তুত্তুরী বলল, ‘মা আই হ্যাভ আ ক্রাশ।’ আর মাসখানেক বাদে এগারোয় পড়বে, এই বয়সে ক্রাশ না থাকাটাই তো অস্বাভাবিক। আমার তো এর ঢেড় আগে থেকে ছিল। গোবিন্দা আহাঃ! বুধবারের চিত্রহার আর চিত্রহারে গোবিন্দা। দিদি-মাসি- পিসিরা তখন আকণ্ঠ নিমজ্জিত ইমরান খান আর ওয়াসিম আক্রমের প্রেমে। দিশি প্লেবয় বলতে রবি শাস্ত্রী। শাস্ত্রির অডি গাড়ি জেতা এবং শ্যাম্পেনের বোতল খোলা স্বচক্ষে না দেখলেও, এত গল্প শুনেছিলাম বাপস্। মিঠুনও ছিল বটে। তবে মিঠুনের ভক্তবৃন্দের মধ্যে জুলফি ওড়ানো হুমদোদের সংখ্যাই ছিল বেশী। প্রথম প্রেম যদি কেশব হন, তো দ্বিতীয় প্রেম অবশ্যই ছিল গোবিন্দা। আর ১৯৮৯থেকে তো সবাইকে হঠিয়ে হৃদয়ের দখল নিয়েছিলেন জনৈক পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির মারাঠি ছোকরা।
যাই হোক, তুত্তুরীর কথায় ফেরা যাক। তুত্তুরীর যে ভয়ানক ক্রাশ তৈরী হয়েছে, তা শৌভিক এবং আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করছি। গুগল বা ইউটিউব খুললেই দেখা যায় পদচিহ্ন ছেড়ে গেছেন শ্রীমতী তুত্তুরী। স্টার জলসায় বাংলায় ডাব করে দেখানো রাধা-কৃষ্ণ নামক সিরিয়াল এবং তার কুশীলবদের চূড়ান্ত অনুরাগিনী তুত্তুরী। অনুরাগের মাত্রা এতটাই চিটচিটে যে এক প্রস্থ দুপুর বেলা বাংলায় দেখার পর, রাত নামলে পুনরায় হিন্দিতে ঐ একই সিরিয়াল দেখেন তিনি। ওই সিরিয়ালের প্রতিটি কুশীলবের নাম ঠোঁটস্থ তাঁর। কবে, কার জন্মদিন গেল, কবে কে বিয়ে করলেন, সেই বিয়ে বা জন্মদিনের পার্টিতে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন তা সবই শ্রীমতী তুত্তরীর নখদর্পণে।
সম্প্রতি জনৈক সুমেধ মাডগালকার নামক অভিনেতার প্রতি একটু বেশিই দুর্বল তুত্তুরী। তাঁর চোখের রঙ নাকি সমুদ্র সবুজ। গায়ের রঙ দুধে আলতা। শ্রীকৃষ্ণ অমন দুধেআলতা বরণ কবে হলেন এসব প্রশ্ন করা অর্থহীন। এতে শ্রীমতী তুত্তুরীর উত্তেজনাই শুধু বাড়ে। এমনিতেই যথেষ্ট উত্তেজিত তুত্তুরী, ইউটিউবে কারা যেন সুমেধের সাথে কোন অভিনেত্রীকে জড়িয়ে অনর্থক কুৎসা রটাচ্ছে। ট্রোল করছে।
যাই হোক, আবার ফিরে যাই, শ্রীমতী তুত্তুরীর ক্রাশের কাছে। খেতে বসে তুত্তুরী যখন জানাল, তাঁর একটি ক্রাশ তৈরী হয়েছে, তখন তো প্রশ্ন করতেই হয়, সেই ব্যক্তিটি কে? মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে দুষ্টু হেসে জবাব দেয় তুত্তুরী, ‘রোহন মাডগালকর’। সে আবার কে? একটাই তো, মাডগালকরের কথা শুনে আসছি এযাবৎ। জবাব পেলাম, ইনি তাঁর প্রিয় পোষ্য বিশেষ। জাতে খাস সোনালী রিট্রিভার। সম্প্রতি সুমেধ মাডগালকরের কোন ভিডিওতে নাকি তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছে তুত্তুরীর।
দিবারাত্র বোকাবাক্সের কৃষ্ণনাম শুনে শুনে কান পচে গেল মাইরি। তাই বলতে গেলাম, কিছুদিন নাহয় ওকে স্টক করা ছাড়। বলেই পড়লাম ফ্যাসাদে। এবার বোঝাও স্টকিং কারে কয়?ভাগ্যে গুগল ছিল, গুগল বলে স্টকিং এর সংজ্ঞা হল- মাত্রাতিরিক্ত তথা অযাচিত মনোযোগ দিয়ে কাউকে হয়রান করা। সামান্য ভিডিও দেখে কি করে সুমেধকে হয়রান করা হয়, এই প্রশ্নের উত্তরে যখন নাকানিচোবানি খাচ্ছি, টেবিলের ওপার থেকে গম্ভীর মুখে বলে ওঠে শৌভিক, ‘এটাকে ঠিক স্টকিং করা বলে না। ও কি জানে তার টয়লেট রুটিন কি বা সে কি টয়লেট ক্লিনার ব্যবহার করে।’ অসাধারণ! এই পৃথিবীর যে কোন আলোচ্য বিষয়কে নিয়েই এরা বাপমেয়ে যে কিভাবে, ‘টয়লেট এক প্রেম কথা' বানাতে পারে, তা বোধহয় এই ডাইনিং টেবিলে না বসলে জানা সম্ভব নয়। তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে তুত্তুরী। কিছুতেই পরাস্ত হতে রাজি নন তিনি। সুমেধের প্রাতঃকৃতের শিডিউল তার অজ্ঞাত বটে,তবে তিনি এটা তো জানেন, যে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুমেধ চা বানায়। জবাবে বাবা বলে, ‘তা সে ও চা খেলে তো ওকেই বানাতে হবে।’ নাঃ মোটেই শুধু নিজে খাবে বলে বানায় না, সাথে সাথে মা আর পিসিকেও চা বানিয়ে খাওয়ায় সুমেধ। তুত্তরী এটাও জানে যে, চা খেয়ে বাগানে গাছে জল দেয় সুমেধ। তারপর? তারপরের পর্বটা না হয় উহ্যই থাকুক। এত কিছু লিখলে যদি সুমেধ জানতে পেরে যায়। তাহলে সেটা বড়ই লজ্জার ব্যাপার হবে।সুমেধ অবশ্য আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই-ইয়ে আপনারাও বলবেন না কিন্তু।
No comments:
Post a Comment