Saturday 1 December 2018

মধ্যমেধার মধ্যবিত্তের রোজ নামচা -১লা ডিসেম্বর,২০১৮


সুপ্রভাত। শীতের মধুর আমেজে জারিত মহানগর। বাতাসে সদ্য নির্মিত কফির ভুরভুরে সৌরভ। তুষার ধবল পোর্সিলিনের কাপে প্রগাঢ় কৃষ্ণবর্ণ ধুমায়িত কফি,আর পাশে মুড়ে রাখা পাট না ভাঙা খবরের কাগজ। এই তো জীবন কালি দা।
চলুন এগোনো যাক, পুত্রবধূর হাতে প্রহৃত হয়ে পুলিশের শরণাপন্ন জনৈক বৃদ্ধা। বাপস্। ডাইরেক্ট ঠ্যাঙানি? ব্যাপারখানা কি? বউ বলেছে,শাশুড়ী আমার শাড়ি ধরে টানাটানি করছিল,তাই মেরেছি এক ধাক্কা। তাতেও ছাড়ল না গো। তাই সাটিয়ে এক চড়। দুগ্গা দুগ্গা। যত অনাসৃষ্টির খবর গো। পিছনের পাতায় এই ধরণের রগরগে খবরই থাকে। আসল খবরের অভাব হলে,এগুলো দিয়ে ভরে দেয় আর কি। আমিও যেমন পিছন থেকে কাগজ পড়া শুরু করেছি।
চলুন এগোনো যাক। উরিঃ শালা।বোতল প্রতি ৪৮পয়সা তোলা তুলছে যেন কারা। মদ খাও, পকেট ভরো কর্মসূচী। চলুন এগোই।
রাতবিরেতে ফাঁকা হাইওয়েতে বউয়ের মুখে বিষের বোতল চেপে ধরল বর। সে কি? কেন?ওঃ সেই দেনাপাওনার গপ্প।  বাড়ির লোক বিয়ে হওয়া ইস্তক জামাইকে শান্ত রাখতে কতকিছু দিয়েছে তার লম্বা ফিরিস্তিও দিয়েছে দেখি। তালাক দিলে বোধহয় ফেরৎ দেবার প্রশ্ন উঠত। তাই যত্ন করে ডেকে এনে বিষের বোতল ঠুসে দেওয়া। বেচারা লোকটারে, এই মেয়েটা এখনও প্রাণ নিয়ে লড়ে যাচ্ছে। পাশের কলমের মেয়েটার শ্বশুরবাড়ি অবশ্য অত ঝামেলায় যায়নি। দেনাপাওনা মেটেনি,সোজা ধরে ঝুলিয়ে দিয়েছে। মেয়েটার বয়স কত দেখেছেন?মাত্র ১৯। বাঃ। পাশের কলমে দেখছি একটা বছর ১৬র  বিয়ে নাবালিকার ভেঙে দিয়েছে পুলিশ।  বাবা আর হবু বরের কোমরে দড়ি,হাতে হাতকড়া।তাও খাস কলকেতায়।  সত্যি মাইরি এদের অার শিক্ষা হবে না।
চলুন এগোই। উফ্ আবার সেই একই খবর। মেয়েজামাইয়ের অত্যাচারে পুলিশের দ্বারস্থ সম্বলহীনা বৃদ্ধা।কারা নাকি জানতে চেয়েছেন, কত নিয়ে মিটমাট করবেন মাসিমা?শুনেই সংজ্ঞালুপ্ত হয়েছে মাসিমার। চিত্রগ্রাহক বোধহয় প্রতীক্ষায় ছিল, সংজ্ঞাহীন মাসিমার ছবি তোলার জন্য।
বিরক্ত লাগছে মাইরি কাগজ পড়তে। ইনি দেখুন না,হনুমানের জাতবিচারে বসেছেন। তিনি দলিত ছিলেন না ব্রাহ্মণ,তা নিয়ে এই একবিংশ শতকে কি গ্যাসের বা তেলে দাম কমবে?গ্যাসের দাম অবশ্য কমেছে,দেখেছেন?কমবেই তো। বিশ্বের বাজারে তেল জল গ্যাস, সব সস্তা হয়ে গেছে। তবে আপনার বাড়ি পৌছে দিয়ে এখনও সাড়ে আটশো চাইবে হয়তো। তবু চার অঙ্কের থেকে তিনঅঙ্ক একটু প্রাণের আরাম। কি বলেন?
প্রায় শেষ করেই ফেলেছি কাগজ। কলেজ যাব না। ক্লাস করব না। কিন্তু পরীক্ষা দেবার অধিকার দিতে হবে। বাপ এর পরের দাবিটা কি করবি তোরা?পড়াশোনা করব না,বই আর মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা দেবার অনুমতি দিন?পড়বে গুগল আর পাশ করব আমারা?তৈরি হবে জাতির ভিত। হরি হরি।

সকালের প্রশান্ত উৎফুল্ল  মেজাজের সাড়ে বারোটা বেজে গেছে মাইরি। বিশ্রী তেতো হাকুচ মার্কা খবর সব। ইনি কে?পতাকা হাতে কাগজ আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন?পরণে পুরাণো, বিবর্ণ, কিঞ্চিৎ আলুলায়িত শাড়ি। ঋজু মেরুদণ্ড। দুচোখে ধকধক করছে নিজ অধিকার বুঝে নেবার দাবী। মুখের বলিরেখা, পায়ের ধুলো আর গায়ের পোড়া রঙে সসম্ভ্রমে পিছলে যাচ্ছে দিল্লীর সুখী সুখী রোদ। এই তো আমার দেশ। যে দেশ বলছে, মন্দির মসজিদ নিয়ে কি হবে?আমার ডালরুটি কই?

No comments:

Post a Comment