Tuesday 11 April 2023

অনির ডায়েরি ১১ই এপ্রিল, ২০২৩

 

#অনিরডাইরি #তাম্রলিপ্তকড়চা 


মাঝে মাঝে ভাবি এই চাকরিটা যদি না পেতাম কি আলুনিই না হত আমার জীবনটা। কত অভিজ্ঞতা থেকেই না বঞ্চিত হতাম। স্কুল কলেজ জীবনের মতো কুয়োর ব্যাঙ হয়েই থেকে যেতাম হয়তো।

              সেদিন তিরিশে মার্চ, অফিসে সাজো সাজো রব। পরের দিন শেষ হচ্ছে অর্থ বর্ষ। আর ঠিক তার পরের দিনই শুরু হতে চলেছে দুয়ারে সরকার। এরই মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ নালিশের ডালি নামিয়ে দিয়েছে মহানগর। যার অধিকাংশই শ্রম দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্ক বিহিত। জনে জনে ফোন করা এবং তথ্য নথিভুক্ত করার কাজ চলছে পুরো দমে। সবার উপর মহড়া চলছে আমাদের নাটকের। 


সেদিনই অপরাহ্নে তমলুক ব্লকের ভুবনকালুয়া প্রাথমিক স্কুলে শ দুয়েক বাচ্ছার সামনে মঞ্চস্থ হতে চলেছে, আমাদের শিশু শ্রমিক বিরোধী নাটক,'সেই সব ফুলেরা'। বড় সাহেব জানিয়েছেন হাজির থাকবেন তিনিও। ফলে আক্ষরিক অর্থেই উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বগামী।


এরই মধ্যে সঞ্জয় এসে খবর দিল,' ম্যাডাম একটা খুব খারাপ খবর আছে।' আপাতত সারা বিশ্ব জুড়ে সর্বত্র তো খারাপই খবর, ভালো আর কোথায় পাই। তবুও দম চেপে বললাম, বলে ফেলো। সঞ্জয় জানাল, অমুকের পিতৃবিয়োগ হয়েছে। বড় ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাই নামটা উহ্যই থাকুক ছেলেটার। সঞ্জয় আরো বলল, "আপনাকে বা অফিসে কাউকে বলতে নিষেধ করেছে। বলেছে সবাই এত চাপের মধ্যে আছে, নাটক পর্ব মিটুক তারপর বলো।,"

সে কি! কালই তো একসাথে ফিরলাম তিন জনে, আমি, উত্তমকুমার আর সে। গোটা রাস্তা পুকুর মারার গল্প শোনাতে শোনাতে নিয়ে গেল উত্তমকুমার। জল কমে গেলে, কৈ মাছের দল কেমন করে পুকুর ছেড়ে গুড়গুড় করে পালিয়ে যায়, শোল মাছ কেমন করে লাফায়, আরো কত কি শিখলাম দুজনের থেকে। ছেলেটা আমায় আমচুর বানানো আর তেল বিহীন মুরগীর মাংস রান্নার রেসিপি শেখাল। এত খাবারদাবারের গল্প শুনে ক্ষিদে পেয়ে যাওয়ায়, মারিশদায় গাড়ি থামিয়ে চপ কেনা হল। আর রাত না পোহাতেই এত বড় অঘটন।


এসব খবর কি আর গোপন রাখা যায়। সঞ্জয় আমাকে বলল, আমি প্রথমে বললাম সৌরভকে, তারপর শুভাশিসকে, তারপর সেকশনে গিয়ে সবাইকে। জনে জনে বলি, আর বলি, "বিকালের আগে কাউকে বলো না যেন।"


দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল ঢলে সন্ধ্যায়। নাটক শেষে, অফিসের পাট চুকিয়ে, বাড়ির পথ ধরি আমি। মনটা খচখচ করে, এমন দিনে পাশে দাঁড়াতে হয়। গিয়ে দাঁড়াতে না পারি একটা ফোন তো করা উচিৎ। ফোন করলাম, ওপাশ থেকে ছেলেটির দিদি ধরে বলল, এখনো অন্তিম সংস্কার মিটিয়ে ফিরতে পারেনি ছেলেটি।


কি সব ধুমধাড়াক্কা গান শুনছিল উত্তমকুমার, বললাম, জানো অমুকের পিতৃবিয়োগ হয়েছে। স্বভাব সিদ্ধ হড়বড় করে উত্তমকুমার বলল, "হায় যা! মারা গেছেন?" তারপর বলল, " তা ওরা দাহ করে নাকি, গোর দেয়?" ক্ষুব্ধ ভাবে বলি, ধ্যাৎ হিন্দুদের গোর দেয় নাকি। উত্তমকুমার জোর গলায় বলে, " হ্যাঁ। ওরা দাস তো। দাস মানেই বোষ্টম। বোষ্টমদের কেউ মারা গেলে মাটিচাপা দেয়। হায়, অমিয়দা দিয়েছেননি। বাড়ির পাশেই ওদের একটুকরো জায়গা আছে, ওখানেই ওর ঠাকুরদা, ঠাকুমা আর দাদাকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে।"

অমিয় বাবু আমাদের গাড়ি মালিক। যার সাথে বিল নিয়ে নিত্য ঝগড়া আমাদের। মাঝে মাঝেই ডেকে চমকাই, এত বিল কেন উঠলো, টাকা দেবো কোথা থেকে? ৩১শে মার্চ ছিল তেমনি একটা দিন। অমিয় বাবুর বকা খাবার দিন। শুকনো মুখে যেই অমিয় বাবু এসে বসলেন, অন্যান্য বারের মতোই ধমকাতে গিয়ে থেমে গেলাম। "এই আপনাদের কবর দেয়?" উনি জিভ কেটে, কান ছুঁয়ে বললেন, "কবর নয়, সমাধি। আমরা বৈষ্ণব তো, মৃত্যুর পর আমাদের সমাধি দিতে হয়। তারওপর মন্দির করা হয়। তুলসী গাছ লাগানো হয়। নিত্য ফুল,জল,ধূপ পড়ে। মৃত্যুবার্ষিকীর দিন হরিনাম সংকীর্তন হয়।" 


দুয়ারে সরকারের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে, একদিন সন্ধ্যায় ছেলেটার বাড়ি গিয়ে হাজির হলাম উত্তমকুমার আর আমি। তমলুক ছেড়ে বেরোনোর আগেই ফোন করে ঠিকানা জোগাড় করে নিয়েছিল উত্তম। কাঁথি বাজার থেকে বাইকে আরো মিনিট বিশেক লাগে। কাছাকাছি পৌঁছে ফোন করে দিলে, বাইক নিয়ে নিতে আসবে ছেলেটি।

ঠিক ছিল দুপুর দুপুর বেরোব। সঞ্জয় আর রঞ্জিত ও সঙ্গে যাবে। শেষ বেলায় ভিসির দাপটে তা আর হল না। অফিস ছেড়ে বেরোতে ঘনিয়ে গেল সন্ধ্যা, এমনকি রাত্রিও। একা যাওয়া নিয়ে সামান্য দোনামোনা ছিল। উত্তম বলল, " চলেন ম্যাডাম আমরাই ঘুরে আসি। অন্য স্যারদের এখন সময় বার করা চাপ। আর কবে যাবেন, কাজ তো এসেই গেল দেখতে দেখতে।"

পথে গল্প শোনাতে শোনাতে নিয়ে গেল উত্তমকুমার, ওরাও আদতে বৈষ্ণব। যদিও দাস নয় এবং উত্তম সর্বভূক। ওরও প্রপিতামহ, প্রপিতামহী এবং ঠাকুমাকে সমাধি দেওয়া হয়েছে। তার ওপর মন্দির বানিয়ে নিত্য ধূপধূনা পড়ে ইত্যাদি, সেই জমিটা ওদেরই ভাগে পড়েছে। ইদানিং কেউ মারা গেলে আর সমাধি দেওয়া হয় না। একে তো জায়গা মেলে না, তার ওপর গ্রামের মানুষও আপত্তি করে। আপত্তি করে পঞ্চায়েত ও।


রাত ঘন হয়। ছেলেটা ফোন করে বার কতক। কে, কে আসছে, কতদূর পৌছালাম। রূপসী মোড় পৌঁছে যেন অবশ্যই ফোন করে দেয় উত্তম। রাত হয়ে গেছে বলে ছেলেটা বের হতে পারবে না। কাউকে পাঠিয়ে দেবে। শুনতে শুনতে অপরাধবোধ হয়। খামোখা সামাজিকতার নামে অত্যাচার করতে চলেছি আমরা। বলি আসার দরকার কি? লোকেশনটা পাঠিয়ে দিলেই তো পারে। উত্তমকুমার ধাঁইধাপ্পড় গান বন্ধ করে বলে," যেতে পারবেননি ম্যাডাম। গাড়ি যাবেনি। গেরামের ঢালাই রাস্তা। এদিক ওদিক বাঁকতে হয়। এই অন্ধকারে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবেনি। টোটো ধরতে হবে।''


শহর ছেড়ে পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকি আমরা। স্থানীয় বাজার থেকে, বাইক নিয়ে এক ভদ্রলোক পথ দেখিয়ে নিয়ে যান আমাদের। ঢালাই রাস্তার সামনে গাড়ি রেখে, টোটোয় চাপি উত্তম কুমার আর আমি। দুদিকে অন্ধকার মাঠ, মাঝখান দিয়ে সাপের মতন আঁকাবাঁকা রাস্তা। মাঠ থেকে উঠে আসছে প্রাণ জুড়ানো শীতল হাওয়া। বৃদ্ধ টোটোওলা রেসিং কারের মতো চালাচ্ছেন, ঝাঁ করে এই বাঁদিকে বাঁকল, তো এই ডান দিকে বাঁক। "ও মা গো" চিৎকার করে উঠলো উত্তম। বেটা নিজে স্পাইডারম্যানের মতন চালায়, আর অন্য লোকের হাতে স্টিয়ারিং থাকলেই ভয় পায়।


বিশাল বাগান দিয়ে ঘেরা একতলা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি। টোটো থেকে নেমে,বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হয় বাড়ি অবধি। রোয়াকে আলো জ্বলছে, সেই আলো বাগানের পায়ে চলা পথে তৈরি করেছে আজব আলোছায়ার নক্সা। কাছা গলায়, ছেলেটি এগিয়ে এলো, " আসুন। আসুন।আমিই যেতাম। রাত হয়ে গেছে, বেরোনোর নিয়ম নেই, তাই দাদাকে পাঠালাম। উনি আমার দিদির দেওর। বহু বছরের আত্মীয়তা। বাড়ির আরেকটা ছেলে বলতে পারেন। আমাদের তো আর কেউ নেই।" 


বলল বটে, কেউ নেই, বাড়ির ভিতরে ঢুকে ছেলেটি, তার সুন্দরী গিন্নি, পুচকে মামনি ছাড়াও পেলাম কাকা, কাকিমা, খুড়তুতো ভাই এবং তার পরিবারকে। ভাইটিও কাছা নিয়েছে। এছাড়াও দিদি-জামাইবাবু- ভাগ্না- ভাগ্নীরা আছে। যদিও তাঁরা সেই মুহূর্তে ওই বাড়িতে নাই, তাও আছে তো। এত লোকবল আজকালকার দিনে কটা লোকের থাকে বাপু।তীব্র শোক মানুষকে বড় নিঃসঙ্গ আর বিপন্ন করে তোলে।


আমরাও মার্জনা চাইলাম, এসে বোধ হয় আতান্তরে ফেলেছি ছেলেটাকে। বেশ খানিকক্ষণ বসলাম। ছেলেটির শোকসন্তপ্ত মায়ের সাথে দুটি কথা হল। কথায় কথায় চোখ ছাপিয়ে যাচ্ছে ওনার। নাহলে নীরব, আনমনা হয়ে পড়ছেন। তারই মধ্যে কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ওনারা সত্যিই বৈষ্ণব। আদতে ছিলেন সামন্ত। ঊর্ধ্বতন কত নম্বর পুরুষ যেন মহাপ্রভুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।দাস বংশে সরাসরি সমাধি হয়না। দাহ হয়। তারপর সেই দেহাবশেষের কিছুটা অংশ রূপার কৌটো করে সমাধি দেওয়া হয় আর বাকিটা গঙ্গায় বিসর্জন।


বেরিয়ে আসার সময়, ভদ্রমহিলা হাত ধরে বললেন, "এসো কিন্ত,  কাজের দিনে।" যাব বলে তো এলাম, কিন্তু যাই কি করে? এই গা জ্বালানো গরমে ইন্সপেক্টর সাহেবরা সবাই তো দুয়ারে সরকারের স্ট্যাটিক আর মোবাইল ক্যাম্প পরিদর্শনে ব্যতিব্যস্ত। ফাঁকা নেই একটাও সিকেসিও। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তড়িঘড়ি ক্যাম্প গুটিয়ে সঙ্গী হল সঞ্জয় আর রঞ্জিৎ। আর গেল অরূপ। এবার বেলাবেলি আমরা গিয়ে পৌঁছলাম সেই ঢালাই রাস্তার ধারে। আগের বারের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল টোটো। ছুটল সরু আঁকাবাঁকা সরণী ধরে। দুদিকে যতদূর চোখ যায় ফসল তুলে নেওয়া ধুধু মাঠ আর শুকিয়ে আসা পুকুর।

সেই মস্ত বাগান ঘেরা একতলা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি। আজ যদিও মোড়া সামিয়ানা আর রঙিন কাপড়ে। একদিকে চলছে শোক সভা। একটি দেব মূর্তি দাঁড় করানো আছে। উত্তম বলল, " গৌরাঙ্গ ঠাকুর"। অষ্ট প্রহর হরিনাম সংকীর্তন হয়েছে। বর্তমানে চলছে স্মৃতিচারণার পালা। স্বর্গীয় ভদ্রলোকের পরিচিত পরিজন বন্ধু-বান্ধব শুভানুধ্যায়ীরা সোচ্চারে বলে চলেছেন তাঁর সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন অমূল্য মুহূর্তের কথা। ছেলেটির মা বসে আছেন এক্কেবারে সামনের আসনে। গালে হাত দিয়ে শুনছেন পরলোকগত স্বামীর স্মৃতিচারণ। ছেলেটি বলল একটু বাদে ভিড় আরো বাড়বে। স্কুলের পরীক্ষা শেষ হলেই এসে হাজির হবে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। 


শোকসভা থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাড়ির ভিতরে বসলাম আমরা। বাড়ি ভর্তি নিমন্ত্রিত, তাও বারবার এসে তত্ত্বতলাশ করে যাচ্ছেন জনে জনে। তিন রকম ঠান্ডা পানীয়র গ্লাস ধরা হল প্রত্যেকের মুখের সামনে। ছেলেটি বারংবার ক্ষমা চাইছিল, গরমটা বড্ড বেশি বলে। গরম সত্যিই, কিন্তু এত খোলামেলা বাড়ি, চারিদিকে যতদূর চোখ যায় গাছপালা আর পুকুর, ফলে আমার কিন্তু সত্যিই গরম লাগছিল না।


ছেলেটা বলতে গেলে আমাদের ছেড়ে নড়লই না। রকমারি ব্যাপারে কথা বলছিলাম আমরা, ইতিমধ্যে কেউ মেসেজ পাঠাল জায়গা খালি। প্রায় তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে খেতে বসালো ছেলেটি আর তার সুন্দরী সহধর্মিণী। বাগানের মধ্যেই বিশাল ম্যারাপ বাঁধা। সারি সারি পাখা ঘুরছে। এক লপ্তে অন্তত ৬০ জন একসাথে খেতে বসতে পারে। ঘুরন্ত পাখার তলায় জায়গা রাখা ছিল আমাদের।ছেলেটি, ওর গিন্নি,তুতো দাদা, ভাগ্নে সবাই মিলে চক্রবুহ্যের মত ঘিরে ধরে আকণ্ঠ খাওয়ালো আমাদের।


 বৈষ্ণব বাড়ির শ্রাদ্ধ বাসর, সবটুকুই নিরামিষ এবং সবটুকুই স্বাদে এবং গন্ধে অমৃত। প্রথমে এল ভাজা পিঠের মাপের পকোড়া। তারপর ঘি চপচপে পোলাও, কাজু আর কিশমিশে লটপট। মাখন মাখন গন্ধওয়ালা পনীরের কারি।কচি কাঁচকলা, বড়ি আর সজনে ডাঁটা দেওয়া মিষ্টি মিষ্টি শুক্তো। গরম গরম সুগন্ধী চালের ভাত, পরিবেশনকারীর ভাষায়," অন্ন"। অসম্ভব গরম এবং ততোধিক সুগন্ধি মুগের ডাল। পোস্ত মাখানো মুচমুচে আলুভাজা। আলুগুলি গোল বা লম্বা নয় বরং ছোটছোট চৌকো -চৌকো করে কাটা। এঁচোড়ের তরকারি। ধোঁকার ডালনা। মুখে দিতেই মিলিয়ে গেল ধোঁকাটা। এক পলকে ফিরে গেলাম নিজের মেয়েবেলায়। এত আমার জ্যাঠাইমার হাতের ধোঁকা। অবিকল এমন ধোঁকা বানাতেন স্বর্গীয়া কল্পনা চট্টোপাধ্যায় ওরফে ডলু ওরফে আমার জ্যাঠাইমা। বাইরে থেকে মুচমুচে, অথচ মুখে দিলেই মাখন। জ্যাঠাইমা চলে যাবার পর, এত ভালো ধোঁকা আর খাইনি। পেটে যদি জায়গা থাকতো তাহলে অন্য কিছু না খেয়ে শুধু ধোঁকাই খেতাম আশ মিটিয়ে। 


ধোঁকা পর আমের চাটনি। এই জেলার লোকেদের বিশেষত কাথি মহকুমার বাসিন্দাদের টকের প্রতি প্রবল আসক্তি। মিষ্টি চাটনি বেশ দুর্লভ এখানে। কিন্তু এই চাটনিটা দেখলাম বেশ মুখরোচক মিষ্টি। সাথে পাঁপড়। তারপর পরমান্ন। পায়েস ব্যাপারটা আমি রাঁধতে ভালোবাসলেও, খেতে মোটেই পছন্দ করি না। কিন্তু এই পায়েসটা অতুলনীয়। ভালো পায়েসের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হল দুধ এবং চালের অনুপাত। দুধ বেশি, চাল কম। সেই সূত্র অনুসারে বলতে হয় এই পায়েসটাতে কেবল দুধই ছিল। চাল নামমাত্র। চিনির পরিমাণ প্রায় শূণ্য। ঘন দুধের স্বাভাবিক মিষ্টত্বতেই হয়ে উঠেছে, পরম অন্ন। 


খেয়ে, হাত ধুয়ে, টোটোর সওয়ারি করে উত্তমকুমারের গাড়িতে উঠে পড়লাম, তাও কাটল না, পায়েসের খোয়ারি। আহা কি খাইলাম। গ্রামের খাঁটি গরুর দুধের পায়েস কিনা। ফুল ক্রিম মিল্ক বলেই নির্ঘাত এত সোয়াদ। খোয়ারি কাটল উত্তমকুমারের বচন শুনে, ‘গরুর দুধ কোথায় পেলেন ম্যাডাম? গাঁ গেরামে যত গরু আছে সবার কোন না কোন মিষ্টির দোকানর সাথে লাইন করা আছে জানেন নি? দুধ ওই দোকানকেই দিতে হবে।না দিলে তারা মিষ্টি বানাতেই পারবেনি। এর বাইরে দু চার কেজি দুধ হয়তো বলে রাখলে এদিক উদিক পেতে পারেন। এত দুধ আবার হয় নাকি? ও দেখেন গে আমূল দুধ দে’ই বানিয়েছে।’ তাজ্জব হয়ে গেলাম, গ্রামে আজকাল আর দুধ মেলে না? সেখানেও কব্জা জমিয়েছে আমূল? আর গরু গুলো লাইন মারতে যায় মিষ্টির দোকানে! নাহ্ মশাই, এই বদলির চাকরি যদি না করতাম, জেলায় জেলায় না ঘুরতাম, কত অভিজ্ঞতা থেকেই না বঞ্চিত হতাম। কি আলুনিই না হত জীবনটা।

No comments:

Post a Comment