সিরিয়াসলি? খুব দুঃখ হয়েছে? বিদ্যা বালন বলেছেন বলে? আর আমরা যে এত বছর ধরে সরব নীরবে বলে আসছি,“তোর বাপের খেয়ে মোটা নাকি? অথবা আমি কালো তাতে তোর পিতৃদেবের কগাছা উৎপাটিত হল?” সেটা বুঝি কানে ঢোকেনি? আচ্ছা যাঁরা যাঁরা,বিদ্যার ভিডিওটি শেয়ার পূর্বক, জ্ঞানগর্ভ পোস্ট দিলেন বা লিখলেন, ছিঃ এরকম করে বলা উচিৎ নয়, কবে যে আমরা শিখব, রোগাকে রোগা,মোটাকে মোটা, কালোকে কালো বলতে নেই, তাঁরা আজ অবধি কতজনকে ফোকটে জ্ঞান দিয়েছেন,একটু বলবেন? “আর খাস না। ভাত কম খা। আলু খাস না। মিষ্টির দিকে তাকাস না। তুই চকোলেটের কথা ভাবিস কি করে? সকালে খালি পেটে গরম জল আর লেবু খা। দেখছিস ও কেমন রোগা হয়ে গেছে, খালিপেটে কপালভাতি কর। তোর বাড়ির কাছে জিম নেই?এবার ভুঁড়িটা একটু কমা” শালা আমার ভুঁড়ি,তাকে কমাব কি বাড়াব সেটা আমি ঠিক করব। তুই কে রে বাপ? আমি তো কখনও ঘুরিয়ে ফিরিয়েও তোর গ্রে ম্যাটার নিয়ে আলোচনা করি না।
দাঁড়ান দাঁড়ান আরো আছে, কতজনকে বলেছেন, ওজন কমাও/বাড়াও না হলে বিয়ে হবে না/সন্তানধারণে সমস্যা হতে পারে? কতজনকে নিমাই-শ্রীচৈতন্য এইসব বলে তার সামনে/পিছনে ফস্টিনস্টি করেছেন? কতজনের চোখ/নাক/চিবুক নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন? কতজনকে বলেছেন তোর যা উচ্চতা, তোর বাচ্ছারা ফুটপাতে বসে পা দোলাবে? কতজনকে বলেছেন, তোর যা চেহারা তোকে ঐসব জামাকাপড় মানাবে না। তোর যা গায়ের রঙ, লাল/কমলাটা না পরাই ভালো। অথবা সর্ব দোষ হরে গোরাঃ। গায়ের রঙ ফর্সা হলেই বাকি সব খুঁত ঢেকে যায়? কতগুণ মশাই/মহাশয়া আপনার, একই সাথে ডাক্তার এবং পার্সোনাল স্টাইলিস্ট। ম্যা গো! সাধে আপনার মস্তিষ্কস্থিত পদার্থটি ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাও আমরা আপনার ঐ ম্যাটারটি নিয়ে আলোচনা করি না। একবার ভাবুন খালি কি অসীম সহনশক্তি আমাদের,মাইরি!
আজন্ম এই ধরণের “বুলি”দের নিয়ে ঘর করি আমরা, হয়তো আমৃত্যুও। কে বা কারা থাকে না, এদের মধ্যে? আত্মীয়-পরিজন- বন্ধু-প্রেমিক(ইকা)- সহকর্মী। বাপস্ কত শুভাকাঙ্খী আমাদের মাইরি। সকলের সামনে অথবা নিভৃতে আপনার বলা তুচ্ছতম ঠাট্টাটাও যে কতখানি হৃদয় বিদারক হতে পারে, কোন ধারণা নেই বোধহয় আপনার, থাকবেই বা কি করে, যাদের নিয়ে এসব ঠাট্টাতামাশা করেন,তারা মুখবুজে সয়ে যায় যে। হয়তো নকল দেঁতো হাসির আড়ালে লুকিয়ে ফেলে উদ্গত অশ্রু। কানে অহরহ বাজতে থাকে আপনার সবজান্তা তামাশা/জ্ঞান।
আত্মবিশ্বাসের প্রতিনিয়ত গণধর্ষণ সইতে সইতে বেড়ে উঠি আমরা। ক্রমশঃ মিশে যাই মাটিতে। কোন বিস্মৃত অতীতে এই অধমেরও মনে হত,পৃথিবীর কুৎসিততমা মেয়েটি হেঁটে চলেছে, হাওড়া সড়ক-গলি ঘুঁজি দিয়ে। যত ফাঁকা রাস্তা,ততো মঙ্গল। শুভাকাঙ্ক্ষীদের মুখদর্শনের বিড়ম্বনা থেকে তো মুক্তি। ঝুঁকতে ঝুঁকতে মাটিতে প্রথিত হয়ে টের পেলাম,“They buried us, but they didn't know we were seeds.” অতঃপর বুঝলাম দুইহাতের দুই মধ্যমার অস্তিত্বের তাৎপর্য। আর আজ যখন এই ডাইরি লিখছি, আমার উল্টোদিকের আয়নায় যে বসে বসে মোবাইলে কি যেন করছে, আমার চোখে সে সত্যিই অনিন্দিতা। সেসব দিন আজ শুধু নিছক কৌতুক জাগিয়ে যায়। তাই বলে কি ভাবছেন, “চোখে আঙুল দাদা/দিদি” আমার কম আছে? প্রতিনিয়ত কত যে শুভাকাঙ্ক্ষী, ফোকটে কত যে জ্ঞান দেবার জন্য ছটফট করে মরে! আর আমি কি বলি? শুননই না।চাইলে শিখেও রাখতে পারেন, কাজে আসবে। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ হলে মনে মনে, আর বাকিদের বলি সোচ্চারে,“আপলোগ না যা’কে টাট্টি খালো”।
https://m.youtube.com/watch?v=rOunvdHHNYU
No comments:
Post a Comment