Monday, 24 June 2019

অনির ডাইরি ২৪শে জুন ২০১৯

অনেকদিন বাদে এলেন তিনি। বর্ষীয়ান ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। শ্রম আইন সব গুলে খাওয়া। কোন এককালে নাকি তাঁর প্রবল দাপট ছিল। রীতিমত ধমক চমক চলত। জয়েন করার পর, যখন প্রথমবার ওণারা ডেপুটেশন দিতে এসেছিলেন তৎকালীন সহকর্মীবৃন্দের চাপে রীতিমত পুলিশ রিকুইজিশন করতে হয়েছিল। আমাকে অবশ্য চমকাবার চেষ্টাও করেননি। বেশ কয়েকবার হাল্কাফুল্কা চিল্লাচিল্লি হয়েছিল বটে, তবে সেটা পুরোটাই তাঁর সংগঠনের অনুগামীদের কাছে তাঁর ওজন বাড়ানোর জন্য। এখন তিনি আর সংগঠনের নেতা নন।মামুলী কর্মী মাত্র। তবে অভ্যেসবশতঃ প্রায়ই লেবার দপ্তরের চক্কর কাটেন, আর কি। পড়ন্ত বিকালে ফাঁকা আছি দেখে গল্প করছিলেন, “৩৮বছর ধরে এই পার্টির সাথে জড়িত ম্যাডাম জানেন। ভাইদের বলেছিলাম, বিয়ে থা করব না, তোরা যদি দুবেলা দুমুঠো খেতে দিস, তাহলে পার্টির হোল টাইমার হয়ে যাই।” গল্পে গল্পে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা উঠল, উঠতে বাধ্যও। মে মাসের শেষ বেলাতেও, আসেপাশের অনুদান প্রাপ্ত যে ক্লাবগুলির সামনে জনৈকা নেত্রীর মাল্যশোভিত আবক্ষ চিত্র শোভা পেত, নির্বাচনের উপান্তে চাইল্ডকেয়ার লিভ কাটিয়ে জয়েন করে দেখলাম, “রঙ দে তু মোহে গেরুয়া”।  এত দ্রুত তো গিরগিটিও ভোল পাল্টায় না মাইরি। জাতটার হল কি? উনি মাথা নত করে কিছুক্ষণ বসে থেকে বললেন,“আসলে কি জানেন ম্যাডাম, আপনি যদি কোন বুভুক্ষুর পাতে শুধু একটা রসগোল্লা তুলে দেন, সে খুব খুশি হবে। কিন্তু আপনি তাকে কোন দর্শন তো দিলেন না। নীতিবোধ তথা মূল্যবোধ তো তৈরি করলেন না। পরিণতি? কাল যখনই অন্য কেউ এসে আরো বড় রসগোল্লার প্রলোভন দেখাবে, দেখবেন সে তাকেই ভোট দেবে। দর্শনটা বড় জরুরী । আমরা জাতির পাতে কোন দর্শন তুলে দিতে পারিনি। তৈরি করতে পারিনি কোন মূল্যবোধ। এ এক ঐতিহাসিক অবক্ষয় ম্যাডাম। এ অপ্রতিরোধ্য। ”

উনি চলে যাবার বেশ খানিকক্ষণ পরে ব্যাগপত্র গোচ্ছাচ্ছি, অপর এক নেতার আগমন। ইনি বেশ অল্পবয়সী তথা অত্যন্ত বিনয়ী।কালেক্টরেটে এলেই সাক্ষাৎ করে যান। পরণে দলীয় রঙের পাঞ্জাবি। প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর বললাম,“বাঃ তুমি এখনও দল বদলাওনি তাহলে। দেখে ভালো লাগছে। ” ভেবেছিলাম অগ্নিগর্ভ বক্তৃতা পাব, বদলে মিইয়ে যাওয়া সুরে শুনলাম,“হ্যাঁ আছি। বছর দুয়েকের আগে কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আসলে কি জানেন ম্যাডাম, এই রঙের পাঞ্জাবি অনেকগুলো কিনে ফেলেছিলাম। তাই পরে নি। যতদিন পারি। তারপর-”।  দেরী হয়ে যাচ্ছে,লঞ্চ মিস হলেই ট্রেন পালাবে। বেরিয়ে আসতে শুধু বললাম,“বাপ তোকে দেয় কে? তোর মত সমর্থক থাকলে আর বিপক্ষের কি দরকার”। অবশ্যই মনে মনে।

No comments:

Post a Comment