Wednesday 27 May 2020

অনির ডাইরি ২৭শে মে, ২০২০


রান্না করে আপিস যাওয়া, আবার আপিস থেকে ফিরে রান্না চাপানো। ভুলে গেছি সবার আগে ঘর-দালান-উঠান ঝাঁট দেওয়া, অতঃপর স্নান-আহ্নিক সেরে রসুই ঘর সামলে, বর-মেয়েকে খাবার বেড়ে দিয়ে, রান্নাঘরেই হাঁটু মুড়ে বসে গপাগপ গরাস গরাস ভাত গেলা। তারপর বাসনকোসন মেজে ধুয়ে, পোশাকআসাক পরে, মুখে খানিক ল্যাকটোক্যালামাইন আর পণ্ডসের ফেস পাউডার ঘষে ব্যাগ কাঁধে,চটি ফটফটিয়ে দৌড়। আপিস থেকে ফিরে চা বানিয়ে খাওয়া- অল্প বিশ্রাম, তারপর রাতের রুটি তরকারী বানাতে যাওয়া- এটাই ছিল মায়ের জীবন। কি ভাবে পারতে মা? মাস দুয়েক বাসন মেজেই হাতগুলো শৌভিকের থেকেও বেশী খসখসে,নখগুলো ভাঙা। কিউটিকলে ভর্তি। ঘুম ভাঙলেই আগে কাজের হিসেব কষি, কোনটা কোনটা শৌভিক করবে, কোনটা আমি। রোজ ঘর ঝাঁট দিলেও, মোছা একদিন ছাড়া। তাও তো তোমার মত হাঁটুমুড়ে না, মস্ত ডাণ্ডাওয়ালা মপ দিয়ে।
আজ ঘর মুছিনি। আপিসটাইমে ঘর ঝাড়পোঁচ করে শ্যাম্পু করতে গেলে বড় দেরী হয়ে যায়। রান্নাও যৎসামান্য, ফ্রীজের খাঁজে লুকিয়ে থাকা একফালি ওল সিদ্ধ করতে সেই প্রেশারকুকারটা ব্যবহার এবং মাজতে হল। জলখাবারের বালাই নেই, আমার সঙ্গেই ভাত খাইয়ে দিয়েছি সবকটাকে। দুপুরে খিদে পেলে ম্যাগি বানাতে পারে ওরা। থালাবাসনগুলো জল ঢালাই থাক। যদি ইয়ে,মানে কেউ দয়াপরবশঃ হয়ে মেজে রাখে-
এবার ব্যাগ গুছানোর পালা। স্যানিটাইজারটা সবার আগে ঢোকালাম, খুঁজে পেতে চশমাটাও। হেড ফোনটা গত দিন আপিসে ফেলে এসেছি-। মনে করে টিফিনটা নিতে হবে, নইলে হরিমটর। টিফিনের রুটিও আপিস টাইমেই বানাত মা, ঝপঝপ করে। ওপথ মাড়ালাম না, দুটো বিস্কুটই নিলাম, ফ্রীজের মাথায় একজোড়া কালো কলা পড়ে আছে, শৌভিক ওগুলো মুখ বুজে খেয়ে নেয়- আজ না হয় আমিই নিলাম।

এবার তৈরী হবার পালা, জামাকাপড় গুলো পরি আর কাচি, ফলে সবই বিবর্ণ। সেদিন স্পেন্সারে দেখলাম লেখা আছে- নো ট্রায়াল, নো রিটার্ন, নো এক্সচেঞ্জ।ইয়ার্কি নাকি? ঐ ভাবে কেবল তুত্তুরীর হাফ প্যান্ট কেনা যায়-তাও ২২৯টাকা করে।নৈহাটীর বাজারে অমন ইজের ৫০টাকায় হেসেখেলে মেলে। নেহাৎ লোকাল ট্রেন বা লঞ্চ কিস্যু চলছে না। 
মুখে মাখার কিছুই নেই, খানিক তুত্তুরীর পড়ে থাকা বেবি পাউডারই লাগালাম মুখে, চোখে একটু কাজল-  । মেকআপ করলে নাকি সংক্রমণের ভয় বেশী, দিনরাত পাখিপড়া করে আমার বর। একই কারণে ঘড়ি পরা বারণ। একবার বাড়ি যাব ভেবেছি, খালি হাতে মায়ের সামনে দাঁড়ালে প্রচুর গালি খেতে হবে।

সারা পৃথিবী স্যানিটাইজারের ওপর বেঁচে আছে, কেবল আমাদের বাড়িতেই স্যানিটাইজার নেই। আগের দিন গিয়ে চাইলাম,বাবা কোথা থেকে একটা ধুলো পড়া খেলনা স্যানিটাইজারের কৌটো বার করে আড়াই মিনিট ধরে স্প্রে করেই গেল, বেরোল না ছিটেফোঁটাও।ওমন এক পিস তুত্তুরী ওর খেলনা ছানাপোনাদের হাতে ঘষে। সেদিন বলল হ্যাণ্ডওয়াশও তলানিতে। পাড়াতেই করোনা পজিটিভ, তাও বৃদ্ধ মাস্ক পরে বেরিয়েছে লিক্যুইড সোপ কিনতে- না পেলেও অকুতোভয়- গায়ে মাখার সিন্থল আছে তো অনেকগুলো। চটি ফটফটিয়ে দৌড়বার প্রাক মুহূর্তে মনে হল একটা ছেল্ফি তুলেইনি, ঐ যে ফিরিঙ্গী ভাষায় বলে না, সামান্য “সেল্ফ প্যাম্পারিং” আর কি। তারপর? সময় দৌড়ল নিজের গতিতে, প্রতিটা দিন কি আর রূপকথা হয়? ভাগ্যিস হয় না। 

No comments:

Post a Comment