Tuesday 5 November 2019

মধ্যরাতে মনখারাপে- I & II


মধ্যরাতে মনখারাপে-
নমস্কার কলকাতা। কেমন আছেন সবাই?
ঘড়ির কাঁটা বলছে এখন মধ্যরাত্রি , আর আমি রুদ্রাণী নিয়ে এসেছি আপনাদের প্রিয় অনুষ্ঠান ,‘মধ্যরাতে মনখারাপে-’।
তিনদিন ধরে আকাশভাঙা বৃষ্টি,  জল থইথই মহানগর।
জনহীন পথঘাট, এমন রাতে নরম বিছানা ছেড়ে আসতে কার ইচ্ছা করে?
কিন্তু আর জে মনখ্যাপার যে মন খেপেছে, তাই বুঝি সে নিরুদ্দেশ-
আর আমি? আমি নিরুপায়- আমি নিবেদিত প্রাণ আমার শ্রোতাবন্ধুদের প্রতি।
তাই তো এসে হাজির হয়েছি,  এবার আপনিও আসুন না-
খুব জমবে, আপনি, আমি আর?
এমন জনহীন বর্ষণমুখর মধ্যরাতে গা ছমছমে ভূতের গল্প।
আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, ভূত।  জানা আছে কি এমন গল্প?  তাহলে এখুনি ফোন করুন  উদ্দাম এফ এম এ।
আমি বসে আছি আপনার পথ চেয়ে না জানি কোন শতাব্দীর ওপার থেকে।
দেখি, লাইনে কে আছে? হ্যালোঃ
- মিতু।
-ক-কে? ভুল হয়ে গেল দাদা আমি মিতু নই। আমি রু-
-জানি। তুমি আর জে রুদ্রাণী, কিন্তু সে তো তোমার ছদ্মনাম মিতালি ।
- মি-তা- লি?
-হ্যাঁ মিতালী। লাখটাকার লাখটোকিয়া   স্কুলের ফার্স্ট গার্ল মিতালি ধাড়া দেখ তো আমায় চিনতে পার কি না?
- কে তুমি?
-সে কি? আমি না তোমার প্রথম প্রেম?
- কি যাতা বলছেন? আমি ফোন রাখছি।
- দেখ রাখতে পার কি না। আজ আবার ১৬ই অগস্ট। আজ আবার শনিবার।
- উফ লাইনটা কাটছে না কেন?কন্ট্রোল রুমে সবাই ঘুমোচ্ছে না কি?
- ভয় করছে মিতালী? তবে যে বললে এমন জনশূন্য বর্ষণময় মধ্যরাতে শুধু তুমি আমি আর গা ছমছমে ভূতের গল্প?
- দেখুন, ভাল লাগছে না আর-।
- ভাল তখন তো লাগত? তুমি আমি আর ভিজে কৃষ্ণচুড়া। আমার লাগত জান।
মনে হত এভাবেই হেঁটে যাই তোমার পাশাপাশি।
অবিশ্বাসী বস্তুবাদী মন আমার ক্ষণিকের জন্য  বিশ্বাস করে নিত তোমার মধুমাখা কথা গুলো।
জানতাম।  বিশ্বাস কর, জানতাম লাখটোকিয়া স্কুলের মিতালিরা কখনই গুরুচরণ শিক্ষালয়ের রুপমদের প্রেমে পড়ে না। তবুও-
আজ বলবে? কেন খেলেছিলে সেদিন?
-ফোন রাখুন।  প্লিজ কেউ কি নেই আজ এই স্টেশনে। সবাই মরে গেল নাকি?
- একি মিতু তুমি কাঁদছ? আমার মাও কেঁদেছিল জানো? খুব কেঁদেছিল।  তোমায় তো সবই বলেছিলাম, আমাদের ভাড়াবাড়ি। বাবার মুদির দোকান-
তিন দিনের জ্বরে যখন চলে গেল বাবা আমি তখন ষোলো । মা চাইতো আমি দোকান চালাই।
আমার শখ কমপক্ষে স্নাতক হব - তোমার সাথে প্রথম দেখা বছর খানেক পর।
-রুপমঃ।  তুমি তো-
- চিনলে মিতু? অবশেষে।
- তু তুমি তো?
- মরে গেছি? ধাক্কা  দিয়েছিলে তুমি। মনে আছে?
-বিশ্বাস কর।  ইচ্ছে করে নয়- আমি-
-কি?  বোঝোনি বুঝি? পড়লে আমি বাঁচব না?
- রাগের বশে।  রুপম বয়সটাও কম ছিল- প্লিজ বোঝ।
- দুর্ঘটনা? এটাই বলেছিল মাকে।  তোমার কাকা মস্ত পুলিশ। তোমার বাবার অনেক টাকা।
-রুপম- আমি-সরি।
-সরি? বড্ড ছোট শব্দ সোনা- খোঁজ নাওনি তো, এত বছরেও।
- ওরা বলেছিল তুমি- তুমি-
-মরে গেছি? আর তুমিও বিনা  বাক্যব্যয়ে চলে গেলে ব্যাঙ্গালোর? পড়া, চাকরি, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফিরে এলে কলকাতা। এখন তুমি আর জে রুদ্রাণী। রোজ সকালে, “মন -খেয়া”তে সুরে ভাসাও কলকাতা।
-এত খবর? তবে কি?
-নাঃ। বেঁচে নেই। হারিয়ে গেছি চিরতরে ষোল বছর আগেই।
- কে তুমি? কি চাও?
- মনে আছে মিতু, তুমি বলেছিলে হবে আমার ছায়াসঙ্গী।  আজ আমি নিজেই ছায়া- সঙ্গীর বড় অভাব- তাই তো তোমায় ডাকতে এলাম।
-নাঃ।  নাঃ।  নাঃ।
- এস মিতু।  তিনটৈ বাজে, আর দেরি নয়-
- না না না না না♥♣♠♦
#aninditasblog
https://amianindita.blogspot.in

মধ্যরাতে মনখারাপে-২
-রীমা! রীমা!
জড়ানো ফ্যাসফ্যাসে গলায় কে যেন ডেকেই চলেছে। একঘেয়ে অস্বস্তিকর সেই ডাক। তীব্র বিরক্তি নিয়ে ঘুম ভেঙে গেল রীমার। ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। পল্লবের এই এক স্বভাব,ঘর অন্ধকার না করে ঘুমাবে না। কাল শ্যামা পুজো,আসেপাশের বাড়ির ছাত রঙীন আলোর মালায় সুসজ্জিত,বন্ধ কাঁচের জানলার বাধা টপকে চুঁইয়ে ঢুকছে সেই আলো। আবছা রঙীন আলোআঁধারিতে পাশে শুয়ে থাকা পল্লবকে এক ধাক্কা মারল রীমা। “কি হয়েছে, ডাকছ কেন?” রীমার আব্দেরে প্রশ্নের জবাব পল্লব দিল ফুরফুরে নাসিকাগর্জনের মাধ্যমে। ধ্যাৎ। বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ার তাল কসল রীমা। বোধহয় ঘুমিয়েও পড়েছিল,আবার সেই জড়ানো ফ্যাসফ্যাসে সুর,“রীমা!রীমা!” না এবার ভুল শোনেনি রীমা। ধড়মড় করে উঠে বসল,ঠিক চেনা নাহলেও কোথায় যেন শুনেছে এই ডাক। দোতলার বারন্দার বন্ধ দরজার ওপাড়ে কে যে দাঁড়িয়ে, পিছনের রঙীন আলোতে তার অবয়বটুকু শুধু দৃশ্যমান। কে? কে? চিৎকার করে উঠল রীমা। গায়ের জোরে ঠেলে দিল পল্লবের ঘুমন্ত শরীরটাকে,উফ্ কি ঘুম রে বাবা।
পল্লবের নাসিকাগর্জন তীব্র হল মাত্র। বারন্দার বন্ধ দরজার ওপাড়ে আগন্তুক চেনাঅচেনা একঘেঁয়ে গলায় ডেকেই চলেছে,“রীমা। রীমা”।  কি করবে বুঝতে পারল না রীমা, শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিমেল স্রোত, “পল্লব ওঠো না” বলে চিৎকার করে উঠল রীমা। শেষের দিকে আতঙ্কে গলা দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বের হল না।
বারন্দার চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকল সে। “রীমা? ভয় পাচ্ছ নাকি?” একই রকম জড়িয়ে যাওয়া ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ। “কে?কে?” কোনমতে বলতে পারল রীমা। হাত বাড়িয়ে খট করে বেড সাইড সুদৃশ্য চুবড়ি ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে আঁতকে উঠল রীমা, “প-ল্ল-ব!” চিৎকার করে ছুটে গেল পল্লবের দিকে, একি অবস্থা পল্লবের, দুই চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে,একহাত জিভ বেরিয়ে ঝুলছে,গলায় নারকেল দড়ির লাল দাগ চেপে বসে আছে। কোনমতে জিভটাকে মুখের মধ্যে চালান করে, পল্লব একঘেঁয়ে সুরে ডেকেই চলেছে,“রীমা। রীমা।”
পল্লবকে আঁকড়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল রীমা,“এ আমার কি সর্বনাশ হলো গো। পল্লব এ তুমি কি করলে-। কেন করলে?” “কি হয়েছে রীমা?” খাট থেকে ভেসে এল বহুকাল আগে শোনা চেনার গলার সুর, চমকে পিছন ফিরে হৃদপিণ্ড থমকে গেল রীমা। খাটে উঠে বসেছে অচিন্ত্য ।  কি হল ব্যাপারটা? কোন দুঃস্বপ্ন দেখছে কি রীমা? অচিন্ত্য  কি করে আসতে পারে? 
অচিন্ত্যর কপালে ঘুম ভাঙা বিরক্তির ভাঁজ,“ব্যাপার কি রীমা?” রীমা শুধু কোনমতে বলল,“অচিন্ত্য তুমিই তো-। ” অচিন্ত্য আড়ামোড়া ভেঙে বলল,“পল্লব গলায় দড়ি দিয়েছে। তাতে তুমি কাঁদছ কেন?” “না। না। না। ” হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে পল্লবের জিভ বার করা শরীরটাকে আঁকড়ে ধরল রীমা। পল্লব তখনও একই রকম ফ্যাসফ্যাসে জড়ানো গলায় ডেকে চলেছে,“রীমা। রীমা। ” “পল্লব তুমি এটা পারলে?আমার কথা-পুপুর কথা একটি বার ভাবলে না?” “খামোকা পরের বউ বাচ্ছার কথা পল্লব ভাববে কেন?” খাট থেকে আড়ামোড়া ভেঙে ফুট কাটল অচিন্ত্য। রীমা চিৎকার করে উঠল,“শাট আপ। পরের নয়। পুপু ওর মেয়ে। ” হো হো করে হেসে উঠল অচিন্ত্য,“একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না রীমা?পুপু যে আমার মেয়ে তা তুমিও জানো। অথবা জানো না। একসঙ্গে দুজনের সাথেই-”। “চুপ। চুপ করো। নোংরা লোক কোথাকার। ” অন্যমনস্ক ভাবে বঙ্কিম হাসির রেখা খেলে গেল অচিন্ত্যর ঠোঁটে। “তোমার এই কথাগুলোর আর কোন প্রভাব পড়ে না আমার ওপর। এককালে খুব কষ্ট পেয়েছি। ভালো করে পুপুর মুখটা দেখো, তাহলেই বুঝবে,ও কার মেয়ে। পল্লব তো ঝুলে পড়েছে। ডিএনএ টেস্ট তো আর করাতে পারবে না। ও ঘরে ঘুমাচ্ছে না?যাই আমিই দেখে আসি। ” অচিন্ত্য খাট থেকে নামার আগেই উন্মাদিনীর মত ছুটে গিয়ে দরজা আটকে দাঁড়াল রীমা। “না। আমার মেয়ের কোন ক্ষতি করতে দেবো না তোমায়। ” “তোমার মেয়ে? আমারও মেয়ে রীমা। আমার বিয়ে করা বউয়ের গর্ভজাত সন্তান। ঐ গাড়ল পল্লব বিশ্বাস করতে পারে, ও আমার মেয়ে নয়। আমি করব না।” “সেদিন তো করেছিলে” গলায় একরাশ বিষ ঢেলে বলল রীমা। “একটু আধটু ভুল সবাই করে। আর তুমি,পল্লব, তোমার মা সবাই মিলে যা শুরু করেছিলে।” “অচিন্ত্য  প্লিজ,নিষ্কৃতি দাও আমায়” হাউমাউ  করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ল রীমা। অচিন্ত্যর পায়ের সামনের মাটিতে ঠকঠক করে মাথা ঠুকছে রীমা। “নিষ্কৃতি মানে?আমায় সরে যেতে হবে এই তো? আমার বিয়ে করা বউ, তার বিবাহপূর্ব  মাস্টারের প্রেমে হাবুডুবু খাবে, আর আমি হব পথের কাঁটা। বাঃ। কি যে যাতনা সয়েছি রীমা প্রতিটা মুহূর্তে,যে পুরুষ তার বউকে সামলে রাখতে পারে না, তার পৌরুষত্ব এ সমাজ মানতেই চায় না। একজন পরিণত বয়স্কা নারী, সব বুঝেশুনেও যদি বৈবাহিক সম্পর্কের জাল ছিন্ন করে অন্য কারো প্রেয়সী হতে চায়, তাতে বেচারা বরের কি দোষ বলো তো?আমি তো আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে তোমার কোন অভাব রাখিনি?অপার স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। পল্লবের সাথে মেলামেশা নিয়েও কোনদিন কিছু বলিনি। মা কত রাগ করত,হোক বন্ধু,তাই বলে একটা ধুমসো লোক রোজ পরের বউয়ের সাথে গপ্প করতে আসবে?তাও যখন তার বর দোকানে থাকে,তখন?দুজনের রোজ দরজা বন্ধ করে কিসের এত খোশগল্প? মাকে কত কটু কথাই না শুনিয়েছিলাম। ছোট মন। অশিক্ষিত নজর বলে। যেদিন তুমি,তোমার মা আর পল্লব এসে চেপে ধরলে, লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলাম। মাকে মুখ দেখাব কি করে?ক্লাবে গিয়ে বসব কি করে?দোকান খুলব কোন মুখে?লোকে আমায় দেখলে কি বলবে?বউ পালানো অচিন্ত্য?লজ্জায়,শোকে আধমরা ছিলাম,তারপর বললে, পুপুটাও আমার নয়। বললে আমি নপুংসক। বললে আমার মরে যাওয়াই উচিত। বললে অন্য পুরুষ হলে গলায় দড়ি দিত। কি দিয়ে গলায় দড়ি দিয়েছিলাম, তোমার মনে আছে রীমা?” রীমার মনে আছে। সব মনে আছে। থানায় পুলিশের জেরা,পাড়া প্রতিবেশীর ছিছিক্কার। শাশুড়ীর শাপশাপান্ত, বুক চাপড়ে চাপড়ে কান্না, আর অচিন্ত্যর ঠেলে বেরিয়ে আসা চোখ,একহাত গোলাপী- লাল জিভ আর গলায় জড়িয়ে থাকা রীমার হলদে বাঁধনী দোপাট্টা। এতটাও ভাবতে পারেনি। পুপুকে নিয়ে বেরিয়ে আসবে এটাই ঠিক ছিল। মাঝখান থেকে মা বলল,“ আমাদের দেওয়া গয়না,শাড়ি সব ফেরৎ নিয়ে যাব। ” এই নিয়েই চাপানউতোর, অচিন্ত্যকে যা নয় তাই বলেছিল,শুধু নিষ্কৃতি পাবার জন্য। অচিন্ত্য চ্যালেঞ্জ করলে ডিভোর্স পাওয়া সমস্যাপূর্ণ হত। তাই ভয় দেখানো আর কি। শতকরা ৮০শতাংশ মেয়েই তো ডিভোর্স চায় বর নপুংসক এই অভিযোগ করে। রীমার বরটা যে এত দুর্বল কি করে জানবে?
মাটিতে মাথা ঠুকে ঠুকে কেঁদেই চলেছে রীমা, ওর সুখের সংসারে কার নজর লাগল। অচিন্ত্য লিখেই গিয়েছিল,ওর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ফলে দিন দুয়েক হাজতে থাকতে হলেও আদালতে বিশেষ সমস্যা হয়নি। বরং ঐ সময়্টা হাজতে ছিল বলেই প্রাণে বেঁচেছে। নাহলে অচিন্ত্যর পাড়ার লোকেরা হয়তো ওকে আর ওর মাকে পিটিয়েই মারত। মাস ছয়েকের মাথায় পল্লবের ঘরনী হওয়া,তারপর বিগত বছর তিন শুধু সুখ আর সুখ। আজ হঠাৎ কি যে হয়েগেল।
“কেঁদো না রীমা। তোমার চোখের জল আমি কোনদিনই সইতে পারতাম না। বাবা মারা যাবার পর মায়ের আদরে মানুষ তো,তাই বরাবরই খুব নরম মন আমার। টাকাপয়সা-সুখবিলাসিতা হয়তো পল্লবের মত আমার ছিলনা,দেখতে শুনতেও ভেতো বাঙালী ছিলাম,তবে তোমায় ভালোবাসায় কোনদিন কার্পণ্য করিনি। তিনবছর কেটে গেছে,আজও তোমায় একই রকম ভালোবাসি। আজ ভূত চতুর্দশী কি না, আর অপঘাতে মৃত্যু বলে আমি তো- হে হে। তো বলছিলাম কি না যে আজকে আমাদের ক্ষমতা একটু বেশী হয়। তাই তোমার স্বপ্নে প্রবেশ করে একটু ইয়ে মস্করা করলাম। ঘুমিয়ে পড় রীমা। ঘুম ভাঙলে দেখবে,তোমার সুখের ঘর অবিকৃত আছে। ঘুমিয়ে পড় রীমা। শুধু মনে রেখো,আমি রইলাম,তোমারই আসেপাশে,তোমারই প্রতীক্ষায়। সাতপাকে বিয়ে করা বউকে কি অমন ছাড়া যায় নাকি?হে -হে-হে। ”
©Anindita Bhattacharya

Saturday 2 November 2019

গন্তব্য- চন্দননগর ও মানকুণ্ডু

গন্তব্য -চন্দননগর
সে অনেককাল আগের কথা,বাংলার নবাব তখন মহামহিম জনাব আলিবর্দী খাঁ। কৃষ্ণনগরের রাজার বাকি পড়েছে অনেক টাকার খাজনা। নবাব  তত্ত্বতালাশ করতে পাঠালেন তার দেওয়ান বাবু রাজারামকে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অকপটে স্বীকার করলেন তাঁর অপারগতা তথা আর্থিক দুরাবস্থা। বড় ভালো লেগে গেল দুজনের একে অপরকে। জমে উঠল সখ্যতা। সযতনে রাজাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার চাবিকাঠিটি তাঁর হাতে তুলে দিলেন বাবু রাজারাম। চাবিকাঠির নাম বাবু ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। সম্পর্কে রাজারামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা। পেশায় ফরাসীদের দেওয়ান। চন্দনননগর তখন ফরাসী উপনিবেশ। ইংরেজদের সাথে ঠুঁইঠাঁই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই সংঘর্ষে ফরাসীদের হাত শক্ত করতেন এই বাবু ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তাঁর অগাধ টাকা। কৃষ্ণচন্দ্রের সাথে প্রগাঢ় সখ্যতা জমে উঠল ইন্দ্রনারায়ণের। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজায় সখাকে সাদর আমন্ত্রণ  জানালেন রাজামশাই। বড় ভালো লাগল ইন্দ্রনারায়ণের এই চতুর্ভুজা সিংহবাহিনী বিশালাক্ষী দেবীকে। ফিরে এসে পরের বছর থেকে চালেরগুদামে শুরু করলেন দেবীর পুজা। সে অনেক বছর আগের কথা। নিন্দুকে বলে সাড়ে তিনশো বছর। বা আরো পুরাতনও হতে পারে। চাউলপট্টীর বড়মা চন্দননগরের প্রাচীনতমা। বড় জাগ্রত এই দেবী। দেবীর গায়ে অগুনতি সোনারূপার গয়না। গলায় অন্তত গোটা সাতেক বিভিন্ন আঙ্গিকের সীতাহার হার। আছে চন্দ্রহারও। মাথায় বিশাল শিখিপুচ্ছ দ্বারা অলংকৃত অতিকায় রূপার শিরোভূষণ। যার কেন্দ্রস্থলে দেবী পরেন একটি সোনার কিরীট। দুই কানে বিশাল রূপার কানের মাঝ বরাবর শোভা পায় অনুপম ডিজাইনের সোনার ঝুমকো। দেবীর চারহাতে অসংখ্য রূপার চুড়ি, বালা।  নজর কাড়ে হাতের বিশাল হীরক(?)খচিত আঙটিটি।বহুদূর থেকেও যার চমক লুকানো যায় না। দেবীর মাথার সাপ, হাতের কমল, চাঁদমালা, এমনকি চরণে গোঁজা ফুলটিও রূপার।এমনকি সিংহের মাথায়ও একাধিক মুকুট। সিংহের গলায় ঝোলে খামি খামি রূপার টাকার মালা।নিন্দুকে বলে দেবীর গহনার বর্তমান মূল্য কয়েক কোটিরও বেশী।  প্রস্তুত হচ্ছেন দেবী। অচীরেই ঝলমলিয়ে উঠবেন আভরণে-
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ ষষ্ঠী

গন্তব্য -চন্দননগর
বোড় কালিতলা, চন্দননগর। বয়স-মাত্র ৫০।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ ষষ্ঠী

চন্দননগরের বোড় মা। বয়স বেশী না, ৫২ বছর মাত্র।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী

বোড় তালডাঙা, চন্দননগর
সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী

কাছারি ঘাট। চন্দননগর।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী

অম্বিকা অ্যাথলেটিক ক্লাব। তেলেনিপাড়া। মানকুণ্ডু। এণাকে কিন্তু মিস করবেন না। যেমন সুন্দর এবং অভিনব মণ্ডপসজ্জা, তেমনি অপরূপা প্রতিমা।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী

তেমাথা শিবমন্দির।  মানকুণ্ডু। শুধু বিশালাক্ষি নন,ইনি বিশালাকৃতিক্সও বটে।
উৎসবের নাম জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী

নিয়োগী বাগান।  মানকুণ্ডু।  চলছে শেষ পর্যায়ে দেবীর অঙ্গরাগ।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী


বাগবাজার। চন্দননগর। আমার প্রিয়তম পুজো। যাই বলুন কলকাতার মত চওড়া রাস্তা বা বিশাল প্রাঙ্গণ কিছুই তেমন নেই চন্দননগর,ভদ্রেশ্বর বা মানকুণ্ডুর। ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে সামান্য পরিসরে গড়ে ওঠে চোখ ধাঁধানো মণ্ডপ। রাজপথ ধুয়ে মুছে আল্পনা দেয় পাড়ার বউ-ঝিরা। হয় আল্পনা প্রতিযোগিতাও। তেমাথার মুখে বিশালাকায় দেবী দণ্ডায়মান। দেবী যথেষ্টই জাগ্রতা। গহনার আধিক্য দেখুন না। মাথায় রূপার ফিলিগ্রী করা অতিকায় মুকুট। কপালে ঝাপটা। সোনার ত্রিনয়ন। নথ। গলায় সোনার চিক এবং সীতাহার।এছাড়াও বেশ কয়েকটি সোনার হার। কানে রূপার কানফুল। হাতে রূপার বাজুবন্ধ। সোনার চুড়ি। রূপার দু দুটি চাঁদমালা। এমনকি সিংহীর মাথায়ও রূপার মুকুট।তবে ঠাকুর দেখবেন খুব সাবধানে, ডাইনে বাঁয়ে টোটো আর বাইকের অবাধ গতি যে কোন সময় আপনাকে দেবীর দরজায় পৌঁছে দিতে পারে। অবশ্য যদি যথেষ্ট  পূণ্যকর্ম করে থাকেন। নাহলে কপালে হাসপাতাল দর্শন অবধারিত। ইয়ে বলতে ভুলে গেছি,দেবীর বয়স বেশী না। মাত্র ১৮৫বৎসর।
#উৎসবের_নাম_জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী

হেলাপুকুর। চন্দননগর। মণ্ডপসজ্জা পুরোপুরি আমাদের ত্রিধারার ফটোকপি। তবে জনশ্রুতি যে দেবী এবং তাঁর বাহনের যাবতীয় অলংকার নিখাদ সোনার। সৌজন্য সেনকো।
উৎসবের নাম জগদ্ধাত্রী
শুভ পঞ্চমী

Wednesday 30 October 2019

অনির ডাইরি ৩০অক্টোবর, ২০১৯


“আর একদম আসবি না।তুই এলেই খালি অশান্তি বাঁধাস। ” চিৎকার করে বলছিল মা। ওরকমই বলে, প্রতিবারই বলে। “মা বলে ডাকবি না। আর আসবি না” ইত্যাদি প্রভৃতি। আমি গেলেই অশান্তি হয় যে।কেন হবে না? আমার মেয়ে, তাকে আমি সুশিক্ষা দিতে পারব না? তার দোষত্রুটি ধরতে পারব না? এখানে তো তুত্তুরীকে চোখ পাকালেও অশান্তি। নির্দিষ্ট ডেসিবলের ওপর গলা তুললে কান্নাকাটি, আর হাত চালালে-? অশান্তির আর একটা কারণ হল, আমার মুখ। জাতে লেবার। তায় হাওড়ার মেয়ে। সুচারু সুললিত নয় বরং অনার্য ভাষাটাই আমার ভাষা। সচেতন থাকার চেষ্টা তো করি, মুখ ফস্কে গেলে সরিও বলি- ভবি ভুললে তো?
যার জন্য অশান্তি, দশ মিনিটের মধ্যে তিনি তো চোখ মুছে চলে আসেন মায়ের হাড় জ্বালাতে।ছলছল চোখে ক্ষমা করে দেয় আমার বাপও। মেয়ের থেকে নাতনী কখনই বড় হতে পারে না। মিনিট পনেরোর মধ্যেই পশ্চিম সীমান্ত বরাবর নেমে আসে অখণ্ড শান্তি। একাকী গজরে যায় কেবল মা, মাঝে মাঝে আসে বৃষ্টিও, “আমার সন্তুকে মারা? পাঁচদিন বয়স থেকে বুকে করে মানুষ করেছি, রাতের পর রাত জেগে কোলে নিয়ে বসে থেকেছি, জ্বরজ্বালা হলে আতঙ্কে পাগল হয়ে গেছি- এখনও সবসময় ভয়ে থাকি, সেসব কিছু না? এর থেকে আমাকেই দুঘা মারলে তো পারিস-”।  না শোনার আপ্রাণ চেষ্টা করি, কারণ এসব শুনলে কার না রাগ হয়?  কি যা তা বলছে মা? তিলকে বানাচ্ছে তাল-।

ঝগড়াঝাটিতে কখন যে কেটে যায় সময়, সন্নিকটে এসে পড়ে বিদায়বেলা। ভারি ব্যাগ কাঁধেপিঠে শতাব্দী প্রাচীন খণ্ডহরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়, এগিয়ে যাই আমি আর আমার মেয়ে, পিছন পিছন সবথেকে হাল্কা ব্যাগটা নিয়ে আসতে আসতে ইশারায় বাবা দেখায়, ফর হুম দা বেল টোলস্, কার জন্য যে বাজছে ঘন্টা? আবছা হয়ে আসা দৃষ্টির ওপাড়ে ধুসর বর্ণ মা আর পিসি, বাতের ব্যথার জন্য এগিয়ে দিতে না পারার দুঃখ নিয়ে মোছে চোখ, মনের মধ্যে ধ্বনিত হয় একটাই প্রার্থনা, আমাদের বিদায় নেবার সাথে সাথেই না ঝাঁপিয়ে নামে শীতল নিস্তব্ধতা, বিগত কয়েকদিন ধরে জমিয়ে তোলা অশান্তির কবোষ্ণ মেঘ আরও কিছুক্ষণ ঘিরে থাকুক বাড়িটাকে। আরও কিছুক্ষণ মুখর থাকুক বাড়িটা- 

Thursday 17 October 2019

হিন্দুস্তানের হৃদয় হতে- পর্ব- 4


আদি ওঁঙ্কারেশ্বর সিদ্ধনাথের দেউল। নির্মাণকাল সম্ভবতঃ দ্বাদশ শতক। নির্মাতা রাজবংশ- পরমার। বিগতঃ আটশ বছর ধরে অগুনতি উত্থান-পতনের সাক্ষী এই দেউল। বারংবার আক্রান্ত তথা পরিত্যক্ত এই দেউল তবু কালের চক্রান্তকে তুচ্ছ করে আজও দণ্ডায়মান তথা স্বমহিমায় ভাস্বর। বড় দুর্গম। তাই খুব বেশী তীর্থাভিলাষী আসে না। একাই বসে থাকেন বৃদ্ধ

। সঙ্গী ততোধিক বৃদ্ধ এক নির্লোভ পুরোহিত। প্রভাতী সূর্যের আলোকে মন্দির গাত্রের অনুপম ভাস্কর্য

Tuesday 15 October 2019

হিন্দুস্তানের হৃদয় হতে- পর্ব- 3




আদি ওঁঙ্কারেশ্বর সিদ্ধনাথের দেউল। নির্মাণকাল সম্ভবতঃ দ্বাদশ শতক। নির্মাতা রাজবংশ- পরমার। বিগতঃ আটশ বছর ধরে অগুনতি উত্থান-পতনের সাক্ষী এই দেউল। বারংবার আক্রান্ত তথা পরিত্যক্ত এই দেউল তবু কালের চক্রান্তকে তুচ্ছ করে আজও দণ্ডায়মান তথা স্বমহিমায় ভাস্বর। বড় দুর্গম। তাই খুব বেশী তীর্থাভিলাষী আসে না। একাই বসে থাকেন বৃদ্ধ জ্যোতির্লিঙ্গ। সঙ্গী ততোধিক বৃদ্ধ এক নির্লোভ পুরোহিত। প্রভাতী সূর্যের আলোকে মন্দির গাত্রের অনুপম ভাস্কর্য

Monday 14 October 2019

হিন্দুস্তানের হৃদয় হতে- পর্ব- ২


আদি ওঁঙ্কারেশ্বর সিদ্ধনাথের দেউল। নির্মাণকাল সম্ভবতঃ দ্বাদশ শতক। নির্মাতা রাজবংশ- পরমার। বিগতঃ আটশ বছর ধরে অগুনতি উত্থান-পতনের সাক্ষী এই দেউল। বারংবার আক্রান্ত তথা পরিত্যক্ত এই দেউল তবু কালের চক্রান্তকে তুচ্ছ করে আজও দণ্ডায়মান তথা স্বমহিমায় ভাস্বর। বড় দুর্গম। তাই খুব বেশী তীর্থাভিলাষী আসে না। একাই বসে থাকেন বৃদ্ধ জ্যোতির্লিঙ্গ। সঙ্গী ততোধিক বৃদ্ধ এক নির্লোভ পুরোহিত। প্রভাত কালে পরিমার্জন করছিলেন শিবলিঙ্গকে, আমাকে আর তুত্তুরীকে দেখে স্বয়ং এগিয়ে দিলেন ছোট্ট তামার পাত্র ভরা জল আর কিছু কুচি ফুল।কোন মন্ত্রোচ্চারণ নেই, কোন কথা নেই,  ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নিজ কাজে।  দক্ষিণা দিতে গেল তুত্তুরী, ইশারায় দেখালেন বাবার কাছে রেখে দিতে। বাইরে তখন সদ্যোদয় হয়েছে প্রভাত তপন-

হিন্দুস্তানের হৃদয় হতে- (পর্ব-১)



ঐ যে ফিরিঙ্গী ভাষায় বলে না, “মান্ডু ইজ নট জাস্ট আ ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন। মান্ডু ইজ অ্যান এক্সপিরিয়েন্স। ” এটা যে কত বড় সত্যি মান্ডু না এলে বোঝা যাবে না। অবশ্য যদি আপনার ইতিহাসের সাথে পুরানো প্রেম থাকে তবেই-। আমাদের জনৈক বুড়ো  গাইড যেমন বলছিল, “আপ চাহেঁ তো এক দিন মে ভি মান্ডু দেখ সাকতে হ্যায়, অর চাহেঁ তো এক মাহিনা ভি কম পড়েগা সাব”।  এখানে ইতিহাস ফিসফিস করে কথা কয়। গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে ৩৬০০ সৌধ, মিনার আর মকবরা। দিনে যদি মেরে কেটে দশটাও দেখেন- এক সাল ভি কম পড়েগা  সাব।
ভিডিওটি কারবাঁ সরাইয়ের। কোন এককালে বড় বড় মানুষজন এসে থাকতেন, বিশাল আঙিনা জুড়ে সারি সারি কামরা। এখন শুধু ঘুরে বেড়ায় মান্ডুর তপ্ত বাতাস। কে জানে? হয়তো রাত নামলে এখনও তাঁরা আসেন, লাফিয়ে নামেন ঘোড়া থেকে, তারপর শুরু হয় কোন নতুন কাহানি।