লিখতে সামান্য ভয় লাগে আজকাল। যা লেখার জন্য নিসপিস্ করে হাত, ছটফট করে প্রাণ তা সবই তো সীমিত শব্দভাণ্ডারের মাধ্যমে বর্ণিত আমার ছাপোষা জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোন ঘটনা। যেমন ধরুন শ্রীমতী তুত্তুরীর স্কুলের পেরেন্টস্-টিচার মিটিং। দূরভাষ মারফৎ উক্ত মিটিং এর সন্দেশ যে রাতে এসে পৌঁছাল, শ্রীমতী তুত্তুরী নৈর্ব্যক্তিক ভাবে বললেন,‘ঐ মিটিং এ গিয়ে আর কি শুনবে? অমুক স্যার বলবেন এই, তমুক ম্যাম বলবেন ওই। আর সবাই সম্মিলিত ভাবে বলবে পুরোযার হাতের লেখা কি খারাপ!’ বললে অবশ্য খুব ভুল কিছু বলবেন না। দীর্ঘদিন পর অফলাইন পরীক্ষা দিতে গিয়ে তড়িঘড়ি লিখতে বসে শ্রীমতী তুত্তুরী যা লিখেছিলেন তা এক নজরে দেখলে মনে হবে খাতায় কালো বা নীল পিঁপড়ে ধরেছে।
শ্রীমতী তুত্তুরীর বাক্যালাপ শুনে আমাদের ধারণা হল, এই পেরেন্টস্-টিচার মিটিং ব্যাপারটা তিনি মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না। আমরাও যে দেখছি তা নয়। কারণ মহকুমা শাসক মহোদয় থোড়াই ঘোর আপিস টাইমে মেয়ের স্কুলে গিয়ে হাজিরা দেবে, ফলে যেতে হবে আমাকে। তুত্তুরীর স্কুলে আমি রোজ এমনিই একবার করে যাই, তাঁকে স্কুল থেকে আনতে। ব্যস্ততার কারণে অন্য কাউকে পাঠালে ভয়ানক অখুশি তথা দুখী হন তিনি।
মুস্কিল হচ্ছে তুত্তুরীর ছুটির সময় বা সামান্য আগে পরে যদি এই মিটিং ডাকা হত, আমার যেতে কোন আপত্তি থাকত না। মিটিং ডাকা হয়েছে ছুটির পাক্কা এক ঘন্টা আগে। এত ক্ষণ ধরে কি কথা বলব আমি তুত্তুরীর টিচারদের সঙ্গে? আমার মেয়ে কেমন তৈরি হচ্ছে সে তো আমি এমনিই বুঝতে পারছি তাকে পড়াতে বসিয়ে। সকালে এক প্রস্থ ধুন্ধুমার হয় এবাড়িতে, বিকালে এক প্রস্থ। কাজেই শৌভিক আর আমি সমস্বরে বললাম, ‘তোর যখন এত আপত্তি তাহলে নাহয় আমরা যাব না ঐ মিটিং এ।’ আপিস ফেলে বারবার এমন যাওয়াটাও তো শোভন না।
মুখের কথা শেষ হল না আমাদের, ভেসে এল শ্রীমতী তুত্তুরীর অভিমানী কণ্ঠস্বর, ‘এ আবার কেমন কথা! তোমাদের এত ব্যস্ততা যে তোমরা আমার পেরেন্টস্ টিচার মিটিং এ যেতে পারবে না?’ সাময়িক ভাবে গুলিয়ে গেল মাথা, এটা কে, আমার কন্যা না আমার শাশুড়ী মাতা। পাশ থেকে ভুল ধরিয়ে দিল শৌভিক, ‘তোর নয়, আমার শাশুড়ীর মত কথা বলছে ও।’ সত্যিই তো, ‘এত কিসের ব্যস্ততা যে মেয়েকে সময় দিতে পারবি না?’ মার্কা সেন্টু দেওয়া কথা তো এই পৃথিবীতে একজনই শোনান আমাদের। তিনি আমার গর্ভধারিণী বটে।
মিটিং এর দিন বেলা দশটা নাগাদ অচেনা নম্বর থেকে ফোন। স্নানাহার সেরে আপিস যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি দোঁহে, অন্যদিন এই সময় কোন ফোন এলে সাধারণতঃ ধরি না। চেনা নম্বর হলেও না। তড়িঘড়ির মধ্যে বিস্তারিত কথাবার্তা বলতে বসলে বড় দেরী হয়ে যায়। সেদিন কি মনে হল ধরেই ফেললাম ফোনটা। ফোনের ওপাশ থেকে শ্রীমতী তুত্তুরীর নার্ভাস কণ্ঠস্বর,‘হ্যালো মা!’ ধক্ করে উঠল বুকের ভিতরটা। তিনি তো ঘন্টা খানেক আগেই রওণা দিয়েছেন স্কুলের পথে। তাহলে? হঠাৎ ফোন করছে কেন? কি হল? শরীর-টরীর- আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ঠেট ইংরেজিতে বলে চলে তুত্তুরী, ‘আমি স্কুল থেকে বলছি। ম্যাম পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। চিন্তা কোর না। যা বলছি শোন, তুমি আমার ঘরে যাও, ড্রয়ারটা খোল দেখবে এক বাক্স রঙ পেন্সিল আছে। ওটা একটু দিয়ে যাবে প্লিজ। খুব আরজেন্ট দরকার। আমি আনতে ভুলে গেছি। আর হ্যাঁ শোন, এনে কিন্তু স্কুল অথরিটিকেই দিও।’
শৌভিকের আপিস থেকে তুত্তুরীর স্কুলটা কাছে, তাকে অনুরোধ করলাম, তিনি যথারীতি উড়িয়েই দিলেন। ‘ফুঃ। ছাড় তো! খুব দরকার, তা সময় থাকতে ব্যাগে ঢোকায়নি কেন? কিচ্ছু করতে হবে না। যেমন গোভূতের মত গেছে, ওকে ভুগতে দে। লাগলে পাশের বন্ধুর থেকে চেয়ে নেবে। আমরাও তো তাই করেছি।’ বাবারা অমন বলে, বাবারা অমন বলতেই পারে, তাই বোধহয় বাবাকে চোখে হারালেও আজ আর বাবাকে ফোন করেনি তুত্তুরী।
শৌভিকের অমৃতবাণী উপেক্ষা করে, ড্রয়ার খুলে রঙ পেন্সিলের বাক্স নিয়ে যখন পৌঁছলাম, বসে গেছে স্কুল। সিকিউরিটি ছেলেটাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করে ভিতরে ঢুকে, আপিস ঘরে বসে থাকা প্রৌঢ়ের হাতে রঙ পেন্সিলের বাক্স তুলে দিয়ে তবে শান্তি। আসার সময় তড়িঘড়ি তুত্তুরীর নাম আর ক্লাশ লিখেই দিয়েছিলাম বাক্সের গায়ে, বৃদ্ধ দেখলাম তা সত্ত্বেও বাক্সটাকে একটা সাদা খামে ভরল। ওপরে যত্ন করে লিখল নাম, ক্লাশ, সেকশন। অতঃপর সসম্ভ্রমে আমায় বলল, ‘আপনি যেতে পারেন। আমরা দিয়ে দেব।’ বৃদ্ধের কণ্ঠস্বর শুনে ভরসা হল, এণাকে বোধহয় আবোলতাবোল প্রশ্ন করা যায়। বেশ খানিকক্ষণ কান চুলকে জানতে চাইলাম,‘দাদা বলছি কি না, ঐ পেরন্টস্ মিটিং এ কি পাক্কা এক ঘন্টা থাকতে হবে?’ উনি অল্প হেসে বললেন,‘ আসেন না। যেমন আপনার সুবিধা। আড়াইটে-পৌনে তিনটে- আপনার ব্যাপার।’
তিনটে নাগাদ গিয়ে হাজির হলাম মেয়ের স্কুলে। বিরাট হল ঘরে জমায়েত হয়েছে গুটি কয়েক পিতামাতা। দেখে আশ্বস্ত হলাম আমার মত দায়িত্বজ্ঞানহীন পেরেন্টস্ আরোও কিছু আছে তা হলে। আমি যখন পৌঁছেছি, ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার বক্তব্য রাখছিলেন, উনি বেশ বেদনার্ত স্বরেই বললেন,‘ আপনাদের এই অনপস্থিতির হার আমাদের কাছে বেশ বেদনাদায়ক। এই মুহূর্তে সবার অলক্ষে এক ভিন্ন ধরণের যুদ্ধ লড়ছি আমরা। দীর্ঘ দুই বৎসর প্রথাসিদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকাটা যে আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কতটা ক্ষতিকর, প্রতি মুহূর্তে তা অনুধাবন করে চলেছি আমরা। দীর্ঘ দুই বছর অফলাইন ক্লাশ না করাতে পেরে আমরাও কিছুটা অনভ্যস্ত, আউট অফ প্রাকটিশ হয়ে পড়েছি। সিস্টেমটাতেও লেগেছে জং। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাচ্ছি শুধু আমাদের ছেলেমেয়েগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে। এমতবস্থায় আপনাদের সাহচর্য এবং সহযোগিতা যে আমাদের বড় প্রয়োজন।’
আজ পর্যন্ত কম পেরেন্টস্ মিটিং তো অ্যাটেন্ড করিনি, এত দরদ দিয়ে কথা বলতে কাউকে শিখিনি। বিশেষতঃ প্রিন্সিপাল গোত্রীয় কাউকে। প্রথমে ইংরেজিতে বলতে শুরু করলেও কখন যে নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলতে শুরু করেছেন ভদ্রলোক কেউই খেয়াল করিনি। ওণার বক্তব্যের শেষে উনি উপস্থিত অপ্রতুল সংখ্যক পিতা/মাতাকে অনুরোধ করলেন যদি কারো কিছু বলার থাকে।
জানলার বাইরে ঝেঁপে নামল বৃষ্টি। ঘড়িতে সাড়ে তিন। আর মিনিট দশ পরেই বাজবে ছুটির ঘন্টা। তারপর নাকি একে একে এসে হাজির হবেন শিক্ষক শিক্ষিকাদের দল। প্রায় সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁদের জন্য। আসল কথাবার্তা, প্রশ্নাবলী, অভাব- অনুযোগ তাদের জন্যই জমিয়ে এনেছে শুনলাম সবাই। এখন চলছে নেহাৎ আলগা হাল্কা চালের কথা বার্তা, যেমন- বাংলাটা একদম পারছে না। হিন্দির উত্তর গুলো একটু লিখে দিলে ভালো হয় ইত্যাদি, প্রভৃতি। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যার তখনও বলেই চলেছেন,‘ আর কেউ কিছু বলবেন? আপনি যে ভাষায় স্বচ্ছন্দ সেই ভাষাতেই বলুন, কিন্তু যদি কিছু বলার থাকে প্লিজ বলুন।’ আমার পাশের ভদ্রমহিলা দীর্ঘক্ষণ ধরেই উসখুস করছিলেন। এবার সাহস করে উঠেই পড়লেন, ‘স্যার মে আই-’। উপস্থিত মায়েদের মধ্যে আমি ছাড়া কেবল ইনিই শাড়ি পরে এসেছেন। চোখের চশমা থেকে আলগা খোঁপা, গলার সরু সোনার চেন, পরণের সাদা হলুদ ছাপোষা তাঁতের শাড়ি এমনকি পায়ের চটি সবকিছুতেই রুচি এবং পারিপাট্যের ছাপ।
চড়া আলোর নীচে, মাইক্রোফোনর সামনে পৌঁছে কিঞ্চিৎ থতমত খেলেন ভদ্রমহিলা। সবাইকে নমস্কার জানিয়ে একটু দম নিয়ে বললেন,‘ আমি বাংলাতেই বলি কেমন।’ জানালেন ওণার একটিই সন্তান, পুত্র। ওণার সমস্যা হল, ছেলেটি কিছুতেই স্কুলে আসতে চাইছে না। দুশ্চিন্তায় আদ্র মমতা মাখানো কণ্ঠে উনি বলে চলেন,‘ ছেলেটা স্কুলে আসতে ভীষণ ভালোবাসত জানেন। তবে সে সব লক ডাউনের আগের কথা। আজকাল স্কুল যেতে হবে বললেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। পায়ে পড়ে যায়। আমি যে কি করি। আমি নিজে একজন শিক্ষিকা, অনেক বুঝিয়েছি ওকে, কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। আজ এসেছে, আজ যেহেতু গিটার ক্লাশ আছে, তাই আজ মহানন্দে গিটার কাঁধে স্কুলে এসেছে। কিন্তু কাল যে কি হবে-।
কেন আসতে চায় না জানতে চাইলে উদ্ভট যুক্তি দেয়। প্রথমে বলত, যাদের পাশে বসতে হয় তাদের সাথে বনছে না। আমি ক্লাশ টিচারকে বলে ওর সিট পাল্টে দিয়েছি, কিন্তু তাও-। আজকাল বলে স্কুলে বড্ড গরম। গায়ে হাওয়া লাগে না। যত বলি, গরম ঠিক আছে, কিন্তু এতগুলো বাচ্ছাও তো ঐ গরমেই পড়ছে, ওর মাথাতই ঢোকে না। ওর মাথায় কেবল ঢোকে মোবাইল আর গেমিং। আমি বেরিয়ে গেলে সারাদিন ঐ সব নিয়ে বসে থাকে। কাল স্কুলে আসেনি বলে রাগ করে আমি সব মোবাইল,ল্যাপটপ আলমারিতে ঢুকিয়ে চাবি দিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে কাজের মাসির কাছে শুনলাম, ও নাকি পাগলের মত সারাদিন চাবি খুঁজেছে। আলমারির দরজা ধরে টানাটানিও করে দেখেছে অসংখ্য বার। যদি খুলে যায়। এছেলে নিয়ে আমি কি করব, একটু হেল্প করুন না প্লিজ। আমি আর পারছি না।’
ভদ্রমহিলার অসহায় কণ্ঠস্বর ধাক্কা খাচ্ছে হলঘরের এ দেওয়াল থেকে ও দেওয়াল, দেওয়াল জোড়া বিশাল কালো বোর্ডে, যেখানে উজ্জ্বল সাদা রঙে লেখা বিগত কয়েক বছরে দশম এবং এবং দ্বাদশ শ্রেণীর সেরা পড়ুয়াদের নাম। ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল, ধীরে ধীরে উঠে গেলেন কয়েকজন পিতা/মাতা। কয়েকজন আবার বাচ্ছার হাত ধরে ফিরেও এলেন। সকলেই ভদ্রমহিলাকে আশ্বস্ত করতে লাগলেন একযোগে। স্কুলে সদ্য নিযুক্ত কাউন্সেলরের সাথে কথা বলতে বললেন, কেউ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিলেন। উপস্থিত অন্য বাবা/মারাও সকলেই সহমর্মী হয়ে নানা পরামর্শ দিতে লাগলেন।
দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে উঠে পড়লাম আমি। শ্রীমতী তুত্তুরীর বেরোনোর সময় হয়ে গেছে। স্কুলের ফটক থেকে বেরিয়েই আমাকে দেখতে পেলে তাঁর মুখে যে অনাবিল হাসি ফুটে ওঠে তার দাম মিলিয়ন ডলারের থেকেও অনেক অনেক বেশী আমার কাছে। আজও তিনি হাসলেন, তারপর ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলেন মিটিংএ ছিলাম কি না। আমার ওপর আমার কন্যা এবং তাঁর পিতার যে কি অপরিসীম অনাস্থা তা প্রতি পদে অনুভব করি। মানুষ বলেই গণ্য করে না ব্যাটারা আমায়। তবুও হজম করে যাই। কারণ ঐ যে মা হওয়া কি মুখের কথা।
তাই দেঁতো হেসে জানালাম, জী মহারাণী। অ্যাটেন্ড করেছি আপনার মিটিং। তবে মিটিং এখনও শেষ হয়নি। বরং বলা যায় সবে শুরু। ক্লাশ টিচাররা তো সদ্য এসে বসলেন। এখন চাইলেই কথা বলা যায় তাঁদের সাথে। এবার তুত্তুরী বলুক কি করব? কথা বলব কি? বারো বছরের কচি মাথায় কি সব হিসেব নিকেশ চলে বুঝি না, অতঃপর তিনি কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে যাওয়া গলায় জানতে চান,‘তুমি কি চাও?’ তুই কি চাস/তুমি কি চাও এর চাপানউতোর অন্তে মহানন্দে বাড়ি এবং অফিসের পথে পা বাড়াই আমরা। কারণ আমার মেয়ে কেমন তৈরি হয়েছে বা তার প্রাবল্য কোথায় আর দুর্বলতাই বা কোথায় বিশ্বাস করুন তা আমার থেকে ভালো কেউ বোঝে না। এটা তুত্তুরীও মেনে নিল।
গাড়ির দরজা বন্ধ করে বললাম, চল হে উত্তমকুমার এটাকে নামিয়ে আপিস যাই। আর শ্রীমতী তুত্তুরী চোখ পাকিয়ে বললেন, ‘ মা, তোমাকে বলেছিলাম কালার পেন্সিল দিতে, তুমি ক্রেয়ন্স গুলো পাঠিয়েছ কেন?জানো আমার বন্ধুরা কত হাসছিল। এঃ হেঃ হেঃ তোর মা কিচ্ছু জানে না বলে-। পরের বার হয়তো আই কার্ড দিতে বলব, তুমি পাঠাবে টাই।’ সত্যি বাপু, মা হওয়া মোটেই মুখের কথা না যা দেখছি।
No comments:
Post a Comment