Friday, 8 May 2020

#প্রাণের_কথা #রবীন্দ্রজয়ন্তী


চলুন, চলুন। দাদা-দিদি-ভাই এবং বোনেরা, আর দেরী করবেন না, উঠে পড়ুন। অনুগ্রহ করে মাস্ক-গ্লাভস্ ইত্যাদি খুলে রাখুন। স্যানিটাইজারের বোতল ছুঁড়ে ফেলে দিন কোপাই এর জলে-  এই না, এটা করবেন না। খামোখা দূষণ বাড়বে। স্যানিটাইজার থাক বরং।
ঐতিহাসিক এই বটগাছের তলা থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের এই ভার্চুয়াল ট্যুর। লেডিজ এন্ড জেন্টেলমেন বেশী হল্লা করবেন না, কেলাশ চলছে কিনা। জানেন না বুঝি, এখেনে বেলা একটা অবধি খোলা আকাশের নীচে,  গাছের ছায়ায় জমিয়ে চলে পঠনপাঠনের আসর। সেই তাঁর সময় থেকে চলে আসছে এই নিয়ম। তিনি ও পড়াতেন গো। যেখেনে তিনি বসতেন, সেই জায়গায়ে একটা ছোটখাটো সিংহাসন মত করা আছে। দেখাব, দেখাব- সব দেখাব। ব্যস্ত হন ক্যানে?
 নাঃ আপনাদের বিশ্বাস নেই, এখনই যা হল্লা জুড়েছেন। ছাড়েন। ভিতরে পরে ঢুকব।চলেন  আগে বাইরেটা ঘুরে দেখাই। এই দেখেন গিয়া প্রতীচী। কার বাড়ি বলেন তো এটা? ঠিক ধরেছেন। জানেন অমর্ত্য সেন, মাঝেমাঝেই এসে থেকে যান এখেনে। বছরে এক থেকে দু বার তো আসেনই আর যখনই আসেন, সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। কাছেই কালোর চায়ের দোকান। ওখেনেই ওণার ঠেক। কালো আর বেঁচে নেই গো বাবুবিবিরা,তবু উনি যান। বসেন। চা খান। আড্ডা মারেন।
এই দেখেন আনন্দধারা। আমাদের মোহর দিদির বাড়ি। আপনাদের কণিকা বন্দোপাধ্যায় গো? কান পাতেন, কান পাতেন- শুনতে পাচ্ছেন কি,ঐ তো মোহর দি গুনগুন করছে-  “নিরালায় তোর বনেরও মাঝে, সেথা কি এমন নূপুর বাজে?” কিছুদিন আগেও এখানে গোরা সর্বাধিকারী থাকতেন। এখন কে থাকেন ঠিক জানি না গো বাবু-বিবিরা। সারি সারি সব তালাবন্ধ কুঠি গুলো পড়ে আছে। কান পাতলেই ভেসে আসে দু এক কলি গান- কখনও বা উড়ে আসে কে জানে কার তপ্ত দীর্ঘশ্বাস। ফিসফিস করে কথা বলে কারা।
মনটা বড় ভারি হয়ে গেল গো, চলেন  খানিক গিয়ে বসি কোপাই এর ধারে- সেই যে গো, “আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে-”। তবে বৈশাখ মাসেও মোটেই হাঁটু জল থাকে না, দেখছেন কি না। পাশেই “আমার কুঠির”। যদি কিছু সওদা-টওদা করতে চান, করতেই পারেন। দেওয়াল জোড়া সারি সারি স্বদেশী বিপ্লবীদের ছবি, বড় দুঃখ হয় জানেন, ওণারা যদি জানতেন, সংগ্রাম একদিন সফল হবে বটে, পরিবর্তে ছিনিয়ে নেবে ভিটেমাটি-
একটা বাজতে এখনও দেরী আছে, খোয়াই যাবেন নাকি গো? নাঃ আজ হাটবার নয়। হাট বসবে না জানি, খোয়াই জুড়ে আপাততঃ বিরাজমান অসীম শূণ্যতা। গনগনে রোদে পোড়া লাল মাটির বুকের ওপর দিয়ে এই সময় ছুটে বেড়ার তপ্ত বাতাস। কাকে খোঁজে কে জানে? হয়তো লক্ষ কোটি পদচিহ্নের ভিড়ে তলাশ করে বেড়ায় জনৈক দীর্ঘদেহী দাড়িওয়ালা বৃদ্ধের চরণধূলি।

চলুন,প্রতীক্ষার অবসান। এবার গন্তব্য বিশ্বভারতী। এই দেখেন শদুয়েক বছরের পুরাতন বট গাছ, এই দেখেন দেহলী।  নতুনবাড়ি, আম্রকুঞ্জ, বকুলবীথি, শান্তিনিকেতন কুঠি, সুরুল কুঠি, মহুয়া কুঠি,পূর্ব তোরণ, পশ্চিম তোরণ, ছাতিমতলা, কালো বাড়ি।  শান্তিনিকেতন তো শুধু চর্ম চক্ষে দেখার নয় গো বাবুবিবিরা, এ হল গে অনুভবের বস্তু। কত বছর হয়ে গেল তিনি নেই, অথচ আজও কি ভীষণ ভাবে সর্বত্র বিরাজমান উনি। পারছেন অনুভব করতে? কায়াহীন দাড়িবুড়োর উপস্থিতি- ওণার নেশায়, ওণার উপস্থিতি-অনুপস্থিতির আলোছায়ায় আজও বুঁদ হয়ে আছি গো আমরা। তিনি নেই, অথচ তার সেই আসনটি যেখানে বসে একদা তিনি ক্লাস নিতেন আজো রয়েছে, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। বসেন বসেন ওনার আসনের উল্টোদিকে এট্টু বসেন, বন্ধ করেন চোখ, তারপর কল্পনা করেন, উনি শিক্ষক আপনি হলেন ওণার ছাত্র/ছাত্রী। দিচ্ছে না গায়ে কাঁটা? জাগছে না রোমাঞ্চ?
আপনাদের বোধহয় দেরী হয়ে যাচ্ছে,তাই না? জানি অনেক দূর ফিরতে হবে, তবে  কলের বাঁশি না দেখে কি শান্তিনিকেতন ত্যাগ করা যায়? স্বর্গীয় রামকিঙ্কর বেজ মহাশয়ের অমর সৃষ্টি- এলেনই যখন চলুন “গৌতম বুদ্ধ এবং সুজাতা”, মহাত্মা গান্ধী আর সাঁওতাল পরিবারকেও দেখিয়ে দি চলেন। মহাত্মা গান্ধীর পদতলে করোটির গায়ে কেমন শ্যাওলা জমেছে দেখছেন। দেশের জনকের চরণতলে শ্যাওলা মাখা নরকরোটি-কিসের সঙ্কেত বহনকারী কে জানে? তবে ভয় নাই গো বাবুবিবিরা, রাত্রি যতই প্রগাঢ় হোক না কেন, রবির ছটায় দুদ্দাড় করে পালাবে সব আঁধার। কি বলেন?









No comments:

Post a Comment