আজ নয়। দিন কয়েক আগের কথা। সেদিনও ছিল এমনি বর্ষণ মুখর রাত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে ঝমঝমিয়ে নেমেছে বর্ষা। রাস্তাঘাট শুনশান। পরম আশ্লেষে নিয়ন আলোর গা চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঝরে পড়ছে বর্ষার পানি। আয়নার মত চকচক করছে ভেজা ভিআইপি রোড। সীমানা বরাবর দণ্ডায়মান গাছ গুলো জোলো হাওয়ায় জড়সড়। শাখা প্রশাখা বিস্তার করা, সিক্ত মৃত গাছের ফাঁক দিয়ে খালের ওপাড়ে সল্টলেকের মেঘলা আকাশ। মেঘলা আকাশের রঙটা কেমন যেন উজ্জ্বল শ্যাওলা সবুজ।
ঘড়িতে রাত দশটা। অফিস ফেরৎ চুল কাটতে গিয়েই যত বিপত্তি। এতরাত হবে ভাবিনি।এতরাতেও এত জোর ধারাপাত, তাও ধরিনি হিসেবে। বর্ষার জলে ভিজে চটিটা এত মসৃণ হয়ে পড়েছে, আর পায়ে থাকতেই চাইছে না। কোন মতে চারটে সমান্তরাল রাস্তা পেরোতে পারলেই বাড়ি।
হড়কে বেরিয়ে যেতে চাওয়া চটিকে কোনমতে চেপে, টাল খেতে খেতে দৌড়বার বৃথা চেষ্টায় পেরিয়ে গেলাম সার্ভিস রোডটা। ডিভাইডারে এই মুহূর্তে আমি ছাড়া আর মাত্র দুজন, একজন বিশালদেহী প্রৌঢ়। স্ফিত মধ্যপ্রদেশের ওপর দামী সিল্কের ভেজা ভেজা শার্ট ভেদ করে ভিতরের স্যান্ডো গেঞ্জি দৃশ্যমান। কপালে মেটে সিঁদুরের টপ্পা। পায়ে ছাইছাই রঙা পুমার ট্রেনার। মাথা ভর্তি সাদা চুল, পরিপাটি করে আঁচড়ানো ছিল। আপাততঃ হাওয়ায় এলোমেলো।
অপর জন ক্ষীণতনু। গায়ে আধময়লা সাদা পাঞ্জাবী। গোড়ালীর ওপর ওঠা পায়জামাটি তুলনায় সাফ বেশী। মাথায় ফেজ টুপির এপাশ ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে নুনমরিচ চুল। থুতনি থেকে নেমেছে পাকা দাড়ির তিরতিরে ঝোরা। পায়ে কালো চামড়ার চটি।
দূরে সিগন্যাল লাল। চকচকে ভিআইপি দিয়ে প্রায় ডিভাইডারের গা ঘেঁষে উড়ে যাচ্ছে গাড়ি, আর মোটরবাইকে সওয়ার, ফূর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ, মার্কা বেপরোয়া খোকাদের দল, যদিও সংখ্যা হাতে গোণা।
টপ্পাধারী বৃদ্ধ থাকতে না পেরে নেমেই পড়লেন রাস্তায়। দেখাদেখি টুপিওয়ালাও নেমে পড়লেন তড়বড় করে।
“খুদখুশি করনা হ্যায়?” খিঁচিয়ে উঠলেন টপ্পাধারী। টুপিওয়ালা থতমত খেয়ে বাধ্য ছাত্রের মত উঠে এলেন ডিভাইডারের ওপর। তারপর আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে, হেঁহে করতে করতে বললেন,“আপনে নামলেন কি না, তাই আর কি-। ” “তো? ম্যায় আগমেঁ কুঁদু(লাফাই), তো আপ ভি-?” টুপিধারী বকুনি খাওয়া ছাত্রর মত মাথা নীচু করে বিড়বিড় করে কি বললেন, তারপর গলা তুলে বললেন,“বলি ও দাদা, আপনেও উঠে আসেন না। খামোকা কেন দাঁড়ায় আছেন রাস্তার উপর। আজকালকার ছেলেছোকরারা কেমন বাইক চালায় দেখেন না। আসেন। আসেন উঠে আসেন। ” “সো তো হ্যায়। রাম বাঁচায় ইনসে ভায়ই- ” বলে বাধ্য বাচ্ছার মত উঠে এলেন টপ্পাধারী।
আর তারপর? তারপর সিগন্যাল নিজের নিয়মেই সবুজ হয়ে গেল। টপ্পাধারী বলে উঠলেন,“লো জি। আপ সব আপনে আপনে ঘর চলো। ” মিলিটারি কর্ণেলের মত আঙুল দেখালেন আমাকে আর টুপিওয়ালাকে রাস্তা পেরোনোর জন্য। পেরিয়ে এলাম তিনজনে। রাজকীয় চালে পেরোলেন টপ্পাধারী। পাশাপাশি তড়বড় করতে করতে দৌড়লেন টুপিওয়ালা আর হড়কাতে হড়কাতে সঙ্গী হলাম আমি। রাস্তার এপাশে তিনজন বেঁকে গেলাম তিনদিকে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা মেখে আবাসনের দরজা গলে ঢুকতে ঢুকতে মনে হল, এটাই তো আমার দেশ!
What ever I like...what ever I feel.... form movies to books... to music... to food...everything from my point of view.
Friday, 16 August 2019
অনির ডাইরি ১৬ই অগস্ট, ২০১৯
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment