Sunday 18 November 2018

পায়ের তলায় সর্ষে, গন্তব্য চন্দননগর

রাস্তা মরে কেটে দুই লেন। তার অর্ধেক জুড়ে লরি আর আলো, তৈরি হচ্ছে আসন্ন বিজয়ার শোভাযাত্রার জন্য। একলেন দিয়ে দুই দিকের গাড়ি, বাইক, সাইকেল এবং টোটো। ফলশ্রুতি ভয়ঙ্কর যানজট। রাস্তায় একজনও উর্দিধারীর দর্শন পেলাম না। কেন কে জানে? হয়তো কয়েকদিন ধরে পূর্ণরাত্রি কর্তব্যপালন করে ভোর সকালে ক্লান্ত। 
এদিকে গাড়ি নড়েই না। কোন জায়গায় স্থানীয় যুবক,প্রৌঢ় (এমনকি তরুণরাও) ট্রাফিক কন্ট্রোল করছে, তো কোন জায়গায় অমুক সিকিওরিটির জনাদুই নীলসাদা ব্যাণ্ডপার্টির মত ড্রেস পরা নভিস সদ্য যুবক। ফলশ্রুতি এক লহমা আগে যে রাস্তা দিব্যি গলে যাওয়া যেত, এখন সেখানে চিটচিটে জ্যাম। জনগণও তেমন সুবিধার নয়।যত্রতত্র বাইক ঢুকিয়ে দেয়। কিছু বলতে গেলেই চোখ রাঙায়। বাইক আরোহীরা এমনিতেই কারো তোয়াক্কা করে না, এখানে আবার গুচ্ছ গুচ্ছ সুন্দরী বাইকচালকের ভিড়। তবে এত কষ্ট করে যখন এণাদের শ্রীমুখ চোখে পড়ে প্রাণ ভরে যায়।

বড়ই রূপসী ইনি। নীলনয়না সুন্দরী। তবে ইয়ে মাপ করবেন মাননীয় কতৃপক্ষগণ, দেবীর গরিমা মনে হয় কিঞ্চিৎ কম। সোনার গহনা তেমন নেই। মুকুটের পাশে একটি সোনার ফুল টিমটিম করছে। রূপা অবশ্য প্রচুর। চাঁদমালা,মুকুট, কণ্ঠহার, কানপাশা,কেশদামের মাঝে লুকানো নাগরাজা। সিংহীর মুকুট। জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের সাজসজ্জা মোটামুটি একই। থিমের ঠাকুরের প্রাদুর্ভাব ঘটলেও উৎকট বিৎকট দেবীমূর্তি এখনও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোকে কলুষিত করতে পারেনি। দেবী এখনও সনাতনী। দৈর্ঘ্যে অতিকায়। রীতিমত সম্ভ্রম আদায়কারী। পরণে ডাকের সাজ। গোল মুখ। আকর্ণ আঁখি। বেশ ভারী,নাদুসনুদুস চেহারা। “ঢাই কিলোকা হাত” না হলেও যথেষ্ট ভারী নধর হাত। সোনা রূপার মুকুটকে ছাপিয়ে শোলার মুকুট চুম্বন করে চাঁদোয়াকে। সেই শোলার মুকুটে চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। যেমন মনসাতলা, ভদ্রেশ্বরের এই দেবীর মুকুটে শোভা পাচ্ছেন মহেশ স্বয়ং। চলে আসার সময় সিংহের কানের পাশে একটা সোনার ঝাপটা বেশ কৌতুক উদ্রেক করল। সিংহীমশাইকে গয়না কেন বাপু,তিনি দেবীর ড্রাইভার বলে?



কলকাতার মত চওড়া রাস্তা বা বিশাল প্রাঙ্গণ কিছুই তেমন নেই চন্দননগর,ভদ্রেশ্বর বা মানকুণ্ডুর। ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে সামান্য পরিসরে গড়ে ওঠে চোখ ধাঁধানো মণ্ডপ। যার প্রকৃত শোভা খোলে রাতের বেলা। ওয়েলকাম টু বাগবাজার,চন্দননগর। তেমাথার মুখে বিশালাকায় দেবী দণ্ডায়মান। গোটা মণ্ডপ জুড়ে অজস্র ছাতা, আজ্ঞে হ্যাঁ ছাতার কারুকাজ। ইনি যথেষ্ট জাগ্রত দেবী। গহনার আধিক্য দেখুন না। মাথায় রূপার ফিলিগ্রী করা অতিকায় মুকুট। কপালে ঝাপটা। সোনার ত্রিনয়ন। নথ। গলায় সোনার চিক এবং সীতাহার।এছাড়াও বেশ কয়েকটি সোনার হার। কানে রূপার কানফুল। হাতে রূপার বাজুবন্ধ। সোনার চুড়ি। রূপার দু দুটি চাঁদমালা। এমনকি সিংহীর মাথায়ও রূপার মুকুট।তবে ঠাকুর দেখবেন খুব সাবধানে, ডাইনে বাঁয়ে টোটো আর বাইকের অবাধ গতি যে কোন সময় আপনাকে দেবীর দরজায় পৌঁছে দিতে পারে। অবশ্য যদি যথেষ্ট পূণ্যকর্ম করে থাকেন। নাহলে কপালে হাসপাতাল দর্শন অবধারিত।



মণ্ডপসজ্জা চন্দননগর। ইনি কে জানি না ভাই। গোটা মণ্ডপ জুড়ে ভয়াল ভয়ংকর আদিম দেবদ্বিজের মূর্তি। ইনি তাঁদের অন্যতম। গোটা শরীর জুড়ে শুধু মুখ। চিনতে পারলে জানাবেন তো।



No comments:

Post a Comment