Wednesday, 30 October 2019

অনির ডাইরি ৩০অক্টোবর, ২০১৯


“আর একদম আসবি না।তুই এলেই খালি অশান্তি বাঁধাস। ” চিৎকার করে বলছিল মা। ওরকমই বলে, প্রতিবারই বলে। “মা বলে ডাকবি না। আর আসবি না” ইত্যাদি প্রভৃতি। আমি গেলেই অশান্তি হয় যে।কেন হবে না? আমার মেয়ে, তাকে আমি সুশিক্ষা দিতে পারব না? তার দোষত্রুটি ধরতে পারব না? এখানে তো তুত্তুরীকে চোখ পাকালেও অশান্তি। নির্দিষ্ট ডেসিবলের ওপর গলা তুললে কান্নাকাটি, আর হাত চালালে-? অশান্তির আর একটা কারণ হল, আমার মুখ। জাতে লেবার। তায় হাওড়ার মেয়ে। সুচারু সুললিত নয় বরং অনার্য ভাষাটাই আমার ভাষা। সচেতন থাকার চেষ্টা তো করি, মুখ ফস্কে গেলে সরিও বলি- ভবি ভুললে তো?
যার জন্য অশান্তি, দশ মিনিটের মধ্যে তিনি তো চোখ মুছে চলে আসেন মায়ের হাড় জ্বালাতে।ছলছল চোখে ক্ষমা করে দেয় আমার বাপও। মেয়ের থেকে নাতনী কখনই বড় হতে পারে না। মিনিট পনেরোর মধ্যেই পশ্চিম সীমান্ত বরাবর নেমে আসে অখণ্ড শান্তি। একাকী গজরে যায় কেবল মা, মাঝে মাঝে আসে বৃষ্টিও, “আমার সন্তুকে মারা? পাঁচদিন বয়স থেকে বুকে করে মানুষ করেছি, রাতের পর রাত জেগে কোলে নিয়ে বসে থেকেছি, জ্বরজ্বালা হলে আতঙ্কে পাগল হয়ে গেছি- এখনও সবসময় ভয়ে থাকি, সেসব কিছু না? এর থেকে আমাকেই দুঘা মারলে তো পারিস-”।  না শোনার আপ্রাণ চেষ্টা করি, কারণ এসব শুনলে কার না রাগ হয়?  কি যা তা বলছে মা? তিলকে বানাচ্ছে তাল-।

ঝগড়াঝাটিতে কখন যে কেটে যায় সময়, সন্নিকটে এসে পড়ে বিদায়বেলা। ভারি ব্যাগ কাঁধেপিঠে শতাব্দী প্রাচীন খণ্ডহরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়, এগিয়ে যাই আমি আর আমার মেয়ে, পিছন পিছন সবথেকে হাল্কা ব্যাগটা নিয়ে আসতে আসতে ইশারায় বাবা দেখায়, ফর হুম দা বেল টোলস্, কার জন্য যে বাজছে ঘন্টা? আবছা হয়ে আসা দৃষ্টির ওপাড়ে ধুসর বর্ণ মা আর পিসি, বাতের ব্যথার জন্য এগিয়ে দিতে না পারার দুঃখ নিয়ে মোছে চোখ, মনের মধ্যে ধ্বনিত হয় একটাই প্রার্থনা, আমাদের বিদায় নেবার সাথে সাথেই না ঝাঁপিয়ে নামে শীতল নিস্তব্ধতা, বিগত কয়েকদিন ধরে জমিয়ে তোলা অশান্তির কবোষ্ণ মেঘ আরও কিছুক্ষণ ঘিরে থাকুক বাড়িটাকে। আরও কিছুক্ষণ মুখর থাকুক বাড়িটা- 

No comments:

Post a Comment