Friday 14 April 2023

অনির ডাইরি ১৩ই এপ্রিল, ২০২৩

 

#অনিরডাইরি 

 আর পারি না গুরু, সেই নার্সারি থেকে শুরু। " খাওয়া কমাও, এক্সারসাইজ করো। রোগা হও,ওজন কমাও।" প্রথমে ছিল, রোগা না হলে বিয়ে হবে না। জিভ সুড়সুড় করত মাইরি, বলার জন্য, " আমার বিয়ে হবে, কি হবে না, তাতে তোমার বাবার কি?" নেহাৎ আমার মায়ের shoe- শিক্ষার ভয়ে বলতে পারতাম না। একবার ছেড়ে দুই -দুই বার বিয়ে হল। হ্যাঁ বলতে পারেন পাত্র একটাই ছিল।সেটা শৌভিকের কপাল। দ্বিতীয় বিয়ের ফুলশয্যার আগেই বাবাকে শোনানো হল, "ওজন টা বড় বেশি। কনসিভ করতে সমস্যা হবে।" কি ভাবছেন,শ্বশুর বাড়ির কেউ বলেছিল? আজ্ঞে না। নিকটাত্মীয় শুভাকাঙ্ক্ষীরাই শুনিয়েছিল। ধুমসি মেয়েকে নিজের ঘাড় থেকে নামিয়ে, শৌভিক এর মাথায় চাপিয়ে কোথায় বাবা একটু স্বস্তির নিশ্বাস নেবে, তা নয়, গেল সব শান্তি চটকে। 

চিরকেলে নাস্তিক লোকটা, মাথা নত করল সর্ব শক্তিমানের সামনে। নাস্তিকদের ভগবান বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসেন। এত দ্রুত ফল দিলেন, যে খবরটা পেয়ে শৌভিক আর আমি স্তব্ধ হয়ে গেলেও, বেতো হাঁটু নিয়ে কি নাচটাই না নেছেছিল বাবা। তার নজদগজনী (জগজ্জননীর অপভ্রংশ) আসছে। 


যাক, বিয়ে হল। মেয়ে হল। মোটা হলে ওই সব হয় না, বলে কেউ আর খোঁচাতে পারল না। রাস্তা বদলে তাঁরা বলতে লাগলেন, "ওজন না কমালে, বয়স হলে কষ্ট হবে। শরীরে বাসা বাঁধবে নানা রোগ আর ব্যাধি। তাই খাওয়া কমাও। এক্সারসাইজ করো। " যাঁরা বলতেন তাদের মধ্যে যেমন আত্মীয় স্বজন ছিল, তেমনি ছিল বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, এমনকি জনা কয়েক ডাক্তার বাবু ও। দশ থেকে বিশ হলাম, বিশ থেকে তিরিশ হয়ে চল্লিশ ও পেরিয়ে গেলাম। যাঁরা বলতেন, তাঁরা যে সবাই তন্বী বা সুঠাম ছিলেন তা কিন্তু ভাববেন নি। তো যাই হোক, আজকাল তেনাদের যার সঙ্গেই দেখা হোক না কেন, দেখি তিনিই ঘায়েল। সুগার, প্রেশার, কোলেস্টরেল, গেঁটে বাত, বগলে ফোঁড়া, অস্থানে অর্শ, ভগন্দর (যদিও জানিনা বস্তুটি কি। ইয়ে জানতেও চাই না) নিয়ে কাবু। কয়েকজন তো ইহলোক ত্যাগই করেছেন। বাকিরা হোটেলে খান না, মদ খান না, গাঁজা খান না, লাল মাংস খান না, তেল খান না, মশলা খান না, ভাজাভুজি খান না,মিষ্টি খান না। ভগবান জানেন কি খান। আমি কিন্তু ঈশ্বরের আশীর্বাদে একই আছি।


 তাই বলে অজর নই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবথেকে তন্বী বন্ধুটির দেহেও যেমন অলক্ষে বাসা বাঁধছে জরা, আমারও তেমনি। মোটা বলে গুণোত্তর প্রগতিতে কিন্তু কিছু হচ্ছেনা।  তাই মাঝে মাঝে রাগ হয় জানেন, প্রচুর রাগ হয়। আর মনে মনে ভাবি, যাঁরা এককালে আমাকে কম খেতে বা তেল মশলা, ভাজাভুজি, মিষ্টান্ন ইত্যাদি খেতে নিষেধ করতেন, বা এখনও সুযোগ পেলেই করতে চান, তাদের সামনে, তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে একদিন স্বর্গীয় বনফুলের প্রিয় খাবারটা খাব।  বিশেষ কিছু না, হাঁসের ডিমের তেল গরগরে কষা। রেওয়াজি খাসির মাংসের তেল ঝাল। যাতে এক ফোঁটাও তে জল থাকবে না। কেবল তেল আর কাঁচা এবং শুকনো লঙ্কার ঝাল। সঙ্গে গোটা আষ্টেক মুচমুচে আটার পরোটা। আর শেষ পাতে চার খানা রাজভোগ। তারপর মরি তো মরব, সে মরণ ও হবে স্বর্গ সমান।

No comments:

Post a Comment