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যাই মন্দির, চল বাবা চল। মিষ্টি ফুল যা যা লাগবে যোগাড় করে পুজো দিই। নাহলে তোর আর আমার মাথাটাই খারাপ করে দেবেন এই নীলবর্ণা ভদ্রমহিলা থুড়ি দেবী। 


২০২১এর মেলায় জনৈক রাজনৈতিক দল এমন সমস্যা করছিল বলার নয়।ডেপুটেশন, মেলার বাইরে কালো পোস্টার, টুকটাক হুমকি। তারওপর অরাজনৈতিক একচোট মারামারি, জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তির ভিআইপি টিফিনে তুলতুলে খাসির মাংসের আব্দার- সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল পাগলই হয়ে যাব। দুচারটে লোককে কামড়ে দিলে যদি মেটে কিছু সমস্যা। একমুঠো বাজেটে খাওয়াব কি আর সাজাব কি? নিজেদের খাবার বলতেই তো ডিম ভাত, তৎকালীন বড়সাহেব বলেছিলেন দুটো ডিম যদি দেওয়া যায়, ওসি ফুড চঞ্চল হাত জোড় করে মার্জনা চেয়েছিল। ভিআইপি প্যাকেট নিয়ে স্যার-চঞ্চল-কেটারার আর আমি রীতিমত গবেষণা করেছিলাম সবথেকে সস্তায় সবথেকে বড় প্যাকেট কি হতে পারে, যা নাড়াচাড়া হলে ঠং ঠং করবে না। সেখানে খাসি আনব কোথা থেকে? তা যাও বা ম্যানেজ হল, এল নতুন ফর্মান, গান শোনাতে হবে। আমায় নয়, কোন ভাড়া করা সুগায়িকাকে দিয়ে। 


আধপাগল  থেকে পৌনেপাগল হয়ে মনে পড়ল, যাঃ বিগত বছরের পুজোটা তো রয়ে গেছে বাকি। বিশ্বাস করবেন না, পুজো দিয়ে আসার সাথেসাথেই কি ভাবে যেন মিটে গেল সমস্যা গুলো। ঝামেলা বাঁধানো রাজনৈতিক দলের জনৈক নেতা, স্বয়ং ফোন করে আশ্বস্ত করলেন,‘ আমাদের নিয়ে একদম টেনশন করবেন না। এটা রাজ্যব্যাপী কর্মসূচী, আমাদের তাই করতেই হবে। তবে এই আপিসের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এত ভালো, গেলে আপনারা বসান, চা খাওয়ান। দাবীদাওয়া শোনেন, দরকারে কলকাতায় পাঠান লোকজনকে তত্বাবধান করতে। আপনাদের কোন ভাবে বিপদে বা অস্বস্তিতে ফেলব না আমরা। ’ অতঃপর তিনি বিশদে জানালেন, কোথায় জমায়েত হবেন তাঁরা, কোথা থেকে রওণা হবে ডেপুটেশনের মিছিল। এজেন্ডা কি ইত্যাদি। এবং পরিশেষে কোথায় তাঁদের আটকালে বাঁচবে তাঁদের মুখ আর আমাদের মেলা। অমুক বাবু, আমি জানি আপনি স্বনামে ফেসবুকে নেই, কিন্তু এটাও জানি আমাদের যাবতীয় ব্যাপারস্যাপার শ্যেন দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেন আপনারা। কথাপ্রসঙ্গে দু চারটে লোপ্পা বল আপনি বা আপনার দলবল স্বয়ং তুলে দিয়েছিল আমার হাতে। মুস্কিল হল, আমাকে দেখে যতটা গাম্বাট হোঁদলু মনে হয়, আসলে ততোটা নই। যাই হোক, এটাও নির্ঘাত অচীরেই আপনার দৃষ্টিগোচর হবে, তাই আগেভাগেই  বলে রাখি, বিশ্বাস করুন, আপনার সেদিনের উপকার আমি জীবনে ভুলব না। আর একটা কথা আপনার নাম আমি আমার বর( যিনি আমার কোন বক্তব্যই হয় কান দিয়ে শোনেন না অথবা শুনলেও অন্য কান দিয়ে বার করে দেন) ছাড়া আর কারো কাছে আজ অবধি প্রকাশ করিনি। এমনকি বড়সাহেবের কাছেও নয়। সবাই তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল আমার তথ্য শুনে। রাত এগারোটা অবধি থানায় বসে,রিহার্সাল হয়েছিল পুরো নাটকটা।তারপর আর কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। 


মোদ্দা কথা পুজো দিয়ে আসার সাথেসাথেই সবকিছু সাল্টে দিয়েছিলেন, নীলবর্ণা দেবী। বদলে মানত ছিল, 'মেলা উৎরে দাও মা, মেয়েটাকে সমেত ধরে এনে পুজো দেব।' তাই আনতেই হবে শ্রীমতী তুত্তুরীকে। ফোনটা রেখে, জানলার বাইরে ছুটে চলা আলোর শহর আর ছায়া মানুষ গুলোকে দেখতে দেখতে এই প্রথম উপলবব্ধি হল, চার বছর দশ মাস কাটানো শহর, থেকে তাহলে সত্যি সত্যিই এবার গোটাতে হবে পাততাড়ি।

Saturday 30 October 2021

অনির ডাইরি, ২২শে জুলাই ২০১৯ (এটিআই এর গপ্প)

 

(এটিআই এর গপ্প, দিবস-১)

পকেটের মধ্যে মোবাইলটা আছে, কিন্তু আর বার করতে ইচ্ছে করছে না। কত রাত হবে? খুব বেশী হলে রাত দশটা। অথচ মনে হচ্ছে মধ্যরাত। চতুর্দিক নিশুতি। সল্টলেক এটিআই এর সুবিশাল প্রান্তরে গুটি কয় টিমটিমে লালচে নিয়ন আলো তৈরি করছে কেমন যেন ধোঁয়াশা। মাইরি বলছি, পেটে মুশুর ডাল,রুটি, আলু ঢ্যাঁড়শের ঘ্যাঁট আর কাতলার পেটি ছাড়া কিচ্ছু পড়েনি কো। ঢ্যাঁড়শটায় কি মিশিয়েছিল কে জানে, আচারের মত টকটক। তিন বার নিলাম। কল্লোলদা আর রথীনদার খেতে আসতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, পরিমাণে বোধহয় কম পড়ল। কল্লোলদা যদিও বলল,“ভাগ্ তো।”অঙ্কন আবার নিরামিষ। সকালে বেচারা শুধু ডাল ভাত আলুপটলকুমড়োর ছক্কা আর কাঁকড়োল ভাজা দিয়ে ভাত খেয়েছে। দেখিয়ে দেখিয়ে মুর্গীর ঠ্যাং চিবোতে হেব্বি দুঃখ হচ্ছিল মাইরি। ঝোলটাও এত ভাল করেছিল। চামচে করে খাচ্ছি দেখে, রথীনদা বলেই ফেলল,“অ তুই ও চামচ পার্টি। যা অয় টেবিলে বস গিয়া। ” যাই হোক, পরে শুনলাম অঙ্কন ওসব দেখেনি।অঙ্কন ওসব দেখে না। লাঞ্চের  পর পার্থদা হেব্বি পিছনে লাগল, “ডালটা যে খেলি, ওতে পেঁয়াজ রসুন নেই বলছিস?” রথীনদা ঢুলতে ঢুলতে বলল,“হঃ। ভাতেও রসুন দিয়াছিল। ” বেচারা অঙ্কন। বিকালে দু্টো আলুর চপ আর চা। সাড়ে আটটায় ডিনার দেবে। হজম হলে বাঁচি, করতে করতে তুহিন টপ করে একটা প্যান ফর্টি গিলে নিল। ক্লাশ শেষ হতে হতে ঘড়ির কাঁটা সাতটা পার। সুকন্যার কি শখ মাইরি, সাড়ে সাতটার পর গেল মাথা ধুতে। বাথরুমে নয় রে বাবা, পার্লারে।

 

মাকে ভিডিও কল করতে ব্যালকনিতে এসে দেখি,কি দম বন্ধ করা সাংঘাতিক পোড়া পোড়া গন্ধ। এতো তার পুড়ছে মনে হয়।আমার ঘরের এসিটা পুড়ছে না তো।  ফোন রেখে ঘরের দরজা খুলে দেখি করিডরেও তিতকুটে গন্ধ ম ম করছে। বারন্দার রেলিংএ ডিসপেনসারের ওপর ওল্টানো আছে ভারি জলের ড্রাম। ত্রিদিবেশদা নবেন্দুকে সাবধান করছে,“দেখিস উল্টে নীচে ফেলে দিস না যেন। ” কেয়ারটেকারকে ধরে আনা হল, কি যে দেখল কে জানে? গন্ধ তো কমেই না।  তুহিন,নবেন্দু আর আমি বিল্ডিং থেকে নেমে গিয়ে গোল গোল চক্কর কাটলাম বার কয়েক। এটিআইয়ের কোন গেটটা দিয়ে বেরিয়ে কোনটা দিয়ে ঢুকলাম, রীতিমত আলোআঁধারির গোলকধাঁধা। নটা নাগাদ সুকন্যা খবর আনল,বাইরে কোথাও আগুন লেগেছে। 

কখন খাওয়া মিটে গেছে। তুহিন,সুকন্যা, অঙ্কন,হীরা আর আমি ছাঁটাই করা সবুজ ঘাসের চাতালে পা ঝুলিয়ে বসেছি। মুর্শিদাবাদ আর দক্ষিণ ২৪পরগণা কাজের কথা শুরু করেছিল বটে, জলপাইগুড়ি,পুরুলিয়া আর হুগলীর, রণং দেহী মূর্তি দেখে ক্ষান্ত দিয়েছে। কাল করবে বলছে। কাল আবার সাতসকালে যোগাভ্যাস আছে। রথীনদা তিনবার বলল,“যোগায় হব না। তুই জিমে যা। ”নেহাৎ সিনিয়র। তাই ফোটো তো বলেই বাকিটা হজম করলাম। যা হবে দেখা যাবে কাল, আপাততঃ আমরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছি। আপনাদের মধ্যে যে বা যাঁরা আজ বিষম খেয়েছেন, জানবেন এই পাঁচ মূর্তিই দায়ী। চুপি চুপি একটা কথা বলি, আমরা কেবল তাদের নিয়েই হাসাহাসি করছিলাম, যাদের আমরা ঘোরতর পছন্দ করি-


অনির ডাইরি ২৪শে জুলাই, ২০১৯

(এটিআই এর গপ্প, দিবস- ৪)

ক্লাশ শেষে কদম ইয়ে বাতাবি লেবু তলায়-

তৃতীয় দিনের উপান্তে। ভোর ছটায় অ্যালর্ম দিয়ে উঠে, রুমে রাখা কেটলিতে চা/কফি বানিয়ে, দু চুমুক টেনেই দৌড়।একটু দেরী হলেই দমাদ্দুম দরজা পেটায় আপদ গুলো।  হীরার, যে কি না ইমোশনাল ইনটেলিজেন্সের ক্লাশে পরিচয় দিল,“রিলাক্সিং হীরালাল” বলে, উৎসাহ সব থেকে বেশী। দাঁড়া বাপ, ঘরে চাবিটাতো লাগাতে দিবি। ল্যাপটপ-মোবাইল-মানি ব্যাগ সব ছড়িয়ে আছে, পুঁচকে স্টাডি টেবলে। বাতানুকূল যন্ত্রটাতো বন্ধ করতে হবে। যেটার দৌলতে বিগত দুরাত ভালো ঘুমই হয়নি। হয় কাঁপিয়ে মেরেছে নয়তো ঘামিয়ে ছেড়েছে। তারওপর তেনাদের ভয় তো আছেই। আতঙ্কে টিউবলাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছি। পাশের ঘরেই সুকন্যা, মাঝে মাঝেই প্রবল উদ্গত ইচ্ছা দরজা পেটানোর। কোন মতে দমন করেছি। যদিও সুকন্যা খোলাখুলি অনুমতি দিয়েই রেখেছে,ভয় পেলেই চলে যেতে। একই ডালের পাখি কি না, কেন যে আমরা ভূতের গল্প পড়ি বা সিনেমা দেখি কে জানে?


গুরুজী শ্রী বিন্দু চৈতন্য, সাড়ে ছটার আগেই চলে আসেন। নতুন হস্টেল থেকে বেরিয়ে, বকুল বীথি টপকে দূরে সাততলা নব্য বিল্ডিংএর তিনতলায় সুবিশাল বাতানুকূল ঘরে সাজানো আছে রঙবরঙের যোগা ম্যাট। সিনিয়র দাদারা বদমাশী করে সামনের ম্যাট গুলো ফাঁকা রাখেন। বাইরে জুতো খুলে দরজা ঠেলে ঢুকলেই, পার্থদা চিৎকার জোড়েন,‘এই আমি সাড়ে ছটায় এসেই অ্যাটেন্ডেন্স নিয়ে নিয়েছি। এত দেরী কেন?দেরী করেছিস। সামনে বস। ” ঠিক যেমন আমি আর সুকন্যা আমাদের জুনিয়র চেওয়াংকে বলি,“এই তুই সামনে যা। পিছন দিকের ম্যাটটা ছাড়। ” কে সামনে বসে মুর্গী হবে? গুরুজী এসেই শুরু করেন,“ সারি তানাও, সারে স্ট্রেস তো ভুল যাইয়ে। আপনি সারে মাসলস্ কো ঢিলা ছোড়িয়ে। কহি কোই দাবাও নেহি। কোন তানাও নেই।  ওম শান্তি। আঁখে বন্ধ করলিজিয়ে ” দুচোখ বন্ধ করে, কানে বাজে গুরুজীর মৃদুমন্দ সুরেলা কণ্ঠধ্বনি- পায়ের পেশী ঢিলা করুন। হাঁটু। কোমর। পিঠ। মুখের পেশী ঢিলা করুন। নিজেদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর ধ্যান দিন। চোখ খুলবেন না। একাগ্রচিত্তে শোনার চেষ্টা করুন,দূর থেকে ভেসে আসা সুক্ষ ধ্বনি। 


ধ্যান উপান্তে, একঘন্টা যোগ ব্যায়াম আর মিনিট পনেরোর প্রাণায়ামের পর ছুটি। গতকাল মাত্রাতিরিক্ত অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ঢুঁ মেরেছিলাম জিমে। ট্রেড মিলে সকাল সন্ধ্যা হাঁটা আর ক্লাশ শেষে বেশ কয়েকবার এটিআইয়ে চক্কর কাটার পরিণাম, গতকাল থেকে আর ঘুম ছাড়ছেই না। 


ঠিক সাড়ে আটটায় প্রাতঃরাশ সেরে, দৌড়তে হয়, যে যার ঘরে। স্নান টান করে ফুল বাবু সেজে দশটার মধ্যে ক্লাশে। আজ মিনিট দশেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই সন্ধ্যা হয়। বাইরেই টহল দিচ্ছিলেন কোর্স কোঅর্ডিনেটর স্বয়ং।  যেতেই ক্যাঁক করে পাকড়াও করল সুমিতাদি, দশ মিনিট লেট? দেখ আজ তোদের সবকিছুই পিছিয়ে যাবে। টানা সাড়ে পাঁচটা অবধি ক্লাশ,মাঝে দুবার চা আর একবার লাঞ্চের বিরতির পর, শেষ বিকালে প্রজাপিতা ব্রহ্মকুমারীরা যখন স্ট্রেস ম্যানেজ করার কলাকৌশল শিখিয়ে বিদায় নিলেন, কতজনের হৃদয়ে যে ডানা মেলছিল প্রজাপতির দঙ্গল। বাইরের খোলা হাওয়া, আর ইতিউতি জটলা পাকিয়ে আড্ডাটাই তখন অক্সিজেন। বিগত তিন দিন ভেঙে গড়ে দিয়েছে অনেক বরফের প্রাচীর। সিনিয়র-জুনিয়র বিভেদ ভেঙেচুরে তাই তো আমরা প্রবল চিৎকার জুড়ি,“ও রথীনদা। কোথা যাও? নবা, ক্লাশ শেষ বাপ। এবার হোস্টেলে ফের। কোথা যাস?হোস্টেলের পথ ওটা নয়।” তুহীন ছবিগুলো তুলে দিল বটে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে সম্মত হলনা। তিনদিন একই জামা পরে কেউ ছবি তোলে নাকি?