Sunday 11 September 2022

অনির ডাইরি ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২২

 


#তুত্তুরী_আর_ফুলঝুরির_গপ্প 


“মা সব ন্যান খেয়ে ফেলে, তাই আমি হাত খেয়ে পেট ভরাই।” আপিস টাইম, মিটিং চলছে, তার মধ্যে যদি ফোনের স্ক্রিনে হঠাৎ ফুটে ওঠে এমন বার্তা, তো হাসি পাবে না? নেহাৎ অত্যন্ত গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে মিটিং, তাই শিকারি বেড়ালের মত ফ্যাচ করে হেসে ফেলতে গিয়েও গিলে নিলাম হাসিটাকে। পেটের মধ্যে গুলাতে থাকা দমকা হাসির ঘূর্ণিঝড়কে শাসন করতে, ঠোঁট কামড়ে, দাঁতমুখ খিঁচিয়ে যত উদ্ভট আর তেঁতো ব্যাপারস্যাপারে মনোনিবেশ  করার চেষ্টা করলাম।  


সব দোষ উমার। নাতনী ফুলঝুরির সঙ্গে কিছুটা নিভৃত সময় কাটানোর আকাঙ্খা নিয়ে মাসিমা-মেসোমশাই অর্থাৎ উমারাণীর বাবা এবং মা যে কটা দিনের জন্য দুর্গাপুর এসেছেন এখবর গতকাল না পরশুই দিয়েছিল বটে উমা। এমতবস্থায় এমন মেসেজ করলে প্রথম চোটে তো এটাই মনে হবে যে মাসিমা ন্যান খাচ্ছেন আর উমা হাত খাচ্ছে। ব্যাপারটা কল্পনা করে কি আদৌ হাসি চাপা যায়? 


 চেম্বার ফাঁকা হতে, ফোন খুলে গোটা মেসেজটা পড়ার পর ধরা পড়ল আসল কালপ্রিট। শ্রীমতী ফুলঝুরি, যিনি আপাততঃ  ন্যান(বেবি ফুড) ফেলে নিজের হাত চুষতে অতীব উৎসাহী। বাধা দিলে বা সামান্য বেচাল দেখলে তিনি আবার আজকাল ‘অ্যাও অ্যাও’ করে ধমকাতেও শিখেছেন। 


উমাকে ফোন করে আশ্বস্ত করলাম আহা একটু হাত খেয়েছে তো কি এমন অপরাধ করেছে বেচারা। হাত খাওয়া তাও ভালো, হামা টানলে তো পিপড়ে ধরবে আর সটাসট মুখে পুরবে 😂।  উমা বলল, ওয়াক থুঃ থুঃ। 


কচি মুখের মধ্যে মুঠি করে গোটা হাতটা পুরে চকাস্ চকাস করে চুষতে, প্রায় সব চেনা পরিচিত বাচ্ছাকেই দেখেছি। নিজের হাত চুষে যে কি এত আনন্দ পায় কচিকাঁচা গুলো তা জানতে শ্রীমতী তুত্তুরীর শৈশবে রীতিমত নেট ঘেঁটে রিসার্চ করেছিলাম আমি। তখনই জানতে পারি, এটা আসলে খুবই সাধারণ ব্যাপার। হাত বা আঙুল চুষলে যে সাময়িক  শিরশিরে অনুভূতি জাগে, সেটাকেই উপভোগ করে নবজাতকের দল। প্রথম চোটে বিস্মিত হয়, তারপর তারিয়ে তারিয়ে এই নতুন অনভূতিকে উপভোগ করে কচিকাঁচা গুলো। হাতের পাশাপাশি পায়ের আঙুলগুলোকেও মুখে পুরে চোষার চেষ্টা করে ব্যাটারা। প্রথম চোটে সবাই সফল হয়, তারপর দেখে ওবাবা এতো বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারস্যাপার। ভরা পেটে পা'টাকে মুখের কাছে এনে চুষতে গেলে আবার বমি থুড়ি দই তোলার ঝামেলা থাকে। অত ঝামেলা কার পোষায়, তার থেকে হাতই ভালো। 


প্রসঙ্গতঃ একই কারণে হাত এবং পায়ের পাশাপাশি শরীরের অপর একটি অঙ্গ ধরেও রীতিমত টানাটানি করে বাচ্ছারা। অনুধাবন করার চেষ্টা করে, ব্যাপারটা ঠিক কি হচ্ছে, এমন ‘চড়াম্-চড়াম্’ মার্কা শিরশিরানি জাগছে কেন। জনৈকা স্বনামধন্যা লেখিকা,  ২০১০-১১ নাগাদ একবার দাবী করেন যে উনি নাকি তিন বছর বয়সে প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক  সুলভ অপকর্মটি করেন। ওণার দুঃসাহসী আত্মকথনে তুফান ওঠে ফেবুতে, আগুন জ্বলে যায় বুদ্ধিজীবী তথা উচ্চ-মধ্যমেধা মহলে। শুধু আমিই যা ভেবেছিলাম যে লিখব, ‘তিন বছর বয়সে প্রথম করেছিলেন দিদি! এ হে বড্ড দেরী করে ফেলেছিলেন গো। কচিকাচা গুলো তো ওটা দু-তিন মাস বয়স থেকে করে, তাও গণমাধ্যমে জাহির করে না। কেমন অমায়িক ভাবুন আমাদের বাচ্ছাগুলো।’


ফোনে উমাকে সেই কথাগুলিই আবার বলে বললাম,‘ভাই আর যাই করিস, খবরদার ভুলেও ন্যান খাস না। অতি বাজে খেতে। নামেই বাচ্ছাদের দুধ, আদতে ভয়ানক লবণাক্ত, অতি বিদঘুটে স্বাদের সাদা রঙ পানীয়। আশ্বস্ত করে বললাম, যদি বেবি ফুড খেতেই হয় তো ভিল্যাক হুইট টা খাস। ওটা বেড়ে খেতে। 


উমা অত্যুৎসাহে বলল,‘ সেটা তো দেয়নি। চেয়ে নেব তাহলে।’ হেসে বললাম, এত তাড়াতাড়ি দেবে না বাপু। একটু সবুর কর। একটু বড় হোক, তবে না। নেস্টাম রাইস আর ভিল্যাক হুইট। তুত্তুরীকে দিয়েছিল ওর ডাক্তার দিদিমণি। এককালে ওটাই ছিল ওর ভাত আর রুটি। উমারাণী খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠল,‘ আহাঃ কবে দেব গো? আমাদের জন্যও তাহলে আর রান্না করাব না তখন।’ হাসি চেপে কইলাম, বাপু হে নেস্টাম রাইসটা কিন্তু চিনি ছাড়া চটকানো দুধভাতের মত খেতে। হুঁ হুঁ বাবা আমি সব খেয়ে দেখেছি। এমনকি সেরেল্যাকও । মিষ্টি বটে তবে এমনকিছু আহামরি খেতে না। কেমন যেন সুগন্ধী দুধে চটকানো বাসি রুটির মত সোয়াদ। 


উমারাণী সন্দিগ্ধ স্বরে বলল, ‘সোনাই(তুত্তুরী) জানে তুমি ওর সব খাবার সাবাড় করতে?’ হেসে বললাম, ‘সে তো আজও। নিজে টেস্ট না করে আজ অবধি কিছু খেতে দিই না মেয়েকে। বা মেয়ের বাপকে।’ রহস্যময় সুরে বলল উমা,“ তাহলে তোমাকে বলা যায়, জানো তো আমি না ওষুধ গুলোও টেস্ট করে দেখি আগে।" শুনে কি যে নির্মল আনন্দ হল, আহা আমার মত তাহলে আরো কেউ আছে। মুখে অবশ্য বললাম,‘বেশ করিস। তোর ছানা। তুই চাইলে বাচ্ছার ইয়েও টেস্ট করে দেখতেই পারিস।’ উমা আবার বলল, ওয়াক থুঃ। ভালো কথা, থুড়ি ভালো মানুষের জমানাই নেই মাইরি।

No comments:

Post a Comment